নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত | ইতিহাস পাতিহাঁস নয়

নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত | ইতিহাস পাতিহাঁস নয়

উপার্জন শীল হয়ে ওঠার জন্যে যে ‘পড়াশোনা’ হয়,তার একেবারে পেছনের দিকে ইতিহাস বিষয়টি থাকে। সেই ইতিহাসের ত্রুটি তাই চিৎকার চেঁচামেচি তে থাকলেও শিক্ষিত মানুষের জীবনের সাথে থাকে না। ইতিহাসের জ্ঞান দিয়ে ফটাফট চাকরি পাওয়া যায় না। আর যারা অংকে,বিজ্ঞানে, অন্য বিদ্যায় ভালো হয় তারা “কি সব ছাতা সাল তারিখের চক্কর” বলে ইতিহাস কে হ্যাটা করে।আমি খুব ব্যক্তিগত স্তরে বাবা,মা, পরিবার, নিজেকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি ইতিহাস ভালোবাসি। ইতিহাস নিয়ে যে সাহিত্য রচনা হয় তাঁর প্রতি খুব দুর্বলতা। কিন্তু ইদানিং যারা ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখছেন তাঁদের লেখা আমি পড়তে পারি না। পড়ি না। ভয় পাই। কিন্তু কিছু কিছু দেখি। মানে সিরিয়াল, ott----- ঐ আর কি । আংরেজি দেখতে খুব ভালোবাসি। মেল গিবসনের আপোক্যালিপটো (apocalypto) রাতে ঘুম আসতে দেরী হয়েছিল। সম্প্রতি মণি রত্নমের ponniyin selvan দেখলাম।কিছু টা মায়া তৈরি হয়। কিছুটা গাঁজা থাকে। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কত গুলো খুব মোটা দাগের ভুল খারাপ লাগে।

অন্যের দোষ ধরার বা বলার আগে নিজের টা বলি। কবিতা ক্লাবের বই এ একবার লিখলাম, ‘মহাশোক গাথা’ বলে একটা গল্প। তাতে রাজা অশোকের এক সেনাপতি কলিঙ্গের যুদ্ধ দেখে বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি করে ভিক্ষু হয়ে গেল। হেব্বি উৎফুল্ল। নিজেই নিজের পিঠে থাবরাচ্ছি। কিন্তু তারপরেই ধপাস করে কাদা জলে পতন।বিনয় পিটকে বুদ্ধ নিজে বলে গেছেন, যোদ্ধা ভিক্ষু হবে না। কারণ তখন নাকি বুদ্ধের আকর্ষণে দলে দলে যোদ্ধারা ভিক্ষু হয়ে যাচ্ছিল। সেটা হলে দেশের বাইরের শত্রুর আক্রমণ আর দেশের ভেতরের সব হচ্ছে তাতে চিন্তা হচ্ছে।
যারা ইতিহাসে বিদগ্ধ তাদের জন্যে এটা লিখছি না। যারা ইতিহাস অপছন্দ করেন তাদের কে নিজের কিছু বক্তব্য বলছি। ইতিহাস পড়তে গিয়ে যা বুঝেছি তাতে সাল তারিখের যে ব্যাপারটা আছে সেটা কিন্তু অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাবর আগে না শায়েস্তা খাঁ আগে, চন্দ্রগুপ্ত আগে না সমুদ্র গুপ্ত আগে এই ব্যাপারগুলো খুব দরকার। আপনি বলতেই পারেন ধুর মশাই এতো নিয়মের আবার কি দরকার! এবার বলতে বাধ্য হচ্ছি।

ধরুন আমি গল্প লিখছি যে “টিভিতে রবিবার দুপুরে ‘মহাভারত’ সিরিয়াল চলছে। রূপা গাঙ্গুলি দ্রউপদি আর মুকেশ কুমার ভীষ্ম পিতামহ হয়ে ফাটিয়ে অভিনয় করছে। আমাদের পাড়ার রাস্তা শুনশান। সবাই টিভি দেখছে। এমন সময় আমার মোবাইল ফোন জোরে জোরে বাজতে লাগল।”

আরও একটা গল্প লিখছি “ বিদ্যাসাগর মশাইএর ইস্কুলে মেয়ে কে ভর্তি করে দিয়েছেন দ্বিজেন বাবু। বাড়ি এসে গিন্নি আর তিনি দুজনে একসাথে বসে ভাত খেলেন, গিন্নি মাছের টক দিয়ে ভাত খেয়ে একটি মুচকি হাসি উপহার দিলেন” ভুল গুলো ধরতে পারলেন আশা করি।

যদি ইতিহাস কে নিজের সাহিত্য, সিরিয়াল, সিনেমা, নাটক প্রভৃতি র জন্যে ব্যবহার করতে হয় তাহলে সেই সময় আর সেই কাল কে ভালো ভাবে জানতে বুঝতে হবে। সে সময়ের কথ্য ভাষার বিশেষত্ব, সেই সময়ের জীবন যাপন শৈলী, সব কিছুই জানতে হবে। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় একটি টেবিল ফ্যান এর এম্বশ করা কোম্পানির নাম তিনি ছবি তোলার সময় বদলে ছিলেন।কারণ ছবির ঘটনা টি যে কালের সে কালে ঐ ফ্যান বাজারে আসেনি। ঠিক এটার পাশেই ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় ববিতার অমন সরু ‘ভ্রু’ কেন আজো আমার প্রশ্ন। সুনীল বাবু তাঁর ‘সেই সময়’এ এতো পরিশ্রম করে লিখলেন। কিন্তু সাহস করে কালীপ্রসন্ন সিংহ কে স্বনামে রাখতে পারলেন না… কেবল একটি বিটনুন প্রয়োগের লোভে। ‘নবীনকুমারে’র অবৈধ্য জন্ম রহস্য। নারায়ণ সান্যাল বিরাট করে এই বিষয় টি লিখেছেন।পড়ে নেবেন। অথচ ঐ টি ছাড়া ‘সেই সময়’ অপূর্ব এক রচনা।
কয়েকদিন আগে এক বন্দু আমারে বললেন যে আজকাল গল্পের গরু গাছে চড়ে। গরু আজকাল সানগ্লাস পরে, চিল করে।যেমন ,একটি সিরিয়াল খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘রানী রাসমণি’। এই প্রসঙ্গে বলি ,আমার ছোটবেলায় অমর চিত্র কথা চিল।আমি তির ধনুক নিয়ে খেলতাম। অর্জুন সাজতাম। আমার কিশোরী কালে রামানন্দ সাগর আর চোপড়া বাবুর রামায়ন আর মহাভারত এলো। সেটা আবার আমার ভাই সুতীর্থ আর বোনপো অঙ্কুর এর শিশুকাল। তাদের জন্যে গদা কিনে দেওয়া হয়েছিল। দুই জনের কাছে আমাকে বহু বার বধ হতে হয়েছে। রানী রাসমণি নিয়ে খেলল আমার দুই নাতনি। দুই ভাগ্নির দুই মেয়ে। তারা ওড়না দিয়ে শাড়ি পরে খেলত। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু লক ডাউনের ভয়ানক টাইমে। দুজন দুই শহরে ।একজন বহরমপুর, আর একজন কলকাতা। ওরা ভিডিও কল করে দুজনের বিছানায় সেই সব মায়া জড়িয়ে খেলত।প্রথমে হেসে ছিলাম। পরে খুব কষ্ট হয়েছিল। এই যে ‘মায়া’ তৈরি করার এতো ক্ষমতা রাখে ইতিহাস। অপরূপ অতীত। তার প্রয়োগে আর যত্নশীল হব না!ভাবুন রানী রাসমণি কে কোলে করে তার স্বামী বাথটবে চান করাতে নিয়ে যাচ্ছে… । একটু রোমান্স দেখাতে ঐ সব ভুল ভাল। ওরে বাবা দিনের আলোয় বরের সাথে কথা বলা অসভ্য বলে মনে করা হত। আর বাথটব! হা রাসমণি। এরা জানে না, এরা কি ভুল করছে।আরও বহু কিছু আছে।

আদিপুরুষ এ রাবণ ওয়েল্ডিং করছে।লোকে গালাগালি দিল। স্বাভাবিক। আমিও দিয়েছি। কিন্তু তাকিয়ে দেখুন আমিতাব বচ্চনের বহু সিনেমা… হাঁটু অবধি বুট পরে কোন একটা সিনেমায় আংরেজদের নিকেশ করছেন। ওরে বাবা সে কালে সাধারণ ভারতীয় ভালো চপ্পল পরতে পেত না। আর অমন লাক্সারি বুট! বোঝে না সে বোঝে না।

কিংবদন্তী অর্থাৎ Legend এর আংরেজি তে মানে হল গিয়া, a traditional story sometimes popularly regarded as historical but not authenticated. কিংবদন্তী আর ইতিহাস এর মধ্যে একটা দূরত্ব আছে। ‘কিং’ এর সম্বন্ধে গুল দিলে সেটা কিংবদন্তী কিন্তু ‘কিং’এর মুদ্রা, সমাধি, চিঠি এগুলো ইতিহাস। তুতেন খামেন সমকামী ছিল এটা প্রমাণিত নয়।রঙ চড়াতে ভালো লাগলো। লিখে দিলাম। কিন্তু তুতেন খামেন এর মৃতদেহের সাথে প্রচুর দামী ধনরত্ন সমাধিতে রাখা ছিল এটা প্রমাণিত। মমি নিয়ে গবেষণা করার ফলে সকলের মৃত্যু অস্বাভাবিক ভাবে ঘটেছে বলে যাহা প্রাচারিত তাহাও ভুল। পড়ে নেবেন। হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে বৃহৎ স্নানাগার প্রমাণিত সত্য। কিন্তু মহেঞ্জোদারো তে ঋত্বিক রোশনের জন্যে স্নানাগার এর নীল জল সেটা কি রকম অসম্ভব ব্যাপার।ক্লিওপেট্রা নানান ধরণের পোশাক পরতেন, গাধার দুধে চান করতেন। বহু পুরুষ সঙ্গী ছিল তার। এই গুল সত্য হবার চান্স খুব বেশী কিন্তুক মা জননী রা বালির দেশে এবং নিজের পায়ে খুব একটা না হাঁটা একজন স্টিলিটো পরে থাকবেন এটা অস্বাভাবিক মনে হয়। গোড়ালি উঁচু জুতো পরা পৃথিবীর বহু সভ্যতা তেই ছিল। কাদা মাটি যাতে পোশাকে না লাগে ,ঘোড়ায় চাপতে সুবিধা হয় সেই জন্যে ছিল। যাই হোক চিরযৌবনবতী সোফিয়া লরেন ক্লিওপেট্রা হয়ে স্টিলিটো পরেছেন।আমার কেন কি জানি মনে হয় এটা ভুল। যেমন পুরান বা মহাকাব্যের মেয়েদের কাঁচুলি খুব চকচকে ব্রেসিয়ার গোছের পোশাক হিসাবে ব্যবহার হয়। সেটা হতে পারেনা। অয্যোধ্যার রাজপুত্র রাম যখন সীতা দেবী আর ভাই লক্ষ্মণ কে নিয়ে রাবণ বধ করার পর ফিরলেন। তখন কিন্তু তাদের দাড়ি গোঁফের জঙ্গল চাঁচতে নাপিত এসেছিল।সাহিত্য তাই বলে। অথচ গোটা রামায়নে আমাদের ‘রামলালা’ ক্লিনসেভড।আমাদের ছবির বই সিরিয়াল একটা ছবি তৈরি করে দিয়েছে, আমাদের মনে। সেটার বাইরে গেলে আমাদের চিন্তার পক্ষে খুব মুস্কিল।আমি পুরনো রামায়নের ছবি তে রামের বানর সেনার হনুমান রা কালো মুখের আমাদের বাংলায় দেখা হনুমান আর তারা কটি বস্ত্র ছাড়া। হনুমান সাধারণ হনুমান। কিন্তু রামচন্দ্রের যোদ্ধা। কিন্তু পরে দেখলাম দারাসিং লাল মুখো হয়ে গেছেন।
কিছু গল্প থাকবে, মনে হবে ইতিহাস আসলে পিওর গুল। সেটা আমার খুব প্রিয়। যেমন ‘বাহুবলি’ ‘নরনিয়া’ ‘হ্যারি পটার’। স্বপনে ঘি খেলে বেশী করে খা।রাওলিং সেটা দারুন ভাবে পারেন। কাল, দেশ এর ওপর দিয়ে অপূর্ব রচনা। আমি শৈলেন ঘোষের লেখায় যেটা গোগ্রাসে গিলেছি। ‘আজব দেশের আজব মেয়ে’ ‘ মিতুল নামের পুতুলটি’ ‘টোরা ও বাদশা’ কিন্তু কোথাও সেটা বলে না কোন এক ঐতিহাসিক সময় বা ব্যক্তির কথা। আপনারা এই ধরণের আরও অনেক লেখার কথা জানবেন। সেটা খুব স্বাভাবিক প্রয়াস । সাহিত্য হিসাবে খুব দামী। কিন্তু যেই কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তি বা সময় কে ধরতে হবে তখন যতটা সম্ভব সত্য রাখতে হবে। আমার পাঠক হিসাবে এই দাবী থাকছে।

শরদিন্দু বাবুর লেখা আমি বিশেষ পড়িনি। খুব অল্প পড়া।তাঁর ভাষা শক্তি অসামান্য। কিন্তু সদাশিব পড়েছিলাম। বাংলায় লেখা মহারাষ্ট্রের শিবাজির গল্প। কি অসামান্য রচনা। ছোটদের কাছে ইতিহাস কে কাঁটা বেছে খেতে দেওয়ার আদর্শ রচনা। আর একজনের লেখা আমার অপূর্ব লাগে অবন ঠাকুর। ইতিহাস নয় কল্প কাহিনী কিন্তু সে যুগের রূপ আর রস দুই ভারী সুন্দর ভাবে লেখা। গোহ, বাপ্পাদিত্য… অতুলনীয়। রক্তপাতের ভয়াবহতা কোথাও মহান ভাবে, কোথাও রোমান্টিক ভাবে আখ্যায়িত। যদিও রাজপুতানার ইতিহাস পড়তে গিয়ে পরে কেবল মনে হয়… যোদ্ধা সবল একটি জাতি কি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে নিজদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। তাদের আন বান শান আমার বেশ লাগে। এর সাথে বলার পদ্মাবতী কিন্তু ঐতিহাসিক চরিত্র নন। (ওরে বাবা এসব বললে আবার কর্নি সেনা নাক কেটে নেবে।)পদ্মিনীর কাহিনী জ্যয়সির ‘পদুমাবৎ’ কাব্যে পাওয়া যায়। আমীর খসরু চিতোর (১৩০৩ সালে) আক্রমণের সময় সুলতানের সাথে ছিলেন,তাঁর রচনায় পদ্মিনীর উল্লেখ নেই। জ্যয়সির রচনা ১৫৪০ সালে যা চিতোর অবরোধের প্রায় ২৩৭ বছর পর লেখা। বরং আমীর খসরুর রচনায় রণথম্বোর দুর্গে জহর ব্রত এর খবর পাওয়া যায়।আলাউদ্দিন রণথম্বোর দুর্গে অভিযান করেন । সেখানে রাজা ছিলেন হাম্মীরদেব। আর গুজরাত অভিযানে রাজা কর্ণ কে পরাজিত করেন আর তাঁর রানী কমলা দেবী কে বিবাহ করেন।রাজা কর্ণ তাঁর কন্যা দেবলা দেবী কে নিয়ে দেবগিরি পালিয়ে যান। পরে সেখানে আলাউদ্দিন মালিক কাফুর কে পাঠান। দেবলা দেবী বন্দিনী হন । রাজা কর্ণ আত্মহত্যা করেন। আলাউদ্দিন এর পুত্র খিজির খাঁর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এগুলো লিখছি বটে কিন্তু সুলতান আলাউদ্দিন কে নিয়ে যদি আলোচনায় করতে হয় সেটা শুধু তাঁর বিবাহ কিংবা নারী লোলুপতার জন্যে নয়। ইসলামী ধর্ম গুরুদের হাত থেকে তাঁর শাসন তান্ত্রিক ব্যবস্থা মুক্ত করেছিলেন। লুণ্ঠনকারী ছিলেন।সমকামী আর উভকামী ছিলেন কিনা, তার কোন তথ্য আমি পাচ্ছি না।মদ খাওয়া আর মজলিস বসানো বন্ধ করেছিলেন। ঐ সব কারণে ষড়যন্ত্র বেশী হত বলে। খিটকেলে লোক ছিল একটা। বেঁচে থাকলে আবার লিখব। কারণ কর্নি সেনা… ওরে বাবারে।

ইতিহাস মানে একটু গেঁজিয়ে লিখে দিলেই হয়। ইতিহাস পরীক্ষায় গ্যাঁজায় নি এমন ছাত্র ছাত্রী কম। নেই বললেই চলে। আকবরের রাজপুতানা নীতি লিখতে গিয়ে তাঁর বিবাহ কাণ্ড নিয়ে কত কি লেখে তার ঠিক আছে। পাতার সংখ্যা বাড়ালে তবেই না নম্বর পাওয়া যায়! সেজন্যে রাজাদের বিবাহ নিয়ে পড়াশোনা করা খুব আবশ্যক। কিন্তু আরও একটা ব্যাপার আছে। সেটা হল গিয়া ‘যুদ্ধু’। রাজারা খুব যুদ্ধু করে।অনেকে বলেন রাজা গজা দের নিয়ে ইতিহাস আসল ইতিহাস নয়। আমি তাদের সাথে একমত। কিন্তু যুদ্ধ আমার ব্যক্তিগত ভাবে রাজা (পড়ুন হারামজাদা রাজা) দের একার ব্যাপার নয়। যুদ্ধ অনেক কিছু ঘটায়। শাসক শক্তি র স্বার্থে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। সেই জন্যে শাসক কে নির্বাচন করার সুযোগ ঘটলেই দেখা উচিৎ সে ‘যুদ্ধু’প্রিয় কিনা। ‘পুটিং’ হোক, দং হোক, বুশ (বাবা আর ছেলে) হোক, সাদ্দাম হোক, লাদেন হোক, লাদেন এর সাত গুষ্টি হোক, আরও ছোট বড় মেজ ‘যুদ্ধু’প্রিয় রা বৃহত্তর স্বার্থে বা অন্যের জন্যে ‘যুদ্ধু’ করে না। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপারে ‘যুদ্ধু’ করে। ‘যুদ্ধু’ গুলো আসলে রাজার ব্যপার নয়। সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনারা কেউ কেউ অবশ্য মহান ব্যাপার মনে করুন। আমি করতে পারি না। মানুষের ভেতরে বীভৎস ব্যাপার ঘটানোর মধ্যেও একটা সৃজন শীলতা কাজ করে। যুদ্ধ সেটাকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, অন্যের ক্ষতি হওয়া কে নিজের ‘কল্যান’ মনে করে। বোকার হদ্দ একটা জন্তু ছাড়া কিছু নয়।

ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয় যীশুর জন্মের ১০০০ বছর আগে। রাজসিংহাসন নিয়ে শরিকি বিবাদের মদ্দিখানে এক অপূর্ব মোহময় ভগবান এসে দাঁড়ান। ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু সাধারণ সেনা দের মৃত্যু ঈশ্বর কেন আগে থেকে নির্দিষ্ট করেছিলেন জানি না। তাদের স্ত্রীদের বৈধব্য,তাদের মা দের সন্তান হীন হবার কষ্টে কি ধর্ম ছিল ভগোবান জানে। কলিঙ্গ যুদ্ধ যার ভয়াবহতা এতো ছিল যে এক কশাই মার্কা রাজা হাত ধুয়ে বুদ্ধদেবের নামে পতাকা তুলে নিয়ে মহান হয়ে যায়।

এইরকম অজস্র যুদ্ধ হতে থাকে। কতটা কদর্য ভাবে মারন যজ্ঞ চালানো যায় তার উদ্ভাবন চলতে থাকে।পরাজয় মানেই ভয়াবহতার উপাখ্যান। মধ্যযুগে বলবনের সময় কে এক তুঘ্রিল খাঁ এর বিদ্রোহ দমনের পরে পরাজিত দের রাজপথের ধারে ধারে শূলে দেওয়া হয়। জ্যান্ত মানুষের আর্তনাদ আর চিল শকুনের চিৎকারে বেশ এন্টারটেনমেন্ট হয় দিল্লীবাসীর। দারুন ব্যাপার না।

আমরা শিউড়ে উঠে আবার বেশ থিতু হয়ে বসি। বলি এখন বাপু এইসব আর হয় না। এখন কি আর কেউ সতী দাহ করে? দাস ব্যবসা চালায়, ইনকুইজেসান এর মতো কষ্ট দেবার ৬৪ কলা র মেসিন তৈরি করে? না না এখন মানুষ জন খুব সভ্য ভদ্র। না সতী দাহ করে না--- খুব ছোটবেলা থেকে বহু মানুষ কে মিডিয়া আর সমাজ বুঝিয়ে দেয় তোমার চামড়া খসখসে, তোমার ছোট ছোট চোখ, তোমার সিমেট্রি হীন মুখ মণ্ডল--- তুমি কুৎসিত। তুমি অঙ্ক পারনা…তোমার ভালো আইফোন নেই… ইত্যাদি… মানুষ দাস হয় থাকে কিছু অদ্ভুত অসুধ,খাবার আর সিস্টেমের। তোমার জল বোতল বন্দী হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসে তোমাকে টাকা দিয়ে কিনতে হয়। তোমার ছেলের মেধার সম্পদ অন্য দেশের শয়তান কিছু লোক কিনে নিয়ে নিয়মিত কিছু টাকা ছুঁড়ে দেয়। দেখার বা বোঝার ক্ষমতা নেই… নাকি আমাদের ইচ্ছা নেই। যাকগে একটু বেশী ভাট বকছি। আবার সেই যুদ্ধু তে ফিরি। এখন আর তলোয়ার,তির ধনুক নিয়ে কেও ঐ খেলাটা খেলে না। এখন নিখুঁত আয়োজন।জাপানে লিটিল বয় ,ফ্যাট ম্যান বলে যে দুটো খেলনা ফেলা হয়েছিল… এর পরে আর খেলা করতে লোকে ভয় পায়।তাই বললে কি হয়। ঐ টাইগ্রিস আর ইউফ্রেতিস নদীর ধারে কয়েক দশক আগে আমেরিকা আর ইরাকের খেলা হল… হেব্বি সব সিনেমা আছে । কিন্তু একটা সিনেমা ও তারপরের গল্প গুলো বলেনি। যেমন হল গিয়ে আমেরিকার সব উৎকৃষ্ট পরমাণু শক্তি চালিত অস্ত্রে ইরাকের প্রচুর মানুষের ক্যান্সার হয়েছে। তারা ধুঁকছে। কি ভালো খেলেছে না আমেরিকা। গল্পের শেষ এখানেও নয়। কারণ যে আমেরিকা হেব্বি হ্যান্সাম সেনারা যুদ্ধ করে দেশে ফিরে গেল তাদের ক্যান্সার হয়েছে। যুদ্ধের পর তাদের মধ্যে যারা বাবা হয়েছে ,তারা তাদের শিশুদের উপহার দিয়েছে, কঠিন জটিল কিডনির অসুখ আর অবশ্যই নানান ধরণের ক্যান্সার। মহাভারতের যুদ্ধ শেষে অশ্বত্থমা যেমন পাণ্ডবের সন্তান দের হত্যা করে… কি অপূর্ব খেলা।

যে উজবুকরা যুদ্দু চায় তাদের জন্যে আমি চাইব কয়েক সপ্তাহ গাছে নিয়মিত জল দিয়ে গাছের ধীরে ধীরে বৃদ্ধি কে কাছ থেকে তাকিয়ে দেখতে। ভাঙতে মুহূর্ত লাগে রে হাঁদার দল। পরিবার তৈরি করতে, ছবি আঁকতে, গান গাইতে, শিশুকে গড়ে তুলতে, বীজ থেকে শস্যের ভাণ্ডার তৈরি করতে, অনেক অনেক সময় লাগে। তাও একটা মজার কথা বলি,পরমাণু বোমায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়া জাপানের পুড়ে যাওয়া মাটি থেকে,তিন মাস পরে প্রথম যে গাছটি তার অংকুর বার করে সেটা হল… কলাবতী গাছ। কি আনন্দ ময় প্রতিশোধ না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ