বাংলাদেশে হিন্দু নিধন আর ভারতবর্ষে মুসলিম নিধন। চলছে চলবে। মানুষ যেখানেই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। মানুষ সেখানেই আক্রান্ত। আবার মানুষ যেখানেই সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী মানুষ সেখানেই দাঙ্গাকারী। এটা কোন সমাজিক ফর্মুলা নয়। এটা কোন ধর্মীয় ফর্মুলাও নয়। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ফর্মুলা। এই ফর্মুলার সাফল্য নির্ভর করে মানুষ কত বেশি সাম্প্রদায়িক তারই উপর। মানুষ কত বেশি ধার্মিক। তার উপরে নয়। এখন এর অর্থ এই নয়, সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকেই দাঙ্গাকারী। দাঙ্গা লাগানো সাধারণ মানুষের পেশা নয়। এটি রাজনীতিবিদদের পেশা। যে পেশায় বহু ভাড়াটে গুণ্ডাদের দরকার হয় দাঙ্গাকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ফলে দাঙ্গা যতই ভয়াবহ হোক না কেন। যতই সর্বাত্মক হোক, সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অংশ হলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু কোন দাঙ্গাতেই অংশ গ্রহণ করে না। আবার দাঙ্গায় অংশ না নিলেও বহু সংখ্যক সাধারণ মানুষই আবার তার সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর চেতনায় সংখ্যালঘু নিধনে নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করে। না করলে সেই সাধারণ মানুষই সচেতন জনচেতনায় যে কোন দাঙ্গাকেই প্রতিরোধ করতে স্বচেষ্ট হতো। কারণ তারা সংখ্যাগুরু। তাদের ভীত হওয়ার কিছু থাকতে পারে না। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় তখনই, যখন সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু নিধনে কোনরকম নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করে না। কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বিপদগ্রস্ত হলেও সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষই উল্টে খুশি হয়ে ওঠে। যারা খুশি হয়ে ওঠে, তারা অধিকাংশই কিন্তু সক্রিয় ভাবে সহিংস নয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের সংক্রমণে অধিকাংশই মনে মনে সহিংস। তাই তারা সংখ্যালঘু নিধনে মনে মনে খুশি হয়ে ওঠে। এদেরই নৈতিক সমর্থন প্রমাণিত হয়। যখন দাঙ্গাকারীরাই রাজনৈতিক ক্ষমতার মসনদে শ্রীবৃদ্ধি করতে থাকে। কিংবা সেই রাজনৈতিক ক্ষমতায় গিয়ে পৌঁছায়। কারণ দুই দেশেই রাষ্ট্রব্যবস্থা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর ভিতর দিয়েই সচল রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দাঙ্গাকারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ার অর্থই হলো জনসমর্থন। এই নিয়ে কোন বিতর্কও থাকতে পারে না। এই জনসমর্থন তৈরী হয়, সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর একেবারে সাধারণ তথাকথিত অহিংস মানুষদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের হাত ধরেই। ফলে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ভিতরে সংক্রমিত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষই দাঙ্গাকারী রাজনৈতিক শিবিরগুলির আসল পুঁজি। এই রাজনৈতিক শিবিরগুলি বিভিন্ন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সংগঠনের আড়ালে থেকে কাজ করতে থাকে। এখানেই রাজনীতির সাথে ধর্মব্যবসার সরাসরি সংযোগ।
ঠিক এই কারণেই প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সংখ্যালঘু নিধনের পিছনে সাধারণ মানুষের ভিতরের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষই আসল অনুঘটক। সাধারণ মানুষের ভিতরে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ না থাকলে, যত বড়ো নৃশংস রাজনৈতিক শক্তিই হোক না কেন। সমাজে কথায় কথায় দাঙ্গা লাগাতে সক্ষম হতো না। এই কারণেই ২০২০ সালের দিল্লীর দাঙ্গায় যারা নিশ্চুপ ছিলেন। তাঁরাই বেশি করে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে হিন্দু নিধনে কোলাহল বাধিয়ে তুলেছেন। আবার সেই একই সময়ের দিল্লীর দাঙ্গায় যারা প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছিলেন। তাদের একটা অংশ বাংলাদেশের হিন্দু নিধনে নিরবতার খোলসে মুখ লুকিয়ে বসে রয়েছেন। আবার ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশের কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরায় যেভাবে মসজিদ আক্রমণ শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সেভাবে কোন প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে না কিন্তু কাঁটাতারের এইপারে। অর্থাৎ দুদিন আগেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য যাদের রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ত্রিপুরার তথা ভারতবর্ষের সংখ্যালঘুদের জন্য কিন্তু সেই একই ব্যক্তিদের রাতের ঘুম বরবাদ হয়ে যাচ্ছে না আর। এই যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, আর সংখ্যাগুরু মনস্তত্ত্ব। এটাই কিন্তু দাঙ্গাকারী রাজনৈতিক শক্তি ও শিবিরগুলির আসল পুঁজি। লক্ষ্য তাদের একটিই। ক্ষমতায় পৌঁছানো। আর সেই ক্ষমতার প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষকেই শোষণ করা। এবং সেই শোষণের ধারাকে দশকের পর দশক চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমতা ধরে রাখা। ফলে দাঙ্গা বাধিয়ে ভোট ভাগাভাগি করার হিসেব নিকেশে তারা সিদ্ধহস্ত। দাঙ্গার পিছনে তাই ধর্মের কোন হাত থাকে না। হাত থাকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির। যার পুঁজি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ।
অবশ্যই তাই বলে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর সকলেই যে এমন সাম্প্রদায়িক হন, তাও নয়। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীরও সকলেই সাম্প্রদায়িক নন। ফলে দাঙ্গা বিরোধী প্রতিবাদে এরাই আসল মুখ। কিন্তু দুঃখের কথা, তারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু।
তবুও তারা প্রতিবাদে সামিল না হয়ে পারে না। কিন্তু আসল মুশকিল হয় তখনই। যখন তাদের প্রতিবাদগুলি সাম্প্রদায়িক স্বার্থের প্রতিবাদগুলির সাথে মিশে যায়। উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দুর্গাপুজোয় হামলা ও সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুঠপাঠের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে সংঘটিত অধিকাংশ প্রতিবাদই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তারই হাতে গরম প্রমাণ পাওয়া গেল, ত্রিপুরায় একাধিক মসজিদে হামলা ও ভাঙচুর চালানো ও মুসলিম নিধনের ঘটনায়। সেখানেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও এই বাংলায় সেইভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়ে উঠলো না। যেটুকু প্রতিবাদের ছবি দেখা গিয়েছে, আসলে সেইটুকুই অসাম্প্রদায়িক জনচেতনার প্রতিবাদ। তারা হিন্দু মুসলিম বিভেদে থাকে না। সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন নেমে আসলেই তারা প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। সেই সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারত কিংবা বাংলাদেশ যেখানেই সংঘটিত করা হোক না কেন। এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা হয় না। হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়টি দিনে দিনে ইতিহাসের বর্বর যুগের ঘটনায় পরিণত হয়ে যেত অনেকদিন আগেই।
অনেকেই মনে করেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়টি বন্ধ করতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক শক্তিগুলিই। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তিগুলির কোনটিই দেশ ও দশের স্বার্থে রাজনীতির ময়দানে নামে না। স্বার্থ তাদের একটাই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা। এবং জনসাধারণকে শোষণ করা। এই শোষণবাদী রাজনৈতিক স্বার্থগুলি কোন প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে? নিলে তো তাদের কোন স্বার্থরক্ষা হবে না। ফলে তারা কোনদিনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করতে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। উল্টে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের খাতিরে যখন যেমন প্রয়োজন হবে দাঙ্গা বাধিয়ে মানুষকে সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিভক্ত করে রাখতেই স্বচেষ্ট হবে। ফলে এগোতে হবে ভিন্নতর পথে। এক বিশাল জনসংখ্যা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ বহন করে চলেছে পারিবারিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারেই। এই বিশাল জনসংখ্যার মানুষের কাছে বিকল্প রাজনৈতিক পরিসর প্রস্তুত করে দিতে হবে। যে রাজনৈতিক পরিসরে মানুষ তার প্রতিদিনের অভাব অভিযোগগুলি নিয়ে দাঁড়াতে পারে। যে রাজনৈতিক পরিসর রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির সংস্কৃতির বিপ্রতীপে মানুষের কথা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। মানুষের কাছে রাজনৈতিক দলগুলির মুখোশ উন্মোচন করে দিলেই কিন্তু হবে না। মানুষের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকার বোধ ও দায়বোধের চেতনাকে নিয়ে গিয়ে হাজির করতে হবে। সমাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করে তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের চর্চায় মানুষের দৈনন্দিন অভাব অভিযোগের কোন সমাধান নাই। উল্টে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির সংস্কৃতিই পুষ্ট হওয়ার বিস্তৃত পরিসর পেয়ে যায়। মানুষের কাছে বিকল্প রাজনৈতিক পরিসর থেকে এই সত্যকে নিরন্তর তুলে ধরা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে উঠতে পারে। আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের সাথে ধর্মচর্চার কিন্তু কোন প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। থাকলে শতাব্দীর পর শতাব্দী একই ভুখণ্ডে দুই সম্প্রদায় পরস্পর একসাথে কাটাতে পারতো না। ফলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রাজনীতিকে ধর্মচর্চার সাথে এক করে ফেললে মস্তবড়ো ভুল হয়ে যাবে। ধর্মচর্চার বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে রুখে দাঁড়াতে হবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষচর্চার বিরুদ্ধে। আর সেই কাজ শুরু করতে হবে সমাজের ভিতর থেকেই। সকলের আগে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো দরকার। মানুষের ভিতরে সাম্প্রদায়িক দ্বেষের কারণগুলির পাশাপাশি তার দৈনন্দিন জীবনযাপনের অভাব অভিযোগের প্রকৃত কারণগুলি ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারলে, মানুষ নিজেই টের পাবে। এগোতে হবে কোন পথে। ফলে প্রকৃত সত্য এবং সঠিক তথ্য নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে না পারলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। সকল অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের এই উদ্দেশে একজোট হওয়ার বড়ো প্রয়োজন আজ। সংখ্যার বিচারে সমাজে সংখ্যালঘু হলেও, একতা ও জোটবদ্ধতাই এক বিপুল শক্তির আধার হয়ে উঠতে পারে। একমাত্র সেই শক্তির পক্ষেই সম্ভব সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির রাজনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সংগঠিত করা। ভারত কিংবা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই কাজের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার উপরেই।
২৯শে অক্টোবর’ ২০২১
অনেকেই মনে করেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়টি বন্ধ করতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক শক্তিগুলিই। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তিগুলির কোনটিই দেশ ও দশের স্বার্থে রাজনীতির ময়দানে নামে না। স্বার্থ তাদের একটাই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা। এবং জনসাধারণকে শোষণ করা। এই শোষণবাদী রাজনৈতিক স্বার্থগুলি কোন প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে? নিলে তো তাদের কোন স্বার্থরক্ষা হবে না। ফলে তারা কোনদিনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করতে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। উল্টে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের খাতিরে যখন যেমন প্রয়োজন হবে দাঙ্গা বাধিয়ে মানুষকে সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিভক্ত করে রাখতেই স্বচেষ্ট হবে। ফলে এগোতে হবে ভিন্নতর পথে। এক বিশাল জনসংখ্যা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ বহন করে চলেছে পারিবারিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারেই। এই বিশাল জনসংখ্যার মানুষের কাছে বিকল্প রাজনৈতিক পরিসর প্রস্তুত করে দিতে হবে। যে রাজনৈতিক পরিসরে মানুষ তার প্রতিদিনের অভাব অভিযোগগুলি নিয়ে দাঁড়াতে পারে। যে রাজনৈতিক পরিসর রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির সংস্কৃতির বিপ্রতীপে মানুষের কথা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। মানুষের কাছে রাজনৈতিক দলগুলির মুখোশ উন্মোচন করে দিলেই কিন্তু হবে না। মানুষের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকার বোধ ও দায়বোধের চেতনাকে নিয়ে গিয়ে হাজির করতে হবে। সমাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করে তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের চর্চায় মানুষের দৈনন্দিন অভাব অভিযোগের কোন সমাধান নাই। উল্টে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির সংস্কৃতিই পুষ্ট হওয়ার বিস্তৃত পরিসর পেয়ে যায়। মানুষের কাছে বিকল্প রাজনৈতিক পরিসর থেকে এই সত্যকে নিরন্তর তুলে ধরা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে উঠতে পারে। আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের সাথে ধর্মচর্চার কিন্তু কোন প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। থাকলে শতাব্দীর পর শতাব্দী একই ভুখণ্ডে দুই সম্প্রদায় পরস্পর একসাথে কাটাতে পারতো না। ফলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রাজনীতিকে ধর্মচর্চার সাথে এক করে ফেললে মস্তবড়ো ভুল হয়ে যাবে। ধর্মচর্চার বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে রুখে দাঁড়াতে হবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষচর্চার বিরুদ্ধে। আর সেই কাজ শুরু করতে হবে সমাজের ভিতর থেকেই। সকলের আগে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো দরকার। মানুষের ভিতরে সাম্প্রদায়িক দ্বেষের কারণগুলির পাশাপাশি তার দৈনন্দিন জীবনযাপনের অভাব অভিযোগের প্রকৃত কারণগুলি ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারলে, মানুষ নিজেই টের পাবে। এগোতে হবে কোন পথে। ফলে প্রকৃত সত্য এবং সঠিক তথ্য নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে না পারলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। সকল অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের এই উদ্দেশে একজোট হওয়ার বড়ো প্রয়োজন আজ। সংখ্যার বিচারে সমাজে সংখ্যালঘু হলেও, একতা ও জোটবদ্ধতাই এক বিপুল শক্তির আধার হয়ে উঠতে পারে। একমাত্র সেই শক্তির পক্ষেই সম্ভব সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির রাজনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সংগঠিত করা। ভারত কিংবা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই কাজের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার উপরেই।
২৯শে অক্টোবর’ ২০২১
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন