সরাসরি রাজনীতির বিষয়বস্তু আমার আলোচ্য নয়। বা রাজনৈতিক মতান্তরের বিষয়টিও এখানে উপজীব্য নয়। কিন্তু ভাষার শরীরকে যুযুধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলি যখন কর্দমাক্ত করে, তা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে সহ্যসীমার বাইরে চলে যায় তখন তো আর চুপ করে বসে থাকা যায়না। বর্তমানের ভোটসর্বস্ব রাজনীতির আঙিনায় ভাষার, বিশেষত মাতৃভাষার, ও শব্দের অপব্যবহারে কী ভয়ানক রকম অনাচার ও অনাসৃষ্টির কারবার চলছে, সেই ভেবে শিউরে উঠতে হয়! ঠেকপ্রিয় বাঙালির ঠেকের ভাষাকেও তা হার মানিয়ে দেয়। এইখানে ক্ষমতাসীন অথবা বিরুদ্ধপক্ষ উভয়ই প্রতিযোগিতায় পরস্পরকে ছাপিয়ে যেতে চায়।
তাই ভোট সর্বস্ব রাজনীতির সৌজন্যে আমাদের এই সময়কালে অদম্যভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংযম ও অসহিষ্ণুতা। তার জাঁতাকলে পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র ভাষা সন্ত্রাস! রাজনীতির বিতর্ক ও বক্তব্যে মানুষের জীবনের যা যা প্রয়োজন সেই সমস্ত বিষয়সমূহ চলে যাচ্ছে পিছনের সারিতে। এমনকি রাজনৈতিক যুক্তিতর্ককে উহ্য রেখে সরাসরি ব্যক্তি আক্রমণই প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই আক্রমণের ভাষা কোথাও কোথাও এমন কদর্য ও কুরুচিকর যে তা শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের সব সীমাকে অতিক্রম করে যায়। ভাবতে অবাক লাগে, সহনশীলতা এতো মাত্রায় কমে গেছে যে ' তুই-তো-কারি ' পর্যন্ত রাজনীতির মঞ্চে অক্লেশে জায়গা করে নিয়েছে।
রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রায় গোটা দেশের সঙ্গে আমাদের বাংলাতেও এই ভাষা হন্তারকদের ভীষণ দাপাদাপি। অকথ্য কুকথার বিষ ছড়িয়ে বেশ হাততালি পাওয়া যায়। পাবলিক খুব খাচ্ছে, এবং খাচ্ছে বলেই বেশ হিরো হিরো ভাব জাগে বক্তার মনে। লড়াইটা রাজনীতির কিন্তু বক্তব্যের লড়াইয়ে রাজনীতিহীন কথাবার্তার রমরমা।
রাজনৈতিক যুক্তিতর্কসহ আক্রমণের বদলে সৌজন্যের চূড়ান্ত সীমারেখা লঙ্ঘন করে শুরু হয়েছে ব্যক্তি কুৎসা ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ব্যক্তি আক্রমণ। রাজনৈতিক আদর্শ ও নীতির প্রশ্নে তীক্ষ্ণ শাণিত এবং যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক এখানে ব্রাত্য। বরং রুচিহীন ও বিকৃত মনোভঙ্গিতে যথেচ্ছভাবে কুরুচিকর শব্দের প্রয়োগ করে সেই আক্রমণ শানানো হচ্ছে। এইভাবে ভাষার কৌলিন্যের অবক্ষয় এবং যথেচ্ছ তার অপপ্রয়োগ, বিশেষ করে, বাংলা ভাষায় নানা কুরুচিপূর্ণ শব্দের ব্যবহার আমাদের এই সুন্দর রত্নগর্ভ ও মধুরতম ভাষার গায়ে কালিমা লেপন করছে। সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে নানারকম শব্দ-বন্ধের জন্ম দেওয়া হচ্ছে। মিডিয়ার কল্যাণে বেশ হৈচৈও জমে উঠছে। বহুল প্রচারিত সেইসব শব্দব্রহ্মের নমুনার উল্লেখ এখানে নাই বা করলাম।
মুস্কিল হলো, মাঠময়দানের রাজনীতির চৌহদ্দি পেরিয়ে ইত্যাকার রুচিহীন শব্দ ও বাক্য সমূহ সংসদীয় রাজনীতির চত্বরেও ঢুকে পড়ছে। অসংযমী এই অনাচার ও ভাষা বিকৃতিকে বেশকিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং এ ব্যাপারে দিব্যি তিনি তাঁর নিজস্ব পেটেন্টও দাবি করতে পারেন! এইসব ব্যক্তি সমস্তরকম শিষ্টাচারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁদের অসংযত আস্ফালনকে নিম্নতর রুচির আবহে টেনে এনে তীব্র ভাষা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছেন এবং এঁদের আচরণ ও বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান বা পুরাণের পরম্পরাগত কোন শিক্ষাই এনারা গ্রহণ করতে পারেননি।
সোশ্যাল মিডিয়ার জগতও এই ধরনের ব্যাধি ও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত নয়। এই ব্যাধির সংক্রমণ এ ক্ষেত্রেও বেশ তীব্র। বিশেষ করে পরিমণ্ডলটি যদি রাজনীতি কেন্দ্রিক হয়। এখানেও যুক্তি আর সহনশীলতার বদলে অপছন্দের মত ও বক্তব্যকারীকে অশালীন ভাষায় এমন কি নানা অশ্লীল শব্দ দিয়ে বিশ্রীভাবে আক্রমণ করা হয়। সে সব ভাষা ও শব্দ না উচ্চারণযোগ্য না লেখার যোগ্য। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালগুলিতে তা আকছার ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুঝতে পারিনা এরা কারা? ন্যুনতম রুচিও কি এদের নেই! ভিন্ন মত ও উক্ত মত পোষণকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওরা এতো অসহিষ্ণু কেন? কারণে অকারণে নানান অশ্লীল এবং কুরুচিকর শব্দের এমন যথেচ্ছ ব্যবহার কেন! সোশ্যাল মিডিয়ার জগত তো তাদের একার নয়, তবে এভাবে কেন তাকে কলুষিত করা! কষ্ট লাগে, যখন দেখি আমাদের পরমপ্রিয় গৌরবমণ্ডিত সুন্দর মাতৃভাষাকে কিছু দুর্বৃত্ত বিকৃত মানসিকতা নিয়ে এইভাবে নষ্ট করছে। বাঙালির দুর্ভাগ্য, কারণ এখানেও সেই এক - প্রকৃত শিক্ষার আর রুচিশীল মানসিকতার অভাব। সুতরাং মাতৃভাষার সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করবার দায়, তা যে কি এবং কেন, এদের চিন্তা চেতনা এবং স্বভাবগত ভাবনার হিসাবের মধ্যেই থাকেনা।
সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করবার আরও একটি দিক এই প্রসঙ্গে উল্লেখনীয়। সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্র এবং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার বাসনা, পরিচিতি বাড়ানো আর ভাব বিনিময়ের এক সহজলভ্য উপায় হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আজ সর্বজনবিদিত। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইদানিং সাহিত্য চর্চার হিড়িক যেভাবে বাড়ছে একদিকে তা যেমন আনন্দদায়ক, অন্যদিকটি আবার তেমনই আশঙ্কা ও অপ্রীতিকর। কারণ, বিভিন্ন ধরনের লেখা তা সে গল্প, কবিতা বা অন্যান্য গদ্য যাই হোক, এখানেও লেখকের এবং পাঠক হিসাবে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্যে বাংলা বানানের ভুল বা বিকৃতি চোখ এবং মনকে খুবই পীড়া দেয়। সাহিত্যানুরাগ ও সাহিত্যপ্রীতি অবশ্যই সুখের বিষয়। এতে ব্যক্তি-মন ও সমাজ-মন পরিশীলিত হয়ে ওঠে, বাংলাভাষার চর্চারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু অনেকেই সেইসব লেখায় অযাচিতভাবে ভুল বানানের প্রয়োগ ঘটান। তাতে করে আমাদের প্রিয় মধুরতম এবং রত্নগর্ভ যে মাতৃভাষা তার প্রতি অযত্ন ও অবহেলার দিকটিই প্রকট হয়ে ওঠে। এই ধরনের অযত্ন পরিলক্ষিত হলে তা অবশ্যই হৃদয়কে ব্যথিত করে। ভয় হয়, পরবর্তী প্রজন্ম এই ভুলগুলিকেই সঠিক বলে ভাবতে অভ্যস্থ হয়ে পড়বে নাতো!
মুস্কিল হলো, মাঠময়দানের রাজনীতির চৌহদ্দি পেরিয়ে ইত্যাকার রুচিহীন শব্দ ও বাক্য সমূহ সংসদীয় রাজনীতির চত্বরেও ঢুকে পড়ছে। অসংযমী এই অনাচার ও ভাষা বিকৃতিকে বেশকিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং এ ব্যাপারে দিব্যি তিনি তাঁর নিজস্ব পেটেন্টও দাবি করতে পারেন! এইসব ব্যক্তি সমস্তরকম শিষ্টাচারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁদের অসংযত আস্ফালনকে নিম্নতর রুচির আবহে টেনে এনে তীব্র ভাষা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছেন এবং এঁদের আচরণ ও বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান বা পুরাণের পরম্পরাগত কোন শিক্ষাই এনারা গ্রহণ করতে পারেননি।
সোশ্যাল মিডিয়ার জগতও এই ধরনের ব্যাধি ও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত নয়। এই ব্যাধির সংক্রমণ এ ক্ষেত্রেও বেশ তীব্র। বিশেষ করে পরিমণ্ডলটি যদি রাজনীতি কেন্দ্রিক হয়। এখানেও যুক্তি আর সহনশীলতার বদলে অপছন্দের মত ও বক্তব্যকারীকে অশালীন ভাষায় এমন কি নানা অশ্লীল শব্দ দিয়ে বিশ্রীভাবে আক্রমণ করা হয়। সে সব ভাষা ও শব্দ না উচ্চারণযোগ্য না লেখার যোগ্য। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালগুলিতে তা আকছার ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুঝতে পারিনা এরা কারা? ন্যুনতম রুচিও কি এদের নেই! ভিন্ন মত ও উক্ত মত পোষণকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওরা এতো অসহিষ্ণু কেন? কারণে অকারণে নানান অশ্লীল এবং কুরুচিকর শব্দের এমন যথেচ্ছ ব্যবহার কেন! সোশ্যাল মিডিয়ার জগত তো তাদের একার নয়, তবে এভাবে কেন তাকে কলুষিত করা! কষ্ট লাগে, যখন দেখি আমাদের পরমপ্রিয় গৌরবমণ্ডিত সুন্দর মাতৃভাষাকে কিছু দুর্বৃত্ত বিকৃত মানসিকতা নিয়ে এইভাবে নষ্ট করছে। বাঙালির দুর্ভাগ্য, কারণ এখানেও সেই এক - প্রকৃত শিক্ষার আর রুচিশীল মানসিকতার অভাব। সুতরাং মাতৃভাষার সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করবার দায়, তা যে কি এবং কেন, এদের চিন্তা চেতনা এবং স্বভাবগত ভাবনার হিসাবের মধ্যেই থাকেনা।
সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করবার আরও একটি দিক এই প্রসঙ্গে উল্লেখনীয়। সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্র এবং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার বাসনা, পরিচিতি বাড়ানো আর ভাব বিনিময়ের এক সহজলভ্য উপায় হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আজ সর্বজনবিদিত। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইদানিং সাহিত্য চর্চার হিড়িক যেভাবে বাড়ছে একদিকে তা যেমন আনন্দদায়ক, অন্যদিকটি আবার তেমনই আশঙ্কা ও অপ্রীতিকর। কারণ, বিভিন্ন ধরনের লেখা তা সে গল্প, কবিতা বা অন্যান্য গদ্য যাই হোক, এখানেও লেখকের এবং পাঠক হিসাবে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্যে বাংলা বানানের ভুল বা বিকৃতি চোখ এবং মনকে খুবই পীড়া দেয়। সাহিত্যানুরাগ ও সাহিত্যপ্রীতি অবশ্যই সুখের বিষয়। এতে ব্যক্তি-মন ও সমাজ-মন পরিশীলিত হয়ে ওঠে, বাংলাভাষার চর্চারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু অনেকেই সেইসব লেখায় অযাচিতভাবে ভুল বানানের প্রয়োগ ঘটান। তাতে করে আমাদের প্রিয় মধুরতম এবং রত্নগর্ভ যে মাতৃভাষা তার প্রতি অযত্ন ও অবহেলার দিকটিই প্রকট হয়ে ওঠে। এই ধরনের অযত্ন পরিলক্ষিত হলে তা অবশ্যই হৃদয়কে ব্যথিত করে। ভয় হয়, পরবর্তী প্রজন্ম এই ভুলগুলিকেই সঠিক বলে ভাবতে অভ্যস্থ হয়ে পড়বে নাতো!
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন