সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী

 দ্বেষে বিদ্বেষী
রণেন আর রিনি গাইনোকলোজিস্টের চেম্বারের ওয়েটিং রুমে বসে আছে প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মতো।রিনি ছটফট করছে অধৈর্য্য হয়ে। সাড়ে ছ-বছরের মেয়েকে প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে এসেছে। ওরা আন্দাজ করে নি এতটা সময় লাগতে পারে , তাহলেওরা মেয়ে কৃতিকে সঙ্গে করেই নিয়ে আসতো। রিনি ফিরে যেতে চাইছে আরও ঘন্টা খানেক লাগতে পারে শুনে। মেয়ের পড়াশোনা খাওয়া দাওয়া পুরো রুটিনটাই এলোমেলো হয়ে গেলো। রিনির মনটা ছটফট করছে বুঝে রণেন রিনিকে আশ্বস্ত করলো...

দেরীর কারণে রণেন শিখাবৌদির সাথে ফোনে কথা বলে নিয়েছে , কৃতি খুব শান্ত হয়ে আছে.... বৌদির মেয়েদের সাথে খেলছে......গান চালিয়ে তিনজনে নাচছে , চিন্তার কিচ্ছু নেই ।

ডাক্তারবাবু রিনির ওপর একগাদা বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিলেন । একার সংসারে রিনি কী করে এতো বাঁধাধরা নিয়মে থাকবে ? কৃতির ক্লাস টু , কনভেন্ট স্কুলে যথেষ্ট চাপ কৃতির । রিনি নিজেও একটা বেসরকারি স্কুলে পড়ায় , রণেনের আপাতত কোলকাতায় হেড অফিসে পোস্টিং.......যাতায়াতেই অনেকখানি সময় যায় রণেনের । সারাদিনের ক্লান্তি মাথায় নিয়ে রণেন কতটুকুই বা রিনিকে সাহায্য করতে পারবে....... মুখে রণেন যতই যা বলুক না কেন...... বাস্তবটা তো বুঝতে হবে । পুষ্পর মাইনে কিছুটা বাড়িয়ে রান্নাঘরের কাজেও পুষ্পকে সাহায্য করতে বলবে , এছাড়া তো আর উপায়ও নেই ।

রিক্সায় অন্যমনস্ক রিনি.......রণেনের কথাগুলো ওর কানে ঢুকছে বটে , তবে মস্তিষ্কে কোনো রেখাপাত করতে পারছে না। রিনির ভারী অভিমান  হোলো সকলের ওপর । কান্নায় গলাটা বুজে আসছে যেন , রিনি কোনো কথা বলতে পারছে না । রিনি কিছুতেই রণেনের কাছে এই দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না ।

ভেতরে ভেতরে একেবারে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে রিনি....

মা-বাবার ওপর ভয়ানক অভিমান রিনির । মা-বাবা কিছুতেই রিনির সাথে রণেনের বিয়েটা মেনে নিতে পারলো না এই এতগুলো বছর পার করেও । প্রথম প্রথম তো রণেনের বাড়ীতেও ওদের বিয়ে নিয়ে প্রবল অশান্তি ছিলো , বিশেষতঃ রণেনের মায়ের । কৃতি হবারও বছর দুই পরে রণেনের বাবার ভীষণ অসুস্থতায় রণেনের বড়দার উদ্যোগে পরিস্থিতি সামান্য অনুকূল হয়, তবে কোথায় যেন একটা সুক্ষ্ম লক্ষ্মণরেখা রয়েই গেছে । রিনি কিছুতেই ওবাড়ীতে সহজ হতে পারে না , পালাপার্বণে গেলেও থাকতে চায় না ওবাড়ীতে । রিনির এই সমস্যাটা রণেন খুব ভালো মতোই বোঝে , কিন্তু দুজনের কেউই এই বিষয়ে কখনো কোনো আলোচনায় ঢোকে নি , রিনি এব্যাপারে বিশেষ স্পর্শকাতর নিজের মা-বাবার এই বিদ্বেষমূলক আচরণে ।

কৃতিকে শিখাবৌদি দুধরুটি খাইয়ে দিয়েছে , আর রিনিদের দেরী দেখে ওদের জন্যও গরম গরম কটা রুটি আর তরকারী ক্যাসেরোলে ভরে রেখেছে । রিনি নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো আর রণেন ঘুমন্ত কৃতি আর রাতের খাবার নিয়ে শিখাবৌদির বাড়ী থেকে ফিরলো । রিনি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না , রণেনের বুকে মুখ গুঁজে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেললো । রণেন রিনির মাথায় হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বললো , মেয়ে জেগে যাবে তো ।

পরেরদিন রিনি স্কুলে গিয়ে উইদাউট পে'তে ছুটি নিয়ে নিলো কমাসের জন্য । ফেরার পথে রিনি শিখাবৌদির ফ্ল্যাটে দেখা করতে গেলে শিখাবৌদি খুব সাহস দিলো , সাথে আশ্বাস ....... কোনো কিছু অসুবিধা হবে না , শিখাবৌদি নিজের জীবন দিয়ে ভুক্তভোগী এমন পরিস্থিতিতে । রিনি খুব ভরসা করে শিখাবৌদির ওপর , বিয়ের পর নতুন সংসার পেতে যখন রিনি-রণেন এই আবাসনের চারতলায় ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে এলো , সেই তখন থেকেই দোতলার এই শিখাবৌদিই পরমাত্মীয়ের মতো রিনিদের সবরকম সহযোগিতা করে চলেছে স্নিগ্ধ আন্তরিকতায় । রিনি বেশ খানিক হালকা হোলো শিখাবৌদির সাথে কথা বলে । এখন রিনিকে ডাক্তারের পরামর্শ মতোই চলতে হবে......ভুললে চলবে না রিনি হাইরিস্ক প্রেগনেন্সিতে আছে আর একমাত্র নিজেই নিজের খেয়াল সব থেকে ভালো করে রাখতে হবে রিনিকে ।

কৃতি স্কুল থেকে ফিরলে ওকে খাইয়ে দাইয়ে রিনি মেয়েকে বুঝিয়ে বললো...... কৃতির ছোট্ট একটা ভাই কিম্বা বোন আছে মাম্মামের পেটের ভেতরে , তাহলে কৃতি তো এখন দিদি হয়ে গেছে , তাই যখন তখন মাম্মামের কোলে উঠে পড়াটা কি আর ভালো দেখাবে ? চোখ বড়বড় করে ঘাড় দুলিয়ে কৃতি এক কথায় রাজি কোলে না উঠতে আর ভীষণ ব্যস্ত এতো দেরী করার কী দরকার ? সেদিনই তো পেট থেকে ডাক্তারবাবু বের করে দিতে পারতো ভাইকে...

না না বোনকে ....না না দুজনকে...... একটা ভাই আর একটা বোনকে । খুব মজা কৃতির ..... বিকেলে খেলতে নেমে বন্ধুদের সবাইকে সুখবরটা দেওয়া হোলো আর রোজকার মতো খেলে ফেরার সময় পুজোর প্রসাদ খেতে গিয়ে জেম্মার (শিখাবৌদি) গলা জড়িয়ে বলা হোলো সুখবরটা , পুপুন দিদি ছোটন দিদিকে বলা হোলো এরপর ওদের পাঁচ জনে মিলে খেলতে হবে চোর পুলিশ বা ক্যারম খেলার সময় ।

অফিস থেকে ফিরতেই কৃতি রণেনের গলা ধরে ঝুলে পড়লো....... তক্ষুনি কৃতি বাবাকে নিয়ে মরণকাকুর খেলনার দোকানে যেতে চায় , নতুন আর একটা টেডি কিনতে হবে, একটা টেডি তো নতুনই আছে এবারকার জন্মদিনে পাওয়া , আর একটা কিনে নিলেই হবে , তাহলে ভাই বোন দুজনকেই কৃতি গিফ্ট করতে পারবে.....কী মজা !

অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রণেন মেয়েকে শান্ত করলো আর কৃতির সহজ সরল উচ্ছাসে রিনির মন থেকে একটা ভার নেমে গেলো । কৃতি খুব ভালো করেই মানিয়ে নিতে পারবে....ভাই বা বোনের সাথে । 

কৃতি আজকাল মাকে একটুও জ্বালাতন করে না , নিজের সব কাজ নিজেই করার চেষ্টা করে , এমনকি রিনি ওষুধ খেলো কিনা......দুধ খেলো কিনা.... ডাবের জল আর পাকা পেঁপে-কলা খেলো কিনা এসব খোঁজ খবরও রাখতে শুরু করলো পাকাবুড়ির মতো । রিনি মনের চাপগুলো একপাশে সরিয়ে শারীরিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করছে ।

রণেন নিজের বাড়ীতে রিনির হাইরিস্ক প্রেগনেন্সির খবর জানিয়েছে, তবে রিনিকে জানায় নি সেসব কথা । ডাক্তারবাবুর মতে পাঁচ মাস পার হয়ে গেলে আর উচিৎ হবে না রিনিকে কোনো জার্ণি করানো অথবা যাতায়াতের ধকল নেওয়ানো । হয়তো সে কারণেই রণেন এক রবিবার সকালে রিনি আর কৃতিকে নিয়ে ওদের ব্যারাকপুরের ফ্ল্যাট থেকে শ্যামবাজারে রণেনের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে যাবে ঠিক করলো , সঙ্গে আরও একটি উদ্দেশ্য....... সামনে পুজোর আগে রিনি হয়তো আর বেরোতে পারবে না । তাই কয়েক ঘণ্টা কৃতিকে ওবাড়ীতে রেখে রিনিকে নিয়ে রণেন শ্যামবাজার আর হাতিবাগান থেকে খানিকটা কেনাকাটা সেরে নেবে । এছাড়া পাশের পাড়াতেই তো রিনির বাপের বাড়ী , একবার ওখান থেকেও ঘুরিয়ে আনবে রিনিকে ......সে রিনির বাবা-মা যাই বলুক না কেন । তারপর একটা রাত্তির থেকে আবার ব্যারাকপুরের ফ্ল্যাটে ফিরে যাবে ।

নিয়তি কিন্তু নিজের নিয়মেই চলে...... শনিবার একটু বেশী রাতেই ফোন এলো রিনির ঠাকুমা মৃত্যুশয্যায় , তিনি তাঁর শেষ সময়ে দেখতে চান একমাত্র নাতনি - নাতজামাই তার তাদের বাচ্চাটিকে । বাধ্য হয়েই তাই রিনির বাবা রণেনদের বাড়ীতে জানিয়েছেন , কারণ তাঁদের কাছে তো মেয়ের ঠিকানা নেই..... তাঁরা এতদিন মেয়ের ঠিকানাটুকু রাখারও প্রয়োজন বোধ করেন নি । যাইহোক এসব নিয়ে এখন আর অভিমান করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না বলে রণেন রবিবার খুব ভোরে রিনি আর কৃতিকে নিয়ে ট্যাক্সি করে শ্যামবাজারে সোজা রিনির বাপের বাড়ী । অর্ধ অচৈতন্য ঠাকুমার সাথে দেখা করে রিনি আর বেশীক্ষণ বাপের বাড়ীতে থাকতে চাইলো না , ওরা আস্তে আস্তে হেঁটেই রণেনদের শ্যামবাজারের বাড়ীতে চলে গেলো । রিনি আর কেনাকাটা করতে যেতে চাইলো না , ব্যারাকপুরে ফিরে যেতে চাইলো বিকেল বিকেল । রণেন রিনিকে কোনো বিষয়ে জোর করে না , রিনির বুদ্ধি বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের ওপর রণেন পূর্ণ আস্থা রাখে । তাই বিকেলে ফিরে যাবে তাই ঠিক হোলো ।

বিধি বাম...... দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ হতে না হতেই রিনির খুড়তুতো ভাই এসে খবর দিলো ঠাকুমার এখন তখন অবস্থা..... পিসিরা এক্ষুনি রিনিকে আসতে বলেছে ঠাকুমার মুখে শেষ সময়ে দুধ-গঙ্গাজলটুকু দেবার জন্য । বলেই যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিলো তেমনই ঝড়ের বেগে রিনির ভাই চলে গেলো । রণেন রিনিকে বোঝালো যাওয়া উচিৎ এবং এসময় কৃতিকে আর নেবার দরকার নেই । কৃতি থাক কিছুক্ষণ..... ওখানে রণেনের ভাইপো ভাইঝিদের সাথে খানিকক্ষণ খেলুক , তারপর রিনির ঠাকুমার মুখে জল দেওয়া হলেই নাহয় ওরা ফিরে আসবে । রিনি কিছু বলতে পারলো না , এই ঠাকুমাই রিনিকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন একথা সবাই জানে । অতএব রিনি কৃতিকে রেখে রণেনের সাথে রওনা হোলো বাপের বাড়ীর দিকে।

ঠাকুমা মারা যাবার পর রিনি আর দেরী করতে চাইলো না , শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না , রিনি ব্যারাকপুরে ফিরে যেতে চাইছে নিজেদের বাসায় ।

সেদিনই একটু রাত করেই রিনিরা ট্যাক্সি করেই ফিরে যাচ্ছে । ট্যাক্সিতে রিনি চুপচাপ অবসন্ন , কানে বাজছে রিনির বাপের বাড়ী তুলে শাশুড়ি আর মেজো জায়ের কর্কশ ঐসব বাক্যবাণ । কৃতিও খুব চুপচাপ গম্ভীর....এতো দৌড় ঝাঁপ হোলো তো তাই । রণেন কৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর রিনি সিটে হেলান দিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে । কমবেশী ঘন্টা খানেকের মতো সময়েই ওরা ব্যারাকপুরে পৌঁছে গেছে । শিখাবৌদির কাছ থেকে চাবি নিয়ে ওরা নিজেদের ঘরে ফিরে এসে মুখ হাত পা ধুয়ে আলু সেদ্ধ ভাত করে নিলো । কৃতিকে খাইয়ে নিজেরা খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো সারাদিনের ধকলে ক্লান্তিতে ।

সকালে রণেন অফিসে চলে গেলো , কৃতি স্কুলে , রিনি ঘরে একা...... কাজকর্ম টুকিটাকি সেরে খেয়ে দেয়ে খবরের কাগজটা নিয়ে ওল্টাতে পাল্টাতেই কৃতির স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে । কৃতির খাবারদাবার গুছিয়ে রেখে রিনি বারান্দায় এসে দাঁড়ালো , এক্ষুণি কৃতি ফিরবে । শরীরে দ্বিতীয় সন্তানের আগমনের পর প্রথম সন্তানের জন্য টানটা রিনির আরও বেড়ে গেছে , সতর্কতা বেড়েছে...... কৃতির যেন সামান্যতমও অযত্ন না হয় , কৃতির মনে যেন কোনোভাবেই কোনো ক্ষোভের জন্ম না হয় । এব্যাপারে রণেনও খুব সচেতন ।

কৃতি কাল থেকেই খুব চুপচাপ , একটু যেন বিরক্ত ও অন্যমনস্ক । খাওয়া দাওয়ার পরে রিনি কৃতিকে নিয়ে শুলো । রোজকার মতো কৃতি গল্প শুনতে চাইলো না , উল্টে রিনির দিকে পিছন ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো । ঘুম থেকে উঠেও চুপচাপ , নীচ থেকে খেলে উঠেও চুপচাপ হাতমুখ ধুয়ে দুধ খেয়ে পড়তে বসে গেলো । রিনির কথার উত্তর হুঁ হাঁ করে দিচ্ছে । রিনি আন্দাজ করতে পারলো কিছু একটা নিশ্চয়ই ঘটেছে আর সেটা ঘটেছে আগের দিনে শ্যামবাজারের বাড়ীতে রিনি-রণেনের অনুপস্থিতিতে অবশ্যই । রিনির কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো , রণেন ফিরতে এতো দেরী করছে কেন ? ঘড়ির কাঁটা যেন ঘুরছে না মনে হোলো রিনির । কৃতিকে কিচ্ছুটি জিজ্ঞেস করার সাহস হারিয়েছে রিনি , একবার ভাবলো শিখাবৌদিকে ডাকে , কিন্তু কি মনে করে সংকোচে পিছিয়ে গেলো ।

রণেন ফিরেছে ...... কিন্তু আজ আর কৃতি ছুটে গিয়ে রোজকার মতো বাবার গলা ধরে ঝুলে পড়লো না । রণেনও একটু অবাক হোলো । রিনি রণেনকে রান্নাঘরে ডেকে নিয়ে নিজের আশংকার কথা জানালো । রণেন শোবার ঘরে এসে দেখলো কৃতি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে একা একা ড্রইং খাতায় আঁকিবুঁকি কাটছে । রণেন কৃতিকে ডেকে চকলেট ধরা হাতটা কৃতির দিকে বাড়িয়ে ধরতেই কৃতি কেমন একটা দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে অসহায় বিকট স্বরে ডুকরে উঠলো , "বাবা তুমি এক্ষুণি মাম্মামের পেটের ভেতর থেকে ভাইটা বোনটাকে ডাক্তারবাবুর কাছে ফেরত দিয়ে এসো , চাই না আমার ভাইবোন কিচ্ছু , তোমরা বাজে পচা হয়ে গেছো । ভাইবোন এলে তোমরা আমাকে আর ভালোবাসবে না , আদর করবে না , কিচ্ছু কিনে দেবে না । তাই তো তোমরা কালকে মিথ্যে কথা বলে আমাকে আম্মা বাড়ীতে একা রেখে বোর্ডিং আশ্রম দেখতে গেছিলে আমাকে ওখানে রেখে দিয়ে আসবে বলে । আম্মা (রণেনের মা) আর রাঙামা (রণেনের সেজোবৌদি) বলেছে তো তোমরা আমাকে গঙ্গার ঘাটে কুড়িয়ে পেয়েছো , তাই তো ভাইবোন আনছো , আমাকে আর নিজেদের কাছে রাখতে চাও না । কিন্তু আমি তোমাদের কাছেই থাকতে চাই......." হাউহাউ করে চিৎকার করে কাঁদছে কৃতি । 

রিনি আর রণেন পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল..... রিনির পায়ে আর জোর পাচ্ছে না , বসে পড়েছে মাথায় হাত দিয়ে । কী করবে এখন রিনি - রণেন ? কী করে তাদের প্রথম আত্মজার মন থেকে এই সর্বনাশা বিধ্বংসী বিদ্বেষী দ্বেষের বিষাক্ত আগুন নিভিয়ে নির্মূল করবে ? কৃতিকে স্বাভাবিক চিন্তার স্রোতে কেমন করে ফেরাবে ওরা ?

12sanghamitra@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ