অনেক রাত অবধি বসে ছিলাম চুপ করে। আজকাল নিজেকে নিজের কোল পেতে ঘুম পাড়াই। এই হেমন্তেও মাঝেই মাঝেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি এসে চারিদিক মেঘলা করে ধুয়ে নিচ্ছে। চুপচাপ বসে ছিলাম একা জানলা দিয়ে তাকিয়ে , বসে বসে আঙুলে কর গুনি, রেখা চিনি, ছোঁয়ায় ছোঁয়া চিনি, আর বাকি যা কিছু আনাগোনা করে মনে মনে।
বড়রা বলেন সময়ের প্রতীক্ষা করতে হয়, সময়ের আগে কিচ্ছুটি হবার যো নেই। আমি কিন্তু তাদেরকে বলিনি, এমনি করে করে আমি কবে জানি নিজেকে পেতে দিয়েছি সময়ের সে চাদরের নিচে। এ যেন ঠিক পেতে দেওয়া নয়, তলিয়ে যাওয়া সময়ের নদীটাতে। অপেক্ষা অপেক্ষা আর শুধুই অপেক্ষা। কিসের? বললে হয়ত তোকেই বলা যেত, কিন্তু আজ থাক। অন্য কোন এক আদুরে আলোতে মন পেতে দেবো।
সব যদি বলা যেত, সব কিছু উজাড় করে হয়ত তোকেই বলে দিতাম। সেইখানটাতেও গন্ডি পরে গেছে হয়তো , জানিস কি তুই? কিছুই তো জানিস না।যদি বুঝতিস সবটুকু আমাকে! কত যে সহজ হত আমার মনকে চেনা। তোকেও কাল আলতো আদরে ভাসিয়ে দিয়েছি সময়ের সে নদীটার ঢেউয়ের রঙ ঘেঁষে। ভেবেছি সকাল হতেই আলগোছে ফিরে পাব সূর্য্যের রঙ। অথচ আজ সকাল থেকেই দেখি আকাশের রঙে ছেপেছে মুখ-মন-চোখ। কেন হল এমনটা?
আজকাল আর ঘুম আসেনা, স্বপ্ন গুলোও আসেনা আর তাই। সেই সব নদী-পাহাড়ের স্বপ্নদের বড্ড মনে পড়ে, আর সেই আমার প্রিয় স্বপ্ন পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট ঘরটা! আসে অবরে সবরে।
একটা একটা করে শব্দের পুনরাবৃত্তি হয়ে চলে, আমার হাঁপিয়ে উঠি। অবুঝ হয়ে যাই। বারবার রেগে ফেলি, কখনও বা কেঁদে ফেলি। কখন নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধ করতে করতে থেমে যাই। তারপর আনমনে কথা হয় তোর সাথে। আর আরো একবার ভুল ভাবি সব কিছু, যা কিছু হবার নয় সেইটাই ভেবে বসি।
সময়ের সঙ্গে রোজ রোজ নয়, প্রতিটা ক্ষনে আমার এ কেমন তর্ক-দ্বন্দ্ব। ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্তি এসে আঁকড়ে ধরেছে, আজকাল ক্লান্তি আমায় ঘিরে থাকে সমস্তটা ক্ষন। সময়ের পর সময় কেটে যায়, ভাবি আমি, আর কতটা সময় পার হলে তবে আসবে সে সময়, যে সময়ের কথা সক্কলে বলে।
সব কিছু ঘোলাটে হয়ে আসে, নদীতে বাণ আসে যখন। তখন সে ঘোলা রঙে ডুবে যেতে মন টানে। সত্যি যদি ডুবে যাই, তুই হয়ত জানবিও না। তোর চোখ, শুধু তোর স্বর মনে ভেবে পিছু হাঁটি। এখনও বুকের নীচে ঢেউ, ছলাৎ ছলাৎ। শব্দটা বড় মিঠে, ঘুম পাড়ানি গানের মতন। কতকাল যে ঘুমোই নি জানিস? আজ সত্যি সত্যি লোভ লাগছে ঘুমের।
এ কেমন অভিশাপ বলতে পারিস? ঠিক কোন দোষের শাস্তিটুকু এমন করে নদী হয়ে গেঁথে গেলো? বোধ-বুদ্ধি-বিবেচনা-শিক্ষা-পরিচয়-পাপ-পুণ্য, আজ সব সব কিছু মিথ্যে লাগে, ফেলে আসা পথটাকে গুঁড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। সব কিছু ভুল, সব, সব, সব। ওই সব বই-পুঁথি-শাস্ত্র-নীতি সময় কাটানোর উপায় মাত্র কিছু বিলাসী মনের। একবার সময় এসে দাঁড়াক আর আমি বুঝে নিই সব নীতি কথার বিলাস-ব্যসন। ক্লান্ত, ক্লান্ত লাগে বড় বেশি।
চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসছে ক্রমশ, মেঘের জলের ছায়া চোখে। পোড়া গন্ধ পাই যখন তখন। কি পোড়ে বলতে পারিস তুই? পৃথিবী কক্ষপথে ঘোরে, আবর্তে জড়িয়ে যায় সূর্য্য , আরো আরো গ্রহ উপগ্রহ। কত সহস্র জন্ম জন্ম ধরে একই ভাবে ঘুরে চলি আমি, এক এই চেনা অপেক্ষা, আজ এই এত জন্ম পরে ক্লান্তি এসে হাতে হাত রাখে।
আবারো একটা রাত এসে কড়া নাড়ে, ক্লান্ত পায়ে উঠে দরজা খুলে দিই আমি।
আজ বরং ঘুম আসুক ঘরে, ঘুম আসুক নিটোল চাঁদের মতন।
আজ বরং ঘুম আসুক ঘরে, ঘুম আসুক নিটোল চাঁদের মতন।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন