শৌভিক ঘোষ

Souvik


নীল বিপন্নতা 

প্রিয় বন্ধুটার কোনো খবর নেই বছর দুই হল।
গোলপার্ক পুলিশ স্টেশন এর মিসিং ডায়রির জেরে ওঠা কালি একই রকম সমাদরে আজও আগলে যাচ্ছে
বছর ছাব্বিশের একটি নিঁখুত বিবরণ -
নাম তিস্তা ।
হারানোর সময় পরনে ছিল
এমব্রয়ডারি কাজের  একটা শাড়ি
যার আঁচল জুড়ে কোনো এক সময়
সাচ্ছন্দে  খেলা আটপৌরে একটা আকাশ , কপালের বাঁ দিক ঘেঁষে বোধ হয়
একটু আনাড়ি হাতে পরিয়ে দেওয়া
খুব পছন্দের নীল টিপ আর
দু'চোখের কিনার জুড়ে আবঝা কাজলের দাগ ; যেটুকু উদ্ধার করা গেছে আবঝা হয়ে আসা লেখা থেকে ,
তাতে সনাক্তকরণ বিবরণীর নির্যাস বলতে  এটুকুই।

গত বছর  কুড়ি অক্টোবর একটি আধা সরকারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীর একটা কাজ পেয়েছে সুশোভন।
বিডন স্ট্রিটের এক ফালি ফ্লাটে বৃদ্ধ হয়ে আসা মা ,
ক্রমশ জৌলুস খুয়িয়ে ফেলা বিবাহ যোগ্যা দিদি আর  নিত্য আরাধ্য ইষ্ট দেবতার সাথে
এখন যুক্ত হয়েছে তার পিয়ার অবয়ব সেখানে ;
এই অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে বড় হওয়া অনটনেও যা তার সাথে থেকেছে প্রতিনিয়ত।|
এই সুদীর্ঘ না থাকা সময়ে প্রাপ্তি বলতে
এক দেবদূতের মত  মস্তিস্কে বাসা নেওয়া আলজাইমার ব্যাধি ;
ঘুম নেই দুটো ডানপিটে চোখে।

আজকাল রাতের দিকে স্বপ্ন দেখে সুশোভন -
কে যেন তাকে ভীষণ ভাবে ডেকে বলে -
" এত অভিমান করতে আছে ?
সেদিনের থিয়েটার রো ডের রাস্তাটা এক বিকেলের বৃষ্টি তেই বড় পিচ্ছিল হয়ে গেল যে ! আমি আসব কেমন করে ?  "
তার কিছু পর সবুজে ঢাকা পাহাড়ের ভাঁজ বেয়ে সমতলে মেশা
একটা নদীর নিরন্তর প্রবাহের শব্দে উত্তাল হয় তার আপাত নিস্তেজ নিউরন গুলো কেমন যেন !

... হুহু করে বয়ে যাওয়া বাতাসী শব্দ ছাড়া আর কিছুই মনে পড়ে না তারপর।
শুধু কেউ তিস্তার দেখা পেলে একবার তার কথা জানিও সুশোভন কে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ