তানিয়া তুন নূর











একটি লোক বহুদূর হতে একটা বোঝা তার পিঠে বহন করে নিয়ে আসছিলো। একটু অদ্ভুতভাবে (সেটা যেমনভাবেই হোক)। বোঝাটি ভালোই ভারী। তবে শরীরে বোঝা বহন করবার একটা ছোট্ট কৌশল আছে। লোকটি কোনো কারণে সেটা জানতো না বা জানার আগ্রহ করেনি কখনো। গতরের খাটিয়ে সে ছিলো বটে, কিন্তু সেটাও যে মাথার কৌশলে সহজ হতে পারে তা সে উপলব্ধি করবার অবকাশ পায়নি। 

স্বাভাবিক ভাবেই লোকটির এমন অদ্ভুত বহন প্রকৃতি দেখে পথেরই কিছু লোক তাকে বলতে লাগলো, কীভাবে বোঝাটি পিঠে নেওয়া উচিত। কিছু লোক হাসলো, কৌতুক করে এড়িয়ে গেলো। কিছু লোক আবার কিছুই বললো না, তাকিয়ে নিশ্চুপ থেকে যার যার পথে চলতে থাকলো। আমার কল্পনায় আপাতত লোকটি একইভাবেই বোঝা বহন করে তার গন্তব্যের দিকে চলছে... 

...ঠিক এমন অবস্থায় আমি মেলাচ্ছি আমার মনের কিছু স্পষ্ট কথা, এই ছোট্ট কল্পনা কিংবা দৃশ্যায়ন এর সাথে। 

'ধর্ম', শব্দটি অর্থ বহন করে। একটি পরিপূর্ণ বোধগম্য অর্থ। শব্দটি দেখার পর, (যদি) অপরিচিত হলে, একটু ঘাটাঘাটি করেই আমরা আমাদের মস্তিষ্কে ধারণ করে নিতে পারি এর (এই শব্দটির) এক বোধগম্য অর্থ পরিচিতি। এই অর্থটা আমরাও বহন করি একভাবে। সেখানেই ঘটে পরিপূর্ণতা। যেই মুহূর্তেই মস্তিষ্কের বোধ-বুঝ পর্ব থেকে ধর্মকে আমরা গ্রহণ বা ধারণ করি আমাদের ব্যবহারে, আচারে, জীবনের প্রতিটি পথচলায়ও...সেই মুহূর্ত থেকে একে এক প্রকার বহন প্রক্রিয়াই বলা চলে। We are, then carrying that word and it's meaning.

এখন আমি কীভাবে আমার মন ও কর্মচর্চায় 'ধর্ম'টাকে বহন করে চলছি, তা পরিচিতি কিংবা প্রকাশ পাবে (সহসাই) আমার ব্যবহারে, আচরণে, প্রতিনিধিত্বে। একভাবে, আমি ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারীই। আমি 'যেভাবে' একে বহন করবো, যে নিয়তে, যে মতলবে, যেরকম নিষ্ঠার সাথে, যেরকম তৎপরতার সাথে- তা ঠিক ওভাবেই সত্যি হয়ে দাঁড়াবে মানুষের সামনে কিংবা, ঠিক ওভাবেই প্রতিনিধিত্ব দেবে আমার জীবনচক্রকে আরেক মানুষের সামনে। এটা খুব জরুরী প্রথমেই যে, আমি কীভাবে দেখছি 'ধর্ম'কে। তারপর জরুরী, এর অর্থবহতাকে কীভাবে আমি বহন করছি। আমার বহন প্রকৃতিই আমাকে হয় সঠিক, অথবা ভুল, কিংবা সমালোচনায় পূর্ণ অথচ নির্লিপ্ত একটি স্বীকৃতি দেবে। কেউ আমাকে সাবধানী-সুস্থ পথ দেখাবে, কেউবা তুচ্ছ করে একঘরে করবে, কেউ আবার কিছুই-আসে-যায়-না ভেবে চোখ গুটিয়ে রাখবে। 

মাঝে মাঝে কোনো মানুষই জরুরী না, জরুরী আপনার বোধ। জরুরী আপনি কোন ছাঁচে ছেঁকে চলছেন জীবনের মহত্ত্বকে। মূলকে। 'ধর্ম' একটাই এবং তা পরিপূর্ণ। সে কেবল তখনই আঁকার নিতে শুরু করে যখন মানুষ আপন আপন ছাঁচে একে বহন করতে শুরু করে। যখন দশ-মন-দশ-মানুষ জীবনের পথকে তো আলাদা করে নেয়, অথচ গন্তব্যকে 'এক' করে নয়। তখন ধর্মও গ্রহণ করে মানুষকে হরেক নামে। হরেক রকমে। হরেক বাধ্যবাধকতায়। মানুষ কোথাও ঠেকলে, তার ভেতরে প্রশ্নই আগে জন্মে। আর প্রশ্ন যেখানে জন্মে, সেখানে শিক্ষণও থাকে। 

কিন্তু কথা হলো একটাই , আমরা এক ধর্ম থেকেই সব প্রশ্নের এবং সব ঠেকে যাওয়া চিন্তার উত্তর ও খোরাক খুঁজছি। 'ধর্ম' সবার, আমার তো কেবল— বহন প্রকৃতিটা। মানুষ এটাই বুঝে উঠুক আগে। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ