রুমকি রায় দত্ত



দোয়রী চোখ খুলেই দেখলো সামনের জানালা দিয়ে থোকা থোকা ধোঁয়া ওর ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ছে। বিরক্ত মুখে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে যেতে গিয়েই হোঁচোট খেল চটিতে।ভাবলো আজ হঠাৎ পায়ের কাছে চটি কে রাখলো? সে তদন্ত পরে হবে। চটিটা পায়ে গলিয়ে ফটফট করে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে উঠতে লাগলো। রাতে শোয়ার আগে চিরকাল দু’পাশে বেণী বাঁধা অভ্যাস,কিন্তু সারারাত স্বপ্ন দেখতে গিয়ে বালিশে এপাশ-ওপাশ করে এখন মাথাটা ঠিক কাকের বাসা মনে হচ্ছে।  ঘটাং,  ছাদের লোহার দরজার ছিটকিনি খুলে বাঁ-দিকে বেঁকে গেল। আলসের ভাঙা পাঁচিল ধরে সামান্য ঝুঁকে চিৎকার করে ডাকলো ‘ বামন কাকিমা,ও - ও বামন কাকিমা’। কাউকে দেখতে পেল না, শুধু দেখলো উঠানে রাখা কাকিমার জ্বলন্ত উনুন থেকে বগবগ করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে,আর সেই ধোঁয়া হেলে দুলে সোজা গিয়ে ঢুকছে ওর ঘরে। ধোঁয়া কেমন কোমর বেঁকিয়ে হেলে দুলে কুন্ডলীর পাকিয়ে ওর ঘরের দিকে যাচ্ছে সেই দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করে আরো দ্বিগুন জোড় দিয়ে ডাকলো ‘ও—ও—ও বামন কাকিমা’।

এবারে কাজ হল,দেখলো বামন কাকিমা শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে ছুটে এসে দাঁড়ালো।তারপর ছাদের দিকে মুখ করে বলল—‘ অ দুয়ারী মা, কি বলছিস?’
দোয়ারী মা!—অবাক হল দোয়ারী। তারপর কটমট ধোঁয়ার দিকে তাকাতেই বামন কাকিমা নরম সুরে বলল ‘ আহা! ভারি ভুল হয়ে গেছে রে মা, আহারে! ধোঁয়ায় অমন ডাগর চোখে জল এসে গেল গো। তারপর সামান্য থেমে বলল ‘মিন্‌সে, তোর বামন কাকার কাজ’। খটাস করে কপালে করাঘাত করে বলে, “ কতবার বলেছি অমন উঠোনের মাঝে জ্বলন্ত উনুন রাখব না, দোয়ারী মায়ের চোখ জ্বলে। তা কে শোনে কার কথা”। কথার ফাঁকে বামন কাকা এসে উনোনটা সরিয়ে নেয়।

দোয়ারী তখনো হাঁ,এমন তো কখনও ঘটেনি! এ কেমন মিরাক্কেল? প্রায় প্রতিদিনই দোয়ারীর সকালটা শুরু হয় ধোঁয়ার গন্ধ শুঁকে আর বামন কাকিমার সঙ্গে বাকবিতন্ডায়। ছাদে উঠে দোয়ারী উনানের কথা বলার আগেই বামন কাকিমা এসে উনানটা আগলে দাঁড়িয়ে বলে ‘তা লো বাছা,জানালাটা বন্ধ করলেই হয়,ধোঁয়া কি আর আটকে রাখার জিনিস?  এত তো যুবতী মেয়ের যৌবন রে,ধরা কি এত সোজা’।

দোয়ারীও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়, সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয় –‘তোমরাও তো বাবা উনোনটা কে ওপাশে রাখলেই পারো’।
প্রতিদিনের তুতু ম্যায় ম্যায়, চলতে চলতে দোয়ারীর রোজ দেরি হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনই টিউশন বাড়িতে ঢোকার আগে কেমন যেন একটা অপরাধী অপরাধী লাগে নিজেকে। আজ দোয়ারী এত অবাক যে, বেশ কিছুক্ষণ কথায় বলতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিসাব মিলাতে চায়লো। আজ যে এমনি এমনি সময় বয়ে যাচ্ছে সে খেয়ালও গেছে দোয়ারীর। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। সিঁড়িটা বেশ ভাঙা,ভয় ভয় করে, তবুও রোজ ওই সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসেই ঝগড়া করে। দোয়ারীর কত স্বপ্ন,এই বাড়িটা ভালো করে সারিয়ে রঙ করবে। ঘরে দামি দামি আসবাবপত্র রাখবে। দেওয়ালে ও্যায়াল র্যা ক,তাতে সুন্দর সুন্দর সাজনোর জিনিস। সিঁড়িটা সারিয়ে আপাতত লাল কার্পেট পেতে দেবে। স্বপ্ন জুলুজুলু চোখে দোয়ারী নিচে নেমে আসে।

উরিব্বাস! এক লাফ মারে দোয়ারী, ঘড়িতে নয়টা বেজে দশ। আজও লেট। দোয়ারীর বোন বাবলি হয়েছে ওর আরেক শত্রু। ঠিক ওর বাথরুমে ঢোকার সময় হলেই সে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে বসে থাকে। রোজ ঝামেলা। বাথরুমটা খোলা উঠানে। কলতলায় দাঁড়িয়ে তো ওর মত সমত্ত মেয়ে চান করতে পারে না। অগত্যা দোয়ারী গিয়ে বাড়ির ভিতরের রোয়াকে পা ঝুলিয়ে সবে বসতে যাবে,হঠাৎ বোন বাবলি কোথা থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো দোয়ারী কে। তারপর চেপে দিদিকে আদর করে বলল  ‘দিদি আমার দিদি, আমার প্রিয় দিদি’। প্রিয় দিদি! বিস্ময়ে দোয়ারী আবার অবাক হয়ে গেল। কিন্তু অবাক হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল। এরপর যা ঘটলো দোয়ারী তো প্রায় মাথা ঘুরেই পরে যেত। যে সহজ সরল সত্য কথাটা দোয়ারী এত দিন ধরে বলে এসেছে, অথচ ওর বোনের মগজে ঢোকাতে পারেনি,ওর বোন সেটাই বলল। বলল ‘ দিদি তুই এখানে বসে? তোর তো বেরোতে দেরি হয়ে যাবে। তুই আগে বাথরুমে ঢোক। তুই বেরোলে আমি যাব’।

এটাও সম্ভব! এই একই কারনে কতদিন কলেজে অনার্স ক্লাসটা করতে পারে নি, বোনের কাছে কত মনতি করেছে। আজ সেই বোন কিনা-- দোয়ারী টুক করে বাথরুমে ঢুকে মনের সুখে সাবান দিয়ে গা ঘষতে লাগলো। আজ যে ওর বড় সুখের দিন।

[২]

দোয়ারী ছাত্রের বাড়ির সামনে এসে একবার ঘড়ির দিকে দেখলো। আজও দেরি। এক পা বাড়িয়ে দরজায় কড়া নাড়তে গিয়ে থমকে গেল। মনে ভাবলো নাহ্‌, থাক আজ আর পড়াবে না। সকাল থেকে মনটা বেশ ভালো আছে। ভিতরে ঢুকলেই দেরির জন্য কৈফিয়ৎ, ছাত্রের মায়ের গোমড়া মুখ। ছাত্রের বাবার,সামনে দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে খুক খুক কাশি, মেজাজের শ্মশান যাত্রা ঘটে যাবে। হাত সরিয়ে পিছনে ফিরতেই শুনতে পেল ‘অ—মা, দোয়ারী ম্যাডাম, ফিরে যাচ্ছেন কেন?—দেরি হয়েছে তো কি হয়েছে? আসুন আসুন । দোয়ারী বিস্ময়ে ‘থ’। এও সম্ভব! পিছন ফিরে দরজার ভিতরে পা রাখতেই ছাত্রের বাবার সহাস্য কন্ঠস্বর শুনতে পেল। বাড়ির ভিতরের দিকে তাকিয়ে ছাত্রের মায়ের উদ্দেশ্যে বলছেন---‘ শুনছ,ও ও দোয়ারী ম্যাডাম এসেছেন, কিছু ভালো-মন্দ খাবার আনো দেখি। ম্যাডামকে আজ পেট ভরে খাওয়াতে হবে, বুঝলে—এ’। দোয়ারী একটু ধ্বন্দ্বে পড়ে গেল,একি সত্যি নাকি মস্করা! সেই কবে যেন খবরের কাগজে দেখেছিল লোডশেডিং এর প্রতিবাদ জানাতে এলাকার জনসাধারণ এক অভিনব প্রতিবাদের আশ্রয় নিয়েছিল। ইলেক্ট্রিক অফিসে গিয়ে ভাঙচুরের বদলে গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে মিষ্টি, সিঙারা খাইয়েছিল সকলকে। দোয়ারী ‘না না, আমি কিছু খাবো না’ বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু সুযোগ হল না। কিছু বলার আগেই ভালো ভালো বেশ রকমারি খাবার ওর সামনে উপস্থিত হল। সত্যিই আর্শ্চয ব্যাপার  যে বাড়িতে কোনো দিন এক কাপ চা জোটেনি, সেখানে থালা ভর্তি জলখাবার!

দোয়ারীর পেটটা আয়ঢায়  করছে। হঠাৎ করে এত খাতির পেলে পেটের আর কি দোষ? দুপুরে বন্ধুরা বড় মাঠে দেখা করতে বলেছে। দোয়ারীর কোচিং ক্লাসের বন্ধু। এমনিতে দোয়ারীর বিশেষ বন্ধু নেই,বন্ধুরাও ওকে নিয়ে বড় একটা মাতামাতি করে না। হঠাৎ ওরা ডাকলো কেন? ভাবতে ভাবতে হাঁটা লাগালো বড় মাঠের পথে। মাথার উপর বেশ রোদ্দুর,দোয়ারীর মনে হল ইস্‌! কেউ যদি বাইকে করে ওকে পৌঁছে দিত!

[৩]

অনেকটা পথ হেঁটে আসায় পেটটা বেশ ঝরঝরে লাগছে ওর। বড় মাঠের গেটের কাছে এসে একবার ঘড়ির দিকে দেখলো। প্রায় এক টা বাজতে চলেছে। মনে মনে বলল—‘ইস্‌! ওরা আর সময় পেল না,এই দুপুরে কেউ মাঠে বসে?” একা দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ আড়ষ্ঠ লাগছে দোয়ারীর। সব লোক যেন ওকেই দেখছে। মনে ভাবলো আজ সকাল থেকে সব কি যে হচ্ছে। যা হওয়ার নয় তাই হচ্ছে। একটু এগিয়ে এসে একটা ছাতিম তলায় বসলো। আবার ঘড়ি দেখলো। ঠিক বিকেল পাঁচটায় একটা ইন্টারভিউ আছে। মনে হতেই ব্যাগ হাঁৎরে বার করলো সেই বইটা যেটা, গতকাল বাস থেকে কিনে ছিল। যেটাতে লেখা আছে ইন্টারভিউ দেওয়ার প্রস্তুতি। বইটা খুলতেই চোখে পড়ল ইন্টারভিউ লেটার টা। চিঠিটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ও মনে করার চেষ্টা করল এই কোম্পানিতে ও চাকরির এ্যপ্লিকেশনটা কবে করেছিল। নাহ্‌, কিছুতেই মনে করতে পারলো না। পেটের ভিতর কি ছুঁচোয় ডন মারছে? বোঝার চেষ্টা করল। বন্ধুরা কখন আসবে কে জানে? নিজেই বুঝলো ঠিক খিদে নয়, অত খাওয়ার পর খিদে পেতে পারে না। আসলে প্রতীক্ষা করতে করতে খাওয়ার ইচ্ছাটা মনে জেগেছে। দোয়ারী এদিক-ওদিক তাকালো। একটু এগিয়ে রাস্তার ওপাশে ছাতুওয়ালা বসে আছে। মনে মনে বলল—আহাঃ! ছাতু মাখা,কাঁচা লঙ্কা,পেঁয়াজ। দোয়ারী দোকানটা সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আশেপাশে দু-চারটে অবাক মুখের কৌতূহলী দৃষ্টি। ছাতুওয়ালাও অবাক,যেন দোয়ারী নয়,আর্শ্চয মানুষ। কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে একগাল হেসে বললো ‘ দিদিমণি আপনি নিজে এসেছেন?---দোয়ারী মনে মনে ভাবলো আর্শ্চয ব্যাপার তো। এই লোকটাকে আগে কোনোদিন দেখেছে বলে মনে করতে না পেরে বললো ‘আপনি আমাকে চেনেন?’ লোকটি একগাল হেসে বললো ‘মসকরা করছেন দিদিমণি, আপনারে কে না চেনে?’ বলেই দোয়ারীর চাওয়ার আগেই একটা স্পেশাল ছাতুমাখা ধরিয়ে দিল দোয়ারীর হাতে। দোয়ারী জিজ্ঞাসা করলো ‘কত টাকা হল?’ লোকটি কান মুলে দাঁতে জিভ কেটে বলল ‘রামরাম ,কন কি? আপনার থেকে টাকা নিব?’

দোয়ারী আবার বড় মাঠের সামনে এসে ছাতিম গাছটার তলায় আধভাঙা বেঞ্চটাতে বসলো। একটা শুকনো পাতা তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে কিন্তু ভাবছে অন্য কথা। ইন্টারভিউটা কেমন হবে। হঠাৎ চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এলো। পিছন থেকে কে যেন চোখ চেপে ধরেছে। তোতোন,কোচিংক্লাসের সব থেকে সুন্দর ছেলেটা,যে ছেলেটাকে ও কখনও কখনও দেখলেও ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। দোয়ারীর অবাক হওয়ার এখনও অনেক বাকি। দেখতে দেখতে ওকে বন্ধুরা ঘিরে ধরলো। দোয়ারী বিজয়ের পাশে বসতেই তোতোন বলল ‘ দোয়ারী, তুই এইদিকে আয়, আমার পাশের ঘাসটা বেশ নরম’। দোয়ারী উঠে তোতোনের পাশে বসতেই নয়ন বলল  ‘না, দোয়ারী আজ আমার পাশে বসবে’। আর্শ্চয ব্যাপার তো! কোচিংক্লাসে পাশে বসতে গেলে সবাই বলে পাশে ওর বন্ধুর জায়গা আছে। আর আজ কিনা তারাই ওকে পাশে বসানোর জন্য অস্থির!  দোয়ারী মনে মনে ভাবে সত্যিই সব অদ্ভূতুরে ব্যাপার ঘটছে আজকে। তোতোনের পাশে যে অত বড় একটা টেডিবিয়ার বসানো আছে সেটা এতক্ষণ লক্ষই করেনি দোয়ারী। হঠাৎ চোখ পড়তেই লাফিয়ে ওঠে, আবার চুপচাপ বসে পরে। ইস্‌! কবে থেকে ওর এমন একটা টেডিবিয়ার কেনার ইচ্ছা। হঠাৎ বিনিতা এসে ওর কোলে টেডীবিয়ারটা বসিয়ে দিতেই দোয়ারী লাফিয়ে উঠে বলে, ‘এটা আমার?’ বন্ধুরা সবাই সমস্বরে বলে ওঠে ‘তোর জন্যই’। দোয়ারী বলে ‘ এটা কেন?’ বন্ধুরা বলে - ন্যাকা, জানিস না যেন?’

[৪]

পাঁচটা বাজতে ঠিক পাঁচ মিনিট বাকি। দোয়ারী অফিসটার সামনে এসে তোতনের বাইক থেকে নামলো। অন্য দিন হলে বোধহয় এত সৌভাগ্য হতো না। আজ বলেই সব হচ্ছে। আর যাই হোক বাসের ভাড়াটা তো বাঁচলো। দোয়ারী টেডিটা নিয়েই অফিসের রিসেপশনে এলো। দেখলো বেশ বড় একটা লম্বা লাইন। সবার শেষে বসে পাশে টেডিটা রাখলো। একবার চোখ বোলালো সবার মুখের দিকে। কেউ মুখের সামনে বই খুলে বসে, কেউ বন্ধ চোখে চশমা এঁটে সোফায় ঘার এলিয়ে চুপচাপ কি ভাবছে। কেউ বিরবির করে কি সব বলছে( মন্ত্র তন্ত্র) হবে! কেউ আবার হাত পা নেড়ে পাশের জনকে কি যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে। কেউ আবার ঘনঘন ঘড়ি দেখছে। দোয়ারী গুনছে ওর আগে ক’জন আছে। হঠাৎ ইন্টারভিউ রুমের দরজার হাতলটা সামান্য নেমে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলো। একটা নীল রঙের পরিপাটি করে শাড়ি পড়া মেয়ে এসে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বললো ‘গুড ইভিনিং’। তারপর হাতে ধরা লিস্ট দেখে একটা নাম ডাকলো। দোয়ারী উত্তেজনায় ঠিক শুনতে পেলনা। কিন্তু আর্শ্চয ব্যাপার মেয়েটি ওর সামনে এসে বিনয়ী ভাবে বলল ‘ ম্যাডাম,আপনাকে এভাবে বসে থাকতে হল বলে আমরা দুঃখিত। আপনি একটু ভিতরে আসুন’। দোয়ারী থতমত খেয়ে গিয়ে বলল ‘ আ,আ,আমি,---ভিতরে যা-আ-আ ব?’ মেয়েটি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই দোয়ারী হেলেদুলে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু একি! আর্শ্চয ব্যাপার! ও ভিতরে ঢুকতেই সাবাই উঠে দাঁড়ালো। একজন একটা বোকে এগিয়ে দিল ওর হাতে। দোয়ারী হাত বাড়িয়ে বোকেটা নিয়ে দম ও চোখ দুটোই বন্ধ করে ফেললো।

হঠাৎ একজন বলল ‘ আপনি বসুন ম্যাডাম, আপনি না বসলে আমরা কি করে বসি বলুন তো’। দোয়ারী ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। একজন বয়স্ক লোক ওর দিকে একটা খাম এগিয়ে দিল। দোয়ারী কাঁপাকাঁপা হাতে খামটা নিয়ে ভিতর থেকে কাগজটা বার করলো। ইন্টারভিউ হওয়ার আগেই নিয়োগপত্র!  তাও আবার যে সে পদের জন্য নয়,একেবারে ম্যানেজিং ডিরেক্টর! দোয়ারীর হঠাৎ করে লাফাতে ইচ্ছা করলো,ইচ্ছা করলো গলা ছেড়ে গান করতে। কতদিন এই সব বড় বড় অফিসের সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মাথা তুলে তাকিয়ে থেকেছে সব চেয়ে উঁচুতে। মনে মনে কতবার সর্বোচ্চ চেয়ারটাতে বসেছে। ওর সামনে টেবিলের উপর রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো ব্ল্যাকবেরী। সামান্য একটা তিন হাজার টাকার মোবাইল কিনবে বলে কতদিন ধরে টাকা জমাচ্ছে। বিস্ময়ের কি আরোও বাকি আছে?---ভাবতে ভাবতে রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই একটা আই-টেন এসে দাঁড়ালো ঠিক ওর গা ঘেষে। একটু হলেই দোয়ারী পড়েই যাচ্ছিল। একটা সাদা উর্দি পড়া ড্রাইভার সালাম ঠুকে গাড়ির পিছনের দরজাটা খুলে দাঁড়াতেই দোয়ারী প্রায় মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিল। সামলে নিল।
গাড়ি বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দোয়ারী উৎসুক হয়ে তাকালো। বাড়িটাও কি বদলে গেছে? না, বাড়ি একই আছে কিন্তু বাড়ির সামনে এত লোক? দোয়ারী গাড়ি থেকে নামতেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলো। দোয়ারী ভিড় ঠেলে ঘরে ঢুকলো। রাত হয়ে গেছে। বাড়ির ভিতরে কেউ নেই। দোয়ারী নিজের ঘরের দরজায় আল্‌গা ঠেলা মারতেই খুলে গেল। যেন ওর ঘর নয় স্বপ্ন পুরি। দোয়ারী দুপাশে হাত ছড়িয়ে নাচল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকাতে গিয়েই অবাক । এক সুপুরুষ পিছন থেকে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আসতে আসতে সুপুরুষের ঠোঁট নেমে এলো ওর ঠোঁটের কাছে। এবার দোয়ারী স্পষ্ট দেখল তাকে, এ কে?—এ যে ওর ড্রিমবয়, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক!

[৫]

‘বলি, ওলো মুখপুড়ি, আর কত ঘুমাবি,  ওঠ এবার। আজও দেরি করলে নতুন টিউশন টাও যাবে যে’। মা ভয়ঙ্করী জোড়ে জোড়ে ঠেলা লাগাতেই দোয়ারী লাফিয়ে উঠে বলল “আঃ! মা, কেন এমন করছো? জান না, আমি এখন ‘সেলিব্রিটির বউ’। কুন্ডলী পাকানো ধোঁয়ায় তখন দোয়ারীর ঘর প্রায় ভরে উঠেছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ