সুশান্ত কুমার রায়

রঙ্গপুরের ভাওয়াইয়া ও লোকজ সংস্কৃতি
“বাবা কেরামত আলীর দোয়ায় ভরা
ধরলা তিস্তার পলিত গড়া,
বেগম রোকেয়ার জন্মে ধন্য দ্যাশ হামার রংপুর
ওরে আইসো বন্ধুধন জলপান খায়া ধরি
ভাওয়াইয়া গানের সুর।

নীল রং আজ্জিয়া দ্যাশ রংপুর হইয়াছে
রাজা ভগদত্তের রঙ্গমহলে ঘটনাও আছে
ওরে আব্বাস ভাইয়ায়ের ভাওয়াইয়া গান কতই যে মধুর
ওরে গাড়িয়াল ভাইয়ের ভাওয়াইয়া সুর

কতই যে মধুর।
আইসো বন্ধুধন জলপান খায়া ধরি ভাওয়াইয়া গানের সুর’’ ... ॥

( কথা ও সুর- মো. সিরাজ উদ্দিন )

বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। কালের আবহে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাঙালি সংস্কৃতি নবধারায় নব আনন্দে বিকশিত হয়ে আজ নবরূপ ধারণ করেছে। যদিও আমরা অতীতের মতো অতি তৃপ্তি সহকারে রস আস্বাদন অনুভব করিনা। আর এই দীর্ঘ সময়ের পথ পরিক্রমায় নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে অবগাহনের সময় অনেক গ্রহন বর্জন পরিবর্তন পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির পুরনো অনেক উপাদান একদিকে যেমন হারিয়ে গেছে বা মুক্ত হয়েছে তেমনি অন্যদিকে আবার অনেক নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক একটা সময় বা কালান্তে এক একটা নব ধারার সংযোজন ঘটেছে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে। লোকসংস্কৃতিই লোকসংগীতের পরিচয় বা সাক্ষ্য বহন করে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়া এর ব্যতিক্রম নয়। ভাওয়াইয়ার কথা ও সুরে আমরা খুঁজে পাই অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য। যে ইতিহাস আর ঐতিহ্য কালের আবহে তথ্য প্রযুক্তির ডামাডোলে আজ বিস্মৃত প্রায়। আমরা যদি আমাদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে চাই তাহলে আমাদের ফিরে যেতে হবে শেঁকড়ের সন্ধানে। রংপুরের ভাওয়াইয়া শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগঠক, গবেষক এবং বাংলাদেশ বেতারের প্রাক্তন উপ-মুখ্য সংগীত প্রযোজক মো. সিরাজ উদ্দিনের উপরে উলে¬¬খিত অত্যন্ত জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গানটির কথামালা ও সুরের ভাবনায় রঙ্গপুরের অতীত ইতিহাস আর ঐতিহ্য বাঙময় হয়ে ফুটে উঠেছে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যে গাঁথা বাংলাদেশের উত্তর জনপদের একটি সুপ্রাচীন জেলা রঙ্গপুর। বর্তমানে রংপুর রঙ্গ-রূপ ও রসে ভরপুর এক প্রাচীন জনপদ। 

হিমালয়ের দক্ষিণে পলি গঠিত বিস্তীর্ণ সমতল ভূ-ভাগ জুড়ে রংপুর জেলার অবস্থান। এক সময় বৃহত্তর রংপুর জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর নিয়ে গঠিত ছিল। চিরায়ত বাংলার ঐতিহাসিক কালের গোড়ার দিকে এ অঞ্চলটি কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তারপর কালের আবহে নানা ধরনের পট পরিবর্তন আর ঘটনাবহুল ইতিহাস বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, বিদ্রোহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং নানা ধর্মীয় ও সামাজিক ঘটনাবলীর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এই বৃহত্তর রংপুর জেলা। ইতিহাসের অনেক নায়ক-নায়িকার আগমন নির্গমনের ও রাজকীয় আমোদ প্রমোদ রঙ্গতামাশার এক মহারঙ্গমঞ্চ এই রঙ্গপুর। শুধু তাই নয় ভাষা আন্দোলনের আর মুক্তিকামী স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ এ অঞ্চলের মানুষের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আর লাখো মা বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে অর্জিত যে স্বাধীনতা তা একদিনে আমাদের করায়ত্ত হয়নি। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তবেই অর্জন করেছি আমরা এ স্বাধীনতা। ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে বাংলার জনগণ তাঁদের শক্তি, সাহস, শৌর্য-বীর্যের পরিচয় দিয়েছে। যখনই কোন ক্রান্তিকাল এসেছে বাংলার দামাল ছেলেরা পিছুপা না হয়ে সগর্বে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে স্বাধীনতার লাল টুকটুকে সূর্য। যা বাঙালির গৌরব আর অহংকারের ইতিহাস। স্বাধীনতা লাভে বীর বাঙালির মনে আনন্দের জোয়ার আসে। বাংলাদেশ বেতার রংপুরের জনপ্রিয় গীতিকবি ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ মিশ্রের কথা ও সুরে মূর্ত হয়ে উঠেছে স্বাধীনতার আনন্দ ও আবেগঘন মুহুর্ত।

“সোনার বাংলা স্বাধীন হইল রে
ওরে ভাই বাড়িল দেশের মান
কৃষক মজুর সবার মুখে
জারি-সারি ভাওয়াইয়া গান
রংপুর হইল রংয়ের পুরি 
( মোরা ) সুখে দুঃখে বসত করি
অন্তরে বাহিরে মোদের আনন্দদেরই বান’’ ...।

এ অঞ্চলের মানুষ সহজ সরল প্রকৃতির পরোপকারী বন্ধু ভ্রাতৃম অল্পেই তুষ্ট, আন্তরিক ও অত্যন্ত অতিথি পরায়ন। বাংলা সাহিত্যাঙ্গণে এক মহীয়সী নারী এবং নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার জন্ম স্থান ও স্মৃতিকেন্দ্র রংপুরের অদূরে পায়রাবন্দে অবস্থিত। এছাড়াও রংপুরে রয়েছে ঐতিহাসিক কালের পুরোনো তাজহাট বাড়ি, ( বর্তমানে রংপুর জাদুঘর ) ঐতিহাসিক কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া স্মরণে প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহ। সত্যিই বেগম রোকেয়ার জন্মে দ্যাশ হামার রংপুর ধন্য হয়েছে। ধরলা তিস্তার পলি গঠিত এ অঞ্চলে রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী আর দিগন্ত বিস্তৃত ফসলে ভরা মাঠ। 

তখনকার দিনে ধানভানা, হলুদ গুড়া, চাউল গুড়া ও সাংসারিক অন্যান্য অনেক কাজে ঢেঁকি উরুন গাইনের প্রচলন বা ব্যবহার ছিল কানে শোনা ও চোখে দেখার মতো। ভোর বেলা গেরস্থের বাড়িতে ঢেঁকির কচকচানিতে ও উরুন গাইনে ধান ভানার শব্দে অনেকের ঘুম ভেঙ্গে যেতো। মো. সিরাজ উদ্দিন এর গানটির প্রত্যেকটি শব্দ ও কথামালায় ধরা পড়েছে সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ। বিশেষ করে জলপান ও গুয়াপান শব্দ দুটির কথা উলে¬¬খ না করলে বোধ হয় কেমন যেন অম্পূর্ণতা থেকে যায়। এ অঞ্চলের মানুষ আগের মতো চাল সেজে উরুন গাইনে গুড়া করে তা আইট্যা কলা ( বীচিকলা ) সহযোগে ভক্ষণ না করলেও এখনও মজা গুয়াপান খায় আনন্দের সহিত অতি মজা করে। অতিথি আপ্যায়নে মুড়ি, মুড়কি, বিস্কুট বা নাস্তা জাতীয় কোন কিছুর অনুপস্থিতিতে মজাগুয়ার ( পরিপক্ক সুপারি মাটির পাত্রে রেখে একটা নির্দিষ্ট সময়ে মজানো হয় ) তুলনা হয় না। মজাগুয়া আর পানের সাথে যদি থাকে যোগীর চুন তাহলে তো গুয়া খাওয়ার গুণই আলাদা। ঠোঁট টুকটুকে লাল করে গুয়াপান খাওয়া ( বাটা সাজিয়ে ) আর খোশগল্প কিচ্ছা কাহিনীতে মেতে ওঠা এ অঞ্চলের মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ছিল লক্ষ্য করার মতো। যে একবার এ অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে এসে রংপুরের গুয়াপান খেয়েছে তাকে ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়ার সহজ সরল মানুষের ধরলা পাড়ের সরলার অতিথি পরায়নতার কথা বারবার মনে পড়বেই তাতে কোন সন্দেহ নেই।

“আশি সনি টসী বুড়ি
ডের সেরি ঘ্যাগ গালাত ধরি
নাটি ঢোকা দিয়া
যায় বুড়ি নাতিনের বাড়ি দম নিয়া দম নিয়া।
হাতোত নিছে দইয়ের হাড়ি জলপানের টোপলা
জুদায় জুদায় বান্দি নিছে খই মুড়ি আর মোলা
কায় করে নাতিনের খবর দেখি আইসে যায়া-
ভাদোর মাসি তালপাকা রৈদ দুরান্তরী ঘাটা
খোড়ে খোড়ে হাটে বুড়ি নাইগচে পায়োত কাঁটা
হায়রে নাতিনের মায়া কইরলে বুড়ির হায়া।
এক বিয়ানের ঘাটা বুড়ির দিন মনটায় যায়
ছেয়াত বসি বারে বারে পিষা গুয়া খায়
কপালে ঘাম মোছে বুড়ি কাপড়ের অঞ্চল দিয়া’’ ...॥ 
( কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ মিশ্র )

সোনালী অতীত ফেলে এসে আজ আমরা হাহাকার করি-দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি গুমড়ে মরি। অতীত স্মৃতি রোম মন্থন করা ছাড়া আর কোন উপায়ন্ত থাকে কি ? অতীতের কোন এক সময়ের কোন এক ঝড়ের দিনে বৃষ্টিতে ভিজে বাবা মায়ের শাসন বারনকে অগ্রাহ্য করে দল বলে আম কুড়ানোর স্মৃতি কার না হৃদয় পটে ভেসে ওঠে। ন্যাংটা শরীরে শৈশবের কৈশরে পদ্ম কাঁটার আঘাত সহ্য করে বিলঝিলের কলকল ছলছল পানিতে পদ্মখোঁচা খাওয়ার অভিপ্রায়ে প্রতিযোগিতা করে সাঁতার কাটার স্মৃতি কার না মনে পড়ে ?

“চায়া দেখ ঝাঁকে ঝাঁকে
উড়াইল বগিলা
কি সুন্দর ফুটিয়া আছে
পদ্ম আর হোলা....॥

উচা দোলা জলত ডুবি
হইচে এক সমান
চাইরপাকে ব্যাঙের কান্দন
থোয়ায় না যায় কান’’ ...॥ ( কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ মিশ্র )

ছোটবেলায় বাড়ির পাশে খাল বিলে মাছ ধরার দৃশ্য ছিলো শিল্পীর তুলির আঁচড়ে রঙে রঙে আঁকা। সোনালুর ফুল ( বাদর লাঠি ), মাদারের ফুল ও শিমুল ফুলের উজ্জ্বল্য ছিলো মনোহরণ ও নজর কাড়ার মতো। প্রকৃতি তখন নিজেকে সাজিয়ে তুলতো নব আভরণে নব আনন্দে। শীতকালে স্বর্ণলতার উজ্জ্বলতা বাহার বৈচিত্র্য ধরা দিতো বরই গাছে আর বর্ষাকালে বর্ষার পানিতে সদ্য প্রসূত ছোট ছোট ঝিনুক পানির মধ্যে জাহাজের মতো চলাফেরা করতো। তখন পানির নিচে দু’হাতের মাঝখানে হাতের তালুতে বন্দী করে ভিতরে স্প্রিং এর ন্যায় ঘূর্ণন অবস্থা যখন অতি উৎসুক দৃষ্টি দিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে অবলোকন করতাম তখন কতই না মজা হতো। আরও মজা হতো বর্ষাকালে বন্যার পানিতে। গোসল করার সময় চিংড়ি ও চাঁদা মাছ ধরে কচুরিপানার ফাঁপা অংশের সাথে চিংড়ি ও চাঁদা মাছের কাঁটা ফুঁড়িয়ে দিয়ে পানিতে ছেড়ে দিতাম। তখন জাহাজের মতো ভেসে ভেসে চলতো পানির মধ্যে। এসব এখন শুধু স্মৃতি। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে অতিষ্ট মানুষ লোকজ সংস্কৃতিতে লক্ষ্য করা যেত। ঢাক, ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র সহযোগে লোকজন কাঁদামাটি ও পানিতে ভিজে একবাড়ি থেকে অন্যবাড়ি এবং একগ্রাম থেকে অন্যগ্রামে মাগন করে ঘুরে বেড়াতো। গীতিকবি রবীন্দ্রনাথ মিশ্র ব্যাঙের বিয়ে চিত্রায়িত করেছেন এভাবে-

“বিয়ায় সাজিলরে হোলা ব্যাঙ
হলদি মাখি বর সাজিয়া, মেলেয়া দিচে ঠ্যাং
হোলা ব্যাঙের বিয়াও হইবে টুরীর বেটিক দিয়া
বৈরাতি সাজিচে পুঁটি তেল সেন্দুর পিন্দিয়া
এ খালে ও খালে ঝাঁপে বেড়ায় ঘটক চ্যাং’’ ...॥ ( কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ মিশ্র )

তখনকার দিনে বিলঝিলে পদ্মের বিচরণ ছিলো যথেষ্ট হারে। ফলশ্রুতিতে গ্রাম্য মেলা ও হাট বাজারে বিশালাকার গোলাকার পদ্মপাতা দিয়ে মুড়ি, মুড়কি, গুড়, লবণ, মাংস ও চুনের পেটলা পুটলি বাধা হতো। পোটলা-পুটলি বাধতে পদ্ম পাতার জুড়ি মেলা ভার। খাল-বিলে তখনকার দিনে যেমন বড় বড় মাছ ছিল আর এসব বড় বড় মাছ শিকারে অভিজ্ঞ ছিলো কুড়–য়া পাখি। দোলা বাড়িতে মাছ শিকার করে শিমুল গাছের মগডালে বসে ভোজনের কাজ সারতো কুড়–য়া পাখি। কুড়–য়া পাখি বেশিক্ষণ উড়তে পারতো না বলে গ্রামের লোকজন তাড়া করে হাঁপিয়ে তুলতো। হাঁপিয়ে পড়ার কোন এক পর্যায়ে নিজের ভোজনটুকু হারিয়ে ফেলতো। কুড়–য়া পাখিকে নিয়ে ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়ায় বেশ কিছু গান রচিত হয়েছে এবং সেই সমস্ত ভাওয়াইয়া গানের কথা ও সুর আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। গ্রাম বাংলায় কালে ভদ্রে প্রচলিত এ রকম একটি বিখ্যাত গান হচ্ছে-

“সোনার লাঙল রূপার ফাল
মোর কুড়–য়ায় জুড়িছে হাল রে...॥ 

ঘুরিয়া ফিরিয়া দুনিয়া দেখিস
দেখিস কি অন্তর রে কুড়–য়া
দেখিস কি অন্তর’’ ...॥ 

এ গানটিও অনেকের মুখে কখনো কখনো শোনা যায়। অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে কে না ভালবাসে ? সেটা হোক না খুবই ভীতিকর কিংবা মজাদার কিংবা একই সাথে ভীতিকর ও মজাদার। তবে আজ আমরা যান্ত্রিকতার আদলে গড়ে উঠছি। দিন যতই গড়াচ্ছে আমরা ততটাই যান্ত্রিক থেকে যান্ত্রিকতর হচ্ছি। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোকে আজ আমরা কালের আবহে হারাতে বসেছি। হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার যত প্রাচীন মেলা ও খেলা। কাকে ঠকিয়ে কে বড়লোক হতে পারে, বড় বড় শহরে কে কয়টা বহুতল ভবন বানাতে পারে, বিদেশী ব্যাংকে কে কত টাকা রাখতে পারে, বিঘা বিঘা জমি কিনতে পারে যাতে করে তাঁর চৌদ্দ পুরুষ শুয়ে বসে খেলেও যেন শেষ না হয়। তার অভিপ্রায়ে অবতীর্ণ হচ্ছি আমরা। মানুষের মধ্যে আজ মনুষত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে অমানুষ ঢুকে যাচ্ছে। আজ আমরা কতটা নব্য-সভ্য তার উদাহরণ হিসেবে পিলখানা স্বাক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল। 

বরপক্ষ কনে বাড়িতে আসার পর আমরা গীত গাওয়া শুরু করি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে দ্বিগ-বিদিক টালমাটাল দিশেহারা তখনই আমাদের মগজ কাজ করে তার আগে নয়। তার আগে নরেশের অবস্থা নাক ডাকিয়ে ঘুমে বিভোর বেসামাল। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। তা না হলে কেনই বা রচিত হলো-

“সোনা সোনা সোনা
লোকে বলে সোনা
সোনা নয় তত খাঁটি
বল যত খাঁটি 
তারও চেয়ে খাঁটি
বাংলাদেশের মাটি
আমার বাংলাদেশের মাটি’’ ...॥

তাই মাটি বাঁচলে বাঁচবে এ দেশের মানুষ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আজ প্রয়োজনে অপ্রোয়জনে রাস্তাঘাট পাঁকা হচ্ছে। রাস্তা পাঁকা করনের কাজ চলছে-পিচ ঢেকে সেগুলোকে মুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আর রাস্তার দুধারে রাতারাতি গজিয়ে উঠছে বসতবাড়ি। তিন ফসলী আবাদী জমি যেভাবে গোগ্রাসে গিলছি তাতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি তো দূরের কথা আমরা আমাদের মাথা গুঁজাবার নিরাপদ আশ্রয়টুকু হয়তো আর পাবোনা। আমাদের উচিত যে কোন ধরনের মাটিকে চাষযোগ্য উর্বর ভূমিতে পরিণত করা। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে দেশটাকে সুন্দরভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধশীল দেশ গড়তে চাই। যেখানে থাকবেনা কোন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, হতাশা ও অমানিশার কালো অন্ধকার যেন ভর করতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমার প্রার্থনা আসুন সময় থাকতে আমরা আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা শহরের পাশাপাশি সবুজ শ্যামল ছায়া-ঢাকা, পাখি-ডাকা গ্রামগুলোকে মরণ ছোবলের হাত থেকে রক্ষা করি। কোন মানুষের হৃদয় যেন হু-হু করে কেঁদে না ওঠে দুর্বিসহ অনিশ্চিত পানে। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশটাকে একটি সুখী সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলি। যেখানে বাবুই পাখি সুপারি, নারিকেল ও তাল গাছে নতুন করে বাসা বাঁধবে- কিচিরমিচির করে পুরো গ্রামকে মুখরিত করে তুলবে- ফুলেরা নতুন করে হাসবে- মৌমাছি ও ভ্রমর গুনগুন শব্দে ফুল থেকে মধু আহরণ করবে। আর এসব কিছুর একটিও যদি না হয় সারাদিন কাজ শেষে মানুষজন অন্ততঃ দুই বেলা দুমুঠো ভাত পেটপুরে খেয়ে সুখে শান্তিতে ঘুমাতে পারে এ আশাটুকু কী আমরা করতে পারিনা ?


ইমেইল-sk_roy11@yahoo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* মন্তব্য করতে পেজটি রিফ্রেশ করুন .