পলাশ কুমার পাল




মনময়ূরী,

বছর পেরিয়ে বছর আসে বার্ষিক গতির নিয়মে, মৃত্যুর পরে জন্ম... বিসর্জনের তুলো আজ বাতাসে বাতাসে ভাসছে শ্বাসে-প্রশ্বাসে! বসন্তের রঙকে ঢেকে দিচ্ছে চাপ চপ রক্তের দলিলেরা। রাজনীতির বসন্তে দেশের দেয়ালে দেয়ালে প্রতীকের রঙের মতো লাশ হয়ে পথে পথে মানুষের ভিড়। কোন মিছিল? কাদের মিছিল? প্রশ্নের এপারে আমি'ও অসুস্থ আজ! বাঁচবার, ভালোবাসবার নুন্যতম বোধগুলোতে ঘুমের অধিবাস। এসবের মাঝে তবু লিখছি-আঁকছি...

ভালো নেই। তবু ভালো থাকছি ভোটের উত্সবের বাজারীতে। নীতি ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ের মাঝেও কিছু মানুষ বাঁচিয়ে রাখে তাদের মৌলিকতাকে। যদিও মৌলিক অধিকারের গণতন্ত্র অন্ত্রের ব্যথার প্রধান কারণ। তবু প্রত্যেকে মৌলিক হচ্ছি... জানিস, মানুষের কায়াতেও মনগুলো যেন প্রচলিত সংস্কৃতি থেকে হারাচ্ছে আপনার সংস্কৃতি সাজাতে...

তবু যখন কোনো নরম মাটির ঢেলা শিখিয়ে দেয় মূর্তিটা ঠিক তার মতো হতে হয়, যার নাম মানুষ। তখন স্থির হই। মরে যাওয়া ইতিহাসের পাতা তখন বর্তমান হয়ে ওঠে। পাঠ করি। আজ তেমন এক ঘটনা ঘটল। ঠিক ঘটনাও নয়। ভালোবেসে এক ছাত্রী আমায় দুটি ছবি উপহার দিল। মোমরঙের শৈশব ভাবনা- কয়েকটা রঙীন মাছ সবুজ জলে ভাসছে, আর একটা কুঁড়ে ঘর। কাঁচা রেখার টানেও ভাবনাগুলো নাড়িয়ে দেওয়ার মতো- রঙীন হচ্ছি আমরা কস্মেটিক হতে হতে... তবু প্রাণে সবুজের নেশা! যে নেশায় রেখাঙ্কনে একটা কুঁড়েঘর। হয়তো বাঁচার শেষ ঠিকানা- আমি পাঠ করছি... পাঠ করছি সেই ছাত্রীর ভালোবাসাকে, যাকে আমি হয়তো তার মতো এত বেশি ভালোবাসতে পারিনি।

ভালো না থাকার মাঝে যখন মৃতবাসনা শ্যাওলা হয় দেয়ালে দেয়ালে; তখন এইরূপ ভালোবাসা-সম্পর্কগুলো নতুন বাসিন্দা হয়ে ওঠে ঘরের, যারা শ্যাওলাগুলো মুছে দেয়। তেমনই আর এক মানুষ জীবনে এসেছে। ধরে নে তার নাম মন। সেও আজ ক'দিন কথাতে মন কাড়চ্ছে... মুখবই থেকে হঠাত্ করে চির আপন হয়ে উঠছে... যখন তার চোখের দিকে তাকাই মনে হয় যেন কোনো এক জন্মের পরিচিত কেউ, তোকে যেমন মনে হয়। এইসব কথাগুলো আড়ম্বর কিনা বিচারের ভার ঈশ্বরকে দিলাম। যদিও আমি নাস্তিক। ভয় লাগে তবু অজানা শঙ্কায়। হারাবার হয়তো- তোকে যেমন হারিয়েছি- যদিও সে কথা দিয়েছে গিঁট খুলবে না কখনো।

এত বিশ্বাস ও আশ্বাসেও মাঝ বরাবর একটা পর্দা নামছে... একটা তুই, একটা সেই মন- একদিকে রঙ, একদিকে সাদা-কালো। আমি'র বসন খসে নগ্ন হয়ে যাচ্ছে। তোর প্রতি কী অবহেলা? নাকি তার প্রতি মিথ্যাচার? ধাক্কা খেতে খেতে আজ আর শরীরের মাংস নেই। একটা কঙ্কাল। যে কঙ্কালে রাজনীতি হবে না। তবু রাজনীতি হয় মৃত্যুকে দখলের বৈশিষ্ট্যে।

নিজের কাছে আজ শুধু গুঁড়ো হচ্ছি নিজেই... ভালোবাসা কী মরছে আর এক ভালোবাসার বৃদ্ধিতে? নিজেও জানি না! কিন্তু নীতির লড়াই গভীরে শিকড় বেছচ্ছে... মন বড় হয়ে উঠছে শাখা-প্রশাখায়... রাজনীতি!

ভালো আর থাকতে পারছি না রে। তোর বিশ্বাসকে কী আঘাত করছি? আচ্ছা এমন কেন হয় না; পাশাপাশি দুটি গাছ দুটি চোখ হয়ে রইবি। একটাতে তুই, একটাতে মন। আর সে চোখে বেঁচে থাকাটাকে দেখে যাব শেষ শ্বাসের আগে পর্যন্ত!

মনখারাপ করিস না। আমি যেমন তোর ছিলাম, তেমনই থাকব। আর মন থাকবে তোরই মতো হয়ে একই বৃন্তে। নীল সাগরের ওঠা-নামা ঢেউয়ে নিঃশব্দে ভেসে বেড়াব নিরুদ্দেশ যাত্রায়... আর ভালোবাসাকে প্রশ্ন করে যাব অবিরত:

"আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী?
বলো, কোন্ পারে ভিড়িবে তোমার সোনার তরী।"

ইতি - 
অ-বন্ধু


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ