মোকসেদুল ইসলাম





ঘুম



এখন তো মানুষ নয়, পথেই হেঁটে চলে হেঁয়ালী ঢংয়ে
নির্দেশনার মঞ্চ ফাঁকা বলে দ্রোহের আগুনে পুড়ছে চরিত্র
যতো শূন্যতা আছে জীবনে হাসির আড়ালে চলে যাক সব
যে জানে বশীকরণ, ঘুমফুল আজ তারই প্রাপ্য জেনো।
আয়নাঘরে বসে থেকেও তুমি দিব্যি চালাও ক্ষুধার ছুরি
অথচ ধানস্বপ্ন সব মাথাখুঁটে মরছে খরা কবলিত মাঠে,
শামুকজীবনে চোখ খুলে দেখতে নেই আকাশের বিশালতা
মিনতি আমার এতোটুকুই গোপন খুনের বাসনা গোপনই রাখ।
প্রাচীন আগুনে আজও পুড়ছে আমাদের যত্নের বাগান
মৃত্যুকে এখনও ডিঙিয়ে আসতে পারিনে বলেই
ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের কিছুটা ঘুম প্রয়োজন।



পথ



নৈঃশব্দ্যের বিষক্রিয়ায় ধীরে ধীরে বিনাশ হচ্ছি আমরা
সামনে পড়ে আছে গন্তব্যহীন মূমুর্ষু পথ
সংস্কৃতির বেদম প্রহসনে শরীরে বেঁধেছি শহুরে ছবি।
এখন সবকিছুই বিপরীত পথে চলে
প্রবোধের প্রলাপে আমরা ঢুকে পড়ি রাতের গভীরে
রোদস্নাত পৃথিবী দেখায় মৃত্যুর ভয়
রক্তাপ্লুত দেহ হতে তবু গড়িয়ে পড়ে স্বজনের দরদ।

এবার তবে শূন্যতা ছাড়ো বন্ধু
জীবনের বায়োস্কোপে অতৃপ্ত আত্মার কান্না দেখি ।



সুখ স্মৃতি


চলো, জীবনের যৌথ বারান্দায় বসে
এবার হিসেবের খাতা খুলে বসি।
অযৌক্তিক ভাবনাগুলো নাহয় সস্তায়
বিকিয়ে দেবো শ্যামসুন্দর বাজারে।
আমরা অহংকারের দিকে না তাকাই
কেননা তখন শুধু শূন্যপথের পাল্লাটাই হবে ভারি,
বিরহগুলো বামে রেখে দাও
ডানদিকে রাখ নিরুদ্দেশি মন
মধ্যবর্তী জায়গায় জুড়ে থাকুক সুখ স্মৃতি।




অসহায় কয়েকজন যুবকের দেশপ্রেম


আমরা বন-পাহাড়ি নই, নই আকাশচারী পক্ষীও
যে সমুদ্র আমাদেরকে হাত বাড়িয়ে ডাকে তার
দিকেই আগুন ছায়া মাড়িয়ে আমরা দৌড়ে আসি
মাটিগন্ধ ভালো লাগে বলেই হয়েছি মৃত্তিকার সন্তান
রৌদ্রের মতন স্বচ্ছ না হলেও বাউলের সঙ্গে ভাব গড়ি
মাঝেমধ্যে আন্ধকার ভালো লাগে বলে বুকে সাহসী
ঢেউ তুলে কাশবনে গিয়ে করি গান-নৃত্যের মেলা
তৃষিত কাকের ন্যায় জলের গন্ধে মাতাল হই।

তোমাদের মত করে দেশপ্রেমিক হতে পারিনি বলে
আমরা কতিপয় যুবক মাটিগন্ধ গায়ে মেখে থাকি
বস্তুত আমরা পরজীবি নই কিংবা তোমাদের মত
হতে চাইনা বলে আমাদের কোন নম্বর প্লেট নেই
উঁচুনিচু ভেদ নেই, আমরা জল-স্থলেও চলতে পারি
আমরা ভালোবাসি বুনোফুল, ভালোবাসি দেশমাটি।



রাত ও ঈশ্বর


এবং তোমরা বল, রাত গভীর হয়ে ঢুকে যাচ্ছে অন্ধকারের গুহায়
স্মৃতিরফলকে আঙুল মুছে মুছে নাগরিক দেয়ালে আঁক পান্ডুর চাঁদ
অন্যরকম ভালোবাসা পেলে অনেকেই নিষিদ্ধ করে দেয় আলোর প্রবেশ
অন্ধকারের ঘুম থেকে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে জেগে ওঠো রূপালী প্রান্তরে।
বৈষয়িক স্বপ্নস্রোতে ভেসে যাওয়ার পর ঘুম ভাঙ্গলেই ঈশ্বরের কাছে
নালিশ করে করে জানাও, সমুদ্রে কেন ভাসে আমাদের ছায়া?

রাতের আঁধার আমরাও চিনি, তবুও অস্ফুট গলায় ডেকে উঠি
ঈশ্বর! ঈশ্বর!
শ্মশানের মতোই শব্দহীন রাতে শুধুই ঈশ্বর খুঁজে ফেরা।
আমি বলি রাত নয়, ঈশ্বর নেমে আসছেন ধরায়
তোমরা শুধু প্রস্তুত থেকো, হিসেবের খাটিয়ায় এবার উঠবে এ দেহ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ