টিউশনি
শ্যামবাজার থেকে একটু এগিয়ে
মোড়টা ঘুরতেই তোমার বাড়ি -
সন্ধ্যে হতে না হতেই পড়ার টেবিল
আমি- তুমি মুখোমুখি
তুমি সংসারী-
আমি সেকেন্ড ইয়ার, ইংলিশ অনার্স
পরনে ছাপা সালোয়ার, টিপ কপালে-
তোমার গায়ে পুরুষের ঘাম,
নিকোটিনের গন্ধ আর চাপ দাঁড়ি-
নোটস্ দিতে দিতে কেমন যেন তাকালে!
তখন বর্ষাকাল - আষাঢ় বা শ্রাবণ
তুমুল বৃষ্টি, গলিতে এক হাঁটু জল-
আমার বুকের ভেতর কি যে তোলপাড়
আসতে পারবে তো তুমি!
অস্থির মন আর অপেক্ষা অবিরল-
দরজায় কড়া নড়ে, বুক ধড়পড়
এক ছুট্ স্নানঘরে, আয়নায় মুখ-
খুশি যেন উছলায়, ওড়না দিক হারায়
আবার, আমি - তুমি মুখোমুখি
উষ্ণ শিরায় বয় ঝিম ধরা সুখ-
মিলিমাসির মেয়ের বিয়ে, সেই নৈহাটী
সামনে তো ফাইনাল, পড়া দরকারী-
সন্ধ্যে হতে কেন এতো দেরী হয় !
তোমার জিন্স থেকে সবুজ পাঞ্জাবী
চোখ যেন সরে না,আজ ফাঁকা বাড়ী-
তোমার তৃপ্ত হাসি, চায়ে তে চুমুক
একটু প্রশংসা আর ওই মুগ্ধ দৃষ্টি -
আমি যেন গলে গলে তরল আগুন
গোপন ইচ্ছেডানা মেঘের আড়ালে
সময় থমকে যাক্ , হোক্ তুমুল বৃষ্টি -
প্রার্থনা মঞ্জুর, ঘড়ি ছুটছে
তোমার তো তাড়া নেই বাড়িতে ফেরার-
বই এর পাতা থেকে মন বহুদূর...
চার চোখ, চার হাত আর দুটি ঠোঁট
বাকি যেন থাকতে নেই কিছুই দেবার-
হঠাৎ সম্বিৎ, তুমি ছিটকে গেলে সরে
লজ্জায় লাল মুখ, শুধু বললে ' ইস্ ' -
তখনও দুরন্ত নিঃশ্বাস আমার হিম বুকে
তুমি উধাও,খোকার অসুধ দরকারী-
আমার সম্ভ্রম আর রক্তে নীল বিষ-
সেদিন রাত্রে বালিশ ভিজেছিল খুব
বুঝিনি তখন- দুঃখ না অপমান!
তারপর তিনদিন আসো নি তুমি
ছট্ফট্ অন্তর, বাইরেতে স্থির
কলঙ্কের কালি যেন মূহুর্তের দান-
পরদিন সন্ধ্যেতে আবার তুমি
যত ভাবি লুকোবো, তবু চোখ ঝলমল -
আনন্দের ঢেউ, ঝাপটে তোলপাড়...
একি প্রেম না মোহ না বয়সের টান !
তোমার চিরকুট, আমার দৃষ্টি সরল -
সুন্দর ঝরঝরে তিনটি লাইন
স্পষ্ট মাফি-নামা, ভনিতা করোনি -
যেন ভুলে যাই, জীবনে সুখী হই
সংসার, বৌ,ছেলে...শুকনো অভাব
বেঁচে যেন থাকে কষ্টের 'টিউশনি' -
চিরকুট চার ভাঁজ, আমি ছেঁড়া তার
বানভাসি কান্না অসম্ভব দামাল -
খামে মোড়া মাইনে, এক কাপ চা
তোমার প্রতি ঘৃণা না করুণা আমার !
মনকে শুধু বলেছিলাম,সামাল! সামাল!
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন