সোনালী মিত্র



আকাশ ছোট আসছে । আমার দিল্লীর ঘর থেকে আকাশ দেখা যায় না । ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালে আকাশ বিদীর্ণ অট্টালিকা আমাকে দেখতে থাকে । আর দু'চোখ জুড়ে শুধু গাড়ি আর গাড়ি । নীলগাড়ি , লালগাড়ি , কালোগাড়ির কাঁচের আড়ালে আমি - তুমি আর আমাদের কেতুগ্রস্ত সুসময় ! 

আমি আকাশ ছুঁয়ে দিতে পারি না , তাই আকাশ নেমে আসে না আমার কাছে । হারিয়ে যাওয়া আকাশের রাজপুত্ররা হারিয়ে যেতে যেতে তবুও যে কেন আসে আমার দ্বারে ! ইট - কংক্রিটের আবেগঘন বাস্তবতা সরিয়ে তবুও কিছু পাওয়া এসে বসে অভাব মোচনে । 

সাদা পায়রা গুলো পরম আয়েশে আয়েশে এ সির উপর এসে বসে । সারাক্ষণ গুটর্ঘু চলতে থাকে বিরামহীন শ্রাবণের মত । একে অপরের পালকের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে খুঁজতে থাকে জীবনের পরম ! মানুষের ঠোঁট যেখানে মাংসের স্বাদ চেনে , সেখানে পায়রার ঠোঁট জীবনের উষ্ণতা খুঁজতে খুঁজতে মিলিয়ে যায় হাওয়ার দেশে । সাদা রঙের পায়রা তো শান্তির প্রতীক। দেশের বাড়িতে বাবা ঘরের ছাদে পায়রা বসবার চালা করে দিয়েছিল , রোজ দানা ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ নিয়ে পায়রাদের ডাকতেন । বাবা হয়তো চেয়েছিলেন মুহূর্ত শান্তি এসে বসুক তার হৃদয়ে । কিন্তু দেখতাম বড় কাকা ছোট কাকাদের দানা না ছড়ানো উঠোন ভরে যেত শান্তিতে । কোনদিন বাবা পায়রার কাছাকাছি পৌঁছতে পারেন নি । বাবার দু'হাত মেলে ডাকা আর আকাশে গভীর ঘূর্ণির ফাঁকে মিলিয়ে গিয়েছিল শান্তিরা । এখন মনে হয় বাবাকে ডেকে দেখাই। আমার ব্যালকনিতে পায়রার গন্ধ ছিনেজোঁকের মত লেগে থাকে । আমার ঘর জুড়ে পায়রার উৎসব । আমি পায়রা ধরতে চাইনি কোনদিন বাবা ! আমি শান্তি চেয়েছিলাম । এত পায়রা এলো , অথচ চারিদিকে এত রক্তের দাগ কেন ? আমি তো শান্তি চেয়েছিলাম , উড়ে এসে বসল পায়রা ...




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ