পুরনো বনেদী বাড়ির উঠোনের তিন নম্বর সিঁড়ির এককোণে মেয়েটা বসে থাকে । উঠোনে ছোট বাচ্চারা খেলা করে । মেয়েটা তাকিয়ে থাকে । মরা মাছের মতো চোখদুটো স্থির । রান্নাঘরে রান্নার সুবাস ভাসে বাতাসে । একান্নবর্তী পরিবারের কত কলরব ! কত শব্দ ! মাথার ওপর রোদ বাড়ে ।
একদিন মেয়েটার স্বামী এসে দাঁড়ায় । মেয়েটার মা জামাইকে ঘরে নিয়ে যায় । ততক্ষণে বাড়ির ভেতর থেকে চা জলখাবার দিয়ে যায় কেউ । জামাই সেদিকে তাকায় না । চা জুড়িয়ে জল হয়ে যায় । নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে জামাই বলে ওঠে --সব কিছু আমি জানতাম না মা । শাশুড়ি বলেন ---''থাক বাবা --আর ও কথা কেন ? সেই তো মেয়েটা ফিরেই এল তবে আর কিছুদিন আগে পাঠালে এমনটা -----
লজ্জায় অনুতাপে মাথা হেঁট করে জামাই বিড়বিড় করে বলে --আমার মা যে ওকে জড়িবুটি কোথা থেকে এনে খাইয়েছিল আমি জানতাম না মা । ধীর শান্ত শাশুড়ি বলেন --তুমি আবার বিয়ে কর বাবা । মেয়েটা যদি কোনদিন সুস্থ হয় তবুও তো মা হবে না । জামাই মাথা নিচু করে প্রনাম করে আর মাটিতে মিশে যায় লজ্জায় অনুতাপে । বিয়ের কার্ডটা কিছুতেই আর বের করতে পারেনা ।
তখন পড়ন্ত বিকেল । বিষাদমাখা এক আলো পড়েছে মেয়েটার মুখে । আস্তে আস্তে স্বামী গিয়ে দাঁড়ায় কাছে । বাঁহাতটা তুলে নেয় । দু ফোঁটা তপ্ত জলের ফোঁটা টলটল করে হাতের ওপর ।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন