জারিফা জাহান



টুকরো পা ছোঁয়া

১৯৫২ সালের ২১ এ ফেব্রুয়ারী বরকত, রফিক, শফিউর,জব্বর,সালাম ও আরো অনেক তাজা রঙিন জোনাকির শেষ ওড়ায় মুক্তি পেয়েছিল অন্ধকারে পড়ে থাকা বাংলা মায়ের একক ভাষা-সম্মান।

২০০০ সাল থেকে UNESCO বাতিঘরে জ্বালিয়েছে পিদিম,কুয়াশায় আঁকা যত্নলালিত রেখার মত। এ দিনটা বিশ্ব জানে এখন, বাংলা মায়ের সেদিনের মনখারাপ-তিল তাই একালের 'বিশ্ব মাতৃভাষা-দিবস' এর মেদুর বন্দিশ। গায়ে গা লাগিয়ে মুখে কথারা ফোটে চেনা অপিরিচিত ঝালরে। হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। ছন্দের ঝিনুকেরা বুকে এখন সরগম বনে কলকল।

ঘটে যাওয়া ব্যথাসংশ্লেষ

১৯৪৮ এর কার্জন হলে মহম্মদ আলি জিন্না অবিভক্ত পাকিস্তানের মাত্র ৫৬% মানুষ উর্দুভাষী হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকেই জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃত করার প্রস্তাব দেন। সেসময় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ গণপরিষদের আরো অনেক সদস্য বাংলাকেও অন্য একটি জাতীয় ভাষা রূপে প্রস্তাবিত করলে তা ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া হয়।ভিড়ে হারানো সে রাস্তায় অন্ধকারের পর্দা ফেলে একটি ঘোষণা, তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খাজা নিজামুদ্দিনের সরকারি ভাবে প্রকাশ্য জনসভায় শুধুমাত্র উর্দুকে জাতীয় ভাষার সম্মান জ্ঞাপন। বাংলা মায়ের এ হেন অপমানে সেদিন বাঁধ ভাঙ্গে যুব-সম্প্রদায়ের কাঁচা আবেগের।

২১ এ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ নং ধারা (একমাত্র পাঁচের অধিক জনসমাবেশ নিষিদ্ধ) অমান্য করেই ঢল নামে মায়ের সম্তানদের, অপমানের স্বার্থপর কপালে জলপট্টি দিতে।


তুমি বলেছিলে তাই 'মা' এত মধুর

প্রথম হাসি, মুক্তোদানা শব্দ, খিলখিল টুকু জাপটে ধরেছিলাম মায়ের বুকভরা কাঁপনে। টুকরো টুকরো রঙে ছবি বসিয়েছি মুখে, কাগজে, পেনের নিবে, কী প্যাডে। তাকে পেয়ে হারানো যে না পাওয়ার চেয়েও বেশি কষ্টকর। সেই যে আমার জাদু-রাংতা, ঘুমপাহাড়ের স্বপ্ন।

৬০০০ ভাষার বাঁধুনি তো তাই বিশ্বজুড়ে গহন মনের রোদ্দুর প্রেম। তবে ভাষাবিদদের মতে, সামাজিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে বহু ভাষা এখন খাগের কলমে লেখা শৈশবধুন। তাদের মতে, মাতৃভাষা বিশ্বে সার্বিকভাবে গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, চাইনীজের মতো বহুল প্রচলিত বিশ্বজনীন ভাষাদের প্রতিযোগিতার কাছে সে নিতান্তই মনখারাপের স্ট্যাটাস। তবে সংস্কৃত, পার্সি, আরবি এবং আরো বহু ভাষার মিশ্রণে বাংলা মা যেন বিশ্বদরবারে বসন্তর পলাশ, একটুকরো আদুল কোরক।


লেখা হয়নি বিদায়

২১ এ ফেব্রুয়ারী শুধুই বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন নয়, এ দিন বাংলা মায়ের সন্তানেরা সগর্বে জানিয়েছিল তাদের গর্বিত সুর,তারা বাঙালী।

'গ্রীষ্মের বিকেলবেলা অকস্মাৎ শীতল বাতাস 
যেমন ঝড়ের ডাক,বৃষ্টির প্রস্তাব এনে দেয়, 
আয়াসবিহীনভাবে যেমন নিঃশ্বাস নিতে হয় 
অলক্ষ্যে ঘুমেরো মধ্যে,সে প্রকার প্রয়োজন আছে' 

মায়ের, মাতৃভাষার যখন তখন আদরে সেই আমার গর্ব। তোমায় ছাড়া বাঁচবো, সে ভাবনাই যে আমার বিষ ফল মা!  



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ