মোকসেদুল ইসলাম





নির্লিপ্ত সময়ে একমুঠো সুখ


শূন্য ছিলাম
উড়ে যাচ্ছি মেঘের ভেতর থেকে পলকা বাতাসে
দৃশ্যের ভেতর কারো জন্ম হলে হার মানে আলোক ছটাও
মধ্য মাঠে বিছিয়ে দিয়েছি আমার নরম কবিতা
আসতে চাইলে একান্ত নির্জনে এসো বন্ধু
আরতি ভাঙ্গা রাতে জিইয়ে রাখা স্বপ্নগুলো হাতে তুলে দেবো।

আততায়ী সুখ নিয়ে উড়ে গেলেও শালিকের যাত্রাগান আমি ভাঙ্গিনি
নির্লিপ্ত সময়ে শূন্যাঞ্চলে আমার বাস
এমন শীত সময়ে তবু উষ্ণ আঙুল ধরে রেখো
একখন্ড জমিতে না হয় গড়বো একমুঠো সুখ সংসার।




ঈশ্বর বলতে আমি মানুষ বুঝি


বহমান জলের কাছে শিখছি যুৎসই আলিঙ্গনের কৌশল
স্মৃতিপথ খুঁড়ে খুঁড়ে খুজে চলি আমার হারানো বাস্তুসংস্থান
প্রার্থনার মন্ত্র জানা নেই বন্ধু তবুও ঈশ্বরে বিশ্বাসী হই
ইস্রাফিলের হুইসেল শুনে যোগসূত্র স্থাপন করি।

যতো দুঃখ সব জমা আছে বুকের কার্নিশে
উপেক্ষার রাতে আমরা সবকিছু মানিয়ে নিই, মানিয়ে চলি
যেসব তান্ত্রিক আসে আদমসুরাত রূপে মূলত তারাই পাপী
ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায় সাইবেরিয়ান পাখি।
নিরুত্তাপের দিনে ভেসে যায় সব আলোক চুমু
ঈশ্বর বলতে আমি আজও মানুষকেই বুঝে থাকি।




মানুষ খুঁজি


মাঝেমধ্যে কিছু প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়
আমি গণিতের ছাত্র নই বন্ধু, অংকে ভীষণ কাঁচা
শুধু শূন্যগুলোই বারবার ফিরে আসে লকলকে হাসির দিনে
পুচ্ছ দেখে ময়ূর ভেবো না, মানুষও সে হতে পারে
কেননা এখন মানুষেরও পুচ্ছ হয়, তারা পশু হয়েছে বলে।

নিকষ অন্ধকারে আমি মানুষ হাতড়ে খুঁজে ফিরি
প্রেয়সী জেনেছি যাকে তাঁর শুধু অবয়বটুকুই মনে আছে
বাঁকিটুকু দেখি বোধের আয়নায় সব শূন্যপথে চলে গেছে।

গোপন ব্যথা ভুলে আমরা প্রতিবিম্বের পিছে দৌড়াতে থাকি
দীর্ঘশ্বাসের মতো সঙ্গীবিহীন নির্জন দ্বীপে পড়ে রই
জমকালো অন্ধকারে কেউ কেউ হাসে তবু যক্ষের হাসি।



শেষ দেখার পর যা হয়েছিল


আমাদের পুরাতন মুখগুলো নিয়মিত পাল্টে যায়
অথচ স্মৃতির উল্টো পিঠে বাঁধা থাকে সব পৌরাণিক কাহিনী
যে ভালোবাসতে জানে চুমো দেয়ার অধিকার তারই থাকা উচিৎ
নয়তো শূন্যেই পড়ে থাকবে জ্যোৎস্না মোড়ানো প্রেম।

আমাদের আনন্দগুলো নাকি বিবর্ণ হয়ে গেছে কাশ্মীরি রংঢংয়ে
ক্লান্ত পৃথিবীতে শাদা সুখ খুঁজে খুঁজে ভাবি আমিও মানুষ ছিলাম
দশর্কের হাততালি পাওয়ার আশায় ভুলে গেছি মৃত্যুশোক।

অশান্ত পৃথিবীতে শেষ দেখার পর কে মনে রাখে পথের ঠিকানা
স্রোতহীন নদীতেও আজকাল ভেসে যায় তৃণের সংসার।




ইতিহাসের পাঠ


বিস্ময় ভরা চোখে পথের দূরত্ব মেপেই এতদূর এসেছি হেঁটে
আততায়ী রাত উদভ্রান্ত আলোক শিখায় নিঃসঙ্গ স্মৃতি
শুদ্ধতা কোথায়? রক্তক্ষরণের দহন জ্বালায় ঝরছি আমি নিত্য
যে ঘুড়ি শূন্যে দিয়েছি ছেড়ে তাঁর আশা তো ছাড়িনি আমি।

সাহসী পুরুষ, রাতের আঁধার ছিঁড়ে অনিদ্রার সুখে ভাসি
জোনাক শরীর বুকে একটা মৃত্যুকামড় দিতে চাই
অসংখ্য ইচ্ছের ভীড়ে পোড় খাওয়া স্বপ্নেরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
এসব শূন্যতার আগ্রাসন, বধির প্রহসনে পেরিয়ে যাই ধূপছায়া পথ।

মায়াদৃষ্টি ছড়িয়ে দিওনা ও পথে
আহা! আমার কৈশোরকাল তুমি দীর্ঘজীবী হও
এই পথে হেঁটে হেঁটে নিই ইতিহাসের পাঠ।




হারানো ভবিষ্যৎ


বুকের ভেতর থেকে যে পাখিটা উড়ে যায় আমরা তাঁর পরিচয় জানি
শামুক ব্যথায় যখন কেউ পড়ে থাকে বিবর্ণ হয়ে তখন বলি,
ভাগ্য তাঁর সহায় ছিলনা।
সদ্যোজাত শিশুর মতো কিছু অনিশ্চয়তার বীজ রোপন করে
পবিত্রতা ঘোষণা করি ক্রুশ বিদ্ধ যীশু হওয়ার আশায়।

শীত শহরে ডুব দিয়ে সারারাত মৃত্যুর সাথেই থাকি
তারপরেও নর্তকীর নগ্নতা দেখি উষ্ণ হওয়ার আশায়
এসব নৃত্যকলা আমাদেরও আছে জানা ঢের
পূর্ণ দৃশ্যাবলী দেখতে চাই বলে বিদ্রোহী চোখ খুলে আছি
শূন্য জীবন নিয়ে ক্ষুধার চাকায় পেরিয়ে যাচ্ছি আজব শহর
মুদ্রা দোষে শুধু হারিয়ে ফেলেছি ভবিষ্যৎ।




নদীনৃত্যে জাহান্নামি সুখ


দেয়াল জুড়ে দুর্বোধ্য শ্যাওলার বাস
বেদনার নক্ষত্ররা কেঁদে যায় সারা রাত
তোমাদের সুগন্ধি অতীত জানে সব ভাল থাকার মানে
শহর ঘুমিয়ে গেলে মানুষগুলো বড্ড অচেনা লাগে আমার।

এসো তবে আজ নদীনৃত্য করি
কামুক চাহনি ভেঙ্গে দিয়ে হয়ে যাই অনুগত সাপ
বিষ নিঃশ্বাসে যখন ভরছে আপন আঙ্গিনা
উৎসব শব্দটা তখন বেমানান
চেয়ে দেখো, কাঁচা মরিচের ঝালে নুয়ে পড়ছে জাহান্নামের আগুন
বিমুগ্ধ প্রভায় তবুও আমরা মেঘ ছুঁতে চাই
দুপুর রোদে পুড়িয়ে ফেলি আমাদের ভাতঘুম সুখ।



শঙ্খচিল


ও শঙ্খচিল, তুমি এখন আকাশ পোড়াও
ডানায় তোমার বুনো গন্ধে ভরা
রাত জাগা যুবকের মতো একলা চলো পথ
ক্ষুধার্ত মানুষের মতো করে তুমিও কি চেটে খাও মানবতা?

বিপরীত রোদের ডানায় তুমিও কি
শুকিয়ে নিচ্ছ ভিজে যাওয়া ভালোবাসা?
ও শঙ্খচিল, তুমি এখন ধরনী পোড়াও
আমায় পোড়াও, পুড়িয়ে ফেলো প্রিয়জন
শুধুই পোড়াতে পারো না পচে যাওয়া বিবেকগুলো।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ