আনমনে আনমনে নি:শব্দ রাতের পাতা খসার টুপটাপ, দূরে নদীর মৃদু কলতান । এক কোণে দেখা যায় একটি কালো পাহাড়, চাঁদের আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে যার সারা শরীর । বাতাসে নাম না জানা ফুলের গন্ধ । গাছের পাতারা হাওয়ায় দুলছে । আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ নীল রঙের ক্যানভাসের উপর হামাগুড়ি দিয়ে আকাশ পরিক্রমায় ব্যস্ত । কিছু কিছু রাতপাখি হঠাৎ হঠাৎ ডেকে উঠছে । আশেপাশে গুটিকয়েক ইমারত আর তাদের আলোকসজ্জার ছায়া জলে ভাসছে । চারিদিকে অদ্ভূত প্রশান্তি ও নীরবতা ।
তালপাতায় ভেসে আসে তার পরিশ্রান্ত মুখ। নিজের মনের সঙ্গে অবিরাম যুদ্ধে সে ক্লান্ত, শ্রান্ত। তার সুন্দর মুখশ্রীতে কে যেন কালি মাখিয়ে দিয়েছে। আমি আমার ডানার ছায়ায় তাকে একটু আরাম করে দিই। তার মনে অনেক দ্বিধা , অনেক যন্ত্রণা, পাওয়া না পাওয়ার অবিরাম টানাপোড়ানে জর্জরিত। নদীর ভেজা বাতাসে তার মুখে কুলিয়ে দিই, কাদামাটির প্রলেপে তার চোখে ঠান্ডা এনে দিই। তার অবয়ব ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে ওঠে রাতের আঁধারে। শীত করে গো, সে কেঁদে বলে, কেউ নেই, আমি সর্বস্ব খোয়ালাম, কি করি !
আমি বলে উঠলাম, কেন আমি ত' আছি ? যখন সব কিছু তোমার জগতে আঁধারে ভরে যাবে, আমায় ভেবে নিও তোমার ঘুম পড়ানোর পরী, ডানার হাওয়ায় তোমায় শীতল করে, চকমকি ঠুকে তোমার ঘরে সে আলো এনে দেয়। পথের বাঁকে যদি হারিয়ে যাও, হাঁসের পালকে আমার নাম লিখে হাওয়ায় উড়িয়ে দিও, দেখো ঠিক আমার ঘরের ঠিকানা পেয়ে যাবে। তখন আমি হংসপাখায় চড়ে তোমার কাছে এসে রংধনুর সাত রং নিয়ে তোমার কপালে রঙিন স্বপ্ন এঁকে দেব, তোমার জগত আবার আলোয় ভরে উঠুক।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন