দুইটি অণুগল্প
ম্যাজিসিয়ান
পরনে জীর্ণ এক জরির শেরওয়ানি, জায়গায় জায়গায় তালিতাপ্পি মারা। মাথায় কালো হেট। দেখলেই বাচ্চাদের বইয়ে আঁকা ক্লাউনের ছবিটাই ভেসে আসে। তবে ইনি ক্লাউন না। ইনি একজন ম্যাজিশিয়ান, গ্রামের হাটেবাজারে ম্যাজিক দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাপের দেওয়া নামের আগে পিছে বিশেষণ যোগ করে তার পরিচিতি জাদু সম্রাট সগির আলী মুন্সি বলেই। গ্রামের অনেকে অবশ্য তাকে খানিকটা সমীহ করে ম্যাজিসিয়ান সাব বলে ডাকে।
বেশ কিছুদিন হলো ম্যাজিশিয়ান সাবের আয় কমে এসেছে। একই ধরণের ম্যাজিক বারবার দেখতে দেখতে হাটুরেদের একঘেয়েমি এসে গেছে। তারা আর পয়সা খরচ করে তার ম্যাজিক দেখতে ভিড় জমায় না। হাটবার হলেও আজ তাই তাকে প্রায় খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়িতে ঢুকেই দেখেন আট বছরের মেয়ে আর বৌ ম্লান মুখে বসে আছে। আজো অনাহারে। ওদের খানিকটা আনন্দ দেওয়ার জন্যই সে ম্যাজিকের বাক্স খুলে রুমাল বের করে। বাতাসে রুমাল উড়িয়ে বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়ে বাতাস থেকে এক একটি গোলাপ ধরে এনে মা ও মেয়ের হাতে দেয়। ওরা দুজনে অবাক হয়ে যায়। হঠাৎ মেয়েটি বলে উঠে, 'বাজান, ম্যাজিক কইরা আমাগো লাইগ্য ছালুন আইন্যা দাও। কতো দিন হইলো যে আমরা হুদা হুদা ভাত খাইতাছি।'
মুখ ও মুখোশ
মুনীর সাহেবের খুব সুনাম। কোন মেয়ের দিকে মুখ তোলেও তাকান না। আহা কি একনিষ্ঠ! বৌকে ছাড়া কিছুই বুঝেন না। কেউ কেউ নাকও সিঁটকায়, ' বউপাগল, পুরোপুরিই বউপাগল একটা!' মুখরোচক এসব কথাবার্তা মাঝেমধ্যে তার কানেও আসে। মনে মনে হাসেন তিনি।
টাইয়ের নট ঠিক করতে করতে ভাবনায় চলে আসে জয়ন্তি, মীরা এবং ঐশী। টেবিলের ড্রয়ার টেনে ব্রুট পারফিউমটি বের করেন। আচ্ছা, ব্রুটের বুনোগন্ধে কে যেন মাতাল হয়? ... ঐশীই তো। ঐশীর কাছেই যাওয়ার ডিসিশন নিয়ে ফেলেন তিনি। অফিস থেকে বেরুবেন এখন। পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ত্রীকে ফোন দেন, 'এ্যাই শুনছো, অফিসে আজকে এক প্রোগ্রাম পড়ে গেছে, বিদেশী ডেলিগেটস আসবে... ফিরতে বেশ রাত হবে ... লক্ষ্মীটি রাগ করো না .. আর হ্যা, তুমি খেয়ে নিয়ো প্লীজ, আমার জন্য বসে থেকো না। লাভ ইউ সুইটি!'
![]() |
| পরিচিতি |
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন