"আমি এখন তোমাদের সঙ্গে কথা বলবো না , আমার এখন এত্ত এত্ত অভিমান হয়েছে" সেদিন বৃষ্টি ভেজা মন খারাপের দিনে ভিজতে ভিজতে বলেছিল বাচ্চা মেয়েটা। আমরা সেদিন ওর কথার ধার ধারিনি - ব্যাটা এইটুকু বেটে - গুড়গুড়ি, এর আবার অভিমান। রাখ তোর অভিমান তোর কাছে, আর নাটক করে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না । আমরা কেউ দেখতেও চাই নি - সে যে বৃষ্টিতে নিজের চোখের জল লোকাতে ভিজছিল।
আজকে.............
আজকে যে বাচ্চা মেয়েটা স্কুল ড্রেস পরে লাফাতে লাফাতে হাজির খড়ের চাল ছাওয়া বারান্দাতে তার কালু আর নরমকে দেখতে রোজকার মতো। রক্ত... রক্ত... শুধু রক্ত দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো মেয়েটা। তার কালু! তার নরম! কই? খাঁচা ভেঙে কালুকে মেরে রেখে গেছে কোন হুলো, আর এক কোণে বসে নরম কাঁপছে তিরতির করে।
সেই যে তখন এক ছুটে তিনতলার ছাদে চলে গেলো আমাদের দিকে মনে মনে করা এক রাশ অভিমানের প্রশ্ন নিয়ে "তোমাদের ওপরেই তো ভরসা করে ওদের রেখে স্কুলে গেছিলাম, তোমরা সেই ভরসাটাও রাখতে পারলে না "
আমি দেখেছিলাম.................................
কিন্তু মুখে কিছু বলেনি কিচ্ছু না। ও এরকমই যে , ওর কষ্ট কাউকে যে মুখ ফুটে বলেনা। এদিকে অন্যের হয়ে লড়াই এর সময় , ঝগড়ুটে, বেহায়া, তর্কবাগীশ , মারকুটে, সাহসী সেই একই মেয়েটা। কিন্তু নিজের দাবি মান অভিমান আবদার কিছুতেই নিজে মুখে কোন দিন বলেনি সে।
আমরা কেউ সেদিন ওর মনের কথা বুঝিনি, আর সত্যি কথা বলতে কি আমাদের কারুর ওর মনের কথা বোঝার সময়ও ছিলো না। দুর ওই তো বাঁটকুল গেঁড়ি ওর আবার মন তার আবার কথা।
আর - আমরা আজও বুঝিনা ওর মনের কথা। হয়তো বাঁ বোঝার চেষ্টাও করিনা, আমাদের প্রতি ওর ভালোবাসা, মায়া, মমতা, কর্তব্য সব বুঝি ষোলোআনা, একটু কম হলেই কৈফিয়ত দাবি করি, কিন্তু আজও ও আমাদের কাছে একদিনের জন্য কৈফিয়ত দাবি করেনি কোনোদিন, একদিন জোর খাটিয়ে বলে নি " কি রে আমাকে একটু ভালো বাসবি ? কতদিন একটু ভালবাসিস নি" আমি এই মেয়েটাকে কোনোদিন তার ভালোবাসার মানুষটার ওপরে জোর খাটাতে দেখিনি । কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে প্রচণ্ড হিংসুটে মেয়েটা। একদিনও কোন কিছুর জন্য মেয়েটাকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে বায়না করতে দেখিনি। কিন্তু দেখেছি ঠাঠা দুপুর রোদে ভালোবাসার মানুষটার হাত ধরে ধর্মতলা থেকে ময়দান অব্ধি হেঁটে যেতে দেখেছি। আমি দেখেছি কলেজ - স্কয়ার এ বসে পাগলের মতো ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে ভুলভাল আবোলতাবোল গল্প করতে।
আমি দেখেছিলাম.................................
সেই সেবার কারা যেন জোর করে তার ভালোবাসার মানুষটাকে তার থেকে কেরে নিয়ে গেলো । আমি তখন এই মেয়েটাকেই দেখেছি জেদি রূপে, " আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবোই, আমি যতদিন বাঁচবো রক্ষাকবচ হয়ে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আগলাবোই "
আমি সেদিন এই বেটে গুড়গুড়ি, মোটা, চোখে মোটা চশমা - নিতান্তই সাধারণ মেয়েটাকে দেখেছিলাম মা দুর্গার মতো রণন- দেহি রূপে। আমি দেখেছিলাম দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে এই আশায় আবার রাত কেটে ভোর হবে আবার তার কাছের মানুষ তার কাছে ফিরে আসবে।
আমি দেখেছিলাম সেই মেয়েটাকে যে সেদিন ভগবানের থেকেও নিজের ভালোবাসাকে দয়া হিসেবে নিতে অস্বীকার করেছিল। আমি দেখেছিলাম সেই মেয়েটাকে রাতের পর রাত জেগে যে একা একা যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিল। আর শেষ পর্যন্ত নিজের আকাশের সব কালো রাতের অবসান করে ভোরের সূর্য কে নিজে একা তুলতে।
আমি দেখেছিলাম.................................
আমি সেদিনও তার পাশে থাকিনি।
ছিলাম শুধু দর্শকের ভূমিকায়।
শুধু দেখে গেছিলাম তার মনের জোর, ওই টুকু আপাদমস্তক ভ্যাবা-গঙ্গারাম মেয়েটার মনের জোর। আমি কোনদিনই সেই মেয়েটার পাশে থাকিনি, সেই মেয়েটার মুখে হাঁসি ফোটাতে এটাও বলিনি " আরে তুই একা নস আমরা সবাই তোর পাশে আছি" উল্টে মেয়েটাকে চরম বিদ্রূপ করেছি, অপমান করেছি, সামনে পিছনে হাসাহাসি করেছি।
সেই মেয়েটাকে কিন্তু আমাকে বার বার বলেছিল " তুমি শুনছ এই যে - এই যে তোমাকে বলছি , তুমি শুনছ? তুমি ভয় পেয় না একদম আমি আছি দেখে নিও তোমার পাশে সব সময় আছি" কিন্তু সেই মেয়েটা যখন দিনের শেষে তার ভালোবাসার মানুষটাকে হারাতে ভয় পেত, তার আকাশে আর সূর্য উঠবে না বলে হাল ছেড়ে দিত। আমি ওর পাশে ছিলাম না ।
আর সত্যি কথা বলতে কি আমরা আমাদের নিয়ে এতো ব্যস্ত আমরা কেউই আর এই রকম.......................... হিংসুটে মেয়েটা... সাহসী মেয়েটা... বেহায়া মেয়েটা...ঝগড়ুটে মেয়েটা... তর্কবাগীশ মেয়েটা... মারকুটে মেয়েটা... ভুলভাল মেয়েটার পাশে থাকার সময়টাই আমাদের নেই।
কিন্তু এই হিংসুটে মেয়েটা... সাহসী মেয়েটা... বেহায়া মেয়েটা...ঝগড়ুটে মেয়েটা...তর্কবাগীশ মেয়েটা... মারকুটে মেয়েটা... ভুলভাল মেয়েটা সারাজীবন আমাদের পাশে সেই একইরকম ভাবে থেকে গেলো নিজের সর্বস্য বাজী রেখে - নিজের জন্য না ভেবে.......।
![]() |
| পরিচিতি |
বাবাই
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন