ওই যে,একমাথা কোঁকড়া চুল মেয়েটা ফ্রকের কোঁচড়ে নুড়ি কুড়োচ্ছে। ওই তো,স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বালির ঢিপিতে গোটাকতক নেড়ি ওকে দেখে ল্যাজও নাড়ছে দেখছি! আশেপাশের এক দংগল ছেলেমেয়ে ওর ঝাঁকড়ামাকড়া মাথা দেখিয়ে খুব খেপাচ্ছে, "ইন্দিরা গান্ধী "।
দূর থেকে আমি বল্লুম,
- কিরে! কি খুঁজছিস, বালি হাটকে। হাত ছুলে যাবে তো।
একগাল হেসে বলল,
- দ্যাখো, কত্ত বড় বড় সুন্দর পাথর! এরকম আর কারো আছে?"
- তা কি করবি এসব কুড়িয়ে।
- কেন? জমাবো! আমার বাড়ি যাবে? সিঁড়ির তলায় অনেক জমিয়ে রেখেছি,মা কে লুকিয়ে।
পরম ধন আগলে নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ানো মাত্রই,পেছনের ছেলেপুলের দল আবার সোল্লাসে চিৎকার জুড়লো,"ছুঁস না, ছুঁস না ওকে। কুকুরের ইয়ে পাড়িয়েছে।
-রবিমামা! তুমি বলেছিলে,ছোটদের কিছু জমানো উচিৎ। জয় তো ডাকটিকিট জমায়। ওসব আমি বুঝিনা। তার চেয়ে, এই দ্যাখো! কত দেশলাই খোল জমিয়েছি। সবকটা আলাদা আলাদা ছবি। আমাকে আরো এনে দেবে গো।
.. মেয়েটা দেখি আবার ভুলভাল জিনিস নিয়ে মেতে আছে, ওরই মতো আরেক খ্যাপা, টাকমাথা এক ছেলেমানুষ এর সংগে।
সিঁড়ির নিচের জানলার তলায় উঁকি দিলাম সেদিন। চারপাশে,পুরনো মাটির প্রদীপ,ছোটবড় নারকোল মালা,রাজ্যের ছেঁড়া ন্যাকড়া, ইঁটের গুঁড়ো, পাতানাতা,ঠ্যাঙভাঙা, হাতভাঙা এককাঁড়ি পুতুল....সে এক মেলা সাজিয়ে বসেছে। নিজের মনে বকবক করছে। দেখতেই পায়নি আমাকে।
- এই মুখপুড়ি! কি করছিস!"
- রান্নাবাটি খেলছি। খেলবে! আমি কিন্তু মা হয়েছি। তুমি অন্যকিছু হয়ো তবে।
- নাহ। তুই খেল। আমার কি সে বয়েস আছে রে! আমি ফিরে আসি নিজের ঘরে।
বনকলমীর ঝোপ। দুপা হাঁটলেই আছাড় নিশ্চিত। ওই মেয়েটা মনযোগ দিয়ে গাছের পাতায় কি যেন দেখছে। আঁতকে উঠলুম। সাপের কামড় না খায় এবার!
- অ্যাই মেয়েটা! কি করছিস বনে বাদাড়ে! শেয়াল থাকে এখানে,জানিস।
- ধুর!! উড়িয়ে দিলে তো। কী সুন্দর ফড়িঙ বসেছিল। কচি কলাপাতার মতো সবুজ। এরকমটা আগে দেখিইনি। তুমি এমন হাঁইমাঁই করে চেঁচাও কেন গো।
- জানিস এই জংগলে সাপের গর্ত আছে। তা কি করবি ফড়িঙ ধরে শুনি।
- পুষবো। লেজে সুতো বেঁধে ওড়াবো। আর কচু পাতার রস খাওয়াব। বাড়ি এসো, এবার শিশি ভর্তি ডেঁয়ো পিঁপড়ে পুষেছি।
- সেকি রে!! কামড় খেয়ে মরবি নাকি।
- ধুস !! একটুও কামড়ায় না।পোষা তো। .....বলেই, সাবানের বুদ্বুদ ওড়াতে ওড়াতে কোনদিকে যে চলে গেলো, ঠাহর পেলুম না। শুধু দেখলুম,ওর পিঠেও যেন স্বচ্ছ দুটো ফড়িং ডানা। কে জানে কী!
সানাই বাজছে। মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। লেপের তলা ছেড়ে বেরতুম না, কিন্তু,পাগলির আজ বিয়ে যে। দেখি, লাল টুকটুকে বেনারসি পরেছে। চোখ নিচের দিকে। হাসিখুশি মেয়েটার মুখটা কেমন গম্ভীর না! ভুরু তে ভাঁজ ফেলে আগুনে খই পোড়াচ্ছে..লাজাঞ্জলি হচ্ছে ওর। কুলো থেকে ঝরছে রাশিরাশি সাদা খই...।
কিন্তু একি! আমি ঠিক দেখছি! খই কই। ওই তো ওর জমানো পাথরগুলো পুড়ে গেলো আগুনে। এবার দেশলাই খোল। তারপর নারকেল মালা, পুতুলের ন্যাকড়াজামা, পিঁপড়ের শিশি, রাশিরাশি গল্পের বই...গানের ক্যাসেট, আঁকার খাতা...আরো আরো কত কি!
চেঁচিয়ে উঠি,......... মুখপুড়ি! একি সর্বনাশ করছিস। সব যে পুড়ে গেলো । জবাব দিলো না। মাথা হেঁট করে,এবার, পিঠ থেকে ডানা দুটোও খুলে আগুনে ফেলে দিলো। দৌড়ে গিয়ে লুফে নিতে গেলুম। আগুনের তাতে হাত জ্বালা করে উঠলো।
সম্বিৎ ফিরে এলে দেখি,কোথায় কি! বুকের উপর অ্যালবাম খুলে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি...।।
![]() |
| পরিচিতি |
অরুণিমা চৌধুরী।
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:


বাহ ভারি সুন্দর
উত্তরমুছুনbhalo laga soho obhinondon☺
উত্তরমুছুন