খচ খচ করে কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন শাশুড়ি মহিতন । অত বড় পেট বানাইতেছে হব কিবাই, হওনের সুম বুঝবো কিবা ঠেকে। পুলার তো মাইড নাই, টেহা কি গাছের পাতা, জাহি দিলেই পড়বো। সারা দিন বইসা থাকপো আর খাবো। আহারে পোলাডা আমার কত কষ্ট কইরা কামাই করে --।
নুপুর শাশুড়ির দিকে চেয়ে থাকে, ভাবে সে এমন করে কেন ? তার কি বাচ্চা হয় নাই ? খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে তার, এখনি বা কত ১৭/১৮। বিয়ের পর ডাক্তার আপা ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, তাই সে তিন বছর বড়ি খেয়েছে, স্বামী মহির তাকে সাহায্য করেনি, সে নিজেই কষ্ট করেছে -। স্বামীকে কোন মাসে বললে সে বলেছে তুই নে গা, আমি পামুনা। নুপুর যখন সেভেনে পড়ে তখন তার বিয়ে হয়, সংসার সম্পর্কে কোন ধারনা ছিলো না, এখনও তেমন বুঝেনা, তবে এটা বুঝে স্বামীর সাথে থাকতে তার ভাললাগে। শশুড় মানুষটা খুব ভাল, নুপুরের বাবা নেই, সে হবার আগেই বাবা মারা গেছেন। শশুড়কে দেখে আর ভাবে পৃথিবীর সব বাবাই মনে হয় এমন ভাল। কতদিন হাট থেকে মুড়ির মোয়া,বিভিন্ন খাবার এনে চুপ করে তার হাতে দিয়ে বলে মারে তুই খাইস, যহনি খিদা নাগবো তহনি খাবি, খালি পেটে থাকপিনা। নুপুর শশুড়ের দিকে চেয়ে থাকে, তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, প্রান ভরে বাবার সুমধুর গন্ধ বুকভরে নিতে ইচ্ছে করে। পারেনা যদি শাশুড়ি দেখে ফেলে। যদি লোকে কিছু বলে।
শাশুড়ি আবার চিৎকার দেয় -, নবাবের বেটি বইসাই থাকপো, নাকি উঠপো।
নুপুর উঠে দাড়ায় -। ভারি শরীরটা তার কাছে বোঝা মনে হয়, কিছুতেই বইতে পারেনা। ডাক্তার আপা আরও কয়েক বছর পর বাচ্চা নিতে বলেছিলেন। শাশুড়ির কথার তোরে তা হয়ে উঠেনি, শাশুড়ি সবাইকে বলে বেড়ায় তার বউ বন্ধা, বাচ্চা হবোনা। নুপুর বাধ্যহয় ...। বাচ্চাটা যখন পেটে এলো তখন থেকেই শাশুড়ি তার সাথে কেমন যেন করে, একবার তাকে ডেকে নিয়ে বলে -কার দিয়া হইছে ? গেদাতো কামে গেছিলো, বৈশাখ মাসে কি শরীর খারপ হইছিলো , নুপুর মাথা নাড়ে, না। শাশুড়ি বলে তালি হবার পায়। চইত মাসে গেতা আছিলো। নুপুরের তখন ভীষন কান্না পায় , স্বামীর কাছে বলতে চেয়েছে, সে শুনে নি , বলে মেয়াছেলের কথা সে শুনবেনা। নুপুর নিরবে চোখের জল ফেলেছে ------।
বাচ্চাটা পেটের মধ্যই লাথি মারে, কখনো কখনো নড়াচড়া করে, নুপুর তার পেটে হাত বুলায়, তার খুব ভাললাগে --।পেটের বাচ্চার সাথে সে কথা কয়, বলে কেমন আছেন গো, ক্ষিধা লাগছে নাকি , নড়াচড়া করেন না কেন। আপনি না নড়লে আমার যে বড় একা একা লাগে -।
গোসল সেরে শাশুড়ি উঠানে দাড়ায়, নুপুর কে উদ্দেশ্য করে বলে, পুঁয়াতী মানুষ সারাদিন কামের মধ্যে থাকপো, তা না সারাদিন শুইয়া বইসা থাকপো, আর খালি খাওয়া আর খাওয়া করবো।
পাশের বাড়ীর ফজলের মা উঠানের এসে তার সামনে দাড়ায়, তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, তিনডা বাচ্চা হইছে, কোন দিন ডাক্তর কিবা জানিনাই, তার বউ ডাক্তরের কতামত চলে, হে নাহি তারে খালি খাবার কইছে, নুপুর শাশুড়ির দিকে চেয়ে থাকে -,মনে মনে বলে গত একমাস ধরে তাকে একদিনও পেটপুড়ে খেতে দেওয়া হয়নি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি খাওয়া বারন। ওসব খেলে নাকি পেটে বাচ্চা বড় হয়ে যাবে, বাচ্চা হবে না, সিজার করতে হবে। নুপুরের খুব ইচ্ছে করে কাটা ইলিশের ডিম দিয়ে ঢেঁকিশাক খাবে। বলার সাহস হয় না ।
নুপুরের চোখে তার মায়ের ছবি ভেসে উঠে, বাচ্চাটা পেটে আসার পর একবার মায়ের কাছে গিয়েছিল সে, মা কি যে খুশি, কি খাওয়াবে কি না খাওয়াবে -,যে কয়টা দিন ছিলো মা তাকে এটা ওটা কত কি এনে হাতে দিত, বলতো পোঁয়াতী মানুষের বেশি করে খেতে হয়, তুই খা মা খা ...
নুপুরের মাথাটা ঘুড়ে উঠে, চোখ অন্ধকার, নীল কেমন যেন একটা আলো তাকে অবস করে দেয় --। মায়ের মুখটা আবছা আবছা দেখা যায়, মা তাকে জোড় করছে, তার পাতে বড় মাছের মাথা তুলে দিচ্ছে -আর বলছে খা মা খা। নুপুর আর চেয়ে থাকতে পারে না - শশুড়ের হাসি মাখা মুখটি দেখতে দেখতে -------।
![]() |
| পরিচিতি |
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর
Reviewed by Pd
on
আগস্ট ১৫, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
আগস্ট ১৫, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন