আমাদের দেশ ভারতবর্ষ সত্যি আমাদের গর্বের কথা আমরা যে দেশে থাকি সেটা পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। আর আমরা সেই দেশের নাগরিক। আমরা গর্ব করে বলি আমরা ভারতবাসী। সরকার আমরাই তো গড়ি, প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর আমরাই তো ভোট দিয়ে আমাদের লোককে বিধানসভায়, লোকসভায় পাঠাই আমাদের হয়ে লড়াই করবার জন্য। আমরাই তো দেশের ভাগ্যবিধাতা।
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ এই কথাগুলো না এখন খালি রেডিও আর টিভির অ্যাডেই সীমাবদ্ধ। ওই “সারে জাহা সে আচ্ছা হিন্দুস্থান হামারা” বছরে দুবার রেডিও টিভি আর ইন্টারনেটে শুনবো। প্রত্যেকবার পাঁচ বছর অন্তর আমরা আমাদের দেশের ভাগ্যবিধাতার ভূমিকায় অভিনয় করব। খালি সেইটুকু সময়ের জন্যই আমাদের ভেতরের গণতন্ত্রের অ্যাড্রেনালিন টা সাঁই সাঁই করে দৌড়বে ব্যাস খালি সেইটুকু সময়ের জন্যেই। আর আমাদের কিছু জিজ্ঞেস করলে আমাদের তো উত্তর রেডি। “আরে আমরা আর কিবা করতে পারি? এর থেকে বেশি কি আমাদের ক্ষমতা? আমরা তো আর দেশের নেতা নেত্রী নই, আমরা যে জনসাধারণ। ভাই আমরা দিন আনি দিন খাই। ছাড়ো তো চলছে তো দেশ নিজের গতিতে, আমরা কি বা খারাপ আছি?”
পাশের বাড়ির মেয়েটা রাস্তায় অপমানিত হচ্ছে এদিকে নিজের মনে নিজেকেই আমরা সান্ত্বনা দিচ্ছি, “আরে এতে আমি কি করব? আমারও তো ঘরে ছেলে মেয়ে বৌ নিয়ে সংসার?” কটা গরীব না খেতে পেয়ে মোরে গেলো তাতে আমাদের কি? আমাদের জন্য তো ম্যাক-ডোনাল্ড, কে-এফ-সি আছে। কি দরকার কে চালে ডালে কি কাঁকড় মেশাচ্ছে তার প্রতীবাদ করে। এই আমরা যেমন একজন নিরপরাধ মানুষ কার্টুন একে জেলে গেলেও প্রতীবাদ করিনা। উল্টে টিভির খবরের চ্যানেলে সব শুনে বলি “ ব্যাটা পাগল নাকি কেউ এরকম করে, দেশের সাংবিধানিক প্রধানদের সঙ্গে মশকরা?” হায়রে আমাদের গণতন্ত্র!, মানে গণতান্ত্রিক অধিকার টা খালি দেশের সমস্ত ক্ষমতাশালী মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, আমরা প্রতীবাদ করবো না। নিজের গলার আওয়াজ তুলবো না। আর কেনই করব? ঠিকই তো এখন সব দেখে শুনে চুপ করে থাকাটাই তো আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। ভাই আমরা খুবই বুদ্ধিমান, সব সময় মাথা খাটিয়ে কাজ করি। পাগল নাকি! মনের কথা শুনে প্রতীবাদ করে বিপদে পড়ি আর কি। মনের কথা তো পাগলে শোনে।
ওকে মনের কথা শুনতে হবে না আমাদের, খালি একবার ভাবি জাস্ট মনে মনে, যখন এই সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ভূখণ্ডটি পরাধীন ছিল তখনো কিন্তু কিছু পাগল নিজেদের কথা না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো অপরের জন্য লড়াই করতে। কি দরকার ছিল ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, প্রফুল্ল চাকী, ভগৎ সিং, নেতাজী সুভাষ দের ঝাঁপানোর অপরের জন্য। হম এসব শুনে তোমাদের মনে হতেই পারে দেখো এখন আবার এ ব্যাটা গণতন্ত্র নিয়ে জ্ঞান দিতে বসলো। হে হে সেই বোধয় জ্ঞানই দিতে বসলাম। ছাড়ো তোমরাই হয়তো ঠিক আমরা যারা এখনো এরকম মনে মনে ভাবি আমরাই হয়তো...............।
এই আমাদের গণতন্ত্র। আমাদের শহীদরা দেশকে স্বাধীন করার সময় আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আমাদের কে ফিরিয়ে দেবার জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। আর আমরা সেই গণতন্ত্রটাই দেশের কিছু নেতা, মন্ত্রী তাদের পোষা মস্তান বাহিনীর পায়ে সমর্পণ করে এলাম। আরে জিও বস এটাও তো গণতন্ত্র, অপরাধী অপরাধ করবে সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। আর আমরা মুখ বুজে অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করে থাকবো এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
আরে আমরা কবে আর কবে বুঝবো দেশের কিছু কিছু মানুষ আমাদের সাধারণ জনগণ ভেবে রাজনীতির দাবার চালে আমাদেরকেই ব্যাবহার করছে। কিন্তু একটা কথা আমরা ভেবে দেখেছি কি? আজকে যে ঘটনাটা আমার পাশের মানুষটার সঙ্গে হচ্ছে তার প্রতীবাদ আমরা করলাম না আমাদের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বুদ্ধি খাটিয়ে, কালকে কিন্তু সেই একই জিনিস আমার সঙ্গেও ঘটবে, আমিও অসহায় হয়ে আপ্রাণ চিৎকার করব “ তোমরা কেউ আছো? কেউ কি কোথাও আছো?” তখনও কেউ আসবে না। কেন ? কারন আমরা এক এক জন শুধু মাত্র ওই যাকে বলে “আম আদমি” সিধে-সাধা, ভগবানের থেকে আইনের থেকে ভয় পাওয়া “আম আদমি”। কোলকাতা তে, দিল্লী তে, মুম্বাই তে, পাঞ্জাবে, কাশ্মীরে সব জায়গায় আছে এই সাধারণ জনগণ? আমার মধ্যে তোমার মধ্যে আমাদের সবার মধ্যে আছে এই সাধারণ জনগণ।
আর আজ যদি এই সাধারণ জনগণের ওপর অত্যাচারের, অন্যায়ের, অপমানের, প্রতীবাদ আমরা না করি , আজ যদি আমরা সব দেখে শুনেও চুপ থাকি তাহলে আমরা পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতন্ত্রের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবো। আর এটাও একটা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অসাধারণ আরে নিজেদের এই সাফল্যে এসো নিজেরাও হাততালি দি! “মেরা ভারত মহান” মুখে বললে বা ভাবলেই মহান হবে না, মহান তো তখন হবে যখন আমরা সবাই কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের হাতে , নিজেদের বিবেককে, নিজেদের গণতন্ত্রকে মাথা নিচু করে বিকিয়ে দেওয়া বন্ধ করব। দয়া করে আজকে একটু কম ভাবি, দয়া করে কম ভাবি। আরে একবার তো নিজের মনের কথা শুনি, একবার তো সাদা কে সাদা, কালো কে কালো বলে দেখি। একবার তো কারুর বিপদে পাশে দাড়িয়ে দেখি, একবার তো শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে মাথা তুলে দাড়িয়ে দেখি। একবার জাস্ট একবার তো নিজের আসল গণতান্ত্রিক অধিকার মাথা উঁচু করে প্রয়োগ করে দেখি। আমাদের কে তখন ওই টিভির অ্যাডের মতো গর্ব করে বলতে হবে না “ আমরা গর্বিত যে আমরা ভারতবাসী”। ভারতবর্ষ নিজে হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু করে বলবে আমি গর্বিত আমি এই সন্তানদের জন্ম দিয়েছি।
![]() |
পরচিতি |
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন