প্রায় পনেরো মিনিট ধরে চেষ্টা করেও পুরন্দর প্রতীচী কে ফোনে পেল না যখন ধুস শালা বলে হাল ছেড়ে দিলো। কার সঙ্গে কথা বলছে কে জানে মুঠোফোন সমানে শুনিয়ে গেল আপাতত প্রতীচী’র লাইন পুরন্দর কে দেওয়া যাচ্ছে না।
বেশী দিন হয়নি ওদের আলাপ। “শুনুন আপনি কি শ্যামবাজারের দিকে যাবেন, আমাকে যদি একটু ...” পুরন্দর সিগারেটে টান দিয়ে পকেট হাতড়াচ্ছিল চাবির খোঁজে, দুটো মাত্র পকেট তাও চাবিটা মাঝে মাঝেই এরকম নাকাল করে।
আজকাল আর কোন হেল দোল হয় না সেরকম, নাকাল হওয়ার অভ্যেস অনেক পুরনো। ম্যানেজমেন্ট পড়ছিল, বাবা গেলেন, নাকাল। মায়ের একটা বুটিক, চলে যাচ্ছিল, তখনো বন্ধ হয় নি সাহেবী কেতাদুরস্ত হয়ে ওঠার সংগ্রাম, পড়া চলছিল। একটা দিদি, বছর চারেকের বড়, মায়ের সাথে বুটিক সামলাত। শ্রীলতা হঠাৎ দুপুর বেলা বুটিক থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল, ফিরত বন্ধ হওয়ার একটু আগে, মা শেষ মেশ খাওয়ার টেবিলে একদিন বললেন হ্যাঁ রে কি ব্যাপার বলত, কিছু বলছিস না কি হয়েছে। একটু হেঁসে শ্রীলতা মুখের ওপর থেকে অ্যাঞ্জেলা ডেভিস’এর আত্মজীবনী টা সরিয়ে বলেছিল – দাঁড়াও তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব, মনপ্রীত খুব মজার ছেলে। পুরন্দর ফুট কেটেছিল সাইমন বভিয়ার মানিমনি আমাদের ঘরে, এদিকে ফেমিনিস্ম এর বই আর ওদিকে প্রেম – মা’কে মানিমনি ডাকত। তুই থাম, আর যুগপৎ শ্রীলতার ভ্রূকুটি, পুরন্দর নাকাল। মাঝে মাঝেই দরকারে শ্রীলতার ব্যাগ হাঁটকানো প্রয়োজনে, সেটা এখন কিছুদিন মুস্কিল হবে।
সেই শ্রীলতা একদিন দুপুরে বুতিক থেকে বেরিয়েছিল, আর ফেরে নি। আবার নাকাল – থানা পুলিস কয়েকদিন এদিক ওদিক এর বাড়ি ওর বাড়ি, না জানা ছিল মনপ্রীতের ঠেকের ঠিকানা সে দেখতে কেমন লম্বা না বেঁটে রোগা না মোটা দাড়ি আছে না নেই সব অজানা রহস্য, পুলিশের লেকচার, সেও এক নাকাল হওয়া। কেস ডাইরি একদিন বন্ধ হয়ে গেল, খবর আর কোনোদিনই পাওয়া যায় নি, কোন খবরই না। নাকাল হওয়া শেষকালে নাকাল হয়ে গেল। তারপর তো পাশ করে একটা ভোডাফনের বিরাট এলাকার ম্যানেজারিয়াল জব। মানিমনি তখনো বুতিক চালায়, রাতের খাবার টেবিলেও কম দেখা হতে শুরু করেছিল। তবে একটা ছন্দ এসেছিল সব কিছুর মধ্যে, পুরন্দর বিয়ে করে নি – সাহস পায় নি বোধহয় আবার নাকাল হতে হয় যদি, এই ভয়ে।
কিন্তু শান্তি কি আর পোষা পাখী, এক রাতে বুটিক থেকে ফেরার সময় মানিমনি আর মারুতি ৮০০ টা দুমড়ে মুচরে বাই পাশের ধারের নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ল, বিশাল ভারী ট্রাক টাও কিছুদুরে হুমড়ি খেয়ে। সেই শেষ নাকাল, এর পরে আর কোন কিছুতে হেল দোল হয় না পুরন্দরের, নাকাল নিজেই নাকাল হয়ে গেছে উপস্থিতির আতিশয্যে। উপরি পাওনার মত গাড়ির অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হওয়ার দরুন কম্পেন্সেসান পেয়েছিল বেশ কিছু টাকা।
কণ্ঠস্বরের গমকে পুরন্দর ঘুরে তাকিয়েছিল। রামকৃষ্ণ ইন্সটিটিউট অফ কালচার থেকে বেরিয়ে – একটা সেমিনার ছিল ওর কম্প্যানি স্পন্সর করেছিল তাই অনেক রাত হয়ে গেছিল বেরোতে সব সেরে। দীঘল শরীরের অধিকারিণী মধ্যবয়স্কা, যৌবন এখনো আচ্ছা এবার আসি রে বলে উঠে দাঁড়ায় নি। জিন্স এর ওপর জরজেট এর ছোটো টপ, কোন ফ্যাসন ডিজাইনার এর ছোঁয়া রয়েছে বলে মনে হল পুরন্দরের চকিত দেখায়। মহিলা যারা পুরন্দরদের স্পন্সর করা সেমিনার ম্যানেজ করেছে সেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির পরিচালিকা। হ্যাঁ আসুন, আমি টালার ওদিকে যাবো।
পুরন্দর সে রাতে অনেকক্ষণ ঘুমোয় নি। প্রতীচী ওর থেকে বছর পাচেকের বড়, সেদিন গাড়িতে যেতে যেতে মনে হয়েছিল ওর পাশে মেসালিনা। অবিবাহিতা। সেই আবার নতুন করে শুরু হয়েছিল পুরন্দরের নাকাল হওয়া। পয়ত্রিশ বছরের খাঁচাটায় সেই অপরিহার্য স্বভাব নাকাল পুরন্দর সেই ক্লডিয়াসের যুগের ভ্যালেন্টাইনের মত মরেছিল নাকি বেঁচে ফিরেছিল সেটা নাকানি চোবানির স্টার জলশা মেগা সিরিয়াল।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন