বাটিটা সাঁড়াশি দিয়ে নিভু নিভু আঁচ থেকে সাবধানে নামালো মায়া। ছেলেটার বুকে সর্দি বসেছে। সর্ষের তেল গরম করে লাগালে যদি কমে। চিন্তায় আছে। ইদিকে তার বাপটার কুনো চিন্তা নাইকো। সে তো সে রেললাইনের ধারে প্যাকেট চুমকে গিলে টং সেই কুন দুফর থিইক্যা। আজ ইস্কুল ছুটি কি না...
গাঁয়ের একটাই ইস্কুল। সিখানেই চাগরি করে কেষ্ট মাঝি, তার বর। তা সেই নিয়ে তার মনে কুনো গরব নাই। চাগরির টাকায় তো সমসার চলে নাকো, সেই ছেলে কোলে ইট ভাঁটায় কাজে যাইতি হয় । সারাদিন খাটতি হয়, আর ঝেখন লেইনে দাঁড়িয়ে রোজ নেয় টিপছাপ দিয়ে, ত্যাকন দেখে তাদের মতুন মেয়েছেলেরা কম রোজ পায় ব্যাটাছেলিদের থিকে। কেন এমন ও বোঝে না। বাচ্চারে পিঠে বাধন দিই শক্ত করে পিঠের চালে। তা মালিকডা বেশ ভালো। ম্যানিজার বাবুকে বলে সব সমিকদের হেই বড়ো বড়ো আসল ঘিয়ের গন্ধ দিয়া লাড্ডু খাওয়ায়েছেন আজ। একটা নয়, দুটা কইর্যা।
আইজ নাকি গনোতন্ত দিবস। ভাঁটা থেকে ফেরার সময় কটা শহরের দিদিমণি আর বাবু আইস্যা মুখের সামনে চোঙ ধরে জিজ্ঞেস করলো এই গনোতন্ত বলতে কি বোঝে, ওয়ারা নাকি টিবি চ্যানেল থেকে এসেছেন। তা মায়াও বলে দিয়েছে, এই যে পতাকা ওঠে, ঘরের কোণে রাখা টিবিতে পতাকা উঠায়, উই জনগনমন গাওয়ার দিন। দুই গাঁয়ের একটাই থানা... উই উখানেও এইরকম দেকেচে সে ফি বচ্ছর। দুবার পতাকা উঠে, গান গায়, কপালে হাত ঠেইকে ছ্যালুট দেয়। কেষ্টর ইস্কুলেও তো অমন হয় ওই দু’দিন। ওই দু’দিন কেষ্ট দুফুর থেকে টং থেইকে রাতে বাড়ি ফিরে অন্য দিনের থেকে অনেক গুণ বেশি ঠ্যাঙ্গায় মায়াকে, তারপর সে যে পুরুষ, সেটাও দেখাতে থাকে নির্মম ভাবে। তা সোয়ামি তো এমন করবেই, কিন্তু হেই সব কি বলা যায় নাকি ওই শহরের বাবু আর দিদিমণিদের? কিন্তু ইটাও তো গনোতন্ত। মায়া এখন এটা বুঝে গেছে যে গনোতন্ত মানে অনেকের ছুটি, সোয়ামিদের আরামের দিন, লাড্ডু খাবার দিন, একদিনের রোজ এশটেরা পাবার দিন, একটু ঝাল ঝাল করে খাসির মাংস খাবার দিন।
আইজ নাকি গনোতন্ত দিবস। ভাঁটা থেকে ফেরার সময় কটা শহরের দিদিমণি আর বাবু আইস্যা মুখের সামনে চোঙ ধরে জিজ্ঞেস করলো এই গনোতন্ত বলতে কি বোঝে, ওয়ারা নাকি টিবি চ্যানেল থেকে এসেছেন। তা মায়াও বলে দিয়েছে, এই যে পতাকা ওঠে, ঘরের কোণে রাখা টিবিতে পতাকা উঠায়, উই জনগনমন গাওয়ার দিন। দুই গাঁয়ের একটাই থানা... উই উখানেও এইরকম দেকেচে সে ফি বচ্ছর। দুবার পতাকা উঠে, গান গায়, কপালে হাত ঠেইকে ছ্যালুট দেয়। কেষ্টর ইস্কুলেও তো অমন হয় ওই দু’দিন। ওই দু’দিন কেষ্ট দুফুর থেকে টং থেইকে রাতে বাড়ি ফিরে অন্য দিনের থেকে অনেক গুণ বেশি ঠ্যাঙ্গায় মায়াকে, তারপর সে যে পুরুষ, সেটাও দেখাতে থাকে নির্মম ভাবে। তা সোয়ামি তো এমন করবেই, কিন্তু হেই সব কি বলা যায় নাকি ওই শহরের বাবু আর দিদিমণিদের? কিন্তু ইটাও তো গনোতন্ত। মায়া এখন এটা বুঝে গেছে যে গনোতন্ত মানে অনেকের ছুটি, সোয়ামিদের আরামের দিন, লাড্ডু খাবার দিন, একদিনের রোজ এশটেরা পাবার দিন, একটু ঝাল ঝাল করে খাসির মাংস খাবার দিন।
এহ্, ওই টিবির দিদিরা কি ভাবে, সে দেশের কিছুই জানে না। কিন্তু ঝেকন ওরা মায়াকে জিজ্ঞেস করলো দেশের পোধানমন্তী কে, বলে দিয়েছে...। কিন্তু মায়ার উত্তর শুনে ওরা কেমন মুখ টিপে যেন হাসলো। সে হাসুক, তাড়াতাড়ি বাড়িমুখো হলো সে। আঁধার হবার আগে বাদা পেইরে ঘর ঢুকতে হবে ওকে; পোড়ো বাড়িটার থেকে হা হা করে মাতাল হাসি বেরোয় গনোতন্তের দিনেও, রাস্তাগুলোনে লেইটপোস্ট তিন বচ্ছর ধরে ফালতুই দাঁড়িয়ে আছে, কানা একেবারে, সাঁঝ লাগলে কানা রাস্তা। এপ হচ্চে এদানিং অনেক, বাচ্চা-বুড়ি-শাঁখা-সিঁদুর-পোয়াতি কিচুই মানে না এয়ারা।
জড়ানো গান এগিয়ে আসছে, পিঠ শক্ত হয়ে এলো মায়ার, অজান্তেই। ইস্, পুড়ে কালি হয়ে গেছে তেল গরম করা বাটিটা, এ ঝাঁই পোড়া আর উঠবে না কিছুতেই। আজকের মতো একটু পরেই গনোতন্ত দিবস শেষ হবে। দরজা খুলে উনুন খোঁচানো শিকটা কেষ্টর দিকে এগিয়ে দেয় সে চুপচাপ...।
![]() |
~ কবি পরিচিতি ~ |
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন