“বসন্তী তুমহারা নাম ক্যায়া হ্যায়?”- এই শিশুর বিস্ময় মাখা প্রশ্ন তো আমরা সকলেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। তখনো জয় ঠাকুর বলদেব সিং-এর বিধবা পুত্রবধূ রাধা-র প্রতি নীরব কান্নিক মারা দৃষ্টিতে তাকায় নি। তখনো সে শীর্ণ রাগী গম্ভীর এক যুবক মাত্র। হয়ত কোন চাপা বেদনা তার অন্দরে সুপ্ত, লুকোনো। আচ্ছা এই জয় নামের শব্দটির সঙ্গে কি তবে বিষাদ কথাটা জড়িয়েই থাকে? ভারতের সুপ্রাচীন সভ্যতার সবচেয়ে চর্চিত ও ঘৃণিত যুদ্ধ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরেও কি এই বিষাদ ই আমরা ঘুরে ফিরে দেখি না? ত্যাগের প্রতিমূর্তি গান্ধারীর সেই শোকে বিষাদ মূর্তি দেখি । যে শ্রীকৃষ্ণ এত প্রিয় তাঁর তাঁকে কি না তিনি বললেন “তুমি যখন কুরুপাণ্ডব জ্ঞাতিদের বিনাশ উপেক্ষা করেছ, তখন তোমার জ্ঞাতিদের ও তুমি বিনষ্ট করবে। ছত্রিশ বছর পরে তুমি জ্ঞাতি হীন অমাত্যহীন পুত্রহীন ও বনচারী হয়ে অপকৃষ্ট উপায়ে নিহত হবে। (জনান্তিকে স্মরণ করাই কৃষ্ণের প্রয়াণ ঘটে পা-এ ব্যাধের বিষাক্ত তীর বিদ্ধ হয়ে)।” জয় তাহলে নির্ভেজাল আনন্দ ডাকে না। তাহলে আমরা বিজয়ের জন্য এত পাগল হই কেন? অবশ্যই আমরা সেই মাছরাঙা কোম্পানীর মালিকের কথা ভেবে আকুল নই! রণে বিজয় পাবার জন্যই না এত আয়োজন! মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিলে জয় আর কোন পথ দিয়ে আসবে?
১৯৩৯ এর পয়লা এপ্রিল স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে যে উদ্দীপনাময় মহা বিজয় মিছিল বের হয়েছিল তার তূল্য মিছিল এর আগে ইউরোপ দেখে নি। কত ঘোড়সওয়ার কত সাঁজোয়া গাড়ি কত সার সার সেনাবাহিনীর তাক লাগানো মার্চ দেখবার জন্য সেদিন ভোর থেকেই মাদ্রিদের রাস্তায় রাস্তায় মানুষ জেগেছে। মনে রাখতে হবে এপ্রিলেও স্পেনে বেশ শীত থাকে। তো সেই আকন্ঠ জয়ের পরে পরবর্তী পঞ্চাশ বছর তারা তার দাম দিয়েছিল। জেনারেল ফ্রাঙ্কোর জয়ের সুতীব্র সেলিব্রেশনে আপামর স্পেন পঞ্চাশ বছর মধ্যযুগে ফিরে গিয়েছিলো। তার মানে জয়ের কারণ যদি সৎ হয়েও থাকে জয়ের ফল কিন্তু অসৎ হবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। অথচ জয় এবং সেই সম্পর্কিত রোম্যান্স আমাদের সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখে একদিন প্রতিদিন জীবনভর।
১৯৩৯ এর পয়লা এপ্রিল স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে যে উদ্দীপনাময় মহা বিজয় মিছিল বের হয়েছিল তার তূল্য মিছিল এর আগে ইউরোপ দেখে নি। কত ঘোড়সওয়ার কত সাঁজোয়া গাড়ি কত সার সার সেনাবাহিনীর তাক লাগানো মার্চ দেখবার জন্য সেদিন ভোর থেকেই মাদ্রিদের রাস্তায় রাস্তায় মানুষ জেগেছে। মনে রাখতে হবে এপ্রিলেও স্পেনে বেশ শীত থাকে। তো সেই আকন্ঠ জয়ের পরে পরবর্তী পঞ্চাশ বছর তারা তার দাম দিয়েছিল। জেনারেল ফ্রাঙ্কোর জয়ের সুতীব্র সেলিব্রেশনে আপামর স্পেন পঞ্চাশ বছর মধ্যযুগে ফিরে গিয়েছিলো। তার মানে জয়ের কারণ যদি সৎ হয়েও থাকে জয়ের ফল কিন্তু অসৎ হবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। অথচ জয় এবং সেই সম্পর্কিত রোম্যান্স আমাদের সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখে একদিন প্রতিদিন জীবনভর।
এই জয় শব্দটি আসলে যুদ্ধ নামক এক অবশ্যম্ভাবী ঘটনার ফল মাত্র। আহ্নিক গতি বার্ষিক গতির মতই এটি নিত্য ঘটমান এক বিশেষ সত্য যা না থাকলে মানুষ জাতটাকে চেনাই যেত না। বস্তুর ভাগীদার যদি একের অধিক হয় সঙ্গে সঙ্গেই প্রসঙ্গ এসে পড়ে লড়াইয়ের। সভ্যতা যত এগোয় লোভ ততই বাড়ে রণের অনিবার্যতাও ততই এসে পড়ে। জয়ী হয়েও জয় কে মর্যাদা আমরা কয়জনে দিতে পারি? যে বিভীষণকে আমরা ভিলেন বলেই জানি জ্ঞান উন্মেষ হবার শুরু থেকে তিনি কিন্তু লঙ্কার রাজা হবার পরেও সমান বিনয়ী রয়ে গিয়েছিলেন। শ্রীরাম চন্দ্রের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য ও ছিল একই রকম। তাঁর থেকে এইটি কি আমরা নিয়েছি? প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে গেল আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এর বিজয় মুহূর্তের কথা। সেদিন তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভারতবাসীরাও বাঁধ ভাঙা আনন্দে ফেটে পড়েছিলাম। কিন্তু পত্র পত্রিকা পড়ে যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে জয়ের উল্লাসে কোন অপ্রীতি এই দেশে হয়েছে বলে জানি না। অবশ্য এটিকে মহানতা বলব নাকি এটি পার্শ্ব জয় বলে নামাঙ্কন করব জানি না। কারণ শত হলেও এটি আমাদের জীবন মরণ যুদ্ধ তো ছিল না।
সে বরং বেশি প্রভাব ফেলেছিল কারগিলের সেই যুদ্ধ। সে যুদ্ধে সরকারের প্রচার অনুযায়ী আমরা জয়ী হলেও সে ভাবে উল্লাস বা বিজয় মিছিলের নামে বর্বরতা দেখেনি দেশ। এর চেয়ে ঢের নৃশংস ভাবে বিজয় উদযাপন করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে জয়লাভ করে। তোমার আমার বাড়ির সন্তু , আলি বা জাফর রা সেই সব মহার্ঘ্য জয়ের পর নির্দ্বিধায় তাদের ছোটবেলার বন্ধুর হাতের পাঞ্জা কেটে নিতে দেরী করে না, বা একটু আনন্দ ফুর্তির নামে বহুদিন তাক করে রাখা গ্রামের পছন্দসই মেয়েটির শরীর খুবলানোর ফুর্তি টুকু সেরে নেয়। আহা করুক করুক। কত কষ্ট করেই না ওরা জয় এনে দেয় নেতাদের ।এটুকু তো করবেই। ওসব দেখতে নেই। বৃহৎ যজ্ঞে মশা মাছি অমন অনেক মরে। ওতে ঘাবড়ালে চলবে?
সে বরং বেশি প্রভাব ফেলেছিল কারগিলের সেই যুদ্ধ। সে যুদ্ধে সরকারের প্রচার অনুযায়ী আমরা জয়ী হলেও সে ভাবে উল্লাস বা বিজয় মিছিলের নামে বর্বরতা দেখেনি দেশ। এর চেয়ে ঢের নৃশংস ভাবে বিজয় উদযাপন করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে জয়লাভ করে। তোমার আমার বাড়ির সন্তু , আলি বা জাফর রা সেই সব মহার্ঘ্য জয়ের পর নির্দ্বিধায় তাদের ছোটবেলার বন্ধুর হাতের পাঞ্জা কেটে নিতে দেরী করে না, বা একটু আনন্দ ফুর্তির নামে বহুদিন তাক করে রাখা গ্রামের পছন্দসই মেয়েটির শরীর খুবলানোর ফুর্তি টুকু সেরে নেয়। আহা করুক করুক। কত কষ্ট করেই না ওরা জয় এনে দেয় নেতাদের ।এটুকু তো করবেই। ওসব দেখতে নেই। বৃহৎ যজ্ঞে মশা মাছি অমন অনেক মরে। ওতে ঘাবড়ালে চলবে?
আমার জয় মানে যে আসলে তোমার পরাজয় এমন ভাবেই আমরা দেখি এবং দেখতে শেখাই আমাদের সন্তান দের। অন্য চোখে কি আমরা কখনো ই দেখবো না এই সব লড়াই টড়াই গুলোকে। মানছি “যোগ্যতমের উদ্বর্তন” নীতি ছাড়া দুনিয়ায় টেকা যায় না। ঠেলাঠেলি করে এমন কি বাসে ট্রামেও বসার জায়গা পেতে হয়। ওসব মিষ্টি মিষ্টি কথা লেখকদের জ্ঞান গর্ভ বুলিতেই থাকে... ফিল্ডে পড়লেই বুঝবে বাওয়া... হাউ মেনি প্যাডিতে হাউ মেনি রাইস। কুকুর কামড়া কামড়ি না করলে কোন উপায় নেই তাহলে? আচ্ছা আমরা বিষয় টার অর্ধেক মেনে নিচ্ছি। হ্যাঁ বেঁচে থাকতে গেলে টিকে থাকতে গেলে লড়াই দরকার। কিন্তু বিজিতের প্রতি মানবিক আচরণ টা ভুলব কেন আমরা? আলেকজান্ডার যখন ভারতের পশ্চিম প্রান্ত জয় করে রাজা পুরু কে বন্দী করে জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি অতঃপর কি আচরণ প্রত্যাশা করেন তাঁর কাছ থেকে। পুরু কিন্তু সগর্বে উত্তর দিয়েছিলেন “রাজার প্রতি রাজার ব্যবহার”...
অর্থাৎ বিজিত হওয়া মানেই তাঁর সম্ভ্রম খোয়ানো হতে পারে না। ঠিক এই কাজ আমরা আমাদের ভারতেই চিরকাল দেখে এসেছি। আরে বাবা যতই মারামারি করো চামড়ার নিচে তো রক্তের রঙ লালই। বহমান স্রোতের মত সভ্যতা র জন্ম হয় মৃত্যু হয় আবার নতুন ইতিহাস রচনা হতে থাকে ... এমনটিই যখন হয়ে এসেছে তাহলে আর কিসের জন্য জয়ের পরের স্খলন? আফটার অল আমরা মানুষই তো। আমরা কি পশুদের সমান হতে পারি? একটি সারমেয় খাবার খেয়ে যে আনন্দ পায় আমরা কি সেই পর্যায়ের আনন্দ পেতে পারি? ইয়েস উই আর অ্যানিম্যাল বাট র্যাকশনাল...তাই না? তবে ওই যে সব কথা গুলো যা আমাদের দর্শন পড়তে গেলে দিস্তা দিস্তা মুখস্থ করে খাতায় উগরাতে হয়? সেগুলি তাহলে জলেই যাবে? পল্লীগ্রামের গৃহবধূ মা সারদাদেবী যে বলে গেলেন “কেউ পর নয় মা সবাই আপন”...সে কি তবে বিশুদ্ধ গুল? বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিতে সবাই যে আমার আপন , সবাই যে সেই ব্রহ্মের অংশ বা “অয়মাত্মা ব্রহ্ম” সে সব তাহলে কি কিছুই নয়? তা যদি নির্বিচারে ভাবতে থাকি তাহলে আমার আপনার ঘরই ক্রমশ পাগলা গারদ হয়ে উঠবে। জয় আমাদের সঙ্কীর্ণ করলে তা জয় নয় খানিক দাবড়ানির মুহূর্ত বলা যেতে পারে।
আজ বোড়ের চালে আমি মাত করেছি কাল তুমিও করতে পারো। তবে আর খামোখা দিশেহারা হই কেন? চাকা ঘুরবে না তা কি হলফ করে কেউ বলতে পারে? অতএব বুদ্ধিমানেরা সংযত হও। রাজনৈতিক নেতারা আত্মসংবরণ করুন। এমনিতেই যথেষ্ট দেরী হয়ে গেছে। প্রত্যেকেরই আজ রবার্ট ব্রুস হওয়া দরকার।
অর্থাৎ বিজিত হওয়া মানেই তাঁর সম্ভ্রম খোয়ানো হতে পারে না। ঠিক এই কাজ আমরা আমাদের ভারতেই চিরকাল দেখে এসেছি। আরে বাবা যতই মারামারি করো চামড়ার নিচে তো রক্তের রঙ লালই। বহমান স্রোতের মত সভ্যতা র জন্ম হয় মৃত্যু হয় আবার নতুন ইতিহাস রচনা হতে থাকে ... এমনটিই যখন হয়ে এসেছে তাহলে আর কিসের জন্য জয়ের পরের স্খলন? আফটার অল আমরা মানুষই তো। আমরা কি পশুদের সমান হতে পারি? একটি সারমেয় খাবার খেয়ে যে আনন্দ পায় আমরা কি সেই পর্যায়ের আনন্দ পেতে পারি? ইয়েস উই আর অ্যানিম্যাল বাট র্যাকশনাল...তাই না? তবে ওই যে সব কথা গুলো যা আমাদের দর্শন পড়তে গেলে দিস্তা দিস্তা মুখস্থ করে খাতায় উগরাতে হয়? সেগুলি তাহলে জলেই যাবে? পল্লীগ্রামের গৃহবধূ মা সারদাদেবী যে বলে গেলেন “কেউ পর নয় মা সবাই আপন”...সে কি তবে বিশুদ্ধ গুল? বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিতে সবাই যে আমার আপন , সবাই যে সেই ব্রহ্মের অংশ বা “অয়মাত্মা ব্রহ্ম” সে সব তাহলে কি কিছুই নয়? তা যদি নির্বিচারে ভাবতে থাকি তাহলে আমার আপনার ঘরই ক্রমশ পাগলা গারদ হয়ে উঠবে। জয় আমাদের সঙ্কীর্ণ করলে তা জয় নয় খানিক দাবড়ানির মুহূর্ত বলা যেতে পারে।
আজ বোড়ের চালে আমি মাত করেছি কাল তুমিও করতে পারো। তবে আর খামোখা দিশেহারা হই কেন? চাকা ঘুরবে না তা কি হলফ করে কেউ বলতে পারে? অতএব বুদ্ধিমানেরা সংযত হও। রাজনৈতিক নেতারা আত্মসংবরণ করুন। এমনিতেই যথেষ্ট দেরী হয়ে গেছে। প্রত্যেকেরই আজ রবার্ট ব্রুস হওয়া দরকার।
আজকাল খেলার মাঠেও জিতলে বা হারলে খুন বা আত্মহত্যা ঘটে থাকে নিত্যই। এইসব তুচ্ছ কারণে যদি আমরা সব শক্তি ক্ষয় করে ফেলি তাহলে সমাজ এগোবে কাদের হাত ধরে। আজ তাই বলি জয় আমাদের কাম্য হোক। কিন্তু তার পরেও যেন আমরা মনুষ্যত্ব বজায় রাখি। “যেন ভুলে না যাই/ যেন বেদনা পাই” বিজিতের কথা ভেবে। আসুন আজ ভালো একটা ভবিষ্যৎ এর আকাঙ্খায় আমরা নতুন আগ্রহে শুরু করি।
![]() |
পরিচিতি |
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন