‘বরফের ঋতু ভেদ করে / দূরদেশে ফুটে ওঠো সাহসিনী প্রেইরি গোলাপ । / ঈষৎ নুয়ে থাকা নডিং ট্রিলিয়াম নও / প্রান্তরের দীর্ঘ ঘাস নও / তুমি এক অনাদৃত বিনিদ্র কুসুম’ ... মাথার মধ্যে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় কথাগুলো , আমার দিনে রাতে আমি গুনগুন ‘রেলপথ ধরে হেঁটে গেলে / ছোট কালভার্ট / অগভীর জলে খেলা করে / ডানকানা মাছ / তারপর তোমাদের বাড়ি’... যেন কোন তরুণ তুর্কি ব্যান্ডের গান শুনছি ... ইনিই কবি সরদার ফারুক ...এই ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে ‘এক মুঠো প্রলাপ’ এ আমাদের মুখোমুখি ... কবিকে ‘আত্মার সান্নিধ্য’ এর পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা তাঁর অমুল্য সময়ের কিছুটা আমাদের বরাদ্দ করবার জন্য ... আমাদের এই অতিথি কবি পেশায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ... মানব দেহের অ্যানাটমির মতোই সাবলীল করেন কবিতার ব্যাবচ্ছেদ ... কাব্যের শিরা ধমনীতে ষ্টেথো ধরে নিখুঁত নির্ণয় করেন এর ভালোথাকা , হার্টবিট , অসুখ বিসুখ ... আমরা সাগ্রহে তাকিয়ে থাকি তাঁর প্রতি মানস প্রতিমার নির্মাণে ... ডুবে যাই ভেসে উঠি বাঁচতে থাকি ভীষণ ব্রীড়ায় সাপটে ধরি তার বর্ণ গন্ধ সুষমা ... কবিকে অনেক শুভেচ্ছা তাঁর দুর্দান্ত আগামীর ...
ফারুক ভাই , আপনার জন্ম তো ষাটের দশকে , পত্র পত্রিকায় লিখছেন সেই আটের দশক থেকেই , কিন্তু প্রথম কাব্যগ্রন্থ অনুরাগী পাঠকের হাতে এল এই সেদিন, ২০১২ সালে, ‘আনন্দ কোথায় তুমি’, এত সময় নিলেন কেন ? আত্মপ্রচারে অনীহাই কি মূল কারণ , নাকি অন্য কিছু ?

বই বের করবো – এ রকম চিন্তা করে কখনো লিখিনি , নিজের খেয়ালেই লিখে গেছি । অবশ্য রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসাবে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার কারণেও লেখালেখিতে প্রায় ২০ বছরের (১৯৮৭ থেকে ২০০৭) বিরতি ছিলো । ভাবতেই পারিনি যে আবার লিখতে পারবো।
২০১২ সালের শুরুতে কিছু তরুণ কবির উৎসাহে প্রথম পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করি ।তারপর খুব স্বল্প ব্যবধানে আরো ৪টি বই প্রকাশিত হয় ।
আপনার জন্মভূমির কথা উঠলেই সেই কপোতাক্ষ নদের কথা বলতে হয়, আর চূড়ান্ত রোমান্টিসিজম আছে বাঙালির এই নদ কে ঘিরে ... আপনার কি মত ?

এক হিসাবে আমি সৌভাগ্যবান। দুজন বড়ো কবির জন্মস্থানের কাছেই দুটো বিখ্যাত নদ/নদী আছে , একটি কপোতাক্ষ আরেকটি কীর্তনখোলা ।দুই নদীর সাথেই আমার একটা সম্পর্ক আছে । আমার জন্ম মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষের তীরে । ওখানে আমার পিতার কর্মস্থল ছিলো । কীর্তনখোলার তীরে জীবনানন্দের শহর বরিশাল , ঐ শহরে আমার পিতৃপুরুষের ভিটা ।
‘ কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদনের দেশপ্রেম,প্রগাঢ় আর্তি যেকোনো বাঙালির মতো আমাকেও প্রবলভাবে টানে ।
আপনার চিকিৎসক পেশার পাশাপাশি সাহিত্যের অঙ্গনে এই যে অবাধ দর্পিত বিচরণ এর পেছনে কার অনুপ্রেরণা ? আপনার পারিবারিক পরিমণ্ডল আপনার এই ভালোবাসার ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে ? একটু যদি বিশদে বলেন আপনার বেড়ে ওঠার দিনগুলি সম্পর্কে ...

একজন লিখিয়ের জীবনে পেশাটা খুব বড়ো ব্যাপার নয় ।ছেলেবেলা থেকেই আমি নিবিষ্ট পাঠক ,হাতের কাছে যা পেতাম ,তা-ই পড়তাম।আমার বড়োভাই(তাঁকে আমরা ‘দাদা’ বলে ডাকতাম), সেজোআপা এবং সেজোভাইয়ের বিশাল সংগ্রহ ছিলো ,সেসব পড়েই লেখার ইচ্ছেটা জাগ্রত হয়েছিলো ।বাবার কাছ থেকে টাকাপয়সা পেলে নিজেও বই কিনতাম । রেলওয়ে বুকস্টলে খুব কম দামে রুশ সাহিত্যের বইগুলো পাওয়া যেতো । তবে সেভাবে কেউ আলাদা করে লেখার প্রেরণা জোগায়নি । বয়োঃসন্ধিতে প্রেমে পড়ার ব্যাপার থাকেই , তো সেসব একটা ট্রিগার হিসাবে কাজ করেই ।
ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র – শ্রমিক – কৃষক আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোত জড়িয়ে আপনি ... কিভাবে এলেন এই পথে ?

ছাত্রজীবনে বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদী চিন্তা থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হই । আমার বড়ো তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ,এঁদের মধ্যে একজন সরাসরি যুদ্ধে আহত ।বড়ো দুলাভাই খুলনার প্রথম শহীদ । আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থক হওয়ার কারণে তাঁকেও পাকবাহিনী হত্যার চেষ্টা করে ।রাজনীতি আমার পরিবারেই ছিলো ।
আপনি নব্বইয়ের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ... আপনাকে সরকারি চাকরিও ছাড়তে হয়েছিল এইজন্য ... এখনও কি একই আদর্শে বিশ্বাস করেন ? দুনিয়াজুড়ে বামপন্থী আন্দোলন ধাক্কা খেয়েছে বিভিন্ন সময় ... কি মনে হয় , এখনো যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এই লড়াই আন্দোলন , নাকি আফসোস আছে কোন ?

এখনো লড়াইটার প্রয়োজন আছে ,থাকবে । তবে কৌশল নিয়ে ভাবার দরকার আছে ।এছাড়াও আদর্শের নামে যেকোনো ধরণের স্বৈরাচারী আচরণকে মেনে নিতে পারি না । মানুষের মুক্ত, স্বাধীন মতামতকে রুদ্ধ করে কোনো পন্থাই টিকতে পারে না । সবকিছু নিয়েই নতুন করে ভাবতে হবে ।
বিভিন্ন ব্লগে এবং পত্র পত্রিকায় আপনার প্রবন্ধ এবং গদ্যরচনা প্রকাশিত হয় ... এদের গ্রন্থিত করে সাহিত্যানুরাগীর হাতে তুলে দেবার ব্যাপারে কোন ভাবনা চিন্তা করছেন কি ? এদের একত্রিত করা দরকার ভাবীকালের জন্য , মনে হয় না একথা ?

– বিপুল ক্লান্তি ও আলস্য একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । সময় পেলেই এটা নিয়ে বসবো ।
আজকাল অনেকেই ই-বুক করছেন , আপনার ও তো আছে ই-বুক , তাই না ? একটু যদি বলেন আমাদের এ বিষয়ে ... আপনি কোনটা বেশি পছন্দ করেন , ছাপা বই না ই- বুক ? কেন ?

আমার পছন্দ কাগজে-ছাপা বই । তবে বাংলা কবিতার পাঠক বিশ্বের নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকায় ,এবং তাঁদের কাছে বই পৌঁছে দেবার জটিলতার কারণে ই-বুক আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।হয়তো আগামীদিনে পাঠকেরা এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে ।
আপনার কবিতার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ‘গুরুচণ্ডালী’ গ্রুপে , তারপর পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গ্যাছে , আমি কেবল দিন প্রতিদিন আপনার লেখার প্রতি আরও বেশি করে আকৃষ্ট বোধ করেছি ... আপনার নিজের লেখার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে মূল্যায়ন কি ? কোন বিশেষ বাঁক কি আছে আপনার লেখার ধরণে বা চিন্তায় ? কোন বিশেষ ‘ইজম’ কি আপনাকে প্রভাবিত করেছে কোন বিশেষ সময় ?

দেখুন ,সময়কে পুরোপুরি এড়ানো যায় না । ভাষার ভেতরে ,সাহিত্যে সারাক্ষণ একটা পরিবর্তন ঘটে চলেছে। পাঠকের পাঠরুচির সাথে লেখকের লেখাও পাল্টাচ্ছে (যেহেতু লেখক নিজেও একজন পাঠক।)।শিল্পসাহিত্যের বিভিন্ন আন্দোলন এবং ইজম প্রভাব রাখবেই । তবে নিজের স্বাতন্ত্র রক্ষার একটা প্রয়াস বরাবরই আমার মধ্যে ছিলো । সেটা কতোটা কাজ করেছে ,বলতে পারবো না ।
‘আমাকে নাচালে কেন ? / আমি নাচিয়েছি ? তুমি নেচেছ স্বেচ্ছায় ।/ আমাকে কাঁদালে কেন ? / এ ক্রন্দন বিশ্বময় , আমিও কেঁদেছি । / এ- ও তো যুগল নৃত্য , দুজনের ভুল / কে যে কবে খুলেছিল নাচের ইশকুল !’... এই যে জীবনের সারসত্য ছোট্ট করে বলে দিলেন , এর পেছনে কি আছে , দেখে শেখা , নাকি ঠেকে শেখা ?

শুধু দেখে কি এভাবে বলা যায় ? রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়েই যেতে হয় ।
বেশ সাহসী আপনার কবিতা ... তথাকথিত আঁতেল শিবিরে বিরাজ না করেও আপনি ভীষণ সমসাময়িক ... ‘ কবে যেন মধুপুর গড়ে / হরিনাম সংকীর্তনে রাত কাটিয়েছ / এলোকেশী তরুণী বৈষ্ণবী / বার বার ভাবের আবেশে / ঢলে পড়ছিল / চন্দনের ফোঁটা / সূর্য হয়ে জ্বলছিল রহস্যের রাতে ।/ কবে যেন আশশ্যাওড়ার ঝোপে উপেক্ষা করেছ / গোখরোর মরণ ছোবল / যাত্রার আসরে / প্রিন্সেস রত্নার পায়ে লুটিয়ে দিয়েছ / কৃপণের সমস্ত সঞ্চয় ।‘... একি সচেতন ভাবে গড়ে ওঠা ইমেজ , নাকি বিবর্তনের পথে নিজেকে অলস সমর্পণ ?
যাপিত জীবনের সাথে অবচেতনার ঘোর মিলিয়েই কবিতা হয় ।
আপনার কবিতায় বিষয় বৈচিত্রে একটা আন্তর্জাতিকতা আছে ,আপনি বলেন , ‘আবার আমাকে দিও অভিদের সোনার কলম ’, কিম্বা ‘লিলিথের প্রতি ‘ কবিতায় যেমন দেখি , কিম্বা ‘ নিজেই এনেছি বয়ে চিতাকাঠ ডাগর ডাঙশ / ঘৃতভাণ্ড , নানা উপচার / আয়োজন শেষ হলে শুরু হবে মগ্ন উচ্চারণ ।‘... আবার বলতে শুনি , ‘ কলবে উঠেছে বান , সেজদায় ভরে / ওঠে দেল নামাজের পাটি’, কিম্বা ‘পানশালা খুলে দাও , নাচ হোক সাথে / আমার এখনো বাঁচতেই ভালো লাগে ।‘ ... এই যে বিভিন্নতায় অনায়াস গতিবিধি , দেশ ধর্মের বিধি নিষেধ ভেঙ্গে , কোন সঙ্কীর্ণ ছকেই বাঁধা যায় না আপনার মত সার্থক কবিদের , তার জন্য কোন বিরুদ্ধ সমালোচনা শুনতে হয়েছে কখনো ? মাপ করবেন , এভাবে বলার জন্য , আসলে কনজারভেটিভদের কথা বলছি আমি ...

আসলে আমার কবিতা নিয়ে কোথাও তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি , সেকারণেই হয়তো সমালোচনাও চোখে পড়েনি ।বিরোধিতা করতে হলেও যেটুকু গুরুত্ত্ব থাকতে হয় , হয়তো সেটুকু গুরুত্ত্ব অর্জনেও লেখাগুলো ব্যর্থ হয়েছে ।
সাম্প্রতিক কালে দুই বাংলার সাহিত্যে শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে দু ধরনের প্রতিক্রিয়াই দ্যাখা গ্যাছে ... আপনার এ বিষয়ে মত কি ? এর সাফল্য বা ব্যর্থতা কি বিভাজিত করেছে বাংলাদেশের সাহিত্যজগত কে ?

ধর্মান্ধতার সাথে মুক্তচিন্তার লড়াই ,দেশপ্রেমীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকদের যুদ্ধ এই উপমহাদেশে সবসময়ই ছিলো । শাহবাগ নিয়েও সেই একই বিভাজন । এখানে কর্পোরেট হাউজগুলোর নিয়ন্ত্রিত কিছু পত্রিকা আর তাদের অনুগ্রহভাজন কিছু পোষা লোক কবি-সাহিত্যিকের ছদ্মবেশে , মেকি পোস্টমডার্নিজমের মোড়কে অন্ধকার যুগকে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট ।
কবিতা কি এবং কিভাবে কবিতা লেখা উচিৎ , কবিতার ব্যাকরণ , ছন্দ , ভাষা এগুলো আপনার কি মনে হয় কবিতার ইস্কুল খুলে শেখানো উচিৎ হবু কবিদের ? অনেক দেশেই তো ক্রিয়েটিভ রাইটিং শেখানোর কোর্স আছে । কোলকাতায় বেবিজ ল্যাবে কবি গবেষক অমিতাভ প্রহরাজ কবিতার প্রকরণ নিয়ে কাজ করছেন । এদেশে কেউ আছেন ? কতটা দরকারি মনে করেন এসব ?

স্বভাবকবির দিন আর নেই । অশিক্ষিতপটুত্ব দিয়েও আর বাজিমাৎ করা যাবে না । নিয়ম ভাঙতে গেলেও নিয়ম জানতে হবে ।তবে নিয়মটাই কবিত্ব নয় – কবিতা আলাদা ব্যাপার ।
যে যেভাবে পারে শিখুক ,শেখাটা জরুরী ।
মাঝে মাঝে অনেকের স্ট্যাটাস দেখি , ‘এত কবি কেন?’ বা অনেকেই বারে বারে মনে করান , সকলেই নন, কেউ কেউ কবি ... আপনার কি মনে হয় , অবসরে পি এন পি সি না করে , অপরের অকল্যাণ না করে , খুন জখম ক্রাইম না করে নির্দোষ এই নেশা করা বরং সমাজের পক্ষে কম ক্ষতিকর ? নাকি , প্লেটোর মত , এদের নির্বাসন দেওয়া উচিৎ ?

হাজার হাজার মানুষ কবিতা লিখুক ,অসুবিধা কী ? কবিতার চর্চা-ই বরং সমাজকে আরো মানবিক করতে পারে । প্লেটোর জবাব তো তাঁর শিষ্যই দিয়ে গেছেন, একদম গুরু-মারা জবাব ! কবিদের নির্বাসন দেয়ার কিছু নেই , তাঁরা এমনিতেই নির্বাসিত ।
কোনটা বেশি কাম্য আপনার কাছে , কবিতা অ্যাজ অটোমেটিক রাইটিং নাকি বহু মাপজোক করে ভাস্কর্য গড়ার মত ব্যাপার ? সে ভাস্কর্যের স্পষ্ট মুখ চোখ কি থাকতেই হবে নাকি সেটা অ্যাবস্ট্রাক্ট হওয়া বেশি ভালোত্বের লক্ষণ ?

অক্টাভিয়ো পাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন , পুরোপুরি অটোমেটিক রাইটিং বলে কিছু নেই ।লিখতে গেলেই একটার সজ্ঞান প্রয়াস এসে পড়ে ।তবে চেতন-অবচেতনের যতো বেশি মিশ্রন ঘটে ,কবিতার জন্য ততোটাই ভালো ।কলাকৌশল থাকবেই ,যতোটা লুকিয়ে রাখা যায় ।
রবীন্দ্রনাথ ‘আধুনিক কাব্য’ প্রবন্ধে বলেছেন , ‘After flowing straight for a while, most rivers take a sudden turn. Likewise, literature does not always follow the straight path; when it takes a turn, that turn must be called modern. We call it adhunik in Bengali. This modernity depends not upon time but upon temperament.
The poetry to which I was introduced in my boyhood might have been classed as modern in those days.’’ ... এটা যেমন সত্য তেমনি সাহিত্যে একই শতকের লেখকদের মধ্যে দশকওয়ারী ভেদাভেদ দ্যাখা যায় ...আপনার কি মনে হয় , কিভাবে দেখব বা বিচার করবো আধুনিকতা ? কবির জন্মসাল দেখে না কি তার চিন্তাশক্তির বহর দেখে ? আপনি কি মনে করেন , যুগের সাথে আপনাআপনিই কবিরা আধুনিক হয়ে যায় ?

দশক-টশক বা জন্মসাল বিবেচ্য নয়, লেখাটাই আসল ।এখনো ক’জন উৎপলকুমার বসুকে ভাষায় বা প্রকরণে ছাড়াতে পেরেছেন ? আবার এ যুগে জন্ম নিয়েও অনেকেই আগের শতাব্দীতে পড়ে আছেন ।
আপনি প্রতিষ্ঠান বিরোধী এক অর্থে ... সেটা কি আপনার প্রতিভার সমানুপাতিক খ্যাতির অন্তরায় হয় নি ? অনেক ন্যায্য সুযোগ সুবিধে পাওয়া থেকে আপনাকে বঞ্চিত করে নি ?
সুযোগ সুবিধে বা খ্যাতির জন্য আমি লিখি না । প্রতিষ্ঠান কবিকে বনসাই বানাতে চায় ।
স্বপ্ন দেখেন ? বিশেষ কোন স্বপ্ন আছে ? আমি যেমন স্বপ্ন দেখি আপনি একদিন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান লাভ করবেন একদিন ...
স্বপ্ন তো থাকেই । তবে ও রকম স্বপ্ন নয় , পাঠকের ভালোবাসা পাওয়াই আমার আরাধ্য ।
কবিতা লিখতে গিয়ে কখনো হতাশায় ভুগেছেন ? নাকি কবিতাই আপনার ক্যাথারসিস ?
উচ্চাশা না থাকলে হতাশাও আসে না ।হ্যাঁ ,কবিতাই তো আমার ক্যাথারসিস । আর কী চাই ?
পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন কখনো ? পশ্চিমবঙ্গ , আসাম বা ত্রিপুরার সাহিত্য সংস্কৃতির জগতের অনেকের সাথেই তো আলাপ পরিচয় আছে আপনার । কেমন মনে হয় এদেশের বাংলা সাহিত্যচর্চা ? কোন বেসিক পার্থক্য আছে কি বাংলাদেশের কাব্য পরিমণ্ডলের সাথে ?

অনেকবার গিয়েছি , একজন সাধারণ পর্যটক হিসাবেই । কাউকে ব্যক্তিগতগতভাবে চিনি না ,তাই আলাপিত হতে পারিনি ।অনলাইনে আপনাদের মতো অনেকের সাথে সম্প্রতি পরিচয় হয়েছে ,হয়তো এবারে গেলে কারো কারো সাখে দেখাও হবে। আমার মনে হয় ,ওপারের সাহিত্যচর্চায় একটা বাঁকবদলের পালা চলছে ।আরো কিছুদিন না গেলে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না । তবে সম্প্রতিকালে এপারে-ওপারে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করা যায় । আপনাদের ওখানকার কবিতায় ইদানিং বুদ্ধির প্রাধান্য আর এদিকে অনেকটা আবেগের প্রাধান্য । যদিও এর আগের প্রজন্মের কবিতায় আপনাদের ওখানেও যথেষ্ট ইমোশন দেখা যেতো ।
বাংলাদেশের কাব্যচর্চার ভবিষ্যৎ কেমন ? আপনার অনুজদের মধ্যে কাদের এই মুহূর্তে প্রতিশ্রুতিমান মনে হচ্ছে ?

যান্ত্রিক চর্চা ,অন্ধ অনুকরণ ,দলবাজির চর্চা থেকে বেরিয়ে অচিরেই এক নতুন জোয়ারের সৃষ্টি হবে – এমনটাই আশা করি । অনুজদের মধ্যে অনেকেই ভালো লিখছেন ,আগামীতে তাঁরা অনেকেই নিজেদের সিগনেচার আমাদের চেনাবেন , এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
আপনার পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ কবে পাচ্ছি ? একুশে বইমেলা উপলক্ষে কিছু ভাবছেন বিশেষ ?

বইমেলাতেই আমার নতুন বই ‘ দূরের জংশন’ আসছে । এটি আমার ৬ষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ । সবচে আনন্দের ব্যাপার , একটি লিটলম্যাগের সাথে জড়িত কয়েকজন তরুণ কবি স্বেচ্ছায় এই বইটি প্রকাশের দায়ভার কাঁধে নিয়েছেন । আমার জন্য এটাই এক বড়ো পুরস্কার । আপনাকে এবং আপনাদের পত্রিকার সকল পাঠককে ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন