কপিক্যাট । শব্দটা দুভাবে ব্যবহার করি । শিশুরা চারমাস বয়সে নাকি প্রথম হাসে , বুঝেশুনে প্রতিক্রিয়া দিতে দিতে আরও কিছুদিন । তারপর তার তোতাজীবন । নিজের বলে কিছু নেই । একে দ্যাখে তাকে বোঝে ওকে পছন্দ করে । আসলে কপি করা শুরু করে । এর তার কথাবলার ধরণ চালচলনের গমক ঠমক মায় নানাবিধ ছলাকলা । আমরা তা দেখে হি হি হা হা রগড় করি । আসলেই মিমিক্রি একটি প্রাচীন শিল্প বিশেষ । সেই যবে ল্যাজ খসিয়ে চার পা থেকে দু পেয়ে হয়েছি , তবে থেকেই এ স্বীকৃত। বাঁদর আর টুপিওয়ালার গল্প কে না জানে ? যারা এই শিল্পের রসিক এবং গুণী কলাকার , কপি করার জন্য তারা বিখ্যাত অখ্যাত নিকট দূর কাউকে ছাড়ি না । পেলেই হল কারুর কোন বিশেষ স্বভাব মুদ্রাদোষ বদভ্যাস। পেলেই হল বিশেষ ভালোলাগা। আমরা অজান্তেই ভক্ত হয়ে যাই সব সিঁদুর ল্যাপা পাথরের । ফ্যান হয়ে যাই যাবতীয় মনুষ্যরূপি অবতারদের। অতঃপর ছুতোনাতায় পুজো আচ্ছা ধূপ ধুনো ফুল বেলপাতা।
অমুকের ফ্যাশান স্টেটমেন্ট তমুকের হাইলাইটেড চুলের স্টাইলের জন্য হাবিব হ্যায় না । তমুক সিনেমার ডিজাইনার ড্রেসের জন্য সব্যসাচী । এথনিক কুন্দন কিম্বা দামী মেটালের সাদা রূপালি সোনালী গয়নার জন্য অমুক চন্দ্রের একশো বছরের রেপুটেশান । ইনথিং ঘরের ইনটিরিওর বলে দেবে ‘সানন্দা’। হালের লেখা কি পড়বো বলে দেবে ‘বইয়ের দেশ’। র্যা লা মারতে কি খাব লেখা আছে ‘রান্নাবান্নায়’। বেডরুমে বাথরুমে হোটেলে কেবিনে জলে জঙ্গলে সঙ্গম কোনদিন কোন পোজে শুদ্ধ তার জন্য আছে সূত্র এবং পঞ্জিকা । সন্তানপালন , শ্বশুরালয় ম্যানেজমেন্ট , পার্টি ম্যানার , কানে কানে , ঋতা ভিমানি , সুহেল শেঠ । অপর্ণার ‘মনোরমা’ আপাতত নিখোঁজ ।
এবার বলুন তো , ‘স্টাইল ইজ দ ম্যান’ নামক ফাতরামোর অর্থ কি ? কোন কম্মটি আপনি নিজ স্টাইলে সারেন , টয়লেট আর বড়বাইরে ছাড়া ? কেন ফালতু বকছি ? আছে , আছে , মতলব কিছু তো আছেই । মশাই , কাব্য বিশ্বনাথনকে মনে পড়ে ? দ্যাট ব্লাসফেমাস লিটিল ওয়ান্ডার ? তো সেই বাচ্চাটা কোন এক মতিভ্রমে এক মহিলার জনপ্রিয় নভেল থেকে দিব্যি কয়েক পাতা হুবহু নামিয়ে দিয়েছিল । ওর মতে এটা স্বেচ্ছাকৃত অপরাধ নয় , বারবার পড়ার ফলে আসলে ওর অবচেতনে কথাগুলো নিজের কথা মনে হয়েছিল । তো কেস খাবার আগে ওর অবশ্য এই বোধোদয় হয় নি । কাব্য তো সেদিনের বাচ্চা , মন্দ কপাল , তাই ফেঁসে গ্যাছে । আর দুনিয়া জুড়ে সাহিত্যে সেই কোন জন্মলগ্ন থেকে যে পুকুর চুরি হয়ে আসছে , আমরা বিখ্যাত লোকেদের তোল্লাই দিতে গিয়ে সেই কথা অনেক সময় ভুলেই যাই জাস্ট । এই যে নোবেল লরিয়েট দের মাথায় নিয়ে নাচি , তারা যে সমস্ত সৃষ্টি করেছেন , বুকে হাত দিয়ে অনেকেই বলতে পারবেন না , সমস্তটাই তার মৌলিক , সারা জীবনে কারুর কোন ছাপ পড়ে নি তার রচনায় । সে আপনি শেক্সপিয়ারই বলুন বা আমাদের রবি কবি , বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত তারা বহু মানুষের বহু রচনার দ্বারা ।
হলিনশেড এর ক্রনিকেল থেকে পৃথিবী বিখ্যাত ট্রাজেডি গুলোর সৃষ্টি । রবি ঠাকুর তো অকাতরে বিভিন্ন দেশের সুর আপন করেছেন । তেনার অনেক ছোটগল্পেই নাকি মঁপাসার ছায়া । সক্রেটিসও রেহাই পান নি সে অভিধা থেকে। আরে মশাই তাতে কি তাদের প্রতিভার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধায় টান পড়েছে বিন্দুমাত্র ?
অমুকের ফ্যাশান স্টেটমেন্ট তমুকের হাইলাইটেড চুলের স্টাইলের জন্য হাবিব হ্যায় না । তমুক সিনেমার ডিজাইনার ড্রেসের জন্য সব্যসাচী । এথনিক কুন্দন কিম্বা দামী মেটালের সাদা রূপালি সোনালী গয়নার জন্য অমুক চন্দ্রের একশো বছরের রেপুটেশান । ইনথিং ঘরের ইনটিরিওর বলে দেবে ‘সানন্দা’। হালের লেখা কি পড়বো বলে দেবে ‘বইয়ের দেশ’। র্যা লা মারতে কি খাব লেখা আছে ‘রান্নাবান্নায়’। বেডরুমে বাথরুমে হোটেলে কেবিনে জলে জঙ্গলে সঙ্গম কোনদিন কোন পোজে শুদ্ধ তার জন্য আছে সূত্র এবং পঞ্জিকা । সন্তানপালন , শ্বশুরালয় ম্যানেজমেন্ট , পার্টি ম্যানার , কানে কানে , ঋতা ভিমানি , সুহেল শেঠ । অপর্ণার ‘মনোরমা’ আপাতত নিখোঁজ ।
এবার বলুন তো , ‘স্টাইল ইজ দ ম্যান’ নামক ফাতরামোর অর্থ কি ? কোন কম্মটি আপনি নিজ স্টাইলে সারেন , টয়লেট আর বড়বাইরে ছাড়া ? কেন ফালতু বকছি ? আছে , আছে , মতলব কিছু তো আছেই । মশাই , কাব্য বিশ্বনাথনকে মনে পড়ে ? দ্যাট ব্লাসফেমাস লিটিল ওয়ান্ডার ? তো সেই বাচ্চাটা কোন এক মতিভ্রমে এক মহিলার জনপ্রিয় নভেল থেকে দিব্যি কয়েক পাতা হুবহু নামিয়ে দিয়েছিল । ওর মতে এটা স্বেচ্ছাকৃত অপরাধ নয় , বারবার পড়ার ফলে আসলে ওর অবচেতনে কথাগুলো নিজের কথা মনে হয়েছিল । তো কেস খাবার আগে ওর অবশ্য এই বোধোদয় হয় নি । কাব্য তো সেদিনের বাচ্চা , মন্দ কপাল , তাই ফেঁসে গ্যাছে । আর দুনিয়া জুড়ে সাহিত্যে সেই কোন জন্মলগ্ন থেকে যে পুকুর চুরি হয়ে আসছে , আমরা বিখ্যাত লোকেদের তোল্লাই দিতে গিয়ে সেই কথা অনেক সময় ভুলেই যাই জাস্ট । এই যে নোবেল লরিয়েট দের মাথায় নিয়ে নাচি , তারা যে সমস্ত সৃষ্টি করেছেন , বুকে হাত দিয়ে অনেকেই বলতে পারবেন না , সমস্তটাই তার মৌলিক , সারা জীবনে কারুর কোন ছাপ পড়ে নি তার রচনায় । সে আপনি শেক্সপিয়ারই বলুন বা আমাদের রবি কবি , বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত তারা বহু মানুষের বহু রচনার দ্বারা ।
হলিনশেড এর ক্রনিকেল থেকে পৃথিবী বিখ্যাত ট্রাজেডি গুলোর সৃষ্টি । রবি ঠাকুর তো অকাতরে বিভিন্ন দেশের সুর আপন করেছেন । তেনার অনেক ছোটগল্পেই নাকি মঁপাসার ছায়া । সক্রেটিসও রেহাই পান নি সে অভিধা থেকে। আরে মশাই তাতে কি তাদের প্রতিভার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধায় টান পড়েছে বিন্দুমাত্র ?
আসলেই অরিজিনালিটি একটি সোনার পাথরবাটি । মানুষের রক্তে আছে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হবার উপাদান । জিন কে অস্বীকার করি কি করে । আসল শব্দটা হল আত্তীকরণ । যে যত ভালো আত্তীকরণ করবে সে তত ভালো নিজেকে নেড়ে ঘেঁটে নতুন ছাঁচে ফেলতে পারবে , তত ‘বিশুদ্ধ মৌলিক’ বিষয় সৃষ্টি হবে তার দ্বারা । কোনদিন কাউকে নকল করি নি , কথাটা কলার তুলে যতই বলুক পাবলিক , সেই কোন না কোন ‘ইজম’,আক্রান্ত আমাদের আঁতলামো । ওস্তাদ ব্যক্তিরা আবার গেঁয়ো যোগীদের পোঁছেন না ... তাদের দৃষ্টি দুরের নক্ষত্রে নিবদ্ধ ।
আমাদের হলিউড বলিউড টলিউডের এবং দক্ষিণের সিনেমাগুলোর গান গল্প নাচ অ্যাকশান কে যে কার থেকে ঝেড়ে দিচ্ছে তার কোন মা বাপ নেই । সেই পরিচালকের বিরুদ্ধ শিবিরের আঁতেলরা দুদিন সেটা নিয়ে গুলতানি মারে , তারপর সব যে কে সেই । কপি করা চলছে চলবে । আম পাবলিকের অবিশ্যি এতে লাভ বই লোকসান কিছু নেই । হরিপদ কেরানির দল কস্মিনকালেও নন্দন চলচিত্র উৎসব আইনক্স মাড়াবে না । তার দৌড় লেট নাইট মুভিজ অবধি । তার অজানাই রয়ে যেত বিশ্ব চলচিত্রের চালচিত্র যদি না তাদের সার্থক বঙ্গায়ন বা হিন্দি রিমেক হোতো । সুতরাং এক অর্থে তাদের এসব নকলনবিশদের কাছে কেতাত্থ থাকা উচিৎ ।
ধুম প্রীতম সিং এর বেশ খ্যাতি হয়েছিলো জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডের জনপ্রিয় গানের হিন্দি রিপিট করে । আমার খুব মন্দ লাগে নি এই রূপান্তর । বাংলা অরিজিনালের চাইতে হিন্দির ডুপ্লিকেট বরং বেশি সংখ্যক লোকের কাছে পৌঁছেছিল । আজকাল তো হিন্দি সিনেমার গল্প মানেই পুরনো জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর হাইটেক রিমেক ... ‘ওম শান্তি ওম’, ‘ডন’ , ‘বরফি’ বেশ খামচে খামচে তুলে এনেছে পুরনো রোম্যান্টিক গান , সংলাপ , মুহূর্ত , লোকে তো বেশ এনজয় করেছে বলেই জানি , শুধু দু একজন মহাপাকা নিন্দুক একটু কাঠি করেছিলো , তো তাতে কিছু আটকায় নি , জনগনেশ সে খিচুড়ি পাতপেড়ে খেয়েছে হাপুশ হুপুশ ...
এই যে আপনি প্রেমিকাকে ইনটিমিনটি এস এম এস ঝাড়ছেন ‘বনলতা সেন’ কোট করে , এই যে আপনার প্রেমিকার অসুখ হলে গোটা কোলকাতার মন খারাপ হয় , এই যে আপনি মা আর বউয়ের ঝগড়া লাগলে ডায়লগবাজী করেন, ‘বউ গ্যালে বউ পাওয়া যাবে , মা গ্যালে , মা পাব না’ , এই যে আপনি নিত্যগোপাল বসের সামনে , পেছন ফিরলেই দাঁত খিঁচিয়ে চারঅক্ষর , এই যে আপনি জোয়াল ঠেলে তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের শহীদ এর মধ্যেও নতুনত্ব কিস্যু নেই বুয়েছেন ? হরলোক হরপল এভাবেই ভাবে , করে সেসব , আপনি রিপিটার মাত্র ... আপনি কমন ... আপনি সেই মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে বিস্ময় ভ্রমণ করছেন আদি অনন্তকাল ধরে ...
তো এই ভাবেই চলে বুঝলেন , ‘তোমায় আমায় মিলে , এমনি বহে ধারা’... ওই যে কথায় বলে আসলের চাইতে সুদের কদর বেশি । সুতরাং এথিক্যাল বা মর্যামল দিক টা বাদ দিলে ব্যাপারটা মন্দ নয় । দুনিয়া জুড়ে রমরমিয়ে যে স্রোত বইছে , তার উল্টোপিঠে কোন দুঃখে হাল বাইবো ? আরও আরও প্রভু আরও আরও , এমনি আমায় কপি কর ... বলে ডাকছে বিশ্বসংসার ... কোলরিজের কথায় প্রকৃতির মুড হল আসলের আমাদেরই মুডের প্রতিফলন ... সামনে ধরা আয়নার মতন আর কি ... আপনি হাসছেন তো সেও ক্যালাচ্ছে , আপনি গোমড়াথেরিয়াম তো সেও হুঁকোমুখো হ্যাংলা ... অতএব ভয় কি নকলে , যদি না পড় ধরা ?
![]() |
| পরিচিতি |
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন