পূর্ণিমা রাতে ছাতে যাওয়া এক পুরনো ও প্রতীকার অযোগ্য অসুখ রম্যার। এই দিন বাকি উনত্রিশ দিনের মত ভূতের ভয়ও যেন থাকে না তার, রোগের শুরু তার জীবনের ত্রয়োদশ শ্রাবণ থেকে। কিসের অভাব বোধ হত তার যা আজো হয়,পূর্ণ চাঁদ আর চরাচর ভাসানো আলো যে কি মায়ার বাঁধনে বেধেছে তাকে, এ জীবনে আর তার থেকে নিষ্কৃতি নেই। আগে আগে ভাবত বন্ধুর অভাব, পরে বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে বুঝল যে এ তার স্বভাব যা তাকে বেশ আরামদায়ক একটা ব্যথার অনুভব দেয়।
প্রথমদিকে ভাবত এটা বুঝি নিষিদ্ধ কোনও অনুভূতি তাই অন্ধকারে ছাতে যাওয়ার জন্য অজুহাত খুঁজতে হত কিন্তু কয়েকবার এমন হতে একদিন বাবাই বললেন ছাতে গেলে একটা চাদর জড়িয়ে নিতে, কার্তিকের হিমে শরীর খারাপ হতে পারে।স্বাধীনতার অপূর্ব অনুভূতিতে পলকে যেন অনেকটা বড় হয়ে গেল রম্যা, এখন বোঝে অনুভূতির দ্বার খুলে দিতে মা বাবার ভূমিকাও কতখানি।
অন্ধকার চিরদিনই তার আপনার, সব রকম অভিনয়, ভাল হয়ে থাকার প্রচেষ্টা বা সাজগোজের দায় থেকে মুক্তি দেয় আঁধার, এখানেই একদিন গানের সুরে সুরে চোখে জল আসে, কি এমন ছিল সেই সুরে যা মনকে এত গলাতে পারে? তীব্র অস্থিরতা মনের ভেতর আলোড়ন তোলে অভাব বোধের ব্যথা সহ্যাতীত হয়,গানও বুঝি আর তার মনকে আগল দিতে পারে না। জীবনমুখী বাংলা গানের তখন খুব চল, সুমন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা আরও অনেকের গান শুনতে ভালো লাগে তারও, শুনেছে এইসব গান নাকি গায়করা নিজেরাই লেখেন, যেমন সেও লিখে স্কুলের ম্যাগাজিনে দেয় ফি বছর। তবে এ যেন তেমন চুলের সাথে ফুল আর গলার সাথে মালা মিলিয়ে লেখা নয়। এ লেখায় আছে আরও কিছু যা ভেতর থেকে নাড়া দেয়, চাইলে কি সেও লিখতে পারে না? এমন না হোক, কিছু না হয় তার মত যা একেবারে তার মনের কথা বলে, তার চাওয়া- পাওয়া, না পাওয়া, আনন্দ আর ব্যথার কথা।
অন্ধকারের পোকার মত, কিছু
আলোর ও পোকা থাকে, যারা
আনন্দ কুরে কুরে খায়
মন ভরে মিষ্টি যন্ত্রণায়।
কখনো কখনো
কস্তূরী গন্ধ ছড়ায়, মাতাল
ব্যথাতুর হৃদয়, রক্ত যেন
তারই কিছু ফোঁটা থেকে যায়
কবিতার পাতায়।।
দোলনচাঁপা ধর
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২৩, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২৩, ২০১৪
Rating:



কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন