চিত্রাভানু সেনগুপ্ত / জোর কদমে এগোচ্ছে বাংলা


চিত্রাভানু  সেনগুপ্ত /   জোর কদমে এগোচ্ছে বাংলা


জোর কদমে এগোচ্ছে বাংলা
চিত্রাভানু  সেনগুপ্ত 


ঘটনাটি এমন...

বেলঘরিয়া থানা এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে চলছিল মদ্যপান। সেখানে মদ্যপ গ্যাং-এ উপস্থিত ছিল একটি বা কয়েকটি মেয়ে। একজন শিক্ষক এলাকা দিয়ে যাবার সময় দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ জানান। তারপর তাঁকে সকলে মিলে ঘিরে ধরে চলে অমানুষিক মারধর। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল, সেই ভিডিও রেকর্ডিং-র ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মেয়েটিকে।

এ পর্যন্ত সবাই জানেন। আমার বক্তব্য এটুকু নয়, আমি হঠাৎ মেয়েটির মায়ের বয়ান শুনলাম একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। ওনার দাবি, তাঁর মেয়ে তার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে প্রসাদ খাচ্ছিল। শিক্ষক সেখান দিয়ে যাবার সময় আমার মেয়েকে টিজ করেন। তাই তার বন্ধুরা রেগে গিয়ে শিক্ষককে মেরেছে। তারপর বন্ধুরা মেয়েটিকে বলেছিল. "শুধু আমরা মারব? তুই ও মার।" তাই মেয়েটি শিক্ষকের গায়ে হাত তোলে।

আমরা ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা নিয়ে গলা চড়াচ্ছি। আসলে কি জানেন? বাঙালি একদিনে নয় দিনে দিনে এক পচনশীল জাতে পরিনত হয়েছে যার দুর্গন্ধ দূর দূরান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। ঝুড়িতে একটা আম পচে গেলে পাশের গুলোতে যেভাবে পচন ধরে সেভাবে সংক্রামিত হচ্ছে বাঙালির দুরবস্থা। আজ হঠাৎ করে বদলে গেছে বাঙালির সব কিছু তেমনটা নয়, তলে তলে বদলে গিয়েছে অনেক আগেই। আজ শুধু দাঁত নখ বের করছে তাই ধরতে পারছি। বেলঘরিয়া ঘটনায় আমরা খামোখা ছেলে মেয়েগুলোকে দোষ দিচ্ছি। 

যদি অভিভাবক এমন অমার্জিত এবং উচ্ছৃঙ্খল হন, বিষবৃক্ষে অমৃত কিভাবে ফলে? এখনকার প্রজন্ম এই অবস্থাকেই স্বাভাবিক ভেবেছে, ঠিক বেঠিক তাদের কাছে এমনি প্যাঁচিয়ে জগাখিচুড়ি যে ওরা প্রকাশ্যে মদ্যপান বা শিক্ষকের গায়ে হাত তোলাকে জলভাত করে ফেলেছে। 

টিভি খুললেই শিক্ষকের গায়ে পিঠে লাথি মারতে দেখা প্রজন্ম, শিক্ষকদের চাকরির দাবিতে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করা দেখা প্রজন্ম, উপরন্তু বাবা মায়ের নির্লজ্জ অপরাধপ্রবণ আচরন, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার ভঙ্গি দেখে ওরা সহজ ভাবে ভেবেছে এটাই ন্যায্য দাবি। যদি বা ধরেই নিই আজকের প্রজন্ম পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তবু আমি বলব বাঙালিরা একটু একটু করে বিষিয়ে গিয়েছে বেশ কিছু আগে। আজ সেই ফসল ফলছে রক্তবীজের মত। অন্য রাজ্যের মানুষকে ঊড়ে, মেড়ো, খোট্টা এসব বলে তাচ্ছিল্য করা একটা জাতি আজ নিজেরাই উপহাসের পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ ভিনরাজ্যে সেই ফসল ফলছে রক্তবীজের মত। চক্রবৃদ্ধি হারে ছড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধের বীজ। কোনো নির্দিষ্ট জায়গার ঝোপ কেটে সাফ করতে গেলে অন্যপাশ থেকে গজিয়ে উঠবে। দায়ি আমরাই, তা না হলে শাসক এমন অত্যাচারি আর স্বৈরাচারী হয় কোন সাহসে ?

এখানে কোন আইন শৃঙ্খলা খাটে না, যেখানে সবাই বুক ঠুকে চুরি করে আর সৎ মানুষরা পড়ে পড়ে মার খায়, যেখানে প্রশাসন শুধু সরকারের দাসত্ব করতে বেপরোয়া অত্যাচারির ভূমিকা পালন করে সেখানে এসব তুচ্ছ ঘটনায় কেউ মাথা ঘামায়? এই যে পাড়ায় পাড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে মদ্যপান, এই যে প্রতিটি গৃহস্থ এলাকার মোড়ে মদের দোকানের পারমিশন, এসব ঠেকাতে সরকার লাগে না, পুলিশ লাগে না, লাগে এলাকার মানুষের সদিচ্ছা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাস্তব এটাই, অত্যাচারি মানুষের সংখ্যা নির্যাতীত মানুষের থেকে সংখ্যায় বেশ কয়েকগুণ কম। যদি সকলে মিলে ঘিরে ধরা যায়, দুর্বৃত্তরা পিছু হটতে বাধ্য। কিন্তু আমরা বাঙালি, কেউ মারা খাই আর কেউ মার খেতে দেখে হাহাকার করি। ঘিরে ধরতে জানি না।

ইতিহাস সাক্ষী আছে, ইংরেজদের হাতে নবাব সিরাজদ্দৌলা যখন গ্রেফতার হলেন তখন তাঁকে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা পর্যন্ত হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। সিরাজের চতুর্দিকে ছিল মাত্র জনা পঞ্চাশেক বৃটিশ দেহরক্ষী সৈন্য। কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় দুধারে ভিড় করে এসেছিল পরাজিত সিরাজকে দেখতে। কেউ ঘিরে ধরার সাহস করেনি। সেইদিনের পর থেকে ভারতবর্ষ পুরোটাই চলে গিয়েছিল ইংরেজদের কবলে। আমরা ভুগেছি, ভেঙেছি, ঘুরে দাঁড়াতে শিখতে শিখতে ভেঙে গেছি কয়েক টুকরোতে। সেই যুগ থেকে আজ পর্যন্ত ধারা অব্যাহত, যদিও আজকের দিনের অত্যাচার কয়েক সময়ে ইংরেজ আমোলের থেকেও ভয়াবহ মনে হয়। তবে গেল গেল চেঁচিয়ে লাভ কী? ভাঙুক, শিখুক, তলিয়ে যাবার আগে যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে আবার সেদিন নতুন কিছু ভাবা যাবে।


চিত্রাভানু সেনগুপ্ত / জোর কদমে এগোচ্ছে বাংলা  চিত্রাভানু  সেনগুপ্ত /   জোর কদমে এগোচ্ছে বাংলা Reviewed by শব্দের মিছিল on আগস্ট ২৬, ২০২৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.