নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত | বিষামৃত

শব্দের মিছিল প্রতিবাদ সোচ্চার

মানুষের সবচেয়ে বড় ভ্রান্তি সে ভাবে ‘তারা’ সভ্য আর বুদ্ধিমান। যদি সত্যি বুদ্ধিমান হত তাহলে প্রতিটি প্রজন্মকে যুদ্ধ, মানসিক অবসাদ, আর্থিক বৈষম্য, অন্যের প্রতি প্রবল অত্যাচার করে নিজের (পরিবার,গোষ্ঠী,জাতি )দল কে ভালো রাখার অসভ্য প্রবণতা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় কেন? ‘বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ’ আর ‘বিজ্ঞান থেকে উদ্ভুত সুবিধা নিয়ে বাঁচা মানুষের’​ মধ্যে একটা মহাসাগরের মতো তফাৎ। যেমন ধরুন, ভ্রূণের মধ্যে শিশু কেমন আছে সেটার বোঝার জন্যে একটা অতি প্রয়োজনীয় মেসিন বার হল। কিন্তু এ পোড়া দেশে তার প্রয়োগ হল, কন্যা সন্তান যাতে পৃথিবীতে না আসে। এখনো চিকিৎসা পরিষেবার সাথে পাল্লা দিয়ে​ বশীকরণের বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন হয়। বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ছেলের মা বিশ্বাস করে মাঙ্গলিক দোষের। এখনো মেয়েদের কাছে সেজেগুজে থাকাটা অত্যাবশকীয় বৈশিষ্ট্য।অর্থ মুল্য বুঝে নিয়ে মানুষেকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে সেটা এখনো সামাজিক ক্ষেত্রে প্রবল।আসলে মানুষের যূথবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাবার যে পদ্ধতি সেটা যুগে যুগে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। মানে সেই পুরাতন জোকসটা … একজন আফ্রিকার ‘মানুষ খাওয়া ট্রাইবদের’ (ক্যানিবাল) কাছ থেকে ঘুরে এসে জানাল, ওই ট্রাইবরা সভ্য হয়ে গিয়েছে। সবাই উৎসাহ ভরে জিজ্ঞাসা করল তারা ‘মানুষ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে’ ? তার উত্তরে তিনি জানালেন, এখন তারা কাঁটা চামচ সহযোগে ‘মানুষ’ খায়। মানে আগে পাথর ছুঁড়ে মারত এখন গুলি করে মারে। সভ্যতার বিকাশ মানে কতগুলো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার।যূথবদ্ধ মানুষের আচরণের কোন তফাৎ হয়নি। দলে ভারি হলে, যে শক্তিশালি সে দুর্বল কে পিষে দেবে।

যুদ্ধের তালিকা দেখুন। যে কোন যুদ্ধের ওপর আঙ্গুল দিন । দেখুন প্রচুর যোদ্ধা আর সাধারণ মানুষের রক্তপাতের দাগ আপনার হাতে লেগে থাকবে। বহু পুড়ে যাওয়া মানুষ, বাড়ি, পশু...। আর্তনাদের শব্দ... । আর একটি কষ্ট আপনি জানবেন ,বুঝবেন, কিন্তু বলবেন না...। মেয়েদের চরম নিগ্রহ (আমি ওই শব্দাবলী ব্যবহার করব না।বড্ড হাল্কা করে ব্যবহার করা হয়)। না বলবেন না ওই শব্দগুলো। ওটা কোন ভয়ানক ক্ষতির লিস্টে​রাখা হয় না। ওগুলো কোন ক্ষতি নয়।ওই বিশেষ অত্যাচার টি এখনো বেশ কিছু মানুষের কাছে গোপন আনন্দের ও উত্তেজনার (নারীদেরও)। আমাদের দেশে মেয়েরা মরে যাবে তবু অত্যাচারিত হবে না সে জন্যে দলে দলে সতী হত। সেটা ঠিক, না ভুল আমি জানি না। পরজিত রাজার পত্নী আর কন্যা উভয় কেই উপভোগ করা ‘অন্যায়’ বলে মনে করা হত না। ইংরেজরা তাদের অফিসারদের যাতে যৌনরোগ না হয় সে জন্যে একটা ট্রাইবকে তৈরী রেখেছিল। আফ্রিকাতে ইউরোপিয়ানরা​ মেয়েদেরকে সিফিলিস উপহার দিয়ে আসেন। ভিয়েতনামে কোন যুদ্ধ ছাড়ায় নর্মাল শান্তিতেই চার জন মেয়ের মধ্যে একজন, ছেলেদের দল দ্বারা আক্রান্ত হয়। ছেলেরা একটুও স্বার্থপর নয়। তারা নিজেরা এটায় দাবী করে, তারা বন্ধুরা মিলে আনন্দের ভাগ নেয়। পাঁচজন বন্ধু হলে ব্যাপারটা ভালো জমে। বার্মাতেও পরিসংখ্যান তাই।​ ​ যুদ্ধ হলে ... এই অবস্থা টা কতটা ভয়াবহ... কারণ... বন্ধু সেনা...শত্রু সেনা... সবাই পুরুষ সেনা। মেয়েদের সমান বিপদ... ।হিরোশিমা নাগাসাকির পর যখন আমেরিকার সেনা জাপানে নেমেছিল তখন শিশুকন্যাদের বাঁচানোর জন্যে হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা স্বেচ্ছায় বিজয়ী সেনাদের ‘সেবা’ করেছিলেন। আজ অনেকে বলবেন… তারা প্লেজার খুঁজে পেয়েছিলেন। জাপানী সেনারাও যেমন কোন একটা যুদ্ধে নয় দশ বছরের বালিকা দের কাছ থেকে​ এই সেবা পেয়েছিলেন…… এই বালিকাদের নাম ছিল​ ​‘comfort girl’। যেমন ঢাকার কাছে একটি গণকবর খুঁড়ে প্রচুর নারীর কঙ্কাল পাওয়া যায়… খান সেনারা প্রত্যেকের মেরে দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছিল… আফ্রিকায় ট্রাইবদের মধ্যে আধুনিক যুদ্ধ হলেও তারা খুব ট্রাডিসানালি​ মেয়েদের কে সম্মান করে। পেচ্ছাবের দ্বার আর মলদ্বার এক করে দেয় ঐতিহ্য পূর্ণ অস্ত্র দিয়ে … সেই অবস্থায় বেঁচে থাকে মেয়েরা। আইসিসের যৌনদাসীরা মা আর মেয়ে একসাথে উপভোগ্য হয়।​এই ক্ষতিগুলো আদৌ কোন ক্ষতি বলে গৃহীত হয় না। ​ ​ ​ সব পুরুষ মেয়েদের অত্যাচার করেন না। আমি জানি। কিন্তু কোথায় যেন এই অত্যাচারী পুরুষদের তারা একটু ক্ষমা করেন, আর পাত্তা দেন। আমি কিন্তু এটাও জানি। বেশ্যালয় ফেরত পুরুষ বন্ধু​ মেয়েদের কাছেও বেশ গ্রহণ যোগ্য হয়।কিন্তু কোন সহচরী ‘দেহ ব্যবসা ’করে পেট চালালে আদৌ তাকে হৃদয়ে নেওয়া হয়? ​ ​

এবার আসি পুরুষের কথায়।যুদ্ধ হলে স্বাভাবিক ভাবেই পুরুষদের যুদ্ধে নামতে হয়। আদৌ তার অন্যকে হত্যা করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা আছে কিনা কে জানে। হয়ত একটা বিরাট গোলাপ বাগানের স্বপ্ন ছিল। হয়ত ইচ্ছাছিল সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গটিতে উঠে দেশের পতাকা লাগানোর।কি ক্ষতি না।​স্বাভাবিক মানুষ থেকে মেসিন হয়ে ওঠার জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট! যুদ্ধকালে বলা হয় সিভিলিয়ান দের ওপর আঘাত করা হল। সৈনিকরা ‘সিভিলিয়ান’ নন। তাদের বাবা,মা, বউ,সন্তান ভাই বোন কে শহিদের মেডেল ঝুলিয়ে,বাজনা বাজিয়ে​ … আর কত দিন। মহাভারতে অবধি বলা আছে যাদের যুদ্ধে মৃত্যু হয় তারা স্বর্গে যায়।এই বিপুল ত্যাগ ধারণ করার মতো স্বর্গ আছে? ​

যদি সত্যি আমরা একটি সভ্য ‘species’ তাহলে, যুদ্ধের অস্ত্র নিষিদ্ধ হোক। আর কোন রকম রিসার্চ বন্ধ হোক ‘সমর বিজ্ঞানের’। প্রশ্ন আসতেই পারে টেররিষ্ট দের থেকে বাঁচা কি করে যাবে? আমার স্থির বিশ্বাস অস্ত্র ব্যবসায়ীরা, লোভী মানুষেরা, তাদের ব্যবসার উন্নতি করতে এই সমস্যাগুলোর শিকড়ে গিয়ে জল ঢালে। নইলে এতোদিন আফগানিস্থানে থেকে আমেরিকা কি করছিল? যুদ্ধবাজ আফগানিস্থানের উপজাতিগুলোর হাতে এতো ক্ষমতা কি করে হল?সাধারণ মানুষ কে উপযুক্ত বেঁচে থাকার পরিবেশ না দিয়ে অস্ত্র তুলে দিয়ে শক্তিমানরা ব্যবহার করে। (খুব ন্যাকা হয়ে যাচ্ছে কথাগুলো।)

এই মুহূর্তে বুদ্ধিমান মানুষের চেয়ে হৃদয়বান মানুষের দরকার খুব বেশী।অন্যকে বঞ্চিত করে, দমন করে, কষ্ট দিয়ে যদি কেউ আরামে, সুখে, আর আনন্দে থাকে তবে আর যাই হোক একদিন না একদিন সেই অমানবিকতা অন্য সমস্যার জন্ম দেবেই।প্রমাণ আমাদের করোনা কালেই বুঝলাম আমরা। এতো শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে বহু বিরোধ,দ্বন্দের নিরসন করতে চায় না। সেই ‘বিষে’ নিজেরা জর্জরিত হয়।তখন আর কঠিন অস্ত্রের সাধনা করতে হয়। এবার দলবদ্ধ মানুষ একটু হৃদয়বান আর লোভহীন হোক। বুদ্ধি আর অর্থ দিয়ে জমির অধিকার হয়… ফুল ফোটাতে পরিশ্রম আর ভালবাসা লাগে।অবশ্য প্রযুক্তি খুব উন্নত। অত পরিশ্রমের কাজ করতে হবে না। ফুল ফোটানোর আনন্দ কি রোবট পাবে? কে জানে।

Cover -Photographer - Pedro Luis Raota
​ ​

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ