রাজ্যের প্রধান। তিনি তাঁর পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিচ্ছেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার। বলছেন। অভিযুক্তের কাছ থেকে জানতে হবে। গ্রামবাসীর বার বার আবেদন সত্তেও তিনি কেন সময় মতো গ্রামে পুলিশ পাঠাননি। গ্রামবাসীর দাবি। সময় মতো পুলিশ গিয়ে পৌঁছালে এত বড়ো নরসংহার ঘটতো না। কিন্তু পুলিশ কেন সময় মতো পৌঁছায়নি? গ্রামবাসীর দাবি অনুযায়ী, এই অভিযুক্ত ব্লক সভাপতি সময় মতো পুলিশ না পাঠিয়ে পুলিশকে আটকিয়ে রেখে ছিলেন। অর্থাৎ বগটুই গ্রামের অধিবাসীদের ধারণা। শাসকদলের স্থানীয় ব্লক সভাপতিও এই নরসংহারের পিছনে ছিলেন। না থাকলে। গ্রামবাসীর আবেদনে সাড়া না দিয়ে পুলিশকে আটকিয়ে রাখার কথা নয়। হ্যাঁ, সামান্য রাজমিস্ত্রী থেকে এক দশকে প্রায় কোটিপতি হয়ে ওঠা এহেন ব্লক সভাপতি শেষমেশ পুলিশের জালে ধরাও পড়েছেন। প্রশ্নটা অনেক গভীরে। ঘটনার সত্য মিথ্যে কি। এখনো পরিস্কার নয়। আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু হচ্ছে। যদিও ভারতবর্ষে সিবিআই তদন্ত, কেন্দ্র সরকারের ক্ষমতায় থাকা শাসকদলের খুঁটিতে বাঁধা থাকে। বিষয়টি কোন গুপ্ত সত্য নয়। কোন কাল্পনিক তথ্যও নয়। ভারতবাসী মাত্রেই সে কথা জানেন।
সারদা আর নারদা কেলেংকারীতে কালিমালিপ্ত রাজ্যবাসী মাত্রেই সিবিআইএ’র দৌড় সম্বন্ধে অবহিত। ফলে বগটুই গ্রামের নরমেধ যজ্ঞের হোতা কে বা কারা। সেই প্রশ্নের মীমাংসা সুদূর পরাহত।
আহত নিহত গ্রামবাসীর পরিবারগুলি সরকারের কাছ থেকে কেমন ক্ষতিপূরণ পেলেন। সেটি রাজ্যবাসী দেখেছে। আর তাতে তাদের কতটা ক্ষতি পূরণ হলো। সেটি তাঁরা জানেন। আমাদের প্রশ্ন বেসিক কতগুলি জায়গায়।
রাজমিস্ত্রী থেকে শাসকদলের ব্লক সভাপতি হয়ে ওঠা একজন ব্যাক্তি। এক বা একাধিক গ্রামের মাতব্বরও হয়ে উঠতে পারেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে। বিশেষ করে শাসকদলের নেতা হলে। এই অব্দি বোঝা যায়। কিন্তু শাসকদলের কোন নেতা। তিনি ব্লক সভাপতি হন বা দলের রাজ্যস্তরের কোন হেভিওয়েট নেতা বা নেত্রী হন। তাঁর নির্দেশের উপরে কি করে নির্ভর করে, পুলিশ কখন কোথায় ছুটে যাবে আর যাবে না? এই প্রশ্নটা গোটা রাজ্যবাসীকেই ফেস করতে হবে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে। সংসদীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারের প্রশাসনে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ যদি শাসকদলের চুনোপুটি থেকে হেভিওয়েট নেতা নেত্রীর হাতে চলে যায়। তাহলে বুঝতে হবে। সেই দেশে গণতন্ত্রও নাই। সংবিধানও ঠুঁটো জগন্নাথ। রাজ্যবাসী কথায় কথায় পুলিশকে শাসকদলের দলদাস বলে অভিযুক্ত করে থাকে। সেই অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিতরে বাকবিতণ্ডাও কম হয় না। কিন্তু রাজ্যের যিনি প্রধান। তিনি প্রাকশ্যেই যখন তাঁর অধীনস্ত পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে থাকেন। অভিযুক্ত ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করে জানতে হবে। সে কেন সময় মতো অকুস্থলে পুলিশ পাঠায়নি। তখন তিনিও স্বীকার করে নিচ্ছেন। রাজ্যের পুলিশ দলদাসেই পরিণত হয়ে গিয়েছে।
রাজমিস্ত্রী থেকে শাসকদলের ব্লক সভাপতি হয়ে ওঠা একজন ব্যাক্তি। এক বা একাধিক গ্রামের মাতব্বরও হয়ে উঠতে পারেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে। বিশেষ করে শাসকদলের নেতা হলে। এই অব্দি বোঝা যায়। কিন্তু শাসকদলের কোন নেতা। তিনি ব্লক সভাপতি হন বা দলের রাজ্যস্তরের কোন হেভিওয়েট নেতা বা নেত্রী হন। তাঁর নির্দেশের উপরে কি করে নির্ভর করে, পুলিশ কখন কোথায় ছুটে যাবে আর যাবে না? এই প্রশ্নটা গোটা রাজ্যবাসীকেই ফেস করতে হবে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে। সংসদীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারের প্রশাসনে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ যদি শাসকদলের চুনোপুটি থেকে হেভিওয়েট নেতা নেত্রীর হাতে চলে যায়। তাহলে বুঝতে হবে। সেই দেশে গণতন্ত্রও নাই। সংবিধানও ঠুঁটো জগন্নাথ। রাজ্যবাসী কথায় কথায় পুলিশকে শাসকদলের দলদাস বলে অভিযুক্ত করে থাকে। সেই অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিতরে বাকবিতণ্ডাও কম হয় না। কিন্তু রাজ্যের যিনি প্রধান। তিনি প্রাকশ্যেই যখন তাঁর অধীনস্ত পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে থাকেন। অভিযুক্ত ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করে জানতে হবে। সে কেন সময় মতো অকুস্থলে পুলিশ পাঠায়নি। তখন তিনিও স্বীকার করে নিচ্ছেন। রাজ্যের পুলিশ দলদাসেই পরিণত হয়ে গিয়েছে।
অর্থাৎ শাসকদলের নেতা বা নেত্রী। তিনি যতই চুনোপুঁটি নেতা হন। বা হেভিওয়েট নেত্রী হন। তাঁদের নির্দেশ না পেলে পুলিশের পক্ষে কোনো কাজই করা সম্ভব নয়।
এই ঘটনার অভিঘাতেই রাজ্য প্রশাসনের প্রধানের নির্দেশে পুলিশ রাজ্য জুড়ে অবৈধ অস্ত্র ভাণ্ডার উদ্ধারে নেমে পড়েছে। ভালো কথা। রাজ্যের যিনি প্রধান। তিনি শাসকদলের প্রধান হন বা না হন। রাজ্য প্রশাসনের প্রধান হিসাবে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার তাঁর রয়েছে্। কিন্তু সেটিকে শাসকদলের প্রধানের অধিকার ভেবে নিয়ে শাসকদলের কেষ্ট বিষ্টুরাও যদি পুলিশ প্রশাসনের উপরে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে দেয়। সেটি তখন এক কালান্তক ব্যাধিতে পরিণত হয়ে পড়ে। রাজ্য প্রশাসনের প্রধানের যে নির্দেশে পুলিশ এখন রাজ্যজুড়ে অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধারে নেমেছে। সেই কাজ তো তাঁদের ৩৬৫ দিন ধরেই করার কথা। সেই দায়িত্ব যদি তাঁরা সঠিক ভাবে পালন করতেন তাহলে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবস্থা এমন ভয়াবহ ভাবে বেআব্রু হয়ে পড়তো না। বগটুই গ্রামে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যতজন মানুষেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হোক না কেন। একটা দেশের পুলিশ যদি ক্ষমতাসীন শাসকদলগুলির দলদাসে পরিণত হয়ে পড়ে। তখন বগটুই গ্রামের নরমেধ যজ্ঞের মতো ঘটনা কোনভাবেই আর বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা হয়ে থাকতে পারে না। এই ঘটনাই অর্ডার ‘অফ দ্য ডে’ হয়ে দাঁড়ায়। গণতন্ত্রের পক্ষে। একটা সভ্য সমাজের পক্ষে। সংবিধানের রক্ষাকবচের পক্ষে এর থেকে ভয়াবহ বিপদ আর কি হতে পারে?
বগটুইয়ের নরমেধ যজ্ঞের ঘটনার পরেই আরও একটি সুস্পষ্ট ছবি দেখা গিয়েছে। বীরভুম জেলায় শাসকদলের যিনি প্রধান। তাঁর দলীয় অফিসে জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ প্রধান হাজিরা দিয়েছেন। এই একটি ছবি যে সুস্পষ্ট ছবিটা তুলে ধরে। যে কোন দেশের গণতন্ত্রের পক্ষেই সেটি বিপদজনক। একজন জেলাশাসক কিংবা পুলিশের এসপি কি করে শাসকদলের জেলা প্রধানের দলীয় অফিসে হাজিরা দিতে যান? এর প্রশাসনিক এবং সাংবিধানিক ও আইনী ব্যখ্যা কি হতে পারে? জনসাধারণকে সেই ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে হবে। না হলে বগটুই গ্রামের ঘটনার মতোই পুলিশ প্রশাসনকে শাসকদলের কেষ্টবিষ্টু থেকে চুনোপুঁটি নেতানেত্রীদের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে। ঠিক যেমনটা হয়ে আসছে এই রাজ্যে। দশকের পর দশক ধরে।
ক্ষমতাসীন শাসকদলের কথায় পুলিশ প্রশাসন যখন ওঠবোস করতে শুরু করে দেয়। সংবিধান আর আইন তখন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে আদালতের চৌকাঠে হোঁচোট খেয়ে পড়ে থাকে। না, এই রোগ শুধুই পশ্চিমবঙ্গের নয়। গোটা ভারতবর্ষই কম বেশি এই রোগে আক্রান্ত। একটা দেশ যখন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সেই দেশে গণতন্ত্রের আর কোন প্রাসঙ্গিকতাই থাকে না। থাকে না তার কারণ। ক্ষমতার আসনে গিয়ে যে দলই বসুক না কেন। শাসকদলের রোগে শাসকদল মাত্রেই আক্রান্ত হবে। ফলে জনতার পক্ষে এই গণতন্ত্র কোন রকমের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে না। পারার কথাও নয়।
রাজনীতি মানে এই নয়। যে, রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর কথাই শেষ কথা। গণতন্ত্র মানে এই নয়। যে, নির্বাচিত শাসকদলের হুকুমেই এবং তাদের দলীয় স্বার্থেই পুলিশ প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। সকলেই জানেন সাংবিধানিক গণতন্ত্র সে কথা বলে না। সেই অধিকারও দেয় না। অথচ ভারতীয় গণতন্ত্রের এটাই আসল এবং বাস্তব চেহারা। এই বাস্তবতার মাশুল কিন্তু দিতে হয় সাধারণ মানুষকেই। রাজনৈতিক দলগুলির নেতা কিংবা নেত্রী। পুলিশ প্রশাসনের কর্তা এবং ব্যক্তিরা এর মাশুল দেন না। মাশুল দেয় রাতবিরেতে শরীরের উপরে মারাত্মক আঘাত নিয়ে জলন্ত আগুনে পুড়তে থাকা বগটুই গ্রামের নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের মতো ভোটাররাই। ফলে সেই ভোটারদেরকেই ঠিক করতে হবে। কি করণীয়। খুঁজতে হবে প্রকৃত পথটা কোথায়। কোনদিকে?
কিন্তু মুশকিল সেখানেও। সাধারণ জনতা আজকাল অত্যন্ত চতুর এবং ধুর্ত হয়ে উঠেছে। তারা খুব ভালো রকম ভাবেই জানে। ক্ষমতায় যাঁরা থাকে। তাঁরা যদি দুর্বৃত্ত না হয়। তাঁরা যদি নীতিবাগিশ সৎ হয়। তাহলে দেশে আইনের শাসন কঠোর হয়ে উঠতে থাকবে ক্রমেই। ফলে সেই ক্ষেত্রে দুই নম্বরী পথে দুই পয়সা অনৈতিক ভাবে কামানোর পথ বন্ধ হয়ে যাবে। না, সেই সুযোগটা আর জনতা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। রাজি নয় বলেই। তারা, যে রাজনৈতিক দলে দুর্বৃত্তের সংখ্যা যতবেশি। সেই রাজনৈতিক দলকেই তত বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী করে আইনসভায় পাঠায়। তারা জানে আইনসভায় আইনভঙ্গকারীদের সংখ্যা যত বেশি হবে। ততই তাদের পোয়াবারোর সময়। ততই দুই নম্বরী পথে প্রভুত অর্থ কামিয়ে নেওয়া যাবে। দেশের আইন ও সংবিধানকে কাঁচকলা দেখিয়ে। ঠিক এই কারণেই জনতা দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রার্থীদেরকেই বেশি করে ভোট দিয়ে ক্ষমতার আসনে বসিয়ে থাকে। ফলে চোখের সামনে রাজনৈতিক দলের কেষ্ট এবং বিষ্টুদেরকে তোয়ালে জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ নিতে দেখেও। জনতা তাদেরকেই নির্বাচিত করতে থাকে। আবার সেই সব কেষ্ট এবং বিষ্টুরা নির্বাচনী হাওয়া বুঝে দলবদল করলেও। তাদের ভোটাররা প্রার্থী বদল করে না। কারণ জনতা জানে কে সিজিন্ড চোর। কাকে ক্ষমতায় বসালে চৌর্যবৃত্তির কাজ ভালো ভাবে চালানো যাবে। সে যে দলে। জনতাও সেই দলে। এই কারণে ক্ষমতার আসনে শাসকদলের বদল হলেও। শাসনসংস্কৃতির বদল হয় না কোন। ফলে পুলিশ প্রশাসনকেও ক্ষমতাসীন দলের দলদাসে পরিণত হয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই সাধারণ নিয়ম সর্বত্র বিরাজমান। পশ্চিমবঙ্গ তাই কোন ব্যাতিক্রম নয়।
দেশের জনগণ যতদিন অনৈতিক পথে দুই পয়সা বেশি কামানোর ধান্দায় থাকবে। ভারতীয় গণতন্ত্র ততদিনই এই একই রকম ভাবে ক্ষমতাসীন শাসকদলগুলির স্বৈরতান্ত্রিক স্বার্থে চালিত হতে থাকবে। যার সরাসরি ফলাফলে পুলিশ প্রশাসনকে শাসকদলের আজ্ঞাবহ করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যেখানে পুলিশকে অপেক্ষা করতে হবে। কখন একজন ব্লক সভাপতি নির্দেশ দেবেন অকুস্থলে দৌড়ে যাওয়ার। ততক্ষণ আরও অনেক মানুষের ঘরবাড়ি পুড়তে থাকবে। হাওয়ায় উড়তে থাকবে জলন্ত লাশের ছাই। সেই ছাইচাপা আগুন ধামাচাপা দিতেই সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিদিনের পাঠশালায় রাজনৈতিক নেতা এবং নেত্রীরা ক্লাস নিতে থাকবেন জনগণের। অষ্টপ্রহর।
২৬শে মার্চ’ ২০২২
কপিরাইট সংরক্ষিত
বগটুইয়ের নরমেধ যজ্ঞের ঘটনার পরেই আরও একটি সুস্পষ্ট ছবি দেখা গিয়েছে। বীরভুম জেলায় শাসকদলের যিনি প্রধান। তাঁর দলীয় অফিসে জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ প্রধান হাজিরা দিয়েছেন। এই একটি ছবি যে সুস্পষ্ট ছবিটা তুলে ধরে। যে কোন দেশের গণতন্ত্রের পক্ষেই সেটি বিপদজনক। একজন জেলাশাসক কিংবা পুলিশের এসপি কি করে শাসকদলের জেলা প্রধানের দলীয় অফিসে হাজিরা দিতে যান? এর প্রশাসনিক এবং সাংবিধানিক ও আইনী ব্যখ্যা কি হতে পারে? জনসাধারণকে সেই ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে হবে। না হলে বগটুই গ্রামের ঘটনার মতোই পুলিশ প্রশাসনকে শাসকদলের কেষ্টবিষ্টু থেকে চুনোপুঁটি নেতানেত্রীদের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে। ঠিক যেমনটা হয়ে আসছে এই রাজ্যে। দশকের পর দশক ধরে।
ক্ষমতাসীন শাসকদলের কথায় পুলিশ প্রশাসন যখন ওঠবোস করতে শুরু করে দেয়। সংবিধান আর আইন তখন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে আদালতের চৌকাঠে হোঁচোট খেয়ে পড়ে থাকে। না, এই রোগ শুধুই পশ্চিমবঙ্গের নয়। গোটা ভারতবর্ষই কম বেশি এই রোগে আক্রান্ত। একটা দেশ যখন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সেই দেশে গণতন্ত্রের আর কোন প্রাসঙ্গিকতাই থাকে না। থাকে না তার কারণ। ক্ষমতার আসনে গিয়ে যে দলই বসুক না কেন। শাসকদলের রোগে শাসকদল মাত্রেই আক্রান্ত হবে। ফলে জনতার পক্ষে এই গণতন্ত্র কোন রকমের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে না। পারার কথাও নয়।
রাজনীতি মানে এই নয়। যে, রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর কথাই শেষ কথা। গণতন্ত্র মানে এই নয়। যে, নির্বাচিত শাসকদলের হুকুমেই এবং তাদের দলীয় স্বার্থেই পুলিশ প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। সকলেই জানেন সাংবিধানিক গণতন্ত্র সে কথা বলে না। সেই অধিকারও দেয় না। অথচ ভারতীয় গণতন্ত্রের এটাই আসল এবং বাস্তব চেহারা। এই বাস্তবতার মাশুল কিন্তু দিতে হয় সাধারণ মানুষকেই। রাজনৈতিক দলগুলির নেতা কিংবা নেত্রী। পুলিশ প্রশাসনের কর্তা এবং ব্যক্তিরা এর মাশুল দেন না। মাশুল দেয় রাতবিরেতে শরীরের উপরে মারাত্মক আঘাত নিয়ে জলন্ত আগুনে পুড়তে থাকা বগটুই গ্রামের নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের মতো ভোটাররাই। ফলে সেই ভোটারদেরকেই ঠিক করতে হবে। কি করণীয়। খুঁজতে হবে প্রকৃত পথটা কোথায়। কোনদিকে?
কিন্তু মুশকিল সেখানেও। সাধারণ জনতা আজকাল অত্যন্ত চতুর এবং ধুর্ত হয়ে উঠেছে। তারা খুব ভালো রকম ভাবেই জানে। ক্ষমতায় যাঁরা থাকে। তাঁরা যদি দুর্বৃত্ত না হয়। তাঁরা যদি নীতিবাগিশ সৎ হয়। তাহলে দেশে আইনের শাসন কঠোর হয়ে উঠতে থাকবে ক্রমেই। ফলে সেই ক্ষেত্রে দুই নম্বরী পথে দুই পয়সা অনৈতিক ভাবে কামানোর পথ বন্ধ হয়ে যাবে। না, সেই সুযোগটা আর জনতা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। রাজি নয় বলেই। তারা, যে রাজনৈতিক দলে দুর্বৃত্তের সংখ্যা যতবেশি। সেই রাজনৈতিক দলকেই তত বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী করে আইনসভায় পাঠায়। তারা জানে আইনসভায় আইনভঙ্গকারীদের সংখ্যা যত বেশি হবে। ততই তাদের পোয়াবারোর সময়। ততই দুই নম্বরী পথে প্রভুত অর্থ কামিয়ে নেওয়া যাবে। দেশের আইন ও সংবিধানকে কাঁচকলা দেখিয়ে। ঠিক এই কারণেই জনতা দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রার্থীদেরকেই বেশি করে ভোট দিয়ে ক্ষমতার আসনে বসিয়ে থাকে। ফলে চোখের সামনে রাজনৈতিক দলের কেষ্ট এবং বিষ্টুদেরকে তোয়ালে জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ নিতে দেখেও। জনতা তাদেরকেই নির্বাচিত করতে থাকে। আবার সেই সব কেষ্ট এবং বিষ্টুরা নির্বাচনী হাওয়া বুঝে দলবদল করলেও। তাদের ভোটাররা প্রার্থী বদল করে না। কারণ জনতা জানে কে সিজিন্ড চোর। কাকে ক্ষমতায় বসালে চৌর্যবৃত্তির কাজ ভালো ভাবে চালানো যাবে। সে যে দলে। জনতাও সেই দলে। এই কারণে ক্ষমতার আসনে শাসকদলের বদল হলেও। শাসনসংস্কৃতির বদল হয় না কোন। ফলে পুলিশ প্রশাসনকেও ক্ষমতাসীন দলের দলদাসে পরিণত হয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই সাধারণ নিয়ম সর্বত্র বিরাজমান। পশ্চিমবঙ্গ তাই কোন ব্যাতিক্রম নয়।
দেশের জনগণ যতদিন অনৈতিক পথে দুই পয়সা বেশি কামানোর ধান্দায় থাকবে। ভারতীয় গণতন্ত্র ততদিনই এই একই রকম ভাবে ক্ষমতাসীন শাসকদলগুলির স্বৈরতান্ত্রিক স্বার্থে চালিত হতে থাকবে। যার সরাসরি ফলাফলে পুলিশ প্রশাসনকে শাসকদলের আজ্ঞাবহ করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যেখানে পুলিশকে অপেক্ষা করতে হবে। কখন একজন ব্লক সভাপতি নির্দেশ দেবেন অকুস্থলে দৌড়ে যাওয়ার। ততক্ষণ আরও অনেক মানুষের ঘরবাড়ি পুড়তে থাকবে। হাওয়ায় উড়তে থাকবে জলন্ত লাশের ছাই। সেই ছাইচাপা আগুন ধামাচাপা দিতেই সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিদিনের পাঠশালায় রাজনৈতিক নেতা এবং নেত্রীরা ক্লাস নিতে থাকবেন জনগণের। অষ্টপ্রহর।
২৬শে মার্চ’ ২০২২
কপিরাইট সংরক্ষিত
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন