ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো !
‘নস্টালজিয়া’ শব্দটার সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ স্মৃতিপীড়া বা স্মৃতিকাতরতা কি না জানি না । কিন্তু তাকে ঘিরে আমাদের এতো স্মৃতি, এতো আবেগ যে তার চলে যাবার কথা শুনলেই একটা নিরুচ্চার হাহাকার, আত্মীয় বিয়োগের কাতরতা আমাদের আচ্ছন্ন করে । আমি কলকাতার ট্রামের কথা বলছি । নগর কলকাতার পরিবহন ব্যবস্থার প্রথম গণপরিবহন মাধ্যম ট্রাম । হ্যাঁ, প্রথম এবং প্রাচীনতমই বলবো । ট্রাম চালু হওয়ার উনিশ বছর আগে রেল চালু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তা তো নগরের আভ্যন্তরীন পরিবহন বন্দোবস্ত ছিল না । ফেব্রুয়ারি মাসেই কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । 

আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ১৮৭৩এর ২৪ শে ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রথম ট্রামের চাকা গড়ায় । বিশ্বে প্রথম ট্রাম চলে নিউইয়র্কে ১৮৩২ সনে। তারপর ১৮৫৫তে ফ্রান্স ও ১৮৬০এ লন্ডনে ট্রামের প্রবর্তন হয় । কলকাতাও খুব পিছিয়ে ছিল না । এখানে প্রথম ট্রামের চাকা গড়ায় ১৮৭৩এ । সে ছিল ঘোড়ায় টানা ট্রাম । শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ৩.৯ কিলোমিটার পথে পাতা ট্রাম লাইনে ঘোড়ায় টানা ট্রাম ছুটতে শুরু করলো ১৮৭৩এর ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে । সেই বছরের নভেম্বরে এই প্রথম ট্রামরুটটি বন্ধ করে নতুন লাইন পাতা হয় শিয়ালদহ থেকে বউবাজার স্ট্রীট, ডালহৌসি স্কোয়ার ও স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত । বড়লাট লর্ড রিপন এই নতুন ট্রামপথের উদবোধন করেন ১৮৮০র ১লা নভেম্বর । তখন হাওড়া ব্রিজ হয়নি, আর্মেনিয়ান ঘাটে ছিল রেলের টিকিটঘর । সেখান থেকে টিকিট কটে নৌকা বা স্টীমারে গঙ্গা পেরিয়ে হাওড়ার ট্রেনে চাপতে হত । সুতরাং ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালিয়ে শিয়ালদহ ও হাওড়ার মধ্যে যোগাযোগ হল । ইংরাজ সরকারের ট্রামলাইন পাতার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মাল পরিবহন কিন্তু প্রথম দিন থেকেই যাত্রী উপচে পড়তো ।

প্রখ্যাত কলকাতা গবেষক রাধারমন মিত্র তাঁর ‘কলিকাতা দর্পণ’ গ্রন্থে প্রথম দিনের ট্রাম চলার এক প্রত্যক্ষদর্শির বর্ণনা দিয়েছেন “ সেদিন শেয়ালদা স্টেশন থেকে পরপর দুটি ‘ট্রাম-ট্রেন’ ছাড়ে । প্রথমটিতে ছিল তিনটি গাড়ি । একটি প্রথম শ্রেণীর ও দুটি দ্বিতীয় শ্রেণীর । দ্বিতীয়টিতে ছিল দুটি গাড়ি – একটি প্রমশ্রেণীর আর একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর, প্রত্যেকটাই দুটো বলিষ্ঠ ঘোড়া দিয়ে টানা ।......

পূর্ববঙ্গ রেলের ৯-১৫ মিনিটের ট্রেনটা যেই শেয়ালদা স্টেশনে পৌছল অমনি ট্রাম টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেল, আর দেখতে দেখতে দ্বিতীয় শ্রেণীর ভেতর ছাদ পর্যন্ত যাত্রীতে এমনভাবে ভরে গেল যে সর্দিগর্মি হবার উপক্রম । কিন্তু প্রথম শ্রেণীর গাড়িতে মাত্র পাঁচটি লোক চাপল । ... বিপুল জনতা সেদিন আগাগোড়া সমস্ত পথটার ধারে দাঁড়িয়ে এই নতুন গাড়ি চলা দেখেছিল” ।

১৯০০ সাল পর্যন্ত ট্রাম কোম্পানীর হাতে ছিল ১৬৬টি ট্রাম, এক হাজার ঘোড়া আর পাতা হয়েছিল ১৯ মাইল । ২৯বছর চলার পর, ঘোড়ায় টানা ট্রামের যুগ শেষ হল বিশ শতকের গোড়ায় পৌছে । ইতিমধ্যে ১৮৭০এ কলকাতায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এসে যায় । ১৯০০ সাল নাগাদ কলকাতায় ট্রাম পথের বৈদ্যুতিকরণ শুরু হয় । ২৭শে মার্চ ১৯০২ তারিখে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চললো এসপ্ল্যানেড- খিদিরপুর রুটে । ঐ বছরের মধ্যেই সবকটি ঘোড়ায় টানা ট্রাম লাইনে বৈদ্যুতিকরণ সম্পন্ন হয় এবং নতুন অনেকগুলি ট্রামলাইন পাতা হয় । ১৯০৮ সনের মধ্যে টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, বাগবাজার, হ্যারিশন রোড , লোয়ার সার্কুলার রোড, শিয়ালদহ-হাইকোর্ট, আলিপুর ও বেহালা লাইন খোলা হয় । ১৯২৫এ পার্ক সার্কাশ,১৯২৮এ রাসবিহারী এভিনিউ, ১৯৪১এ রাজাবাজার-শ্যামবাজার ও ১৯৪৩এ পার্কসার্কাশ-বালিগঞ্জ লাইন খোলা হয় । ১৯৪২এ হাওড়া ব্রিজের নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর হাওড়া সেতু দিয়ে ট্রাম চলাচল শুরু হয় । ১৯০৮ নাগাদ হাওড়া উত্তর ও দক্ষিণে কয়েকটি রুটে ট্রাম চলাচল শুরু হয় । শিবপুর, হাওড়া ময়দান, শালকিয়া, বাঁধাঘাট ট্রাম চলাচলের আওতায় আসে। ১৯৭০এ হাওড়ার উত্তর দক্ষিণের সবকটি ট্রামরুটই বন্ধ করে দেওয়া হয় । হাওড়া ব্রিজ দিয়ে ট্রাম চলাচলও বন্ধ হয়ে যায় ১৯৯৩ থেকে । প্রসঙ্গত বলে রাখি ১৯৪৩এর ৩রা ফেব্রুয়ারি হাওড়া ব্রিজের উদ্বোধন হয়েছিল একটি যাত্রীবিহীন ট্রাম চালিয়ে । ঠিক পঞ্চাশ বছর পরে হাওড়া ব্রিজে ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । স্বাধীনতার পূর্বে মোট ট্রাম-রাস্তার পরিমান ছিল ৪২ মাইল বা ৬৭.৫৯ কিলোমিটার । আর এখন মাত্র ২৪ কিলোমিটার পথে ট্রাম চলে, রুটের সংখ্যা ৯, আর পথে নামে ২৫টির মত ট্রাম ।

স্বাধীনতার পর ষাটের দশক থেকে অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার দাপটে কলকাতার ট্রাম পরিষেবা রুগ্ন হয়ে পড়ে ১৯৬৭তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রাম কোম্পানীকে অধিগ্রহন করে । কলকাতার ট্রামরুটের সংকোচন শুরু হয় এই সময় থেকেই । ১৯৭০এ হাওড়ার ট্রাম চলাচল বন্ধ করার পর একেরপর এক ট্রামরুট বন্ধ হতে থাকে । দেখা যাচ্ছে নগর কলকাতার ট্রাম চলাচল ব্যবস্থার যা কিছু সম্প্রসারণ তা হয়েছে স্বাধীনতার আগে । স্বাধীনতার পরে সম্ভবত মাণিকতলা-উল্টোডাঙ্গা(১৯৮৫), বেহালা-জোকা (১৯৮৬) – এই দুটি মাত্র ট্রাম রুট খোলা হয়েছে । আসলে স্বাধীনতার পর কোন সরকারই এই পরিবেশ-বান্ধব দূষণহীন গণপরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে সুপ্রসন্ন ছিল না । বরং উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ক্রমশ সংকুচিত করে তার স্বাভাবিক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার । অভিযোগ এর ধীর গতি, যানজটের কারণ নাকি ট্রাম । মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন উড়ালপুল নির্মাণের কারণে কোপ পড়েছে ট্রামের ওপর, একের পর এক ট্রামরুট বন্ধ হয়ে গেছে, ট্রামডিপোগুলির জমি ব্যবসায়ীদের কাছে জলের দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ।

ষাটের দশকে আমাদের কলেজ জীবনেও দেখেছি উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার প্রধাণ রাস্তাগুলোতে বিছানো ট্রামলাইন আর শর্পিলগতিতে দুলকি চালে এগিয়ে চলেছে মহানগরের প্রাচীনতম গণপরিবহন ট্রাম । শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় যেন ট্রামলাইনের গোলকধাঁধা । এক সময় কলকাতার প্রাণ সঞ্চার করেছিল রাজপথের ট্রাম। কলকাতার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে রয়েছে ট্রাম। আবার কলকাতার অনবদ্য সৌন্দর্যের অন্যতম একটি নাম এই ‘ট্রাম’, নগর কলকাতার ঐতিহাসিক চিহ্ন, কলকাতার আইডেনটিটি । কলকাতা আর ট্রাম প্রায় সমার্থক । আমার মত অনেকেরই কলকাতা চেনা ট্রাম দিয়ে । শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্ট্রীট কিংবা হাওড়া,শ্যামবাজার থেকে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র এসপ্ল্যানেড, তারপর ময়দানের বুক চিরে সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার সব কটি প্রধান রাস্তায় । সিনেমা-থিয়েটারে দেখার জন্য হাতিবাগান, গ্রে স্ট্রীটের ট্রাম, কলেজ পালিয়ে প্রেম, অলস শীতদুপুরে রোদ পোয়ানোর মত ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে পাশাপাশি বসে থাকা । এক কথায় আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের পরতে পরতে মিশেছিল ট্রাম, ট্রাম কলকাতার চিহ্ন, তাকে দিয়েই কলকাতা চেনা । নিশ্চিত মনে পড়বে, সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘মহানগর’ চলচ্চিত্রের টাইটেল দৃশ্যায়ন করেছিলেন ট্রামলাইন ও তার ওভারহেড তারের জঙ্গল ভেদ করে ট্রামের বিদ্যুৎগ্রাহী বস্তুটি এগিয়ে যাচ্ছে, পর্দায় কলাকুশলীদের নাম ফুটে উঠছে । মহানগরের প্রতীক আর কিই বা হতে পারতো ! আর এইতো সেদিন কবি শ্রীজাত ‘অটোগ্রাফ’ ছায়াছবিতে শ্রেয়া ঘোষালের জন্য গান লিখলেন ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন আর কবিতায় শুয়ে কাপলেট’

ট্রাম নিয়ে আমাদের কত স্মৃতি, কত আবেগ । আমাদের সাহিত্য সঙ্গীত চলচ্চিত্রে ট্রাম এসেছে বারবার । কবি জীবনানন্দ দাশ রাতের কলকাতার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে : ‘‘শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ, কলকাতা এখন/ জীবনের জগতের প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ;/ চারিদিকে ঘর বাড়ি পোড়ো-সাঁকো সমাধির ভিড়…’’(‘একটি নক্ষত্র আসে’)।

বর্ষায় জলমগ্ন ট্রামলাইনের কারণে নাগরিক দুর্ভোগ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের একটি সরস বর্ণনা পাওয়া যাবে ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ প্রবন্ধে । লিখেছেন “... বর্ষাও নামিয়াছে ট্র্যামলাইনের মেরামতও শুরু। যার আরম্ভ আছে তার শেষও আছে ন্যায়শাস্ত্রে এই কথাই বলে, কিন্তু ট্র্যামওয়ালাদের অন্যায় শাস্ত্রে মেরামতের আর শেষ দেখি না। তাই আবার লাইন কাটার সহযোগে যখন চিৎপুর রোডে জলস্রোতের সঙ্গে জনস্রোতের দ্বন্দ্ব দেখিয়া দেহমন আর্দ্র হইতে লাগিল তখন অনেকদিন পরে গভীরভাবে ভাবিতে লাগিলাম,সহ্য করি কেন?

সহ্য না করিলে যে চলে এবং না করিলেই যে ভাল চলে চৌরঙ্গি অঞ্চলে একবার পা বাড়ালেই তা বোঝা যায়। একই শহর, একই ম্যুনিসিপ্যালিটি, কেবল তফাতটা এই,আমাদের সয় ওদের সয় না। যদি চৌরঙ্গি রাস্তার পনেরো আনার হিসসা ট্র্যামেরই থাকিত, এবং রাস্তা উৎখাত করিয়া লাইন মেরামত এমন সুমধুর গজগমনে চলিত আজ তবে ট্র্যাম কোম্পানির দিনে আহার রাত্রে নিদ্রা থাকিত না। ...

যা হইতেছে তার চেয়েও ভালো হইতে পারে এই ভরসা ভালোমানুষদের নাই বলিয়াই অহরহ চক্ষের জলে তাহাদের বক্ষ ভাসে এবং তাদের পথঘাটেরও প্রায় সেই দশা। এমনি করিয়া দুঃখকে আমরা সর্বাঙ্গে মাখি এবং ভাঙা পিপের আলকাতরার মতো সেটাকে দেশের চারিদিকে গড়াইয়া ছড়াইয়া পড়িতে দিই”।

সত্তরের দশকে যখন মেট্ররেলের কাজ শুরু হল তখন তারা একটা বিজ্ঞাপন দিত । সেই বিজ্ঞাপনের ভাষা ছিল “আমরা কলকাতার বুকে জুড়ে দিতে চাই সেই ডানা যার নাম গতি’ । সেই বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পুরনো কলকাতার ছবি থাকতো । অর্থাৎ বিজ্ঞাপনটির মর্মার্থ ছিল আদি কলকাতাকে মুছে না দিয়েও আমরা কলকায় গতি আনবো । অথচ বাস্তবে সেই ডানার ঝাপটেই কলকাতার গৌরবময় ঐতিহ্যের চিহ্ন ট্রাম ব্যবস্থারই মুছে যাওয়ার অবস্থা হল । অথচ, ট্রাম ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে সংকুচিত করে চিরতরে উঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ আজকের নয়, যখন নেওয়া হয়েছিল তখন মেট্রোরেল আমাদের কল্পনাতে ছিল না । তাছাড়া মেট্রো থাকলে ট্রামকে যেতে হবে কেন তার ও যুক্তি নেই । টিউব রেলের অজুহাতে বিশ্বের ব্যস্ততম শহরগুলি ট্রামকে বর্জন করেনি । লন্ডনে টিউব রেল যেমন আছে পাশাপাশি ট্রামও চলছে ২০০ বছর ধরে । প্যারিশ, মস্কো, বার্লিন, মেলবোর্ন প্রভৃতি ব্যস্ত শহরগুলিতে টিউব রেলের পাশাপাশি ট্রামও চলে । 

কলকাতায় আমরা গত ষাট বছর ধরে ট্রাম উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছি আর ট্রাম সম্পর্কিত এক বিশ্ব-সমীক্ষায় চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে । সেই তথ্য জানাচ্ছে যে জার্মানিতে এখনো ৬০টি রুটে ট্রাম চলাচল করে । আমেরিকায় ৩৫, ফ্রান্সে ১৭, পোল্যান্ডে ১৫, ব্রিটেনে ১০ এবং চিনে ৯টি অঞ্চলে ট্রাম চলাচল করে । অবাক করার মত আরো তথ্য এই যে, ভারতের মত যে সব দেশ ট্রামব্যবস্থা তুলে দিতে চেয়েছিল এমন ১৫টি দেশ আবার ট্রামকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে । তাদের মধ্যে রয়েছে আলজিরিয়া, উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক, পেরু, সিঙ্গাপুর, মায়নামার প্রভৃতি । আরো চমকপ্রদ তথ্য হল যে সব দেশে কোনদিন ট্রাম ছিল না তারাও সম্প্রতি দেশে ট্রাম চালু করেছে যেমন দুবাই, ইসরাইল ও তাইওয়ান ।

আর আমাদের কোন হেলদোল নেই । কলকাতার প্রাচীনতম গণপরিবহন ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে তোলা,তাকে লাভজনক করে তোলার কোন পরিকলনার কথাও শোনা যায় না । এই যে গড়ফা ট্রামডিপোর পুরোটা ও টালিগঞ্জ ডিপোর অর্ধেকটা জমি ব্যবসায়ীদের কাছে স্বল্প দামে বিক্রি হয়ে গেল তাতে সংশয় হয় কায়েমি স্বার্থই কি তবে চাইছে ট্রাম ববস্থা সম্পূর্ণ বিদায় নিক ! এখন বিশ্বের সাড়ে তিনশো শহরে, আরো সত্তরটি শহরে ট্রাম চালু করার তোড়জোড় চলছে । আর কলকাতায় দেড়শো বছরের একটা ব্যবস্থাকে টুঁটি টিপে মারার চেষ্টা হচ্ছে গত ৫০/৬০ ধরে ।

গত তিরিশ বছরে কলকাতা অনেক বদলেছে, অনেক উড়ালপুল হয়েছে, মহানগরের জীবনে গতি এসেছে, আলোক সজ্জা ও নানান সৌন্দর্যায়নের কর্মকান্ড চলছে । কিন্তু নগর কলকাতার আদি সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনা যায় না ! তার ঐতিহাসিক চিহ্নটিকে চিরতরে মুছে দেওয়া অনিবার্য নয়, হতে পারে না ।

তথ্যসূত্র (১) ভারতকোষ (সাহিত্য পরিষদ সংস্করণ), (২) কলিকাতা দর্পণ / রাধারমন মিত্র (৩) ‘ট্রাম-গৌরবের গজমোতি’/ সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গদর্শন ওয়েব ।



phalgunimu@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ