চরিত্রঃ দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কলা বৌ, দীপিকা
অঙ্ক – ১
[ আবহ – বজ্রপাতের শব্দ, বৃষ্টির শব্দ ]
দুর্গা [হাঁপাতে হাঁপাতে] – উঃ আওয়াজখানা একবার শুনলি ! কত্তার রাগ আর পড়ে না । ফি বছর এই এক ঢং ! বলছি যে চারদিন বৈ তো নয় । বছরে একবার বাপের বাড়ি না গেলে চলে ? তা বলল, “প্রত্যেক বার একা গিয়ে গান্ডে পিন্ডে খেয়ে আসো ! এমন বাপের বাড়ি, যে জামাইষষ্ঠী অবধি করে না ! পুজোর সময়ও আমায় ডাকে না !” বলেই তৃতীয় নয়ন থেকে এমন বিদ্যুৎ হানলো যে আমি পালানোর পথ পাই না ! আগে তাও বিদ্যুৎ আর বজ্রের আওয়াজ দিয়েই ভয় পাওয়াতো, এখন তো ঘন ঘন মর্ত্যে বজ্রপাত ঘটাচ্ছে ! এ সব সহ্য হয়?
লক্ষ্মী – বাবা ! তোমাদের সেই পুরোনো ঝগড়া ! সেই তো জানে তুমি যাবে – তবে আর এসব করে লাভ কি? তার চেয়ে বরং দেখো আমার কাছে হোয়াটস অ্যাপে কি এসেছে ! আমার এক ভক্ত গড়িয়া থেকে পাঠিয়েছে । প্যান্ডেলখানা দেখো ! মিশরের পিরামিড ! আর আমাদের সবাইকে ভিতরে মমি বানিয়ে রাখবে !
দুর্গা – দেখি ! দেখি ! সে কি রে! শেষে মমি ! মানে মৃতদেহ ! অ্যাঁ - গন্ধ বেরুবে যে ! না না বারণ কর ! বারণ কর !
লক্ষ্মী – বারণ করলে কে শুনছে বল দেখি ? যাকগে যাকগে, ওদের প্যান্ডেলে না হয় আমরা দেখা দিয়েই পালিয়ে যাবো । অন্য সব জম্পেশ প্যান্ডেল আর সাবেকী বাড়ি তো আছেই ! যাই বলো বাপু আমার আর ঐ পুরোনো বেনারসী পরে যেতে ভালো লাগে না । তবে হ্যাঁ পুজোর সময় ট্র্যাডিশনাল পোশাকই আমার ভালো লাগে ! তা তুমি এবার কি পরে যাবে কিছু ঠিক করেছো ?
দুর্গা – জানিস, এবার মসলিনটা খুব উঠেছে ! আমার কাছে বেশ কটা বুটিকের ছবি এসেছে ফেসবুকে ! দাম জিজ্ঞাসা করলুম ! দাম শুনে তো আক্কেল গুড়ুম রে ! বলে আট হাজার পাঁচশো ! তবু একখানা কিনেই ফেলবো ভাবছি – আমি এবার মসলিন পরেই যাচ্ছি !
লক্ষ্মী – তবে সিওডি বেসিস এ নিও বাপু ! মর্ত্যে লোকজন ঠকাতে ওস্তাদ ! তা আমাদের স্বর্গে ডেলিভারী হবে তো !
দুর্গা – সিওডি আবার কি ! আর স্বর্গে কে নিচ্ছে ! মর্ত্যে পৌঁছে পঞ্চমীর দিন নিয়ে পরে নিলেই তো হল !
লক্ষ্মী – সিওডি জানো না? সেটা হচ্ছে, তোমার কাছে শাড়ী এলে, ঠিক জিনিস দিয়েছে কিনা দেখে, তবে হাতে হাতে পয়সা !
দুর্গা – অ !
[সিন এন্ড মিউজিক – ঢাকের আওয়াজ / শাঁখের আওয়াজ ]
অঙ্ক – ২
দুর্গা [আহ্লাদের সঙ্গে] ঐ শোন – ঢাক বেজে উঠেছে ! আমার মন আর টিকছে না – যাই রান্নাবান্না সেরে রেডি হই গে !
[বাঁশী বাজবে]
লক্ষ্মী – ও মা ! কলা বৌ যে ! তুমি সেই একগলা ঘোমটা দিয়ে ? তুমি আর মডার্ন হলে না ভাই । আর তোমার সেই লাল পাড় সাদা মারকিনের শাড়ী – ও আর চলে?
কলা বৌ – ভালো লাগে না গো । সাজতে ইচ্ছে করে না । গণেশ কতদিন ধরে মেয়ে মেয়ে করছে – তা ওকে এখনো একটা মেয়ে দিতে পারলাম না ।[দীর্ঘশ্বাস]এদিকে আমার সতীন ঋদ্ধিসিদ্ধির দু দুটো ছেলে – শুভ আর লাভ !
লক্ষ্মী – ও এই কথা ! এখন কত চিকিৎসা হয়েছে জানো ? এই তো মর্ত্যে শাহরুখ, আমীর সবাই বুড়ো বয়েসে সারোগেসী করে বাবা হল !
কলা বৌ – তাঁরা আবার কারা গো ?
লক্ষ্মী – তাঁদের চেনো না ! আমি তো ইউটিউবে দিনরাত দেখি – ওনাদের সিনেমা ! ওরাই তো বলিউডের গড ! বিরাট অ্যাক্টর !
কলা বৌ – মাগো ! আর সারোগেসী ! সেটা আবার কোন দেশী ?
লক্ষ্মী – সেটা হল - গনেশের আর তোমার কোন ঝামেলা নিতে হল না – রেডিমেড মেয়ে পেয়ে গেলে! তোমাদেরই মেয়ে– অন্য কারো নয়! এর জন্যে ফারটিলিটি স্পেশালিস্ট ডাক্তার আছে !
কলা বৌ – তাই বুঝি ! উঃ, তোমার সংসারে সব দিকে নজর ! এই না হলে লক্ষ্মী ! এবার মর্ত্যে গিয়েই একজন ফাটাফাটির ডাক্তার দেখাচ্ছি !
লক্ষ্মী [প্রচন্ড হেসে] – ফাটাফাটি নয় ! ফারটিলিটি !
কলা বৌ – ঐ হল ! তা আমাকে কি শাড়ী পরলে ভালো দেখাবে গো ? দেখছো তো আমি কি রোগা -
[বীণা / বা সেতার বাজবে]
সরস্বতী – তখন থেকে শুনছি তোমাদের কথা ! তা এখন তো লাল পাড় সাদা শাড়ীই সবচেয়ে স্টাইল ! তা বলে তোমার ঐ মার্কিন নয় ! একখানা লালপাড় ঢাকাই জামদানী আর সঙ্গে ডিজাইনার ব্লাউস – ব্যাস গনেশ দাদার ঘাড় ডানদিকে অর্থাৎ তোমার দিকেই সর্বদা কাত হয়ে থাকবে !
কলা বৌ – আমার তো ঐ শাড়ী নেই !
সরস্বতী – মর্ত্যে গিয়েই চলে যাবে কোন একটা বুটিকে ! - এই লক্ষ্মী, তুই কি পরছিস?
লক্ষ্মী – আমি ভাই গতবার আসার সময় বুদ্ধি করে অরেঞ্জ পিঙ্ক গঙ্গা যমুনা পাড় নীল একটা হাতে আঁকা তসর মধুবনী কিনে এনেছি ! দারুণ গর্জাস ! আমি ভাই ওটা ছাড়ছি না ।
সরস্বতী - তোর কি মজা ! সব রঙ পরতে পারিস ! আমার দ্যাখ সেই সাদা, নয় হলুদ ! আরে বাবা বিদ্যে আর গানের সঙ্গে সাদা হলুদের কি সম্পর্ক বল তো?
লক্ষ্মী – সেই তোর হিংসুটেপনা ! বিয়ে করবি না কিছু না – লোকে তো তোকে যোগিনী ভাববেই – তাই তো শ্বেত বস্ত্র ! হি হি !
সরস্বতী – আমি তোর মতো এই বয়েসে নারায়ণের ঘরনী হয়ে বসে থাকতে পারবো না । ছেলেরা, মেয়েদের স্বাধীনতা, আচিভমেন্ট, পারসোনালিটির কোন দাম দেয় না । শুধু সুন্দরী হয়ে স্বামী সেবা করো ! ভাব ! লক্ষ্মী পুজোর সময়েও তোর সঙ্গে নারায়ণের পুজো করতে হবে ! কেন বাপু? আমি যদি এই স্বর্গে কোন তেমন ছেলে পাই তবে আমি লিভ টুগেদার করবো - বিপাশা বাসু যেমন করত ! নো বিয়ে । আর এবার আমি ইয়েলো কুর্তি আর হোয়াইট পালাজো পরছি – তোরা সব শাড়ী পর ! এখানে তো পাবো না - আমি মর্ত্যে গিয়েই কিনে নেবো । যাই – গীটারটা বেঁধে নি গে – ওটা আবার সঙ্গে নিতে হবে !
অঙ্ক – ৩
[প্রচন্ড হাসতে হাসতে সরস্বতীর প্রবেশ]
সরস্বতী – অ্যাই লক্ষ্মী – দ্যাখ দ্যাখ ! আয় না একবার ! হি হি হি ! এই দ্যাখ কার্তিকের মোবাইল ! অনেক কষ্টে ঝেপেছি ! ক দিন ধরেই দেখছি ছেলে ফোন থেকে মুখই তোলে না – ভাবছি কি ব্যাপার ! আজ ফোনটা হাতে পেয়েই সোজা ওর হোয়াটস অ্যাপে !
কলা বৌ – অ্যাই তোমরা কি দেখছো ? ও মা ! এ তো কার্ত্তিক ঠাকুরপোর ফোন !
সরস্বতী – চুপ ! চুপ ! তুই আবার যা পেট আলগা ! খবরদার কাউকে কিছু বলবি না !
লক্ষ্মী – আরে কি দেখাবি দ্যাখা না !
সরস্বতী – এই দ্যাখ ! প্রথমে ছবিগুলো দ্যাখ !
লক্ষ্মী – এগুলো কার ছবি রে ! তাল ঢ্যাংরা ! হাড়্গিলের মত চেহারা !
সরস্বতী – কাকে কি বলছিস ! আরে চিনতে পারছিস না ? এ তো দীপিকা !
লক্ষ্মী – ইনি আবার কোন দেবী ! সগগে তো এমন কারো নাম শুনি নি !
সরস্বতী – কাত্তিক আর সগগে থেমে নেই ! অ্যাতো বছরে সগগে একটা ভালো মেয়ে পেলো না বেচারা ! সেই কুমার কাত্তিক হয়েই রইলো । আর কি ধৈর্য সয়? এবার মর্ত্যের সুন্দরীদের দিকে মন দিয়েছে ! শোন ! এ তো বলিউডের মক্ষীরানী ! দীপিকা পাড়ুকোণ !
কলা বৌ – কি কোণ ! আমি বাপু ঈষাণ কোণ শুনেছি, নৈঋত কোণ শুনেছি – কিন্তু পারুকোণ – এমন তো শুনি নি !
সরস্বতী – উঃ কলা বৌ, তুমি সেই গাঁইয়া কে গাঁইয়া রয়ে গেলে। এটা একজনের পদবী! আমাদের দেব দেবীদের তো পদবীর বালাই নেই ! মর্ত্যে তো তেমন নয় ! সবার নামের সঙ্গে লেজুড়ের মতো পদবী জোড়া থাকে !
লক্ষ্মী – ও – তাই বল । তা ইনি তো সিনেমার নায়িকা !
সরস্বতী – নায়িকা বলে নায়িকা ! ইনি হলেন এখন নম্বর ওয়ান ! শোন শোন ! প্রথম তো আমি জানতে পারলুম কাত্তিক আমায় সেদিন বলল বলে ! বলল “দিদি সেদিন ইউটিউব ভিডিওতে পদ্মাবত দেখলাম জান! দেখে ইস্তক দীপিকাকে ভুলতে পারছি না ! আহা কি রূপ! কি নাচ ! আমাদের স্বর্গের অপ্সরারা ফেল পড়ে যাবে । ঘুমর নাচ দেখে, আমার মাথা ঘুমে – থুড়ি – ঘুরে গেছে দিদি ! আমি ওকে ভুলতে পারছি না । এখন আমার শয়নে স্বপনে দীপিকা ! ওকে না পেলে আমি বাঁচবো না !” তারপরেই বুঝলি কাত্তিক দীপিকার ফ্যান ফলোয়ার হয়ে গেছে । কি করে জানি না দীপিকার সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটও শুরু করেছে !
লক্ষ্মী – অ ! ওই সাত ঘাটের জল খাওয়া মেয়েটা ? ওর এর আগে কটা প্রেমিক ছিল সে খেয়াল আচে? আমি তো ফিল্মের পোকা তুই জানিস ! সেই বিজয় মালিয়ার ছেলে, যুবরাজ সিংহ, ধোনি হয়ে মায় রণবীর কাপুর অবধি – আজ এ তো কাল সে ! আর শুধু ব্রেক আপ ! ডেঞ্জারাস !
সরস্বতী – ধূর ! ও সব ছাড় তো ! দ্যাখ দ্যাখ কি লিখেছে ! পড় !
[মজার বাজনা / ঘুমর গানটি শুরুর বাজনা]
অঙ্ক - ৪
লক্ষ্মী [কার্তিকের মতো গলা করে] – দীপিকা, আমি দেব কার্ত্তিক ! এই দেখ – এই আমার ছবি ফরোয়ার্ড করলুম ! আমার রূপে স্বর্গের সবাই মুগ্ধ ! তোমারও ভালো লাগছে নিশ্চই !
দীপিকা [গলা]- অভী স্বর্গ সে ভি মেরে পিছে পড়নে লাগে হ্যায় লোগ ! ম্যায় কাহাঁ যাউঁ ? অভী দেবতা লোগ ভি ইয়ে সব করতে হ্যায় ? ক্যা জমানা আ গয়া !
লক্ষ্মী [কার্তিকের গলায়] – দেবী, আমার এই ভ্রমরকৃষ্ণ কুঞ্চিত কেশ দেখ ! এই সুললিত গৌর উন্নত দেহ ! এই খরগের মতো নাসিকা ! দেখ আমার এই বীর দর্প ! হাতে তীর ধনুক ! আমি দেব সেনাপতি কার্ত্তিক ! অসুর ও রাক্ষসগণ আমার বীরত্বে ভীত ! আমি তোমায় প্রেম নিবেদন করছি ! তুমি সাড়া দাও !
কলা বৌ – অ মা ! এ কি কথা গো ! শেষে সিনেমার নায়িকা ! নাহ, গণেশকে বলতে হচ্ছে ! এবার মর্ত্যে গেলে তো –
সরস্বতী – থাম, থাম ! দাঁড়াও দেখি দীপিকা কি লিখেছে !
দীপিকা [গলা] – হি হি ! লেকিন তুমহারা ইয়ে ধোতি নহী চলেগী ! ঔর তুমহারা নাম ভি বহোত ব্যাকডেটেড হ্যায় !
লক্ষ্মী [কার্তিকের গলায়] – কেন প্রিয়ে ? পদ্মাবতে তোমার স্বামী তো ধুতিই পড়তেন ! আর দক্ষিণ ভারতে তো কার্ত্তিক নাম খুব জনপ্রিয় !
দীপিকা [গলা] – আরে উয়ো তো মুভি হ্যায় ! থোড়ি আসলি লাইফ হ্যায় ! ঔর ম্যায় অভি মুম্বই কা হু ! সাউথ ইন্ডিয়া কি নহী !
সরস্বতী – জমে উঠেছে ! দাঁড়া এবার আমি পড়ি ভাই কি লিখেছে !
সরস্বতী [কার্তিকের গলায়] – দাঁড়া, গলাটা খ্যাঁকরে নি ! হুম ! প্রিয়ে – আমাকে বিয়ে করলে তুমি স্বর্গে আসতে পারবে ! এখানে চারিদিকে মনোরম উদ্যান ! গাছে গাছে রসালো ফল ! খাদ্য, মিষ্টান্নের কোন অভাব নেই ! এখানে জরা নেই, মৃত্যু নেই, দুঃখ নেই, শোক নেই ! তুমি এক চির আনন্দের রাজ্যে বিরাজ করবে ! তোমায় দেখে ইন্দ্রও আমায় হিংসা করবে । ওর সভায় তোমার মতো নৃত্য পটিয়সী কেউ নেই কিনা !
দীপিকা [গলা] – আরে ! মরণে কে পহলে হি আপ মুঝে স্বর্গ ভেজনা চাহতে হ্যায় ক্যা? লেকিন কার্ত্তিকজী – ম্যায় তো খালি নহী হু !
সরস্বতী [কার্তিকের গলায়]- খালি নহী হু ! মানে তুমি কি আর কাউকে হৃদয় দান করেছ? কি নির্দয় ! না না, আমি স্বর্গে কোন ভাল মেয়ে পাই নি ! এবার মর্ত্যে তোমাকে হারাতে পারবো না ! আমি শীগগিরি মর্ত্যে আসছি !
[দুর্গার প্রবেশ । ঢাকের আওয়াজ, শাঁখের আওয়াজ]
দুর্গা – এই তোরা তখন থেকে কি গুজগুজ ফুসফুস করছিস রে?
লক্ষ্মী – এই চুপ চুপ ! মা !
কলা বৌ – কাত্তিক ঠাকুরপো প্রেমে পড়েছেন ।
দুর্গা – অ্যাঁ ! সে কি ! আবার ? কাত্তিকের এই থেকে থেকে প্রেমে পড়ার অভ্যেসটা আর গেলো না ! এবার আবার কে?
সরস্বতী – উঃ কলা বৌটা ঠিক সব ফাঁস করবে ! ও কিছু নয় মা । তুমি যাও, গোছগাছ করো গে ।
দুর্গা – মনে রাখিস, আমি মা দুর্গা ! আমার কাছে কিছুই গোপন থাকে না ! যাই, দেখি সিংহটাকে মাঠে চড়তে পাঠিয়েছিলুম – সেটা ফিরলো কি না –
লক্ষ্মী – নে নে, তাড়াতাড়ি শেষ কর ! কখোন আবার কাত্তিকটা এসে পড়ে !
দীপিকা [গলা] – রণবীর সিংহ মেরী স্টেডি বয়ফ্রেন্ড হ্যায় – পতা নহী ? হ্যায় আপকে পাস - উসকা জ্যায়সা জিম কিয়া হুয়া বডি ! ওয়সা ডান্স কর সাকতে হ্যায় আপ ? আহা ! [গেয়ে উঠবে] খলি বলি হো গয়া হ্যায় দিল !
সরস্বতী [কার্তিকের গলায়] – কি ! ওই আলাউদ্দীন খিলজি ! এতোদিনে বুঝলাম পদ্মাবত নিয়ে কেন এতো ক্যাচাল ! নেচে দেখাক দেখি আমার পিতা শিবের মতো ! তবে বুঝবো ! আমি তো এখন ওনার থেকে ট্রেনিং নিচ্ছি ! ছোঃ, ওকে তো আমি এক তীরে কাত করে দেব ।
দীপিকা [গলা] - ম্যায় ভায়োলেন্স মে বিশ্বাস নহী রাখতি হু ! ঠিক হ্যায় যব ইধর আওগে তো এক ডেট মে মিলো – ফির বাঁতে করেঙ্গে – তব তক ইয়ে লো মেরি কুছ পিকচারস – ইস সে দিল বহলা লো –
লক্ষ্মী – যাক – তা হলে কাত্তিকটাও মর্ত্যে গিয়ে কিছু কাজ পেলো – নইলে তো ঐ ময়ূরের পিঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ব্যাথা –
[দুর্গার প্রবেশ – শাঁখের আওয়াজ / ঢাকের আওয়াজ]
দুর্গা – অ্যাই, তোরা কাত্তিকের ফোন চুরি করেছিস ! বেচারা পাগলের মতো খুজছে! নাওয়া খাওয়া বন্ধ ! কি এমন আছে বলতো ওই ফোনে ? আমার ঘোর সন্দেহ হচ্ছে ! দাঁড়া রাত্রে তোর বাবাকে বলব – ধ্যানে বসে ঠিক বার করে নেবে তোরা কি নিয়ে গুজুর গুজুর করছিস !
সরস্বতী [মনে মনে ]– এই রে ! মাকে ব্যাপারটা ভুলিয়ে দিতে হবে – নইলে বিরাট ক্যাচাল হয়ে যাবে বাবা জানলে !
সরস্বতী - মা, চল সবাই মিলে একটা সেলফি তুলে নি কাত্তিকের ফোনে – ওর অপ্পো ফোন তো – দারুণ সেলফি ওঠে লক্ষ্মী আয় – এই কলা বৌ চলে আয় ! হ্যাঁ ! – এদিকে তাকাও সবাই – সে চিজ ! বাহ – বেশ হয়েছে ! ভাবছি মর্ত্যে আমার ভক্তদের পাঠিয়ে দেব !
দুর্গা – বাহ ! দিব্যি হয়েছে তো ! নিজেরাই নিজেদের ছবি তুলি নিলুম ! কোন ক্যামেরাম্যান লাগলো না ! এ যেন ম্যাজিক ! যাই আশুতোষকে বলি গে – আমাদের দুজনের এক খানা তুলে দিতে – এমন এক খানা ফোন আমি এবার কিনবোই – মর্ত্যে যখন যাবো ।
লক্ষ্মী – যা যা, ফোনটা চুপি চুপি কাত্তিকের ঘরে রেখে আয় ! নইলে –
দুর্গা – হ্যাঁ হ্যাঁ ! চল সবাই ! আমার রান্না শেষ ! হু হু বাবা ! যা রেঁধেছি না ! অন্নপূর্ণার হেঁসেল বলে কথা !
অঙ্ক – ৫
[দুর্গার প্রবেশ – শাঁখের আওয়াজ / ঢাকের আওয়াজ]
দুর্গা – চলি গো আশুতোষ, কটি দিনের তো মামলা । নন্দী ভৃঙ্গির সঙ্গে নাচ গান করে কাটিয়ে দাও । তবে হ্যাঁ, অপ্সরা টপ্সরার দিকে তাকিয়ো নি বাপু ! চারদিন বাদে ফিরে আমি কিন্তু রিপোর্ট নেবো ! ভাগ্যিস তুমি স্মার্ট ফোনটা এখনো শেখো নি ! অ্যাই দ্যাখো সিংহটা আবার খিদে খিদে করে কেন? এই মাত্র অতগুলো মাংস খাইয়ে আনলাম ! উঁহু, আর খাওয়া নয় । আবার মর্ত্যে গিয়ে । এখন চল, তোর পিঠে উঠে অনেকটা পথ যেতে হবে !
লক্ষ্মী – মা দেখো তো, কেমন দেখাচ্ছে আমাকে ! সেই তসর মধুবনীটা পরেছি !
দুর্গা – দারুণ ! কিন্তু একটু তুলে পরো মা ! পায়ের তলায় লুটোচ্ছে যে ! আর সরস্বতীকে ডাকো – আমরা এখুনি রওনা হবো যে ! আশুতোষ দিন ক্ষণ দেখে দিয়েছেন । ওরে কাত্তিক গনেশ কোথায়? কলাবৌয়েরো তো দেখা নেই ! নাহ, বেরোনোর সময় এতো হেডেক সহ্য হয়? এবার থেকে আমি সবাইকে গ্রুপ বানিয়ে হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ পাঠিয়ে দেব ! এই জনে জনে ডাকাডাকি থাকবে না !
লক্ষ্মী – [চেঁচিয়ে] সরস্বতী, কাত্তিক, গনেশ – কোথায় তোরা ? আমরা এগোলুম !
দুর্গা – অ্যাই তো এসে পড়েছে সব – দাঁড়াও মাথা গুনতি করি – সবাই বাহনদের এনেছ তো ? এবার সত্যি মডার্ন কিছু ভাবতে হবে যাতায়াতের ! এই জন্তুর পিঠে চড়ে যাওয়া আর পোষায় না ! আশুতোষকে বলব একটা প্রাইভেট জেট চাই ! নইলে আমায় মানায়? তোরাই বল –
সরস্বতী – নাও সবাই আছে – তোমার চার ছেলে মেয়ে, বৌমা, পাঁচ বাহন – সাকুল্যে তোমাকে নিয়ে এগারো জন ! টা টা বাপি !
দুর্গা – চল – এগিয়ে পড়ি !
সবাই একসাথে - দুগগা দুগগা !
[নাটক শেষের বাজনা ]
tapasripal57@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন