মে মাসে হঠাৎ পাওয়া চার দিনের ছুটি নিয়ে কি করি? কি করে পালিয়ে বাঁচি গরমে হাঁসফাঁস করা কলকাতা শহর টার থেকে। ডুয়ার্সে গরম, দার্জিলিং এ ভিড়, তবে? এক বন্ধু বলল চিবো ঘুরে এস। নির্জনতা তো পাবেই তার সঙ্গে আরও আনেক কিছু পেতে পারো। চিবো? কোনদিন নাম শুনিনি, তাই কেমন যেন ইতস্তত করছিলাম, গুগুল মশাই খোঁজ দিলেন কালিম্পং থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে হিমালয়ের কোলে একটি অনামি ছোট্ট গ্রাম চিবো বা লোয়ার চিবো বস্তি। উচ্চতা ৪১০০ ফিট। আমাদের হাতে মাত্র চারদিনের ছুটি, অপসন বেশী নেই তাই ঠিক করলাম চিবোই যাব। যদি ভাল না লাগে সেখান থেকে চলে যাব কালিম্পং (যদিও টুরিস্টের বড় ভিড় সেখানেও)। উঠল বাই তো চিবো যাই, ট্রেনের টিকিট পাওয়া গেল না, তৎকালেও না। কিন্তু যেতে তো হবেই তাই ফ্লাইটের টিকিট কেটে সোজা বাগডোগরা সেখান থেকে গাড়িতে চিবো গ্রাম, শিলিগুড়ি থেকে ৬৫ কিলোমিটার দুরত্বে এর অবস্থান। কলকাতা থেকে অনলাইন এ বুক করে গিয়েছিলাম ‘হিমালয়ান ঈগাল রিসর্ট’। এটা হোম স্টে নয়। নাগরিক আরাম মোটামুটি ভাবে সবই পাওয়া যাবে এখানে এমনটাই দেখেছিলাম বুকিং এর সময়। কলকাতা থেকে ফ্লাইট বাগডোগরা নামলো বিকেল ৩.৫০ এ। আমরা গাড়ি করে চিবো পৌঁছে গেলাম সন্ধ্যে ৬.৩০ টায়।
কালিম্পং আট মাইল পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে সোজা উপরে উঠে গেছে চিবো যাওয়ার রাস্তা। পাইন বনের মধ্যে দিয়ে গেছে এই পাথুরে রাস্তা, পিচ পড়েছিল কোনসময় কিন্তু তা ভেঙ্গে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে পাথর। রঙিন পাহাড়ি ফুল আর নানা রকমের ফার্ন পথের দুদিক জুড়ে। পাথুরে রাস্তা তাই চার কিলোমিটার যেতে সময় লাগলো প্রায় আধ ঘণ্টা। পাহাড়ের মাথায় গাড়ি গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল যেখানে তার পরে আর রাস্তা নেই। সামনে ভরত কালিকটির ছোট্ট দোকান, ওটাই ল্যান্ডমার্ক। সাংসারিক প্রয়োজনের টুকিটাকি সব জিনিসপত্র মজুত রয়েছে দোকানে। আমরা রিসর্টে ফোন করতে তারা লোক পাঠাল মালপত্র বহনের জন্য। রিসর্ট এখান থেকে ৩ মিনিট দুরত্বে। লোক এসে মালপত্র নিল আমরা তার পিছন পিছন হাটতে লাগলাম রিসর্টএর দিকে। পাথর দিয়ে বাঁধাই করা সুন্দর রাস্তা। হাঁটছি, সামনে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কানচঞ্জঙ্ঘা, সূযাস্তের রঙ তার সারা গায়ে তখনও লেগে আছে। রিসর্টের লোক এসে আমাদের কটেজের দরজা খুলে দিল। বলল তার নাম প্রদীপ করমা। কিন্তু এখানে সবাই তাকে মামাজি বলে ডাকে। পাহাড়ের খাঁজে মোট সাত টি কটেজ নিয়ে এই রিসর্ট। একটি আলাদা কটেজ ডাইনিং হল হিসেবে ব্যবহ্যত হয় । কাঠের কটেজ গুলি সিমেন্টের পিলারএর উপর তৈরি করা। মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে। রিসোর্ট এর মালকিন থাকেন পাশেই একটি কটেজে। মামাজি বলল সন্ধ্যের সময় ম্যাডাম আসবেন আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে। আমরা কটেজের মধ্যে ঢুকলাম। যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক আধুনিক ব্যবস্থা। এক একটি কটেজ এক একটি সুইট এর মতো। ঢুকেই বড় লিভিং রুম, সেখানে থ্রি পিস সোফা, ও পাশে একটা ডিভান। টিভি, ফ্রিজ মায় একটি ছোট্ট কিচেনের ব্যবস্থাও আছে। জল গরম, চা ইত্যাদি করা যাবে। লাগানো আছে ওয়াটার পিউরিফায়ার। লিভিং রুম এর পাশে বেড রুম যেখানে ডবল বেডের ব্যবস্থা আছে, লাগোয়া টয়লেটে আছে গিজার সহ সবরকম উপকরণ । ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা বারান্দা, কাঠের রেলিং দেওয়া, সামনে তাকালে উন্মুক্ত আকাশ, বনভূমি, আর পাহাড়। আমরা তো আল্হাদে আটখানা। মামাজি এদিকে বার বার জিজ্ঞেস করছে, সব ঠিক আছে তো? একটু ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসলাম। বুদ্ধ পূর্ণিমা আর একদিন পরই। তাই জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছিল চারদিক। মামা জি গরম গরম কফি দিয়ে গেল। ঠাণ্ডা ওয়েদারে জমে গেল কফি। এরপর আমাদের আবদার মতো মামাজি সাপ্লাই দিতে থাকল স্নাক্স ও বিয়ার, এমনকি আমার টিনএজ মেয়ের জন্য ব্রিজার ও। আপাত দুর্গম এই জায়গায় এরকম হস্পিটালিটি আমরা আশা করি নি। কিন্তু পেলাম। রাত্রে দেশি মুরগির ঝোল ইত্যাদি দিয়ে জম্পেস ডিনারও হল ডাইনিং হল এ বসে, জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া পাহাড় বনভূমি দেখতে দেখতে।। ডিনারের সময় আলাপ হল রিসর্টের মালকিন বছর চল্লিশের সুজানের সঙ্গে। সুজান নেপালি মেয়ে। শিক্ষিতা, সুন্দরী। তার পৈতৃক জমি, বাড়ি এই চিবোতে। প্রথম যৌবনে সুজান প্রেমে পড়েছিল এক সুইডিশ পর্যটকের। সেই ছেলে শিলিগুড়ি থেকে বাইক বাহিনী নিয়ে ঘুরে বেড়াতো পাহাড়ে পাহাড়ে। হিমালয় তার প্রেম। সুজান ও জুটে গিয়েছিল ওদের সঙ্গে। সেও ওদের সঙ্গে বাইক চালিয়ে গেছে দেশে, বিদেশে। ততদিনে সেই সুইডিশ পর্যটক তার স্বামী। পরে তারা দুজনে মিলে এই রিসোর্ট গড়ে তোলে। একটি সাত বছরের ফুটফুটে ছেলেও আছে তাদের। সুজানের স্বামী এখন থাকেন সুইডেনে। সুজান ছেলে নিয়ে মাঝেমাঝে যায় সেখানে কিন্তু রিসর্ট তার স্বপ্ন তাই সে বেশিরভাগ সময় কাটায় এখানেই, ছেলে কে সঙ্গে নিয়ে। যখন তাকে যেতে হয় সুইডেনে তখন রিসর্টের দেখাশোনা করে সুজানের ভাই নির্মল আর মামাজি। আলাপ হয়ে বুঝলাম সুজান অত্যন্ত পরিশ্রমী মেয়ে। চিবো কে আইডিয়াল টুরিস্ট প্লেস হিসেবে গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য। সম্প্রতি কালিম্পং আলাদা ডিসট্রিক্ট হওয়াতে সে এখন বিভিন্ন সরকারি মহলে কড়া নেড়ে চলেছে চিবোর রাস্তার উন্নতির জন্য। একটা বাইপাস এর কাজ শুরু হয়েছে যেটা সম্পূর্ণ হলে গাড়ি সোজা চলে আসবে রিসর্টে। এছাড়া এখন ডেলো পাহাড় থেকে প্যারা গ্লাইডিং হয় নিয়মিত। সেটিও সুজানের আন্তরিক চেষ্টার ফল। ও বার বার আমাদের বলে গেল প্যারা গ্লাইডিং করতে। বলল পর্যটক দের সুরক্ষার জন্য যাবতীয় আধুনিক ব্যবস্থা সেখানে করা আছে। ভয়ের কোন কারণ নেই।
পরদিন আমরা আধ ঘণ্টা ট্রেক করে ঈগল ভিউ পয়েন্টে গেলাম। সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখা এক অভিগ্যতা । ভিউ পইন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি উন্মুক্ত ও রমনীয়। নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা। ন্যাশানাল হাইওয়ে থেকে দেখতে পেলাম তিস্তা ও সংলগ্ন উপত্যকা এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য বিস্তার করে আছে। দেখে দেখে আশ মেটে না। পাখিদের স্বর্গরাজ্য এই চিবো। কত যে অসংখ্য নাম না জানা পাখির ডাক শুনেছি তিন দিন ধরে, তাদের কেউ কেউ ধরা দিয়েছে আমাদের চোখে বাকীরা অধরা হয়ে থেকে গেছে। চিবো থাকাকালিন রিসর্টের গাইডের সঙ্গে আমরা তিস্তায় গিয়েছিলাম মাছ ধরতে, পাইন বনে বার্ড ওয়াচিং, তিস্তায় ফিসিং এবং ডেলো পাহাড়ে প্যারা গ্লাইডিং করানো হয় এই রিসর্ট থেকে সুজানের উদ্যোগে। এছাড়া তার প্ল্যান আছে পর্যটক দের জন্য জঙ্গলে খোলা জিপে ভ্রমণ, সাইক্লিং এবং হর্স রাইডিং এসব স্পোর্ট এর আমদানি করা। কটেজের সামনে সুন্দর লন আছে, সেখানে বাচ্চারা অনায়াসে ছোটাছুটি করতে পারে। চিবোতে থাকাকালিন একদিন মুসলধারে বৃষ্টি হল। পাহাড়ের বৃষ্টি যে কি অপূর্ব মোহময় হতে পারে তা দেখলাম চোখ ভরে। বাংলোর বারান্দায় বসে, মামা জির হাতের গরম গরম পাকোরা খেতে খেতে। চোখের সামনে নীল পাহাড় আর সবুজ জঙ্গলের স্নান দেখে মনে হল প্রকৃতির সবচেয়ে বড় ম্যাজিক এই বৃষ্টি। এর কোন তুলনা নেই। যারা বেশি সময় হাতে নিয়ে যাবেন তারা চিবো থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন মাত্র চার কিলোমিটার দূরে দুরপিনদারা ভিউ পয়েন্ট, কালিম্পং নার্সারি, ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত পেডং মনেস্ট্রি তে। ইতিহাস জানতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন থংসা মনেস্ট্রি তে যেতে পারেন। আরও আছে জং দং পালরি মনেস্ট্রি, এবং থারপা ছয়েলিং মনেস্ট্রি। এটা হলুদ টুপি লামাদের ধর্মস্থান। গেলুংপা বা হলুদ টুপি লামা রা, ১৪ তম দলাই লামা কে মানেন। পেডং এর ভুটানিস ফোর্ট দেখবার মতো। ঘুরে আসতে পারেন মিসেস গ্রাহাম এর তৈরি ‘কালিম্পং আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট সেন্টারে’ । কালিম্পং এর প্রধান দ্রষ্টব্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি গৌরীপুর হাউস। এছারা সুইস ডেয়ারি, ধর্মদয়া বিহার, প্রনামি মন্দিরেও ঘুরে আসা যায়।
কালিম্পং আট মাইল পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে সোজা উপরে উঠে গেছে চিবো যাওয়ার রাস্তা। পাইন বনের মধ্যে দিয়ে গেছে এই পাথুরে রাস্তা, পিচ পড়েছিল কোনসময় কিন্তু তা ভেঙ্গে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে পাথর। রঙিন পাহাড়ি ফুল আর নানা রকমের ফার্ন পথের দুদিক জুড়ে। পাথুরে রাস্তা তাই চার কিলোমিটার যেতে সময় লাগলো প্রায় আধ ঘণ্টা। পাহাড়ের মাথায় গাড়ি গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল যেখানে তার পরে আর রাস্তা নেই। সামনে ভরত কালিকটির ছোট্ট দোকান, ওটাই ল্যান্ডমার্ক। সাংসারিক প্রয়োজনের টুকিটাকি সব জিনিসপত্র মজুত রয়েছে দোকানে। আমরা রিসর্টে ফোন করতে তারা লোক পাঠাল মালপত্র বহনের জন্য। রিসর্ট এখান থেকে ৩ মিনিট দুরত্বে। লোক এসে মালপত্র নিল আমরা তার পিছন পিছন হাটতে লাগলাম রিসর্টএর দিকে। পাথর দিয়ে বাঁধাই করা সুন্দর রাস্তা। হাঁটছি, সামনে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কানচঞ্জঙ্ঘা, সূযাস্তের রঙ তার সারা গায়ে তখনও লেগে আছে। রিসর্টের লোক এসে আমাদের কটেজের দরজা খুলে দিল। বলল তার নাম প্রদীপ করমা। কিন্তু এখানে সবাই তাকে মামাজি বলে ডাকে। পাহাড়ের খাঁজে মোট সাত টি কটেজ নিয়ে এই রিসর্ট। একটি আলাদা কটেজ ডাইনিং হল হিসেবে ব্যবহ্যত হয় । কাঠের কটেজ গুলি সিমেন্টের পিলারএর উপর তৈরি করা। মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে। রিসোর্ট এর মালকিন থাকেন পাশেই একটি কটেজে। মামাজি বলল সন্ধ্যের সময় ম্যাডাম আসবেন আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে। আমরা কটেজের মধ্যে ঢুকলাম। যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক আধুনিক ব্যবস্থা। এক একটি কটেজ এক একটি সুইট এর মতো। ঢুকেই বড় লিভিং রুম, সেখানে থ্রি পিস সোফা, ও পাশে একটা ডিভান। টিভি, ফ্রিজ মায় একটি ছোট্ট কিচেনের ব্যবস্থাও আছে। জল গরম, চা ইত্যাদি করা যাবে। লাগানো আছে ওয়াটার পিউরিফায়ার। লিভিং রুম এর পাশে বেড রুম যেখানে ডবল বেডের ব্যবস্থা আছে, লাগোয়া টয়লেটে আছে গিজার সহ সবরকম উপকরণ । ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা বারান্দা, কাঠের রেলিং দেওয়া, সামনে তাকালে উন্মুক্ত আকাশ, বনভূমি, আর পাহাড়। আমরা তো আল্হাদে আটখানা। মামাজি এদিকে বার বার জিজ্ঞেস করছে, সব ঠিক আছে তো? একটু ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসলাম। বুদ্ধ পূর্ণিমা আর একদিন পরই। তাই জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছিল চারদিক। মামা জি গরম গরম কফি দিয়ে গেল। ঠাণ্ডা ওয়েদারে জমে গেল কফি। এরপর আমাদের আবদার মতো মামাজি সাপ্লাই দিতে থাকল স্নাক্স ও বিয়ার, এমনকি আমার টিনএজ মেয়ের জন্য ব্রিজার ও। আপাত দুর্গম এই জায়গায় এরকম হস্পিটালিটি আমরা আশা করি নি। কিন্তু পেলাম। রাত্রে দেশি মুরগির ঝোল ইত্যাদি দিয়ে জম্পেস ডিনারও হল ডাইনিং হল এ বসে, জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া পাহাড় বনভূমি দেখতে দেখতে।। ডিনারের সময় আলাপ হল রিসর্টের মালকিন বছর চল্লিশের সুজানের সঙ্গে। সুজান নেপালি মেয়ে। শিক্ষিতা, সুন্দরী। তার পৈতৃক জমি, বাড়ি এই চিবোতে। প্রথম যৌবনে সুজান প্রেমে পড়েছিল এক সুইডিশ পর্যটকের। সেই ছেলে শিলিগুড়ি থেকে বাইক বাহিনী নিয়ে ঘুরে বেড়াতো পাহাড়ে পাহাড়ে। হিমালয় তার প্রেম। সুজান ও জুটে গিয়েছিল ওদের সঙ্গে। সেও ওদের সঙ্গে বাইক চালিয়ে গেছে দেশে, বিদেশে। ততদিনে সেই সুইডিশ পর্যটক তার স্বামী। পরে তারা দুজনে মিলে এই রিসোর্ট গড়ে তোলে। একটি সাত বছরের ফুটফুটে ছেলেও আছে তাদের। সুজানের স্বামী এখন থাকেন সুইডেনে। সুজান ছেলে নিয়ে মাঝেমাঝে যায় সেখানে কিন্তু রিসর্ট তার স্বপ্ন তাই সে বেশিরভাগ সময় কাটায় এখানেই, ছেলে কে সঙ্গে নিয়ে। যখন তাকে যেতে হয় সুইডেনে তখন রিসর্টের দেখাশোনা করে সুজানের ভাই নির্মল আর মামাজি। আলাপ হয়ে বুঝলাম সুজান অত্যন্ত পরিশ্রমী মেয়ে। চিবো কে আইডিয়াল টুরিস্ট প্লেস হিসেবে গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য। সম্প্রতি কালিম্পং আলাদা ডিসট্রিক্ট হওয়াতে সে এখন বিভিন্ন সরকারি মহলে কড়া নেড়ে চলেছে চিবোর রাস্তার উন্নতির জন্য। একটা বাইপাস এর কাজ শুরু হয়েছে যেটা সম্পূর্ণ হলে গাড়ি সোজা চলে আসবে রিসর্টে। এছাড়া এখন ডেলো পাহাড় থেকে প্যারা গ্লাইডিং হয় নিয়মিত। সেটিও সুজানের আন্তরিক চেষ্টার ফল। ও বার বার আমাদের বলে গেল প্যারা গ্লাইডিং করতে। বলল পর্যটক দের সুরক্ষার জন্য যাবতীয় আধুনিক ব্যবস্থা সেখানে করা আছে। ভয়ের কোন কারণ নেই।
পরদিন আমরা আধ ঘণ্টা ট্রেক করে ঈগল ভিউ পয়েন্টে গেলাম। সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখা এক অভিগ্যতা । ভিউ পইন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি উন্মুক্ত ও রমনীয়। নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা। ন্যাশানাল হাইওয়ে থেকে দেখতে পেলাম তিস্তা ও সংলগ্ন উপত্যকা এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য বিস্তার করে আছে। দেখে দেখে আশ মেটে না। পাখিদের স্বর্গরাজ্য এই চিবো। কত যে অসংখ্য নাম না জানা পাখির ডাক শুনেছি তিন দিন ধরে, তাদের কেউ কেউ ধরা দিয়েছে আমাদের চোখে বাকীরা অধরা হয়ে থেকে গেছে। চিবো থাকাকালিন রিসর্টের গাইডের সঙ্গে আমরা তিস্তায় গিয়েছিলাম মাছ ধরতে, পাইন বনে বার্ড ওয়াচিং, তিস্তায় ফিসিং এবং ডেলো পাহাড়ে প্যারা গ্লাইডিং করানো হয় এই রিসর্ট থেকে সুজানের উদ্যোগে। এছাড়া তার প্ল্যান আছে পর্যটক দের জন্য জঙ্গলে খোলা জিপে ভ্রমণ, সাইক্লিং এবং হর্স রাইডিং এসব স্পোর্ট এর আমদানি করা। কটেজের সামনে সুন্দর লন আছে, সেখানে বাচ্চারা অনায়াসে ছোটাছুটি করতে পারে। চিবোতে থাকাকালিন একদিন মুসলধারে বৃষ্টি হল। পাহাড়ের বৃষ্টি যে কি অপূর্ব মোহময় হতে পারে তা দেখলাম চোখ ভরে। বাংলোর বারান্দায় বসে, মামা জির হাতের গরম গরম পাকোরা খেতে খেতে। চোখের সামনে নীল পাহাড় আর সবুজ জঙ্গলের স্নান দেখে মনে হল প্রকৃতির সবচেয়ে বড় ম্যাজিক এই বৃষ্টি। এর কোন তুলনা নেই। যারা বেশি সময় হাতে নিয়ে যাবেন তারা চিবো থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন মাত্র চার কিলোমিটার দূরে দুরপিনদারা ভিউ পয়েন্ট, কালিম্পং নার্সারি, ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত পেডং মনেস্ট্রি তে। ইতিহাস জানতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন থংসা মনেস্ট্রি তে যেতে পারেন। আরও আছে জং দং পালরি মনেস্ট্রি, এবং থারপা ছয়েলিং মনেস্ট্রি। এটা হলুদ টুপি লামাদের ধর্মস্থান। গেলুংপা বা হলুদ টুপি লামা রা, ১৪ তম দলাই লামা কে মানেন। পেডং এর ভুটানিস ফোর্ট দেখবার মতো। ঘুরে আসতে পারেন মিসেস গ্রাহাম এর তৈরি ‘কালিম্পং আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট সেন্টারে’ । কালিম্পং এর প্রধান দ্রষ্টব্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি গৌরীপুর হাউস। এছারা সুইস ডেয়ারি, ধর্মদয়া বিহার, প্রনামি মন্দিরেও ঘুরে আসা যায়।
চিবোর হাত ছাড়িয়ে ফিরে আসতে মন খারাপ হয় বৈকি। সুজানকে বলে এলাম যাচ্ছি কিন্তু ছেড়ে যাচ্ছি না। আবার আসব সুযোগ পেলেই। সুজানের মিষ্টি হাসি আর আতিথেয়তার তুলনা নেই। সে আমাদের সঙ্গে হেঁটে এসে আমাদের তুলে দিল গাড়িতে। চিবো কে মনের মধ্যে নিয়ে আমরা ফিরে এলাম কলকাতায়।
যোগাযোগ- http://www.himalayaneagle.in/
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন