হানিমুনের জন্য আলাদা করে কোন প্যাকেজ ট্যুর করে নি রক্তিমারা। চয়নের কাজের জায়গাটাই এতো সুন্দর যার ছবি দেখেই বালিগঞ্জ প্লেসের রক্তিমার হাজার বার বলা হয়েছিল চয়নকে -- হানিমুন সে বরন্তিতে ই করবে। নতুন বর বিয়ে করা নতুন বউ এর কথা ফেলতে পারে ? বিয়ের দিন পনেরো পর সকল রকম নিয়ম কানুনের ঘেরাটোপ ছিঁড়ে দুজনে মুক্ত বিহঙ্গের মতোন এসে পৌঁছালত বরন্তি।চয়ন আজ বছর আটেক আছে এই বরন্তিতে।পি ডাব্লু ডির কাজের স্বার্থে । অত্যন্ত সুন্দর জায়গা ।চয়ন যখন স্যোসাল মিডিয়া তে ছবি দিতো তখন থেকেই রক্তিমা ফিদা জায়গাটার।
সারাদিনের পরিশ্রমের পর আজ সন্ধ্যায় যখন ঘরের জানালাতে দাঁড়িয়ে ছিল তখন ফ্লাশ ব্যাকে কয়েকটা মাসের ছবি যেন ঝড়ের মতোন চলে এলো রক্তির।
চয়নের সাথে তার আলাপ এই স্যোসাল মিডিয়ার একটা গ্রুপের মাধ্যমে। যেখানে চয়ন একটু আধটু লিখতো। লেখা গুলো ছিল মৃত্যু সম্পর্কিত। আত্মার অবিনশ্বর পরিভ্রমণ সম্পর্কিত। যা রক্তির ভীষণ প্রিয় ।এই ভাবেই টুকটাক কথা বলতে বলতেই প্রেমে পড়েছিল চয়নের সে। চয়ন তাকে আগেই জানিয়েছিল সে রক্তির থেক বছর পনেরোর বড় ।চয়নের পাকা চুল যে তার প্রমাণ তাই নিয়ে দুজনেই খুব ঠাট্টা করতো।কিন্তু রক্তি বোধকরি ঐ পাকা চুলের প্রতিই বেশি দুর্বল ছিল ।
এই পনেরো দিনে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছে দিনের বেলায় তারা দুজনে কাছাকাছি যতটা থাকে রাত হলেই চয়ন যেন একটু দূরে সরে যায় ওর থেকে ।হয়তো এই ক দিনের পরিশ্রমে শরীর টা তার ভালো নেই। এখানে এসে অনেকটা হাল্কা লাগছে দুজনের। আজ ঝটপট একটু সিদ্ধ ভাত আর ডিমের মামলেট করে নিলেই হবে --এই ভেবেই রান্না সারলো সে। সাতটার মধ্যে বাড়ি আসলো চয়ন। তারপর টি ভি , মোবাইল এই সব নিয়ে কেটে গেল আরো দুটো ঘন্টা। এরপর খাওয়া দাওয়া সেরেই বিছানায় এসে বসলো রক্তি, এখন চয়নের অপেক্ষা ।চয়ন মশারির ভিতরে ঢুকে একটু আদর করতে যাবে রক্তি কে অমনি মনে হলো কে যেন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো দুজন কে। তারপরেই চয়ন শুয়ে পড়লো আর পাশ ফিরলো না।এই রকম দু দিন পর পর হওয়ার পর রক্তির মনটা কেমন যেন ভেঙে যাচ্ছিল।মনে অনেক সন্দেহ ভেসে আসছিল তার ।তবে কি চয়নের কোন শারীরিক ত্রুটি আছে ? কিন্তু কে যেন প্রতিদিন তাদের একটা জোরে ধাক্কা দেয়।কে দেয় এই ধাক্কা ? কেনই বা দেয় ? এইসব প্রশ্নগুলো আজ সারাদিন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। চয়ন কে আজ সকালে বড্ড আপসেট দেখাচ্ছিল।কথায় কথায় বারে বারে রক্তিকে বলছিল --একটু সময় দাও আমাকে, দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে।এই কথাগুলোই রক্তিকে ভাবাচ্ছে । কি ঠিক হয়ে যাবে ? কেনই বা চয়ন এতোটা আপসেট ?
এই সময় ঘর গোছাতে গোছাতে দেওয়ালে একটা পর্দা টানানো দেওয়াল আলমারি তে হাত দিতেই আচমকা একটা কঙ্কাল বেরিয়ে আসে রক্তির সামনে। এরপরের কথা রক্তি জানে না। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলো চয়ন মাথার কাছে আর দু জন পুলিশ ।পরে জানতে পারে যে চয়নের পূর্ব স্ত্রীর আচমকা মৃত্যু হয়, শ্বাস কষ্ট রোগে। তাই অতৃপ্ত আত্মার নির্দেশে সেই দেহ কে চয়ন পোড়াতে পারে নি। সঙ্গী করে রেখেছে। সেই আত্মার ও তৃপ্তি ঘটে নি ! আজও চয়নকে সে সমান ভাবে চায়। তাই রক্তির উপস্থিতি সে মানতে পারছে না। তাদের দুটি কে আলাদা দেখতেই সে পছন্দ করছে। আজ অকাল শ্রাবণের বারিধারা রক্তির দু চোখে !
সিলভিয়া ঘোষ
Reviewed by Pd
on
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
Rating:
Reviewed by Pd
on
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন