সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য

sumana

পরাশ্রয়ী ঘ্রাণ

রাস্তার ধারে কে যেন ফেলে গেছিল একটি নষ্ট-বীজ
প্রচন্ড ঝড়ের দাপটে অন্ত:শিরাগুলি তখন প্রায় মৃত
হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে চারঘাটে মাথা খুঁড়ে
এসে পড়েছিলাম তোমার মহীরুহের ছায়ায়
তুমি ছায়া দিলে, বুক পেতে দিলে তোমার সবুজ
তোমার কোষের সমস্ত রস নিংড়ে আমার দূর্ভিক্ষ দিলে ঘুচিয়ে
আকাশে মেঘের পালতোলা নৌকার গায়ে আঁকলে বৃষ্টির আঁকিবুঁকি
আমি ভিজলাম, প্রাণ ভরে ভিজলাম, আর বুঝলাম-
আমি বাঁচছি..
সূর্যের দিকে মুখ তুলে চাইতে শিখিয়েছিলে
আমার শরীরে বেড়ে ওঠা ঘ্রাণ মুঠো ভরে ছড়াতে শিখিয়েছিলে বাতাসে
আমি তোমার বুক ছুঁয়েছিলাম-
আমার নরম কচি-সবুজ আদর দিয়ে, সুরভিত মধু দিয়ে
তুমি নিলে জড়িয়ে, তোমার শরীরের দৈর্ঘ প্রস্থ হল আমার চেনা
আমি তিরতির সুখে খেলছিলাম সেদিনও তোমার জমি জরিপ করে
তোমার ঘরে পরাশ্রয়ী সুখে আমি তখন অবিন্যস্ত সুখী
হঠাৎ বুঝলাম, তোমার বুকে কেমন কালো ঝড়
আমায় উপড়ে ফেলার কি ভীষণ কঠিন দাপট
আমার মুঠো ক্রমশ: হল আলগা, বাড়ন্ত মেরু হল অসাড়
এক ঝাপটে দলা পাকানো,মেরুদণ্ডহীন শরীরটা মিশল মাটিতে
আমার সারা তরঙ্গ জুড়ে তখন রক্তের স্রোত, হাজারো ফাটল
দু-হাত তুলে ধরলাম আকাশের কাছাকাছি তোমার দিকে
তুমি বললে, মরা কোষে জীবনের ভ্রূণ নেই, নেই সবুজের ঘ্রাণ
তোমার বল্কল জুড়ে এখন আগামীর পসরা
আগামী বৃষ্টিতে আমি মিশব তোমার শিকড় মাটিতে
আমার সবটুকু রস তোমায় দিয়ে যাব জীবাশ্মে মিশে
তোমার বুকের বাড়ন্ত নাচনে ভিতর জুড়ে তখনও বইবে
আমারই পরাশ্রয়ী ঘ্রাণ।।



সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য Reviewed by Pd on আগস্ট ১৫, ২০১৬ Rating: 5

১০টি মন্তব্য:

  1. ভীষণ সুন্দর লেখা। খুব ভালো লাগলো। "তোমার বল্কল জুড়ে এখন আগামীর পসরা" অনবদ্য পঙক্তি

    উত্তরমুছুন
  2. ভীষণ সুন্দর লেখা। খুব ভালো লাগলো। "তোমার বল্কল জুড়ে এখন আগামীর পসরা" অনবদ্য পঙক্তি

    উত্তরমুছুন
  3. "আগামী বৃষ্টিতে, আমি মিশবো শিকড় মাটিতে....অনেকটারও বেশি কারুর শ্বাসপ্রশ্বাস চিনে নিলে, এ লেখা যায়

    উত্তরমুছুন
  4. লেখার মধ্যে কবির অনুভব মিশে আছে আর আছে শব্দের যথার্থ প্রকাশ মাটির সামান্য ছোঁয়া
    তাকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে

    উত্তরমুছুন
  5. Asadharon kabyoshoilite ek byrtho preme hariye jawa premikar galpo dekhlam chokher samne bhese uthte...

    উত্তরমুছুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.