জয়িতা দে সরকার

desarkar


বেলা দশটার কাঁটা ছুঁই ছুঁই ব্যস্ত ছুটন্ত শহরটা। কাঁধ গুলো মুখ চাওয়া চাওয়ি করে এই সময়টা, প্রতিদিন কিছু নতুন কাঁধের সাথে চলে গুঁতোগুঁতি, ঠেলাঠেলি। আবার ছুঁয়ে যায় বহু নতুন কাঁধকেও। প্রতিদিনের মতই আজকেও ভারী ল্যাপটপের ব্যাগটাকে কাঁধে ফেলে প্ল্যাটফর্মের অগুনতি যাত্রীর পায়ের প্লাবনে পা মিলিয়েছে অর্ঘ্য। সিগন্যাল তখন সবুজ হয়ে গেছে ,ট্রেনটা কিছুতেই মিস করা যাবে না, প্রতিদিন এর আগের ট্রেনটাই ধরে অর্ঘ্য। আজ ওটা ছেড়ে গেছে, কাল বেশি রাত অবধি একটা পার্টি ছিল। তাই ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে ওর। বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিস পৌঁছাতে পাক্কা আড়াইঘণ্টা লেগে যায়। এই ট্রেনটা মিস হয়ে গেলে আজ আর অফিস যাওয়ার কোনও মানেই থাকে না। একে মার্চ মাসের কাজের প্রেসার, তার উপর আবার দেরি আজ কপালে লাঞ্চের বদলে বসের চিরতা গোলা ভাষণ হাসি মুখে গিলতে হবে এ নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতেই পারে না, অর্ঘ্য তা ভালোভাবেই ভেবে নিয়েছে। এই ট্রেনটা তুলনামূলকভাবে অনেকই খালি,অফিসের ভিড় এতে একেবারেই নেই বললেই চলে। পরের ষ্টেশন আসতে না আসতেই একটা সিট ও পেয়ে যায় অর্ঘ্য।

বেশ কিছু অপরিচিত মুখের সাথে যেতে হচ্ছে এতোখানি পথ,অন্যদিন পথের দূরত্ব টের পাওয়া যায় না ,গল্পে গল্পেই কখন শেষ হয়ে যায় পথ, আজ একটু বিরক্তই লাগছে। চোখও ঘুমে জুড়ে আসছে।

-আর কখনও এই ধরনের পার্টিগুলোতে যাবো না,আর গেলেও তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।সবার পাল্লায় পড়ে রাত বাড়ানোর কোনও মানেই হয়না। মনে মনে এইসব বিড়বিড় করতে করতে চোখ লেগে যায় অর্ঘ্যর।

আচমকাই ঘুম ভাঙে একটা মাউথঅর্গানের মিষ্টি শব্দে। শব্দটা ক্রমশই এগিয়ে আসছে এইদিকেই। কাছে এলো শব্দটা, জোকারের ছেঁড়া পোশাকে একটা বছর আটত্রিশের ছেলে, সারা মুখে রঙ মাখা। বাঁহাতে মাউথঅর্গান বাজাচ্ছে,আর ডানহাত বাড়িয়ে দিচ্ছে ট্রেনের প্যাসেঞ্জারদের দিকে। ‘ভিক্ষা’ চাওয়ার বেশ অভিনব পদ্ধতি এটা, কৌতুকহাসি ফুটে ওঠে অর্ঘ্যর মুখে। হাতটা অর্ঘ্যর দিকেও এগিয়ে আসে নিচু কণ্ঠস্বরে হাতের মালিক বলে ওঠে,
-চিনতে পারছিস?
বিরক্ত এবং অবাক হয়েই জোকারের মুখের দিকে তাকায় অর্ঘ্য। রঙের প্রলেপ সরিয়ে চেনার চেষ্টা করে।
-স্কুলের বন্ধু প্রবীর না!
বুঝে উঠতে উঠতেই জোকার আর তার মাউথঅর্গানের সুর হারিয়ে গেছে, দশটা দশের রানাঘাট-শিয়ালদহ লোকালের জনস্রোতে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ