অজয় চক্রবর্ত্তী



কথাদের আত্মসমর্পণ

অনেক মুহূর্ত্ত এসে অহরহ ভিন্ন ভিন্ন ছবি এঁকে যায়,
ভিন্ন ভিন্ন কথা, মুখ, টুকরো টুকরো বিভিন্ন ভঙ্গিমা,
বুদ্বুদের মতো অজস্র রঙ্গীণ,
টলটলে একটা পটে অবিরাম চিত্রায়িত হয়
যাহাকে জীবৎকাল বলে --
সেই সব এলোপাথারী নানান্ সময় ।

কথায় হাজার সুর, বিক্ষত আঁচড়, কিম্বা কোমল আকুতি,
কিম্বা শুধু আবরণ যার নীচে অন্য কথা সযত্নে গোপন,
কিম্বা শুধু ছবি আঁকা নানা সব বিলাসী ইচ্ছার, সুখের দুঃখের,
কোনদিন যাহাদের আদি-অন্ত নেই;
খেই ছাড়া বাসনায় পাল তোলা শরতের মেঘেদের মতো
অর্থহীন কিছু কিছু কথা ।

কিম্বা ধরো যে কথাটা কথা নয় মোটে,
অন্য কিছু স্থাপণার আনমনা উদাসী প্রয়াস,
কোন-টা পরিহাসের মতো মগডালে আদুরী বৃন্তে ফুটে ওঠে,
কোনটা গভীরে নেমে অন্ধকারে চুপিসারে অসংখ্য ডালপালা ছড়ায়;
হয় কথা ! নয় কথা!  মনে আসা বিচিত্র কথারা -
কখনো হঠাৎ কেমন যেন রূপবতী কবিতার সাজে,
অক্ষরের ক্ষরতা কমে’ ক্রমে ক্রমে
শোনা কথা অন্য সুরে বাজে ।

ভিন্ন কথা, ভিন্ন ছবি, ভিন্ন সব সুর,
যত্র-তত্র পরিব্যাপ্ত শত-সহস্র শব্দের মাতাল মূর্ছণ,
এ বয়সে ক্রমে ফিকে হয়,
নিকট কি দূর ভেদ ঘুচে গিয়ে যখন সমুদ্র কাছে আসে,
তার যতো খ্যাপামীর সুবলিষ্ঠ ও একনিষ্ঠ রেওয়াজী গর্জণে
সব মূঢ় আবিলতা চাপা পড়ে যায়,
কোন কথা, কে বলেছে, কখন কোথায়,
এসব নিরর্থক প্রশ্ন তুচ্ছ হয়ে আকাশে মিলায়;
চেনা-জানা কথা-গুলি একে একে সব দলে-দল
বিবস্ত্র ঝাঁপ দেয় খল-খল সাগরের জলে,
তাদের সমূহ অর্থ, ব্যঙ্গ শ্লেষ ছন্দ অলংকারে তাবৎ ভিন্নতা,
ব্যাকরণের ইতিউতি ভ্রূকুটী-কুঞ্চণ
অর্থহীন থোকা-থোকা ফেনায় ভাসিয়ে –
অজস্র ঢেউ-এর কাছে নিঃশর্ত আলিঙ্গণ মাগে ।।


অজয় চক্রবর্ত্তী অজয় চক্রবর্ত্তী Reviewed by Pd on জুলাই ২৮, ২০১৬ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.