কাউন্টারে চাপড় মেরে বলছে লোকটা ...
- শালা চোর, চোরের জাত, বল শালা ফ্লাইট দিবি কি না... লজ্জা করে না তোদের, না পারিস চাকরি ছেড়ে দে... শালা আমদের পয়সায় খাস ...
মনীষ বৃথা চেষ্টা করছে বোঝানোর। অনিরুদ্ধ বুঝতে পারছে, কিন্তু ওকেই সামলাতে দিচ্ছে, দেখা যাক না কতদূর সামলাতে পারে। সকাল থেকে ওদের কোম্পানির ফ্লাইট বন্ধ। তেলের টাকা দিতে না পারায় গর্মেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ভাগ্য ভালো এখন শীতকাল। এখন দিল্লীতে ফগের জন্য এমনিতেই সব ফ্লাইট লেট হয়। সেই বলে বিকেল অবধি চালিয়েছে। আর পারা যাচ্ছে না।
- স্যার, একবার আ যাইয়ে না। ...
মনীষের ডাকে চমক ফেরে। এগিয়ে যায় কাউন্টারের কাছে। কাউন্টার চাপড়ানো লোকটা অনিরুদ্ধর ব্যায়াম করা পেটানো চেহারা আর শীতল চাউনি দেখে কিছুটা পিছিয়ে যায়। পরিষ্কার বাংলায় বলে অনিরুদ্ধ ...
- স্যার, আমরা বুঝতে পারছি আপনাদের অবস্থা। কিন্তু কি করা যাবে ফ্লাইট ডিলে হচ্ছে, এখনো ক্যানসেল হয় নি। একচুয়ালি ডেলহি থেকে ফ্লাইট ছাড়তেই দেরী হয়েছে ফগের জন্য। আর পর পর সব ফ্লাইট ডিলেড হয়ে গেছে।
- কিন্তু অন্য সব কোম্পানির ফ্লাইট ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তাদের তো দেরী হচ্ছে না!
- স্যার, অন্য কোম্পানির কথা বলতে পারব না, তবে আমরা মনে করি আপনাদের সিকুরিটি আমাদের প্রাইম প্রেফারেন্স। সেই জন্য প্লিজ কিছুটা ওয়েট করুন।
অনিরুদ্ধ আবার ফিরে যায় একটু দূরে। মনীষ ম্যানেজ করুক বাকিটা।
*
মাঝে মাঝে এলএমজির স্পর্শ পায় এখনো। পুঞ্চ সেক্টরের ওই ঠান্ডায় ইস্পাতের নলটা আরো ঠান্ডা লাগে।
- আবে বোস, তুঝকো নিদ আতা কেয়া।
- সালে, তুঝকো ভি জরুর আতা হোগা ....
ট্যাক ট্যাক করে ক্রমাগত গুলির আওয়াজ ওপার থেকে। ইন্টেলিজেন্স খবর দিয়েছে কিছু টেররিস্ট ইন্ডিয়াতে ইন্ফিলট্রেট করতে পারে। নাইট ভিসনে চোখ রাখে অনিরুদ্ধ। হালকা সুবুজ দুটো ছায়া যেন নড়ছে। হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে মনে হচ্ছে। কোনো রিস্ক নেওয়া যাবে না। এল এম জির ঠান্ডা নলটা তেতে ওঠে। দূরে অস্ফুট চিত্কার শোনা যায়।
-স্যার, এক বাত থা।
মনীষের কথায় চমক ফিরে আসে। বর্তমানে ফেরে অনিরুদ্ধ।
-হ্যা, বোলো....
-স্যার কাল সে হাম অলগ কোম্পানিমে জয়েন কর রাহা হু। ....
-ওকে, বাট আই উইল স্টে হিয়ার। ...
মনে মনে ভাবে অনিরুদ্ধ, আরো একজন চলে যাবে কাল। আরো বেশি দায়িত্ব কাল থেকে। তবে পালাবে না, পালাতে শেখে নি। আর্মি থেকে ভিআর নিয়ে এখন এখানে সিকুরিটি ম্যানেজার।
*
রাতে ফোন আসে দিল্লি থেকে।
- বোস, গুড নিউজ। সেন্ট্রাল আবার আমাদের ফ্লাইট চালু করতে দিয়েছে। হাই লেভেল মিটিং এর পর। এখনো মিডিয়া পায় নি খবর টা।
- গ্রেট, লেটস হোপ ফর দ্য বেস্ট
ফোনটা থামতেই আবার মোবাইল বেজে ওঠে।
- কি গো, কখন বাড়ি ফিরবে?
- বলতে পারছি না, হয়তো আজ পারব না ফিরতে।
- সে কি!
ফোনটা কেটে দেয় অনিরুদ্ধ।
*
একটু এগিয়ে যায় সামনে বসা বয়স্ক দম্পতির দিকে। আগরতলা যাবেন ওনারা। ভদ্রলোকের ক্যান্সার। মুম্বাই থেকে ফিরছেন। বাধ্য হয়ে অনেক বার ওনাদের বলেছে, একটু বাদেই ফ্লাইট আসবে। যদিও জানে সন্ধের পরে আর আগরতলায় যায় না বেশি ফ্লাইট।
- স্যার, একটা কথা বলব?
- ভদ্রলোক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকান।
- কাল খুব ভোরে আপনাদের ফ্লাইট। প্লিজ জেগে থাকবেন কিন্তু।
- অনেকবার তো বললেন, এই ফ্লাইট আসছে, এই ফ্লাইট আসছে। আপনারা তো এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবেন। আর আমরা ভোগ করব এই নরক যন্ত্রণা।
কিছু কথা বলে না অনিরুদ্ধ। চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপরে বলে
- চিন্তা করবেন না, আপনাদের ফ্লাইটে তুলে দিয়ে তারপরে আমি এখান থেকে যাব। আর যদি কিছু দরকার লাগে, কাউকে বলবেন আমায় ডেকে দিতে।
1 মন্তব্যসমূহ
খুব ভালো
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন