আমার ভাষা, ভিন্ন মাঝে
১।
আবারও একুশ, সুখের ভিতর শোকের ভিতর
রক্তনদীর স্রোতে ভেসে অমলধবল প্রভাত।
বক্ষবহ্নি আর্তনাদ, স্ফুলিঙ্গ ছুড়ে ফিরিয়েছি
যারে, সে আমাদের বাংলা ভাষা।
২।
যে ভাষায় কথা বলি, গান করি
যে ভাষায় ফুল ফোটে।
প্রতিবাদ ঝড়ে যে ভাষায়
যে ভাষায় মা বলে কেঁদে ওঠে অজস্র
লাঞ্ছিত পদদলিত কবি ভাই।
৩।
পশ্চিম আকাশ বীষফণা তুলে
ধেয়ে আসে, রঙিন সামিয়ানা বিশ্বায়ন লোভী আঁখি
বাজারে দরবারে ভাষা হারানোর ভাষা।
বুঝি তোমার শিশুর মুখে তোমার ভাষা
আমার শিশুর মুখে ভাষারে কও
বিস্বাদ! ব্যাকডেটেড!
আমার শিশু ঘুমায় তোমার চেনা সুরে
আশা রাখি তোমার শিশুর ভোর
তবে হোক লাল কুসুম সূর্যে।
৪।
যে ভাষা রক্তনালী নারী ধমনী জুড়ে
বহমান ভূমিষ্ঠ সময় হতে, কি করে ভুলি
কি করে বোঝাই সে যে আমার আজন্ম ‘মা’।
শিশুর ঘুমে রক্তপাতে লিখি একুশে কবিতা
যে ভাষায়, শেষ রাতে।
৫।
সে ভাষা ভুলতে পারি না ছেড়ে থাকতে পারি না
কাড়তে দেবো না সে ভাষা। আবারও
রক্তজবা দুইটি কুসুম গর্জে ফুটে উঠবে
আবারও আগ্নেয়গিরি লাভা, উদ্ধত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।
বোবা হয়ে গেছে ভাষা

আমার বন্ধুরা অন্য পথে পা বাড়িয়েছে
ওরা চটুল চতুর অলস।
দিনান্তে প্রতিবাদ মঞ্চে একটা প্রণাম ঠোকা
ঝালমুড়ি চা খোশগল্প।
অনেক মুণ্ড মাঝে তেলা মাথায় তেল অভিব্যক্তি
নিষ্প্রয়োজন বাক্যালাপে অনীহা।
সেইজন্য কাল নামে শূন্যে, নিতল বৃষ্টি।
নিভে যায় মোমবাতি শিখা। হারিয়ে যায় হাত।
বিষাদ পিচে একা হেঁটে যায় প্রতিবাদ, প্রশ্নঝুলি কাঁধে
নির্বাক। ভাষা হারিয়েছে। মর্ম হারিয়েছে।
চাঁদ গলে পরছে লজ্জায়। বাতি আড় ভাঙে ক্ষোভের।
সূর্যগ্রহণে অপয়া ভোর রোজ রোজ।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন