বর্ষা শেষে আকাশের রঙ পাল্টে গেলেই মনটা এক্কেবারে অন্যরকম হয়ে যায় । আমার মেয়ের উৎসাহের ছোঁয়াচ লেগে আমিও কেমন যেন ছেলেমানুষ হয়ে যাই । আজকাল ভুলে যাওয়ার ব্যামো হয়েছে বলে কেনাকাটা করতে যাবার আগে ফর্দ লিখতে বসি । টুকিটাকি জিনিসগুলোই নাহলে কেনা বাকি রয়ে যায় । বৃষ্টিও আমার দেখাদেখি একটা 'লিস্ট' বানাতে বসে । সে আমার দেখা চলবে না কোনওমতেই । ওদের বাবা-মেয়ের গোপন আলোচনা দেখি আর হাসি চাপি । গম্ভীর গলায় মেয়েকে বলি , "বাংলায় না লিখলে কিচ্ছু কিনে দেবো না ।"
এত উৎসাহ মেয়েটার তবু যেন মনে হয় আমাদের ছেলেবেলা যৌথ পরিবারে পুজোয় যে অপার আনন্দে কেটেছে ,এই ছোট্ট পরিবারে তা কোথায় ? আমার বাপের বাড়ির পুজো মানে আমাদের বিশাল যৌথ পরিবারে প্রতিদিন আত্মীয় সমাগম। বাড়িতে ছোট বলতে আমি , ভাই, খুড়তুতো বোন আর পিসতুতো দাদা মানে আমার দাদাভাই । এর মধ্যে সবচেয়ে আহ্লাদি ছিলাম আমি। দাদু আর আম্মা মুখে স্বীকার করতেন না কিন্তু প্রশ্রয়ের পাল্লা ভালই ভারী ছিল আমার দিকে। পঞ্চমীর সকালে দাদুর সামনে দাঁড়ালেই খবরের কাগজের আড়াল থেকে, "ঝুন্টি, তোর লিস্ট লেখ" শোনা যেত আর নিমেষে লিস্ট তৈরী আমার। পুজোয় যত সাজুগুজু করার জিনিস সব দাদুকে কিনে দিতে হবে ,এটা ফি বছরের রুটিন ছিল ।
তখন বোধহয় ক্লাস ফোর। লিস্ট এপ্রুভড্ হচ্ছে, বিকালে কিনতে যাওয়া হবে...
১) লিপস্টিক... তোর বাপীরে জিগাইছস? (বাপী লিপস্টিক লাগানো পছন্দ করতেন না)
২)মাল্টিকালার কুমকুম
৩)রুমাল
৪)পারফিউম
৫) হেয়ারব্যান্ড
৫) হেয়ারব্যান্ড
৬) কাঁচি...
এ্যাঁ, কাঁচি? কাঁচি নিয়া পূজায় ভিড়ে করবি কি? পকেট কাটবি নাকি ? খাইসে !"
আমি লজ্জায় লাল। আসলে স্কুলের বান্ধবীর সেলাই বাক্সে ছোট্ট সুন্দর কাঁচি দেখে যে ভীষণ পছন্দ !
এখন আবদার করতে লাগে না কাউকে, যা ইচ্ছা কেনার যথেচ্ছ স্বাধীনতা। তবু আহ্লাদ করে ওই টুকটুক জিনিসগুলো পেয়ে যে খুশী হতাম, নিজে কিনে সে আনন্দ কই?
পঞ্চমী এলেই মনে হয় যদি আবার ওই রকম একটা আবদেরে সকাল পেতাম! কিন্তু আমিই কি পারবো আবদার করতে ? সেই মনটা কবে কোন এক শরতের সকালে ওইখানেই ফেলে রেখে এসেছি আজ বহু বছর হলো। এখন বৃষ্টির লিস্ট বানানোর উৎসাহ দেখে সেই স্মৃতি আবার করে ছুঁয়ে আসি । শরতের আকাশে সোনা রোদ হেসে ওঠে ।
![]() |
| পরিচিতি |
সোনালী ব্যানার্জী
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন