এবিএম সোহেল রশিদ

abm













যত্নে রেখেছি একটি গোলাপ তোর জন্যে



শুনলাম মুছে ফেলেছ সব চিহ্ন
নাকে নাক ঘষে দেয়া
ঠোঁটের আবীর শুষে নেয়া
আঙ্গুল ডগায় খেলা করা ধ্রুপদী নৃত্য
মুছে ফেলেছ আকাশে জমা শিশির
আঁচলে বাঁধা রঙ
স্থাবর অস্থাবর লেনদেন
নৈকট্যের চিত্রনাট্য
যা ছিলনা সহজ পাঠ্য
বুক পাঁজরে রাখা বসবাসের শিবির।
শুনলাম ধ্বংস স্তূপের নীচে সমস্ত অনুভূতি
পরিত্যক্ত যোগাযোগের অনুষঙ্গ ও উপকরণ
শুনলাম হাজার পর্দার আড়ালে মথুরা পিরিতি
চার দেয়ালের কাব্যে শরীরী আগুনে বোধের দহন
ভুলতে কি পেরেছ নাভিমূলের কথন
স্নানের নিত্য নতুন কলা কৌশল
মধ্য রাতের জোনাকি মিছিল
ভুলতে কি পেরেছ চূড়ায় জমাট গোধূলি
মালভূমিতে আগামীর চাষাবাদ
নির্দ্বিধায় খুলে দেয়া গুপ্ত খিল
ধোঁয়াশার পথ ছেড়ে এসো বুক অরণ্যে
যত্নে রেখেছি একটি গোলাপ তোর জন্যে

ফিরে এসো



আকাশ নিয়ে খেলা চাট্টিখানি কথা নয়
আকাশে আকাশে রঙের সখ্যতা হয়
রঙে রঙে দ্বন্দ্ব, রঙে রঙে ছন্দ, রঙ শূন্যতায় মন্দ
আমন্ত্রিত রঙ মন ছুঁয়ে গেলে, কেঁপে উঠে আকাশ
রঙ বিরহে কেঁদে উঠলে মেঘ, উল্টো বয় সুখ বাতাস
সব ভুলে রঙধনু সাঁকো পারাপারে বিলাও আনন্দ
প্রান্তিক মনের ঘনিষ্ঠতায় ভঙ্গুর রীতি
অপ্রকাশিত গ্রন্থ কাঁটা ছেড়ায় মত্ত
শত শত ভাবনায় প্রচ্ছদে খুঁজে নতুনত্ব
জলসা ঘরে ছেঁড়া নূপুরে ছন্দ পতন
রাত সঙ্গীতে দৌড়ে পালায় তাল লয়
জ্বলে উঠে অতিথি ভেঙ্গে দেয় আমিত্ব
অদৃষ্টের যোগ বিয়োগ করতলে বন্দি
ঊর্ধ্বকমায় “তুমি” স্বীকৃতির অবশিষ্ট
প্রত্যাশিত বিনিয়োগে মুনাফা অনির্দিষ্ট
দ্যোতনার জটিলতায় ভেস্তে যায় সন্ধি
অপেক্ষার সূর্য এখনও যায়নি অস্ত
ফিরে এসো প্রিয়তমা, নিয়ে নাও সমস্ত


তোর আঁচলে উড়ি




চাইলে দিতে পারি শত সহস্র প্রেমপত্র
যদি চাও নিতে পার স্বাধিকার পত্র
পেতে পারো যৌবনের সবটুকু নির্যাশ
কিছুতেই পাবে না অবমুক্তির ছাড়পত্র
না, শোধ করবো না মেহেদী পাতার ঋণ
হত্যা করবো না বুকে ঘুমানো কবুতর
কখনও চাইব না দুরন্তপনার কৈফিয়ত
কিছুতেই শুনব না নৈকট্যে আসার বীণ
এ তোর কেমন হাত বাড়ানো
প্রতিটি চাওয়া নিষ্কাম বালুচর
প্রতিধ্বনিত বিশ্বাস ছেঁড়া আঁচল
এ তোরর কেমন হিসেব নিকেশ
আলিঙ্গনে খুঁজিস সুরভিত প্রহর
মুছে দিতে চাস স্বীকৃতির কাজল
স্বেচ্ছায় স্মৃতির পাহাড়ে বেধেছিস ঘর
উল্টো পথে হেটে হেটে খুঁজিস সরোবর
জবাবদিহিতার তরীতে প্রশ্নবিদ্ধ পাল
বল, এ ভাবে জ্বালাবি আর কতকাল
বলতো কেন করছিস না আত্মসমর্পণ
তুমিত্বে ফিরে যেতে চাস সারাক্ষণ
উড়িয়ে দিতে চাস বন্ধনের ঘুড়ি
শুন চিলের মতো ছোঁ মেরে খাব চুমু
সাপের ফণায় মেখে নিব সুখ রেণু
আয় সব ভুলে তোর আঁচলে উড়ি


শরীরী নৃত্যে



সময় নদীতে ভাবনার পানসী
গলুই ভরা সঞ্চিত পুষ্পঘাম
পেলাম একখণ্ড মাতাল বজ্রপাত
ঝড়ের পিঠে বাধলাম জীর্ণতা
বৃষ্টির জলে ভাসালাম ক্ষোভ
সবুজ ঘাসে আগামীর গর্ভপাত
অমৃত ভেবে পান করালাম নীল বিষ
এখানে লুকানো ভালোবাসার সোনালী শীষ
হেমন্তের রোদে পুড়ে পুড়ে অঙ্গার
নতুন ফসলের ঘ্রাণে মন উন্মাদ
বিলাসীর আড়াল খুঁজে চাঁদ
আতশবাজিতে নক্ষত্র পারাপার
নাগ পঞ্চমীর উন্মুখ ফণা
অবিরাম উড়ায় সুখকণা
রঙিন পদ্মফুলের পরাগ উৎসব
আগুনে আগুনে নিবিড় সখ্যতা
দহনে দহনে ভাঙ্গে মূর্খতা
শরীরী নৃত্যে বিছানায় উষ্ণ মচ্ছব।
নির্মলেন্দু গুণ দাদা থেকে অনুপ্রাণিত


 আমি চাই




আমি চাই
কেউ একজন পিছুটানের জন্য থাকুক
সময় অসময় কৈফিয়ত তলব করুক
মন উঠোনে দাঁড় করিয়ে জেরা করুক
সুই সুতোয় লাগিয়ে দিক সার্টের বোতাম
আমি চাই
কেউ একজন সকল কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াক
বিচ্ছেদ ও সন্ধির মধ্যে করুক নিযুত ফারাক
প্রকাশ্য নিলামে ভালবাসার চড়া মূল্য হাঁকাক
গোলাপ আঁচলে  মুছিয়ে দিক বিবর্ণ বসন্ত ঘাম
আমি চাই
কেউ একজন বন্দী করুক অভিমানী ঝড়
নীল পদ্মে ঢেকে দিক গোপন সরোবর
চাঁদের পিঠে হেলান দিয়ে বলুক তুই স্বার্থপর
উপোষী রাতমুদ্রায় ঝরাক বৃষ্টি অবিরাম
আমি চাই
কেউ একজন ছিঁড়ে ফেলুক জীবন পাণ্ডুলিপি
কালো রঙে মুছে দিক অদৃষ্টের দিনলিপি
পুড়িয়ে ফেলুক বাউলা গানের শুদ্ধ স্বরলিপি
হেমলক ঘ্রাণে চোখে নামাক স্বর্গীয় বিশ্রাম
চাওয়া পাওয়ার যোগবিয়োগে বিবেক জমাট আধার
চাই পারাপার! শুধু দরকার একটি সাহসী চিৎকার



শামুক কামড় 



শুনেছি হেমন্ত মৃত্তিকায় রাখবে পা
সঞ্চয়ে রেখেছি ধানের সোনালী রঙ
আউশ আমন চালের পিঠা পিঠুলি
নবান্ন উৎসবের সা রে গা মা পা
মাঠে যোগ বিয়োগের হাজার চিহ্ন
হিমঝুরি দেবকাঞ্চন রাজ অশোক
গন্ধরাজ মল্লিকা শিউলি কামিনী
কামুক সৌরভে কাঁপে আনন্দলোক

বৃক্ষ লতার মৈথুনে উন্মুক্ত বোধের কপাট
বাকল ত্বকে কাব্যকলার বৈকালিক স্তুতি
পূর্ববর্তী পাঠ শেষে পরবর্তী পাঠের প্রস্তুতি
জ্যামিতি ও ত্রিকোনোমতির সূত্র বিভ্রাট
অংক সমাধানে অঙ্গে অঙ্গে ঘুমন্ত রঙ
জীবনের বাঁকে নাগরদোলা বাউল গান
লাঠিখেলা কিংবা বাঁশির রক্তঝরা কান্না
মেলায় সখের চুড়ি খৈ মোয়ার পসরা
মেহেদী আলতায় বুকে পুষে রাখা লজ্জা
সবুজ পাতার উনুনে হেমন্তিকার রান্না
বিক্ষুব্ধ উইপোকার আক্রমণে থেলিসের দর্শন
তবু এরিস্টটল তত্ত্বে পরাজিত নতুন মতবাদ
হাজার পৃষ্ঠার গবেষণাপত্র চানাচুরের মোড়ক
মৃত্তিকা বৃক্ষ লতা সূর্য নদী বৃষ্টি প্রাণের আশীর্বাদ
সমুদ্র রোমন্থনে ভিজে কদাকার উভয় শরীর
এক ডুবে স্বর্গ দর্শন  আরেক ডুবে দোযখ বর্জন
দ্বৈত পাহাড়ের চুড়ায় নিঃসঙ্গ নয় পুষ্ট জামরুল
রাত দিনের কানামাছি খেলায় পরিবর্তনের ডাক
শিল্পোত্তীর্ণ নান্দনিকতা ছকে বাঁধা শারীরবিদ্যা
এখানে স্বরূপ বদলায় শোয়াপোকা আর ভিমরুল।



এবিএম সোহেল রশিদ এবিএম সোহেল রশিদ Reviewed by Pd on অক্টোবর ০৬, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.