আপনজন বলতে আমরা কাদের বুঝি ? কারা পড়ে এই আওতায় ? পৃথিবীতে একা বসবাস করা কঠিন । বসবাসের জন্য দরকার পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের; চিহ্নত হবার জন্যেই যে, মানুষ এমন এক প্রাণী যার রয়েছে সামাজিক, পারিবারিক উপযোগিতা এবং তাঁকে কাজে লাগানোর জন্য,পারস্পরিক সহযোগিতার জন্যদরকার অন্যসব মানুষদের যারা তাঁর আপন হতে পারে, হতে পারে পরও ।
মানুষ জন্মায় পরিবারে, তারপর সমাজে আরো একবার বড় হতে হতে পারিপার্শ্বিকতাকে সঙ্গে নিয়ে;এবং জন্মায় আরো একবার রাষ্ট্রেরবৃহৎ পরিমণ্ডলে ।এই যে ধারাবাহিক জন্মানো ও মানুষের বিভিন্ন বদল এবং তার ভেতর দিয়ে যাওয়া আসা তা থেকেই সে পেয়ে যায়, তা থেকেইদেখা দেয় অনেক মানুষের । তাঁদের থেকে সে ক’রে নেয় আপন কাউকে কাউকে কিংবা সে হয়ে যায় অন্যের আপন । বদলের বিভিন্ন ধাপে সেই অর্থে মানুষের আপনজন প্রথমে পরিবার,তারপর সমাজ এবং রাষ্ট্র । তবে সব মানুষ আপনজনদের নিয়ে শেষপর্যন্ত থাকতে পারেনা, চলতে পারেনা । বিচ্যুতি ঘটে তাঁর কিংবা ওইসব সংগঠন গুলোই বিচ্যুতি ঘটায় সম্পর্কের মানুষটির সাথে । যদিও তার পেছনে থাকে নানা ঘটনা, নানা দৃশ্য ও তার বর্ণনা ।
আমাদের আপনজন সন্দেহ নেই যে মা-বাবা, পরিবারের কাছের জনেরা । আপনজন বন্ধু বান্ধবরাও। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের ফলে কিংবা হৃদয় বিনিময়ে যে কেউ যে কোন পরিস্থিতে আপন হয়ে যেতে পারে । মানুষের স্বভাবজাত প্রক্রিয়ার মাঝে এ এক মহৎ গুণ । মানুষই পারে মেধায়, মননে, মননশীলতায় কিংবা এগুলোর কোনটি ছাড়াও শুধুমাত্র হৃদয় দিয়ে কোন কিছুকে আপন ক’রে নিতে । অস্বাভাবিক নয় বিষয়গুলো বরং আপন করতে না পারা, আর আপন হতে না পারার মাঝেই বরং লজ্জা এবং ব্যর্থতামানুষের চরমভাবেই !
যদিও তথাকথিত আধুনিকতার নামে আমরা দিনেদিনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি আপনজন থেকে, সমাজ থেকে, যে এবং যারা আপন । রাষ্ট্র থেকেও, যে আপন গৃহ । অথবা গৃহের মাঝেই বন্ধি আমরা নিজেকে নিয়ে অবিশ্বাস আর দ্বন্দ্বময়তায় ! আড়াল করছি প্রতিনিয়ত আপনজনদের কাছ থেকে নিজেকে ! আমরা আমাদের ব্যর্থতা ঢাকছি নানা উপায়ে নানা পথ ধরে । এই আপন পরের মাঝে প্রথমে ঢুকেছিল সামন্তবাদ কিছু পরে পুঁজিবাদ;সেই থেকে চলছে আমাদের আপনপর চেনা না চেনার পদ্ধতিটি ।
সাহিত্যেও দেখা গেছে এই আপনপর চেনা না চেনার পর্বটি ঐ সামন্তবাদ আর পুঁজিবাদী চেতনার মানদণ্ডের কারণেই তবে তাঁরা ছিলেন সংবেদনশীলতার নিয়ন্ত্রনে । ঘরের মাঝেই অন্য ঘর খুঁজেছেন যদিও তবুও শেষপর্যন্ত আপন ঘরেই যাবতীয় প্রাপ্তি তাঁদের ।এই দুইয়ের চাপে আমরা হয়ে গেছি আমাদের ভেতরের একমাত্র । বাইরের কেউ নয় । বিশেষ করে পুঁজিবাদের অত্যধিক কুফলে । আমরা পরিবার থেকে, সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে ছিটকে গেছি এবং এখনো যাচ্ছি ঐ কারণেই । ঠিক ঐ কারণেই আমাদের ভেতর দেখা দিয়েছে লোভ, লালসা । আপন সঙ্ঘ পরিত্যাগের মতো ভয়ংকর চিন্তা ভাবনা জন্ম নিচ্ছে ভেতরে ভেতরে ! ‘আমিত্ব’ হয়ে উঠেছে সর্বময় আমার ভেতর আপনজনকে বাদ দিয়ে । যেখানে আত্মবোধের অবলম্বন খুঁজবো আমরা সেটা না করে আত্মম্ভরিতায় আচ্ছন্ন !
একে কী বলতে পারি আমরা ? ব্যক্তির ব্যক্তিগত অবক্ষয় নাকি সামাজিক যৌথ অবক্ষয় ? নাকি আত্মপ্রবঞ্চনা ? কে বেশি দায়ী ? ব্যক্তি নাকি সমাজ নাকি আরো প্রভাবশালী কিছু যার নাম আধুনিকতা? শ্রেণী শোষণ, বৈষম্য, অসাম্যতা যেখানে সমাজ এবং রাষ্ট্রে প্রবল সেখানে আপন মানুষ চেনা খুব দায় সত্যিই । ওই গুলো পথ দেখায় বিচ্ছিন্নতার, পথ দেখায় নিজের ভেতরে এক আমিকে সৃষ্টি করার । অহমিকা চ’লে আসে ভেতরে সব শ্রেণীর নয়, মধ্যবিত্তেরই বেশি । এই যে বিচ্ছিন্নতা আপনজন থেকে তা অত্যন্ত ভয়াবহ । গ্রীক ট্র্যাজিডি থেকেও মারাত্মক । আধুনিকতার নামে মুক্ত হবার, দখলেনেবার এই যে প্রবল ইচ্ছেটা আমাদের তাতেই স্বার্থপরতাপ্রবলতর হয়ে ওঠে । তাহলে মুক্তির পথ কোথায় আমাদের ? আর উত্তরণেরই বা উপায় কী ?
যেকোনো দেশের শিল্প সাহিত্য সে দেশের উন্নতিতে বড়ো ভূমিকা রাখে ।প্রভাব ফেলে মানুষের চিন্তায় এবং চেতনায় । মানুষকে বিকশিত করে নিয়ে যায় চূড়ান্ত উচ্চতায় । এর প্রভাব পশ্চিমে বেশি । সামাজিক, রাষ্ট্রিক এমন কি পারিবারিক এবং অবশ্যই ব্যক্তির মানসিক বিকাশে শিল্পকলার ভূমিকা অপরিসীম । বিজ্ঞান আর সাহিত্য যেমন করে গঠনতন্ত্র বদলে দেয় মানুষ মনোজগতের এবং সমাজের তেমন করে বদলাতে পারেনা অন্যকিছু । তাই বিজ্ঞান আর সাহিত্য বড়ো বেশি আপন আমাদের কাছে । বড়ো বেশি আপন সেইসব সাহিত্যিকেরা যারা পশ্চিমে এবং পুবে জ্বালিয়েছিল আলো মানুষের মনে, সমাজ রাষ্ট্রে ।
পশ্চিমের আলো নিয়ে সন্দেহ নেই আমাদের । ছিলও না কোন সময় । কারণ ফরাসি বিপ্লবের পর থেকেই দেখা দিতে শুরু করে পুরোপুরি আলো পশ্চিমে যার ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান । তারও আগে থেকে আলো জ্বালাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন অনেকেই সাহিত্যে । এবং সেই আলো জ্বালাবার বিশেষ ভূমিকাটি পালন করেছিল মূলত বিজ্ঞান আর সাহিত্য নানা প্রতিকূলতার মাঝেও । পশ্চিমে আলোর কাণ্ডারি যারা বিশেষ করে সাহিত্যে তাঁরাও আমাদের আপনজন । কারণ আমরা তাঁদের মহৎ সৃষ্টি দ্বারা প্রভাবিত কোননা কোন ভাবে ।আমরা অর্থাৎ বাঙলা সাহিত্য ও সাহিত্যিকরা ।
কিন্তু বাঙলা সাহিত্যে আমাদের আপন কারা ? খুব বেশি কি পরিশ্রম করতে হবে আমাদের খুঁজতে গিয়ে তাঁদের নাম ? চোখের সামনে অজস্র নাম ভেসে ওঠে, ভেসে ওঠে সব মহান আর মহৎ বাঙালিদের মুখ ও তাঁদের অসামান্য সৃষ্টি গুলো যা না হ’লে এগোতনা বাঙলা এবং বাঙালি । তাই তাঁরাও আমাদের খুব আপন যেমন আপন আমাদের মা-বাবা; যেমন আপন আমাদের বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতি । তাঁদের কাছে আমাদের ঋণ শোধাবার নয় কোন মূল্যেই । ঋণ স্বীকার ক’রে যেতে হবে চিরজীবন যতদিন বাঙলা এবং বাঙালি বেঁচে থাকবে ।
যদি নাম নিতে হয় সাহিত্যের আপনজনদের তবে নিতে হবে অনেক যদিও সম্ভব নয় এতো নাম নেয়া তবুও কিছু নাম না নিলেই নয় । বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসুধন দত্ত প্রথম ও প্রধান আপনজন আমাদের বাঙলা সাহিত্যের;পরিচিত অতি চেনা জানা । অসামান্য সব উপহারে ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা দু’জনই বাঙলা সাহিত্যকে । কেউ কারো থেকে কম নয়, দু’জনই খাঁটি বাঙালি ইংরেজ আমলেও । যদিও একজন ইংরেজ হ’তে যেয়ে প্রথম জীবনে অস্বীকার করেছিলেন বাঙালি হয়ে থাকতে কিন্তু নিয়তি তাঁকে শেষ পর্যন্ত বাঙালি ক’রে বাঙালি ঘরেই টেনে এনেছিলেন ! তিনি আমাদের মাইকেল মধুসূদন দত্ত । আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আমাদের পরম আপনজন । আজ যে পরিশীলিত বাঙলা গদ্য এবং তার ব্যবহার তা সম্ভব হয়েছিলো একমাত্র তাঁরই জন্যে । তিনি পথ দেখিয়েছিলেন বাঙলা ভাষাকে যে, কেমন করে চলতে হবে আর কিই-বা হবে তার রূপ ও গঠন । বাঙলা সাহিত্যে তিনি আমাদের পরম আপন । অনেক বড়ো মাপের শিল্পী তিনি ।
শিক্ষা, সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও অসামান্য ভূমিকা তাঁর । আজ যে নারী স্বাধীন যদিও পুরোপুরি নয় তা কেবল বিদ্যাসাগরের কল্যাণেই । তিনি বাঙলায় নারী মুক্তির দ্বিতীয় ঈশ্বর তাঁর নামের মতোই;প্রথম ঈশ্বর রামমোহন রায় । বাঙলা সাহিত্যে একে একে দেখা দিয়েছিলেন মহান কিছু বাঙালি ।
উনিশ আর বিশ শতক বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে বাঙলা সাহিত্যের জন্য । এই দুই শতকে ভিন্ন ভিন্ন দশকে জন্মায় কিছু প্রতিভা যারা বাঙলা সাহিত্যকে ঠিক সেই উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যতোটুকু উচ্চতায় উঠলে ছুঁতে পারা যায় চাঁদ, চাঁদের সৌন্দর্য । মনোরম, উপভোগ্য, চিন্তাশীল আর শিল্প সৌন্দর্যতায়অনন্য এই দুইশতকের কয়েকটি দশক ।
বাঙলা সাহিত্য বিশেষ করে কবিতায় এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয় । নাম নিয়েছি দু’জনের প্রথমেই;একজন গদ্য শিল্পী আরেকজন কবি, নাট্যকার । উনিশ শতকের শেষের কয়েক দশক আর বিশ শতকের দ্বিতীয়, তৃতীয় দশক বাঙলা সাহিত্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান । ততোটুকুই, যতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ আর মূল্যবান কবিতায় রবীন্দ্রনাথ এবং তিরিশের পাঁচ কবি । এর মাঝে এবং এর পরেও ছিলেন কিছু কবি সাহিত্যিক কিন্তু তাঁদের মতো সাহিত্যে এতো শক্তিশালী কেউ নয় । এতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি আর কেউ । দ্বিতীয়, তৃতীয় দশকে অর্থাৎ তিরিশের মহান পাঁচ কবি কবিতার নতুন ধারার সূচনা করেন রবীন্দ্র বলয় থেকে বেড়িয়ে, প্রভাবমুক্ত হয়ে যার নাম আধুনিক কবিতা ।
চলছিল যখন রাবীন্দ্রিক যুগ সঙ্গে নিয়ে পুরোপুরি রোম্যান্টিকতা কবিতায়,যা ছিল তখনবাঙলায় এক শক্তিশালী পর্ব;তার ভেতরেই এক বড়ো ধাক্কা দেন তাঁরা বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকেই । তৃতীয় দশকে পুরোপুরি পূর্ণ রূপে উপস্থিত হন তিরিশের পাঁচ কবি আর নাড়িয়ে দেন কবিতার ভিত যা এতদিন চলছিলো সম্পূর্ণ রোম্যান্টিকতায় ভর করে । তবে পুরোপুরি রোম্যান্টিকতা মুক্ত হতে পারেনি কবিতা। আসলে পারেওনা । কারণ কবিতায় রোম্যান্টিকতা সম্পূর্ণ এড়ানো যায়না তার শৈল্পিক সৌন্দর্যতার জন্যেই ।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সব লেখাতেই রোম্যান্টিকতা এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে তাঁকে পেরোনো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠেছিল । আরো একটি বড়ো কারণ বোধহয় এই, রবীন্দ্রনাথের সময় পৃথিবীতে দেখা দেয়নি কোন বড়ো মানবিক বিপর্যয় যা তাঁর কবিতার সপ্নকে, কল্পনাকে মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে দেখাবে বাস্তবতার রূপরেখা যা দেখিয়েছেন পুরোপুরি ভাবেই তিরিশের কবিরা । তাঁরা পেরিয়ে গেছেন কয়েকটি মানবিক বিপর্যয় পৃথিবীতে । তাঁরা দেখেছেন মানুষের ভেতর কোন স্বপ্ন নেই, আকাঙ্ক্ষা নেই, খাদ্য নেই ,বস্ত্র নেই । দেখেছেন মানুষের উন্মত্ততা ।মানুষের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস, এমনকি ব্যক্তির ভেতরের ব্যক্তিটিকে নিয়েই সন্দেহ !
অবক্ষয়, অপ-রাজনীতি, অপ-কৌশল, লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ; কি নেই কবিতায় ! আছে প্রেম ভালোবাসাও । স্বপ্ন, কল্পনা তাঁদের কাছে অতি নাটকীয়তাপনা, অতি বিলাসী !
জীবনের সকল সত্য যা বাস্তব, যাকে অস্বীকার করা যায়না কোনমতেই এবং মানুষের অন্তর্গত শূন্যতা, হাহাকার, জীবনের নিরর্থকতা, ঈশ্বরের নির্লজ্জ নিশ্চুপতা; কেউ কেউ তা অস্বীকারেও দেখিয়েছেন কবিতার ভেতর দিয়ে গিয়ে । তাদের অব্যাহত রূপটি । তাঁরা কবিতায় ঘটালেন জীবন ও চেতনার এক মহা বিপ্লব । নতুন রূপে সামনে এসে দাঁড়ায় কবিতার ভাষা ও তার ব্যবহারের রীতিনীতিটি । বিন্যাসের স্তরটি । স্বপ্ন নয় বাস্তব হলো কবিতার মূল সুর । তাঁদের কবিতায় স্বপ্নের কোন স্থান নেই । আর তাকে ঘিরেই ভাসতে থাকে তাঁরা সঙ্গে আমরাও । তাঁরা ভাঙতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নকে এবং ভেঙেছেনও ! যদিও তাঁদেরই কেউ কেউ প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় প্রভাবিত ছিলেন ।
রবীন্দ্র বলয় থেকে বের হয়ে এমন সব অসামান্য কাব্য সৃষ্টি আমাদের আশ্চর্য না করে পারেনা । তিরিশের মহৎ, মহান পাঁচ কবি বাঙলা সাহিত্যের আধুনিক আপনজন যার প্রভাব এখনো চলছে, চলবে হয়তো ততদিন পর্যন্ত যতদিন না দেখা দেয় নতুন কোনকিছু যা অসামান্যতাকেও ছাড়িয়ে যাবে । সে চেষ্টা সম্ভবত চলছে ।
রবীন্দ্রনাথ কতটা নিকটাত্মীয় আর কত আপন বাঙলা সাহিত্যের ? কেমন ভূমিকা তাঁর সাহিত্যে ? তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা বোধকরি । এ কথা না বললেও চলে যে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের সবটা জুড়েই রয়েছেন, রয়েছে তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি গুলো । তবুও ঘুরে ফিরে আমাদের ব’লতে হয় বলার মতো জায়গা তিনি নিজেই তৈরি করেছেন বলেই । না বলাটাই আশ্চর্যের,অহমিকাবোধের এবং অজ্ঞতার; অপরিপূর্ণতারতো বটেই । তাঁর সময়েই শুধু তিনি শ্রেষ্ঠ নন, শ্রেষ্ঠ তিনি সকল সময়েই । শ্রেষ্ঠ তিনি যুগে যুগে । বাঙলা সাহিত্যেতো বটেই তিনি সম্মিলিত সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক, শক্তিশালী লেখক । যদিও তিনি কবিতায় আধুনিক নন । তবে শুধুমাত্র এই বিচারের মানদণ্ডে তাঁকে এবং তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকে খাটো ক’রে দেখার কোন উপায় নেই । আত্মীয় তিনি ছোট নন আমাদের; অনেক বড়ো । যেমন বড়ো মাপের তিনি লেখক আর রোম্যান্টিক । খুব কাছের,খুব ভেতরের ।
তিনি এমন আপনজন আমাদের, যখন জীবনের যাবতীয় লেনদেন ফুরিয়ে যায়, দেখা দেয় অসুখ মনে, হৃদয়ে; বাঁধা পড়ি ক্লান্তি বিষাদের জালে, তখন তিনিই একমাত্র আমাদের উদ্ধার করেন । দেখা দেন ঈশ্বররূপে ! বিশেষ করে তাঁর কবিতা তাঁর গান আমাদের ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেয় ! বাঁচিয়ে তোলে নিজের ভেতরে নিজেকে । যখন জীবনের সকল আশার প্রদীপ নিভে যেতে চায়, ব্যর্থতার গ্লানি ভর করে ভেঙে ফেলতে চায় মানুষের ভেতর কাঠামোটি তখন বড়ো আপন হয়ে ধরা দেন তিনি।
তিনি নেই তবুও যেন মাথায় হাত রেখে, হৃদয় স্পর্শ করে শুনিয়ে দিচ্ছেন শান্তির বাণী । কবিতায় তিনি অতি রোম্যান্টিক গানেও তাই, তবে তাঁর কবিতা আর গান শুধু প্রেম ভালোবাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই । সীমানা ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে যান বহুদূর । গেয়ে যান শান্তি, সমৃদ্ধি আর মানুষের মুক্তির গান । তাঁর গানে কবিতায় প্রেম, ভালোবাসা আর পূজা এক প্রিয় বিষয় । অজস্র গান আর কবিতা তিনি রচনা করেছেন এই গুলো মাথায় রেখে । সহজাত ছিলেন তিনি; যেন কোন কিছুই সৃষ্টি করেননি । যেন তারা নিজেরাই তাঁর হৃদয়ের অলিগলি পথ ধরে নেমে এসেছে কবিতা হয়ে, গান হয়ে ।
বিস্ময় জাগে মনে কতোটা গভীরে গিয়ে মনোনিবেশ করলে আর কতোটা বাঙলাকে ভালবাসলে মানুষ দেখাতে পারে তাঁর প্রতিভার চূড়ান্ত রূপ ! বিস্ময় জাগে এটা ভেবেও যে কতোটা সংবেদনশীল আর মানবিক হ’লে একজন মানুষ অন্য সকল মানুষকে আপন করে নিয়ে ভালবাসতে পারে, জায়গা দিতে পারে তাঁর সত্তার সমগ্রতায় ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া এমন উদাহরণ আর কে আছেন বাঙলা সাহিত্যে ? তিনি আমাদের অতি প্রিয় । বাঙলা সাহিত্যের সব চাইতে প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ আপনজন । সন্দেহ আছে কি ? থাকে কি ?
ইফতেখারুল হক
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন