
পাগলী
(১)
পাগলীটা গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে।
লোকভর্তি ছাদনাতলা, সানাইয়ের সুর, ব্যস্ততা,
দোতলার জানলায় সুখী আহ্লাদিত মুখে বিয়ের কনেটি ,
হয়ত চমৎকার কিছু ভাবছে, গয়নার কথা।আলমারির কথা অথবা দাসখত... !
আদর সোহাগের কথা, বাপ মা, স্বামীদেবতা নাকি রবীন্দ্রনাথের নিরুপমার কথা!
আগামীর সুখের পদধ্বনি শুনতে শুনতে দেখেও দেখছে না
কেমন করে পাগলীটা ধাক্কা খেয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ধূলোয়,
কাদায় মাখামাখি শতচ্ছিন্ন শাড়ীটা আরও বিস্রস্ত,
ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে শীর্ণ দেহের পুষ্টস্তন, খোলা নিতম্ব,
ক্ষুধার্ত নারী শরীরের খোলামেলা প্রদর্শনে ক্ষনে ক্ষনে উঁকি দিচ্ছে
আশেপাশের কিছু কামাতুর চোখের চাউনি আর সরস পুরুষালি শরীর ।
(২)
বিয়েবাড়ির জমক নিভে গেলেই আকাশ জুড়ে মেঘ।
দু’বছর এমন কিছু সময় নয়,
সেদিনের আনকোরা কুমারীর বোতাম খোলা শরীরর আনাচানাচ
এখন মুখস্থ বইয়ের পাতা, অন্ধকারে মুখ ঘুরিয়ে অভ্যস্ত সঙ্গম,
ভালো বাসা আর ভালোবাসা ‘দিন আনি দিন যায়’ প্রতিবর্ত ক্রিয়া।
জানালার খোলা পরিসরে উদাস দৃষ্টি বাড়ীর বিবাহিতা বড় মেয়েটির,
গাং শালিকের ক্ষুদ্র ডানায় একখণ্ড আকাশের জলছবি দেখতে দেখতে...
মাটিতে চোখ নামাতেই আস্তাকুঁড়ের পাশে পাগলীর মা ছেলের জমাট সংসার,
‘উফ কি দুর্গন্ধ!’ চোখ জ্বালা করে জল ভরে আসার আগেই কপাট বন্ধ।
(৩)
নগদ পয়সায় কেনা ঘষামাজা শরীরের রূপসজ্জার চাকচিক্য ম্লান,
চোখের কাজল নদীতে ছায়া ফেলে না কোন বুনো ফুল কি প্রজাপতি,
লেবু ফুলের গন্ধ ভেজা বাতাস ছুঁয়ে দোলা দিলে মনে পড়ে, আহ ! শ্রাবন ।
চোখ বুজে একেক সময় ভাবতে ভালো লাগে
আংটি বদলের, বাসররাতের, স্বামী সোহাগের স্মৃতি।
সংসার করার লোভে ছেড়ে যাওয়া মানুষটার দুহাতে ধরা দিতে মন করে।
সাতবছর বড় দীর্ঘ সময়,’বাঁজা’ অপবাদকে চিরস্থায়ী করতে।
স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েটি আঁচলে ঘষে-ঘষে সিঁথির শেষবিন্দু সিঁদুরটাও মুছে ফেলে।
জানলার বাইরে রোজকার মত আস্তাকুড় খুঁটে খায় সেই পাগলী,
সঙ্গে তিন তিনটি অপোগন্ড ছানাপোনা,
পাগলীটা আবার ‘মা’ হতে চলেছে !
মৌ দাশগুপ্তা
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন