‘আমাকে শুনবে বলে কেউ কেউ হলমার্ক প্রত্যয় শোনায়। সেল্ফিতে সহজ হয় বাথরুম- আয়নার নিজস্ব বয়ান।দূরে কোনো আগুন সংবাদ শুনে দমকল এক- চতুর্থাংশটুকু নেভাতে পারেনা।পাগলাঘণ্টি বাজে ঘরে।ঘর বলতে অস্বীকৃতি মাইনাস হতে হতে জনশূন্য শ্মশান সংসার।ত্রাণ ছুঁড়ে দিলে সহবত লুফে নেয় জরিমানা, মানব সভ্যতা। আমি আরও ফুল্ল হই আরও কুসুমিত। ’
‘প্রতিরাতে গর্ভবতী হই
খুব ভোরে জন্ম নেয় একটা করে ঘোড়ার ডিম
প্রতিরাতেই । প্রতিরাতেই একটা মসলিন আলো সম্মোহিত করে
একটা অনুমান !
আর খুব ভোরে
বিভাস আলোয় জন্ম নেয় একটা করে ঘোড়ার ডিম !
প্রতিরাতেই । ’
গান দিয়ে শুরু করেছিলে কেরিয়ার । রেকর্ড ও করেছিলে । সিরিয়াসলি নিলে না কেন ? চর্চা কর নিয়মিত ? নামকরা গায়িকার বদলে বিখ্যাত কবি পেলাম আমরা । দুটোই নয় কেন ?
দুটো একসঙ্গে করবার জন্য যে সহযোগিতার প্রয়োজন সেটা আমি বৈবাহিক জীবন থেকে পাইনি। গান, বা বৃহৎ আকারে বলতে গেলে সুর আমার ধমনীতে । এটা কবিতার পক্ষে সহায়ক । তবে ঘরে একটু আধটু চর্চায় থাকি। আর বেশি খ্যাতির দিকে ঝুঁকলে মানুষের থেকে দূরে সরে যাবো । যা আমি ভাবতেই পারিনা।
ফেসবুকে তুমি ইজিলি এক্সেসেবল । প্রচুর লেখ । ছড়িয়ে দাও অন্যের লেখা । ভীষণ প্রিয় তরুণ কবিদের কাছে । অন্য অনেকেই দেখি ফেসবুকে কেবল প্রপাগনডার জন্য আসেন , তুমি আলাদা ভাবলে কেন ?
আসলে অনেক জাত কবি কিন্তু ফেসবুকে আছেন। অপূর্ব কোলে কে কবি হিসেবে ক'জন চেনেন ? সায়ন্তন ওনার ছেলে ,ওর কবিতার সঙ্গে ক'জনের পরিচয় আছে। সেইসব মুখচোরা কবিদের চিনিয়ে দেওয়া নিজের গরজে। আমি যে জুনিয়র কবিদের থেকেও অনেক শিখি। আর ফেসবুকে প্রচুর লেখার একটাই কারণ , ডিপ্রেশন এলে কাগজ কলম নিলে কবিতা হারিয়ে যায় । তখন নিজের ব্লগে লিখতে ভালো লাগে। প্রিন্ট আউট বের করে নি। সবার স্বীকৃতি হীনমন্যতার ওষুধ বলা যেতে পারে।
বিখ্যাত কবি হবার পরও তুমি ঘোরতর সংসারী । শাশুড়ি মায়ের জন্মদিনে কেক কাট মনে করে । তোমায় দেখলে বুঝি , যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে । তোমার সাফল্যের পেছনে তোমার পরিবারের ভুমিকা কতটা ?
সাফল্যের পিছনে পরিবার খুব কমই থাকে। ২২বছরে বিয়ের পর পরই রান্নাঘরটাকেই চিনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৪/১৫ বছর নিখুঁত সংসার করেছি। আমি নিখুঁত মনে করলেও প্রতিদিনের রেজাল্ট আউট হলে দেখতাম কোনোরকমে পাস করেছি। তবে রান্নাটুকুই । এর বাইরে আমাকে ঐহিক জীবন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলে বলব, পুরোটাই অজানা। জানতেও চাইনা। আর শাশুড়ি মা'র জন্মদিনটা আমি একেকবার একেক রকম ভাবে পালন করি। একাকীত্বের পাশে একটা অস্তিত্বের ভরসা। তবে এটা একটা মেসেজও সবার প্রতি। বিষয়টা যাতে বৃদ্ধাশ্রম পর্যন্ত না গড়ায় ।
‘খণ্ডিতা’ ই কি তোমার প্রথম উপন্যাস ? এটা কতটা তোমার জীবন ? এই নামের পেছনে কি অন্য কোন ব্যাঞ্জনা আছে ?
হ্যা। খণ্ডিতা আমার প্রথম উপন্যাস। সত্যি কথা বলতে গেলে উপন্যাসের সবকটি চরিত্রই আমার জানা এবং চেনা। অবশ্যই আমি আছি। আসলে নয়ত ভঙ্গুর জীবনকে কুড়িয়ে নিয়ে ,একত্রিত করেই তো দিন শুরু। সেই অর্থে খণ্ডিতা আর মুখ্য চরিত্র বন্যাকে কাল্পনিক চরিত্র মনে করলে খুব কষ্ট পাব। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এই বইটা উন্মোচন করার পর আমি এই কথাটাই বলেছিলাম। কাল্পনিকতা থেকে ক্ষেত্রবিশেষে সরে দাঁড়ালে, কাহিনির প্রতি সুবিচার করা হয়।
আমার প্রথম দুটি কাব্যগ্রন্থ ১) যার সঙ্গে থাকি ২) শূন্যের মাঝারে প্রতিভাস থেকে প্রকাশিত। এরপর পরম্পরা প্রকাশনী থেকে কবিতার বই ৩) ঈশ্বর গোপনে আসে । খণ্ডিতাও পরম্পরা থেকেই। ৪) ফুল দংশাই ত্রিপুরার স্রোত প্রকাশনী থেকে । আরেকটা সুসংবাদ আমার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ' পিয়া বাসন্তী রে' এ মাসের শেষে বের হচ্ছে।
লিখতে গিয়ে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে ? মহিলা বলে কোন অসুবিধে হয়েছে ? ভি এস নায়পলের মতে মেয়েরা বেশি ইমোশনাল বলে লেখক হিসেবে পিছিয়ে , তুমি মান ?
না আমাকে বিশেষ অসুবিধার মুখোমুখি পড়তে হয়নি। নারীশক্তি সম্পর্কে ৯০% মহিলা অন্ধকারেই। কিছু করার নেই।
রাজনীতির খোঁজ রাখ ? বিশেষ চোখে দ্যাখ কোন রাজনীতিককে ? কিরণ বেদির জীবন নিয়ে ‘উড়ান’ হয়েছিল । তোমার কেমন লাগে হালফিলের ওনাকে ?
রাজনীতি তথা চাটুকারিতা থেকে আমি শতহস্ত দূরে। একটা উদাহরণও এই সময়ের রাজনীতিকদের মধ্যে মনে করতে পারছি না। কিরণ বেদী সম্পর্কে বলতে গেলে আমি এটুকুই বলব , কর্মক্ষেত্র আর রাজনৈতিক জীবনকে এক করা ঠিক নয়। উড়ান একটা দৃষ্টান্তমূলক সিরিয়াল। আজও ভুলিনি। সেই দক্ষতা কখনও আপোষকামী হলে কষ্ট পাব।
তোমার জন্ম কর্ম সবই কি কোলকাতা কেন্দ্রিক ? মফঃস্বলের কাব্যচর্চা সম্পর্কে ধারণা কি ? কোলকাতার বাইরে সিরিয়াস কাব্যচর্চা হয় বলে বিশ্বাস কর ?
জন্ম কলকাতায়। তবে আমার দাদু রেলওয়ে ইঞ্জিনিওর ছিলেন। সে সুবাদে হিজলীতে আমাদের বাড়ি ছিল। ছুটির দিনগুলো সেখানেই কেটেছে । বছরে বার তিনেক একান্নবর্তী হতাম। মাঠ ঘাট চসে বেরিয়েছি। লিট্ল্ ম্যাগাজিনে বেশির ভাগ কবিতা আমার মফঃস্বল থেকেই বেরিয়েছে। আসল ট্যালেন্ট তো ওখানেই । শিল্প সাধনার বাতাবরণ এখানে কই ? স্নব কালচারে আমি হাঁপিয়ে উঠি ।
শঙ্খ, জয়, শক্তি এই নাম তিনটে সবার আগে মনে এল। গৌতম চৌধুরীর কবিতা খুব ভাল লাগে। কবি বন্ধুদের কথা বললে প্রবাল, বিভাস, সুমন গুণ। শ্যামলকান্তি দা'র কবিতা খুব ভাল লাগে। এছাড়া উৎপল কুমার বসু, পুণ্যশ্লোক দাসগুপ্ত, মৃদুল দা, শরতকুমার মুখোপাধ্যায়, মনীন্দ্র গুপ্ত, দেবারতি দি। এনারা সবাই আমার শিক্ষক ।
কবিতার বাইরে অন্য ভালোলাগা কি ? কবিতার জগতে তো ট্রাফিক জ্যাম । সাহিত্যের অন্য লাইনে কি খ্যাতি তাড়াতাড়ি আসে ?
অন্য ভালোলাগা অবশ্যই গান। তবে পশুপক্ষীদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভাল লাগে। তবে যেটা না বলে পারছি না, সেটা হোলো -- পাড়ার অনেক পাগল আছে যাদের সবাই ভয় পায়। আমি তাদের সঙ্গে গল্প করি, সাবান, ব্রাশ, পেস্ট কিনে দিই। হাত খরচও । একজন তো আমার বাড়ির দরজায় চটি খুলে প্রনাম করে যায় । কোনো মানে হয়!
লিখি তো । ৩/৪ টে ছাপাও হয়েছে। একটু না জমলে পত্রিকায় দেব না। জমলে মানে সংখ্যার কথা বলছি।
কিছু কবিকে ক্ষ্যাপামির আচরণ করতে দেখেছি। আসলে এরা আমার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে যান। ভাল চাকরি করেন, কিন্তু জীর্ণ শার্ট পড়েও নকলপনা ধরা পড়ে গেছে। কবিগুরুকে এসব করতে হয়নি। তবে পুরুষদের বোহেমিয়ান হলে চলে, কারণ এটা আত্মার সামিল। আমিতো মানসভ্রমনে থাকি। ইচ্ছে করে বাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে যেতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে যা হয়। আমার কবিতার একটা লাইন বলতে ইচ্ছে করছে। " ঘরে বসে সব ঋতু মেলে / এইতো আমি দরজা খুললাম" --- এটা কিন্তু একটা নিভৃতের কান্নাই !
তোমাকে বাইরে থেকে দেখায় খুব জলি , ফান লাভিং , এক্সট্রোভার্ট । কবির নির্জনতা থিয়োরি তোমায় ম্যাচ করে না । কিভাবে ম্যানেজ কর ?
এটা ধরে নিতে পারো একটা মলাট । আমি আদপে নির্জনতার অভিলাষী। দুর্গাপূজায় বেরোই না। পারিবারিক অনুষ্ঠানে এককোণে বসে থাকি। ছোটবেলা থেকেই। লেখার সুবাদে পরিচিতির জায়গায় এতো প্যাম্পার্ড হই যে মুহূর্তের মধ্যে হইচই হয়ে উঠি । আসল কথাটা হোলো ফেরা, একলা , প্রতিকূলে, ভিতরের রক্তপাত কারোকে বুঝতে দিই নি, দিই না। আজ একটু প্রকাশিত হয়ে গেলাম। আমি রাত জাগি। ২টো ২।৩০ টে পর্যন্ত। আমার বেঁচে থাকার বা কবিতার রসদ। কখনও সারারাতও জেগে থাকি। এটা ক্রমশ বাড়ছে ।
আমি কি এমন লিখি যে সরকার আমাকে স্বীকৃতি দেবে ? তবে গনতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ থেকে "মল্লিকা সেনগুপ্ত " পুরস্কার পেয়েছি। দক্ষিন পশ্চিম লিট্ল্ ম্যাগাজিনের তরফ থেকে ড্রিম এ্যাওয়ার্ড । আসলে পুরস্কার পেতে আমার খুব ভয় করে। মনে হয় লেখা ফুরিয়ে যাবে। আর যারা সমৃদ্ধ কবিতা লিখে স্বীকৃতির অভাবে অন্তরীন, তাদের সামনে দিয়ে গিয়ে পুরস্কার নেব ভাবতেই পারিনা। আমি কবি নই, অক্ষরকর্মী ।
নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমি এখানে এসে পৌঁছেছি। এটুকু অনুভব করি আমার অভিধান থেকে শত্রু শব্দটা মুছে গেছে। বন্ধু, আর বন্ধু নয়। এভাবেই ভাবি। আমার কাছে দুঃখ পাওয়াটাও পাওয়া, আনন্দ পাওয়াটাও পাওয়াই। আমার জন্যে কেউ অপেক্ষা করেনি, আমারও কোনো অপেক্ষা নেই । স্বীকৃতির পাসপোর্ট পেলে আমার পথের সন্তানদের কি হবে ? এই বেশ আছি।
আমি আয়নাকে গুরুত্ব দিই। নিজেকে সুন্দরভাবে রেখে আয়নার সামনে দাঁড়ালে আত্মবিশ্বাস বাড়ে । আসলে আমি মানুষের ভিতরে সুন্দরদিকটা খুঁজে বেরাই। বাইরেটা নিয়ে খুব ভাবিনা। তবে কবিতা কখনও গয়না পড়ে আসে, কখনও নিরাভরণ ! আবার কখন নিজের হাতেই গয়না খুলে দিয়ে বলি , প্রকৃত সঙ্গমে গয়না অন্তরায়।
না বিদেশে যাইনি । কলকাতা শহরে এতদিন থেকেও পথ হারিয়ে ফেলি। বিদেশে আমার কি হাল হবে ভেবে নিজেই আতঙ্কিত। আর বিদেশে কিভাবে যেতে হয় ,সেই ভাবটা জানিনা। আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে কবিতা পড়ার ডাক পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম। কে সেই ঈশ্বর , যে আমার একটা জানলা খুলে দিলো !
প্রতিষ্ঠান আর লিটিল ম্যাগের মধ্যে কার পাল্লা ভারী ? বিখ্যাত হতে গ্যালে কি প্রতিষ্ঠানের ছাপ্পা দরকার ?
সোজা কথা কবিতা লিখে যাও । সব পত্রিকায় লেখা পাঠাও । উন্নাসিক হলে কবিতা চর্চা থেকে দূরে সরে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রতিষ্ঠানের ছাপ্পা নিয়ে যারা নিজেকে ঘোষণা করে আমি তাদের থেকে শত হস্ত দূরে।
‘কৃত্তিবাসে’ লিখেছ । লিখেছ ‘দেশ’ এ । তুমি সুনীলের স্নেহধন্য । আজ তুমি ও মধ্য গগনে । প্যাম্পার কর নতুনদের । ভালো সফল লেখকের কি ইগো থাকে না ? এটাই কি পরম্পরা ?
অনেকেই কৃত্তিবাসে লিখেছেন বা দেশে । প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিটাই সব ? মলয় রায়চৌধুরী দা যখন কবিতা বিষয়ক আলোচনায় আমার কবিতার কথা উল্লেখ করেন সেটা কি কম আনন্দের। উনি যখন বলেন, ডার্লিং তোর একেকটা কবিতায় ইথারাইজ্ড্ হয়ে যাই --- সেটা কি স্বীকৃতি নয় ? বা গৌতম চৌধুরী মেইল করেন আমার কবিতার প্রশংসা করে ? আমার কাছে পাঠকই দেবতা। যে ভুল করলে ক্ষমা করবে না।
|
|
বিদিশা সরকার
Reviewed by Pd
on
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
Rating:



প্রতিভাশালিনী কি আটকে রাখা সম্ভব!
উত্তরমুছুনValo laglo
উত্তরমুছুনValo laglo
উত্তরমুছুনগর্ব করার জন্য একটা সুযোগ চাই। সেটা এবার পেলাম। Now I am proud Kuttikaku.
উত্তরমুছুনগর্ব করার জন্য একটা সুযোগ চাই। সেটা এবার পেলাম। Now I am proud Kuttikaku.
উত্তরমুছুন