একই পাড়ায় পাশাপাশি থাকে পূবালী আর চৈতি। প্রায় সমবয়সী দুটি মেয়ের বন্ধুত্বও আছে।অনেকে আবার হেসে বলেন বিপরীত মেরুর আকর্ষনটাই স্বাভাবিক।তা বিপরীত মেরু বইকি। পূবালী অন্তর্মুখী,স্বল্পভাষী, মেধাবী আর বুদ্ধিমতী, বেঁটেখাটো কালো চেহারাতে কদাকার না হলেও কুশ্রী বলাই যায়। আর চৈতি ছ্যাবলা বকবকিয়ে টাইপের। পড়ার বইয়ের থেকে সিনেমা, বিনোদন পত্রিকায় বেশী নজর।তবে দেখনদারির কথা বললে মেয়েকে যে কোন সিনেমার নায়িকার থেকেও বেশী রূপসী বলা যেতেই পারে।
ছোটবেলা থেকে মেয়ের সৌন্দর্য্য নিয়ে গর্বিত হলেও আজকাল এক অদ্ভুত চাপা ত্রাসে ভোগে চৈতির মা। চৈতি যখনই একা বাইরে বেরোয়, মা পইপই ক'রে বোঝায়,''বড় হয়েছিস । খুব দেখে-শুনে চলবি । আজকাল খবরের কাগজে যা দেখি, খুব ভয়ে থাকি ।'' মেয়ে বোঝে মায়ের আতঙ্কের কারণ । তাই মাকে আশ্বস্ত করে বলে,''ঠিকই বলেছ তুমি । আমি খুব সাবধানেই থাকব, ভেবোনা।“ পূবালীকে নিয়ে ওর মায়ের চিন্তা অন্যরকম। বয়স বাড়ছে, পাত্রস্থ করতে তো হবে। মেয়ের বাড়ন্ত রূপ নিয়ে মায়ের চিন্তার অন্ত নেই তাই।সেও এক ত্রাস।
চৈতি সকালের কলেজে পড়ে। বিকালের মধ্যে কলেজ টিউশনের পাট চুকিয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। সাঁঝের আঁধার নামতে না নামতেই ভয় পায় বাড়ীর সামনের ঝাকড়া বটগাছটাকে, মোড়ের মাথার পুরানো আমগাছ আর তার নীচের অন্ধকার ভাঙা মন্দিরকে, শুনশান রেললাইনের পাশের রাস্তাকে, আলোবিহীন স্কুলের খেলার মাঠটাকে। জানে না ও সবের আগে-পেছনে কে বা কারা আছে।কিন্তু একটা ভয় সে পায় ।ওর ভয় শুধু রাতের অন্ধকার, গাছের ছায়া আর লোভী পুরুষত্বের অস্ফুট ফিসফিসানিকে ।
পূবালী দুপুরের কলেজে পড়ে। হাতখরচা যোগাতে কয়কটা টিউশনও করে।ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।সবসময় বাবা বা দাদার পক্ষে গিয়ে স্টেশন থকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়না। সেই সব দিনে ও নির্বিদ্বিধায় অন্ধকার রাস্তায় পা চালিয়ে একাই বাড়ী ফিরে আসে। অন্ধকারে মুখ তো দেখা যায় না। দেহের অবয়বটুকুই দেখা যায়।কমবয়সী মেয়েমানুষের অবয়ব।দিনের আলোয় যে মুখের দিকে লোকে ভালো করে তাকিয়েও দেখে না, রাতের আঁধার সে মুখের ওপর কালো ওড়না টানায় তাই হয়ে ওঠে রহস্যময়ী।
সেদিন একাই ফিরছিল চৈতি,টিপটিপ বৃষ্টিতে রাস্তায় লোক কম, তার ওপর বিচ্ছিরি লোডশেডিং । রেললাইন পেরিয়ে মাঠে নামতেই পিছু ধরল এক আধামাতাল,প্রথমে সিটি,তারপর হেঁড়েগলার গান, বিচ্ছিরি ইঙ্গিত,অতপর সাহস পেয়ে গায়ে হাত। গায়ের জোরে টেনে মাঠে শুইয়ে দিয়েছিল। পথফিরতি এক রিক্সা তার সওয়ারী নিয়ে না এসে পড়লে কি যে হত!
এখন চৈতিও ভয় পায়, ভয় সামনের জলজ্যান্ত আঁধার-মানুষকে, ভয় বোধহীন রিপুবান মাতাল পুরুষকেকে, ভয় ঘোর কাটার পর সেই বোধহীন চোখের বিরক্তি আর অবজ্ঞাতে।এও এক ত্রাস, নিজেকে হীন ভেবে ফেলার ত্রাস।
বিপরীতমেরুর বাসিন্দা হলেও পূবালি আর চৈতির এই ত্রাসের ধরন বদলাবে না কখনও,এই ত্রাসের আঁচেই ওরা ধিকিধিকি জ্বলবে,পুড়বে,আর বিধাতাপুরুষ ত্রাসের পরশ ছড়িয়ে আড়াল থেকেই মুচকি হাসবেন…
![]() |
| পরিচিতি |
অভিলাষা
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:



কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন