সোনালী ব্যানার্জী


পড়ন্ত বিকালে নদীর উপর এই সেতুটায় এসে দাঁড়ালেই শরীরে কৈশোর ভর করে , শুধু উচ্ছলতাটুকু যে মেয়েটা সেতুর নীচ দিয়ে  তিরতির করে বয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখায় ভাসিয়েছে - সে কি আমি না আমার পূর্বজন্ম মনে করতে পারি না। নেমে নদীর পাড়ে এসে জলে ভেসে থাকা ছায়া ছুঁয়ে দেখি , সে আমি না আর কেউ । 

হঠাৎ করেই পটভূমি পাল্টে যায় । দৃষ্টিবিভ্রম ?  নদীর পাড়ে জ্বলতে থাকা এক-আধটা চিতা আর কিছু শোকার্ত মানুষের ভিড় পেরিয়ে ভাঙা পাথুরে বাঁধটায় পৌঁছলেই দূরের ফুলডুংরি পাহাড়ের মাথায় আগের মতো সন্ধ্যা নামে। ও পাহাড় বেয়ে নদীর জলে নেমে এলেই  আমি বাড়ি যাবো । বাঁধটার উপর পড়ে থাকা স্বপ্নগুলোকে কাগজের নৌকো করে রোজই ভাসাই নিরুদ্দেশে যাবে বলে ........ হাল নেই-পাল নেই নৌকো । ওরা ভয় পায় , বাঁধের গায়ে লেপ্টে থাকে ভিজে । 

আর এই সময়টাই আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে । একটা ঘর ,বারান্দা , চেনামুখে অচেনা কিছু মানুষ আর আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা নিরর্থক কোনও সম্পর্ক জাল বিছায়। চেঁচিয়ে বলি, "চলে যাব।" শব্দগুলো প্রজাপতি হয়ে ব্যঙ্গ করে বলে , " যাও । রাজা ছাড়াও রাজ্য চলে ।তুমি তো কোন ছাড় !" কিছুতেই পারি না তবু । যত জাল কেটে বেরোতে চাই তত বেশি করে জড়িয়ে গিয়ে গুটিবদ্ধ স্থবিরতা ।

একদিন তো গুটি কাটবই। সেদিন একটা নৌকো হবো, হালহীন-পালহীন , হারিয়ে যাব এই সুবর্ণরেখার উজান বেয়ে কোনও পিছুটান না রেখে ।


~ কবি পরিচিতি ~ 


সোনালী ব্যানার্জী সোনালী ব্যানার্জী Reviewed by Pd on নভেম্বর ২১, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.