প্রথম টের পাই যখন ফ্রকের নিচের দুদিক শক্ত ঢিপি হয়ে উঠেছিল। ব্যাপারটা ভীষণ ব্যাথার আর অস্বস্তিকর সেকথা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে যাই সেইসব আত্মীয়দের কারো কারো কাছে আমি বড্ড লক্ষ্মীটি বড্ডই ছেলেমানুষ , আর তাই তাদের আদর পাবার যোগ্য হয়ে উঠেছি আমি। এমনিতে যারা হয়তো তার আগে ফিরেও দেখেনি ঘ্যানঘ্যানে নাকের প্যাঁটা মুছতে থাকা শিশুটির দিকে । যৌনাঙ্গের ব্যাপারটা বুঝেছিলাম সেকথাও কি বলা যায়? সে বিষয়টিতে অবশ্য এখনকার হতভাগ্য বহু শিশু যারা ইস্কুলবাসের কন্ডাক্টরদাদা বা ইস্কুলের কোন শিক্ষক দ্বারা নগ্ন বা ধর্ষিত হবার মধ্য দিয়ে নিজেদের যৌনতা সম্বন্ধে সচেতন হয় সেরকম দুর্ভাগ্য আমার হয়নি। আমি লাকি। আমাকে হিংসে করা যায়!
তেরোর গেরোতে কোন মেয়ের না উথাল হয়ে যায় শরীর? কি জানি কোন ফাঁকে বুক গড়তে থাকে নিজের আকার আর যৌন কেশেরা বাড়তে থাকে গোপন আশ্রয়ে। ছিঃ! এমন করে বলতে আছে? আমি না নারী! ওসব নিষিদ্ধ ব্যাপারগুলো ভোগ্য বস্তু। ওসব উপভোগের সময় গলে গলে পড়ে বলুক পুরুষ তুমি বোলো না। বেসামাল অবাধ্য আমি তাই ফিরে ফিরে যাই ঐসব অংশ গুলোতে যেগুলো তোমার চেয়ে আলাদা যেগুলো আমার একান্ত বিশেষ। অবশ্য মেয়েরা অনেকে ঐসব কেশ ফেশ গুলি উৎপাটনে অনেক খানি শ্রম ক্ষয় করে ...ওগুলো নাকি যথেষ্ট তৃষ্ণা জাগায় না পুরুষের মনে ! কিংবা হয়ত মাথা ছাড়া আর কোথাও গজালে তা মেয়েলিপনা বিনষ্ট করে! আমার শরীর ...সে তো দেবভোগ্য। তুমি তো আমার শরীর দেবতা তাই না? এই যে এত যত্ন এত পরিচর্যা তা তো দেবতা অর্চনের জন্যই। ঠিক যেমনটি গাছের ফল মূলাদি ঢাকাচাপা দিয়ে রাখা হয় যাতে কাকে কুকুরে মুখ না দিতে পারে! সময় হলে দেবতার ভোগেই কেটেকুটে ছাল ছাড়িয়ে ফালাফালা করে পরতে পরতে সাজিয়ে দেওয়া হবে। ঠাকুর বড্ড বাছাবাছি করেন! ওনার জন্য এটুকু তো করতেই হয়!
প্রথম যে ঢিপি'টির উন্মেষ হয় দিন গড়ালে তা দুগ্ধভান্ডারে পরিণত হয়। সন্তান লালন তো বটেই, তাছাড়া শ্বশ্রূমাতার সন্তানের সেবায়ও তা লাগানো আবশ্যিক বই কি! নারী তুমি শরীর ছাড়া আর কি?
তোমার পায়ের তলটি পর্যন্ত নমঃ নমঃ করি লক্ষ্মী পুজোয়। আফটার অল শরীর অতি গুরুত্ব পূর্ণ ব্যাপার। আমাদের মন্দির গুলোতে কী পরিমান শরীর ঘোষণা করা আছে ... অথচ তা আমরা নমো নমোর ফাঁকে গলেই যেতে দিই! আবার দেখো রজঃস্রাবের সময় তোমাকে ঘেন্না করি। তোমাকে ছুঁলে আমি অশুচি। ও যতই সভ্য পুং হই না কেন তখন তুমি না ছোঁয়ার বিষয়... তখন আমি ফুটবল ম্যাচ কিংবা শেয়ার বাজার বিলাসী। হিংস্রতায় খুবলে কিংবা ধোলাই পেটাই করে বা দা-কাটারি রাগের মাথায় ছুঁড়ে রক্ত ঝরাতে গেলে তোমায় ছোঁয়া যায়। না ছুঁলে কুপিয়ে রক্ত কি করে বের করা যাবে? শুধু পায়ের ফাঁক দিয়ে গড়ানো শোণিতে আমার আপত্তি। সে শুধু ধর্ষণ কালে আসতে পারে... আশ্চর্য! তুমি রজঃস্বলা অবস্থাতেই শুধু নও ধর্ষিতা হলেও অস্পর্শ্য যোগ্য! এই দ্যাখো তোমায় এখনো মাপি শরীর দিয়েই! তবুও বলবে তুমি শরীর নও?
ওঃ তালে তুমি মন'ই হবে! ছোটলোকেরা মন ফন বোঝে না। বড়লোক গুলোও টাকার বিনিময়ে শরীর চেনে...আমরা মাঝারি মধ্যবিত্ত আমরা চিনি নেরুদা, আমরা আওড়াই স্তানিস্তলাভস্কি আমরা জানি কোর্তাসার সল বেলো বিষ্ণু দে কিংবা কমলকুমার জন ডান.. আমরা মন জানি। রবিঠাকুর ব্যাকডেটেড আমরা জানি অরবিন্দ আদিগা কিংবা মার্সেলো মাস্ত্রেইয়ানি...আমরা কত জানি... শুধু জানি খুব অশান্তি হলে শেষ পর্যন্ত জিতব আমি। কারণ আমি অনুমোদন না করলে তুমি মিথ্যা তুমি ফক্কিকারী! তোমার নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে। কারণ বিছানায় তুমি আমার নিচে ...আহা নারী!
বুড়ো হলে নারী তোমার কোঁচকানো শরীর তোমার ঝুলে পড়া অলাবু আমায় বিবমিষা জাগায় না মোটেই , আমি শিক্ষিত না? আমি শুধু ছবি তুলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তে ডিসকভার করি তুমি কত্ত ইস্পেশাল আহা আমি কতই দরদী! হ্যাঁ তবে কি না শরীর ছাড়া আর কীই বা তুমি! মন দেখি না বলে নারীবাদী'দের কী ভীষণ বাড়াবাড়ি ! ইচ্ছে করে দিই শালীদের ধরে ধরে ঠেসে। কুমারীপনা কেড়ে নিয়ে ঢেলে দিই যোনিতে শিশ্নের বীর্যরস ! নাঃ আমরা আবার ভদ্দরলোক। তাই আমরা ছবিতে ভোগ করি, লেখায় ভোগ করি, আঁকায় ভোগ করি, সংবাদে ভোগ করি , সমবেদনায় ভোগ করি...ইসসস বলতে বলতে ইচ্ছে চাগিয়ে ওঠে । যাই অন্য বিষয়ে যাই।
এতই যদি আপত্তি তুমি কি তবে নও শরীর! নহো মন ও! তবে কি? আরো বেশি কিছু? সেটা কি? আত্মা? সে তো ঠাকুর দেবতার বইতে আর দর্শন শাস্ত্রের শব্দ! ডে টু ডে লাইফে আবার ঐসব শব্দ নিয়ে বিলা করা কেন? আচ্ছা আচ্ছা বেশ তবে আত্মা বস্তু টা কি ? সেটি কি তবে পবিত্র কিছু? নারী তুমি কি তবে পবিত্রতা স্বয়ং? সেই যে আমাদের আদি অমিতাভ বচ্চন অযোধ্যাপতি শ্রীরামচন্দ্র সহধর্মিণী বৈদর্ভী কে বলেছিলেন তবে তুমি তাই'ই?
অনন্যা হি ময়া সীতা ভাস্করস্য প্রভা যথা।
বিশুদ্ধা ত্রিষু লোকেষু মৈথিলী জনকাত্মজা।।
তুমি তবে সীতা? তুমি তবে ত্রিলোকের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ? তুমি তবে পবিত্রতা? এও যে হজম হতে চায় না পুরুষ! অপ্রাকৃত কিছুতেও আগ্রহ নেই যে! আমাদের মুনিরা ঋষিরা আমাদের মেয়েদের এই কম্মোটি করে গেছেন, বার খাইয়ে একেবারে তাকে তুলে রেখে দিয়েছেন! আসলে তুমি শরীর আসলে তুমি মন আসলে তুমি এসবের বাইরেও অজানা কিছু। যা তুমি নিজে হয়ত বোঝো কিন্তু মুখে আনতে পারো না। সেই বোধ মুখে প্রকাশ যোগ্য নয়। তোমার যথেষ্ট ভাষা নেই যা দিয়ে সেই অসীম কে তুমি বোঝাতে পারো জগতে। ঠিক যেমন পরম ব্রহ্ম। যাকে বোঝাতে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন- “আর সব কিছু এঁটো হয়ে গিয়েছে শুধু ব্রহ্মই হন নি।” কারণ ব্রহ্ম কে কেউই আজ অবধি ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারেন নি। জিভের উচ্চারণে যাকে মাপা যায় না তিনি তো উচ্ছিষ্ট হন না। তবে তাই হবে। তোমাকেও তো বোঝাতে না পেরে কেউ বলেছেন “নারী নরকস্য দ্বার!” বা কেঊ ভক্তি গদগদ শ্লোক রাজি। তবু তুমি আজও অতৃপ্ত। আজও নিজের আইডেন্টিটি খুঁজে ফেরো। আসলেই তুমি লিঙ্গ ও লিঙ্গাতীত আরো অতিরিক্ত কিছু। নারী তবে তুমিই ব্রহ্ম।
তোমাকে প্রণাম।
![]() |
| পরিচিতি |
জয়া চৌধুরী
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন