![]() |
| ~ কবি পরিচিতি ~ |
আলো চাই, অন্ধকারের অবিশ্রান্ত যাত্রায় নিশ্বাস আটকে আসে, অকল্যাণ একটা বিন্দু থেকে টর্ণেডো হয়ে যায়, বিপর্যস্ত মানবতা ধুকছে। সম্পর্ক, সম্মানবোধ সবকিছু কেমন জড়বস্তুর মতন! সত্যযুগ কেন আলাদা ছিলো? তবে কি সভ্যতার প্রতিটি অলিন্দ পার হতে হতে আমরা ক্রমশ অসভ্য আর বর্বর হয়ে যাচ্ছি? স্বার্থ, ধর্ম, বর্ণ, জাত, কূল, এমনকি তুচ্ছ সব বিষয়ে লড়ছি? কেন আমরা বিপন্ন মানবতার জন্য লড়াই করছি না! সব অন্ধকারের অন্তিম আছে, আলোতেই আঁধার হারায় ।
আলোকিত সত্য নিয়ে পথে নেমেছে যে সাধক, তার সহযাত্রী হতে ইচ্ছে করে, গাইতে ইচ্ছে করে, “ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না…..” রাত্রিকে অতিক্রম করে তারপর কোন সতেজ প্রান্তরে দুইদণ্ড বসলে একটা জনপদ সামনে এসে দাঁড়াবে, আমার আলোকিত স্বপ্ন এভাবেই চলতে থাকে, কোন মোড়ের চা’য়ের দোকানের নড়বড়ে বেঞ্চিতে বসে চা খাচ্ছি, দুরের জলায় মহিষের পাল, ধান কাটার উৎসব চলছে, বৃষ্টির গীত, ধোঁয়া ওঠা মোটা দানার ভাত, একটু যত্ন করে তুলে দেয়া যে কোন তরকারী, এসব তুই কোথায় দেখলি? আরেক সত্ত্বা চোখ রাঙায়। পঁচিশ বছর আগেও দেখেছি, যখন বাড়তি আনাজ খোলা ভরে দিয়ে গেছে প্রতিবেশী, জালালী কবুতরগুলির দিকে কেউ বন্দুকের নল তাক করেনি।
একটা টানাপোড়েন আমাকেও দিকভ্রান্ত করছে, আমি বৈষয়িক চিন্তায় মগ্ন, কাকে ল্যাং মেরে এগোনো যায় ভাবছি, কি কৌশলে নিজের জমিজিরেত, টাকাপয়সা গুঁছিয়ে বসবো সেই খেয়াল মুখ্য, আমার সামনে একদল পিপাসার্ত মুখ, একজন ধর্ষিতা, বয়স্কা এক অভূক্ত আত্মীয়া, এসব গৌণ হয়ে যাচ্ছে! আমি আতঙ্কিত, কোথায় সেই নিভৃত আলোর ঝরণা যা আমি অন্তরে পুষে রাখতে চেয়েছি? রতন স্যার আশীর্বাদ করে যা আমায় দিয়েছিলেন? প্রতিদিন নিগৃহীত হচ্ছে মানুষ, নিহত হচ্ছে শিশু, নিষ্পেষিত হচ্ছে মানবতা, আর আমি তবক দেয়া পান চিবুতে চিবুতে কথাবন্ধুর সঙ্গে টক শো করছি! এই সিস্টেমে নয়, লোভ কে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার কিন্তু স্বাধীনতা নয়, অনেক আগে আমার এক বন্ধু খুব রেগে বলেছিলো, আমরা কেবল পোষাকি স্বাধীন, মনটা ঠিকই পরাধীন, চিন্তা এবং তার বিকাশ।
একটা গল্প পড়েছিলাম বহুকাল আগে, একজন পরাক্রমশালী রাজা অসম্ভব বিজ্ঞ ছিলেন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সব পুস্তক তিনি পড়েছিলেন, তার গ্রন্থের সংগ্রহ ছিলো ঈর্ষণীয়, দীর্ঘ সময়ের অর্জিত জ্ঞান নিয়ে একবার তিনি দাঁড়ালেন সাগরের মুখোমুখি, একটা আপাত শান্ত সাগর সুরেলা গুঞ্জন তুলে কিছু ঢেউ বয়ে আনছিলো এবং তা গর্জন হয়ে লুটিয়ে পড়লো বেলাভূমিতে, এভাবে প্রতিটি ঢেউয়ের সাথে সরে যাচ্ছিলো পায়ের নীচের বালি, অন্য কোথাও জেগে উঠছিলো চোরা স্রোত, মৃত্যফাঁদ, গুপ্ত সুড়ঙ্গ, ঢেউয়ের চূঁড়ায় নাচছিলো ফসফরাসের আলো। বিপুলা প্রকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন রাজাধিরাজ, সমস্ত পুঁথিগত জ্ঞান তার নিজের কাছে অসার মনে হলো, উম্মোচিত হলো তাঁর অন্তরের চোখ।
না, না, আমি গ্রন্থপাঠের বিরুদ্ধ মানুষ নই বরং মগ্নবা নিবিড় পাঠ আমারও প্রিয়। বলছিলাম,প্রকৃতি এবং পুঁথিগত পাঠ দুইয়ে মিলে উম্মোচিত হয় সত্যিকারের পথ, আলোর পথ, প্রজ্ঞা আর মানুষের জন্য কিছু করার আকুতি । প্রণত হই রতন স্যার, যারা আপনাকে গ্রাম্য শিক্ষক বলছে বলুক, আমি জানি, আপনি পৃথিবীর পাঠশালা থেকে জাতীয় গ্রন্থাগার ঘুরে নিজের দো’চালা ঘরের আঙিনায় বসে এখনও শেখান, আলোটা কিভাবে জ্বালতে হয়। “প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে, মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ, আরও আলো, আরও আলো, এই নয়নে প্রভু ঢালো………….”
সাঈদা মিমি
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২৩, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২৩, ২০১৪
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন