গত মার্চ মাসের পাঁচ তারিখ গেছিলাম বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে। দশ তারিখেই ছিল ফেরার টিকিট। এই সামান্য সময়ে কিছুই দেখা হয়নি।তবুও সাহিত্যিক বন্ধুদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হয়েছি বারেবারে। সেই কথাই ফেসবুকে লিখছিলাম। এক পরম সুহৃদ বললেন লেখাটা তিনি কোনো কাগজে প্রকাশ করতে চান। তাই ফেসবুকে শেষের দিকের অনেক লেখাই আর লিখিনি।
বাংলাদেশের প্রতি একটা আন্তরিক অপ্রতিরোদ্ধ টান অনুভব করতাম একদম ছোট্টবেলা থেকে। বহুবার আমন্ত্রণ পেয়েছি। যাওয়া হয়ে ওঠেনি একবারও।এবারও যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব! ভীষণ শরীর খারাপ। কয়েকদিন আগেই হাসপাতাল থেকে ফিরেছি। ডাক্তারের কড়া নির্দেশ--"বাইরের খাবার ত্যাগ করুন।"তবুও কিশোরগঞ্জেরকুড়িতম ছড়া উৎসব এবং চন্দ্রাবতীর মেলায় ছড়া উৎসবের পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক এবং দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় আহমদ উল্লাহ সাহেবের আমন্ত্রণ পত্র পেতেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ফুৎকারেউড়িয়ে দিলাম। পাড়ি দিলাম বাংলাদেশে। আমার সোনার বাংলাদেশে।
ভদ্রলোকের নাম এম.ডি. হামিদ। মা-বাবা গত হয়েছেন। ছোট্ট ছোট্ট দুই মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার।অভাব কিন্তু তাঁর কাছ থেকে তাঁর শিল্পকে কেড়ে নিতে পারেনি।অসাধারণ কণ্ঠেরঅধিকারী!তাঁর কণ্ঠেযাদু আছে!উদাত্ত। সুরেলা। নিজেই গান লেখেন। সুর করেন। এবং অনন্যসাধারণ কণ্ঠ দান করেন।গানই তাঁর জীবনের স্বপ্ন! গান নিয়েই বেঁচে থাকতে চান। আর বলেন--"আমার থেকেও যাঁরা অসহায় তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই!"শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে এমন মন ও মানসিকতার কাছে! সবচেয়ে অবাক হয়েছি তাঁর ভিতরের নরম ও স্পর্শকাতর মনের সন্ধান পেয়ে!আমার পাঠ করা কবিতা তাঁর ভালো লেগেছে! ব্যাস! সঙ্গে সঙ্গে সুর বসিয়ে গেয়ে দিলেন! আহা! "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!"
ভদ্রলোকের নাম মো: ইকবাল হোসেন Md Iqbal Hossain।তিনি লেখেন। আমি তাঁর "গল্প নয় সত্যি" নামক একগুচ্ছ (মোট নয়টি) গল্প পড়লাম। সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত নয়ন নামক ছেলেটিইকাহিনির কেন্দ্রবিন্দু।ভালো লেগেছে গল্পগুলো।কিন্তু যে জন্য তাঁকে নিয়ে লিখতে বসা এবার সেই কথাটাই বলি। তিনি চর্যাপদগুলোকে আধুনিকীকরণ করেছেন। বাংলাভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন লুইপাদ, ভুসুকুপাদ, কাহ্নপাদেরসান্ধ্যভাষায় লেখা সেই পদগুলোকে অর্থের বিকৃতি না ঘটিয়ে এক অসাধারণ কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষগুলোর আচরণ যেমন অমায়িক, সৌহার্দ্যপূর্ণ, সাহিত্যের সাথেও তাঁদের সম্পর্ক তেমনই! সাহিত্য নিয়ে তাঁরা গভীরভাবেভাবেন। অত্যন্ত ওতপ্রোতভাবে তাঁরা সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে আছেন! মাটির মতো খাঁটি তাই তাঁদের সাহিত্যপ্রীতি।চর্যাপদের এই আধুনিকীকরণ তাই সম্ভব হয়েছে মো: ইকবাল হোসেনের পক্ষে।দূর থেকে ভালোবাসায় খাদ থেকে যায়। মাটিতে নেমে এলে প্রকৃতির সান্নিধ্য মেলে। তখনই দেখা মেলে এমন চেতনার!তাঁর দুই একটি চর্যাপদের উল্লেখ করার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না!আহা! "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!"
ঘরে ফেরার দিন এগিয়ে আসছে। মনে খুব যন্ত্রণা। হাহাকার। বোঝাতে পারছি না কাউকে। বুকের মধ্যে পাথর। সেদিন প্রেক্ষাগৃহ কানায় কানায় পূর্ণ! প্রেমের নাটকের মঞ্চ সফল নাচ এবং গান চলছে। চিরাচরিত কাহিনি। সেই প্রেমের বিরুদ্ধে সমস্ত পৃথিবী। আর অন্যদিকে দরিদ্র নায়কের সাথে সুন্দরী রাজকন্যা। মৈমনসিংহগীতিকারকিশোরগঞ্জের পালা যে আমার মনহরণ করবেই তা বলাই বাহুল্য। কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের নাচ ছিল দেখবার মতোই। বাঁশির শব্দে কৃষ্ণের প্রেমে পাগল বিরহিণী রাধার মতোই এই কাহিনিরআয়েশাওপাগলিনীপ্রায়! বাঁশি শুধু রাধাকে নয়, শ্রোতাকেও পাগল করতে পারে। কিন্তু আমাকে যে ফিরতেই হবে! কিচ্ছু করার নেই। আজ রাতেই রওয়ানা দিতে হবে ঢাকায়।শুনেছি ঢাকায় এতো জ্যাম হয় যে ফ্লাইট মিস হবার সমূহ সম্ভাবনা। তাই বেরিয়ে পড়লাম অনুষ্ঠান মঞ্চ ছেড়ে। ঠিক সেই সময় একটি অল্পবয়সি ছেলে এসে বললেন--"দিদি, চলে যাচ্ছেন?" বললেন --"গতকাল আপনার বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে গেছি।"ভীষণ অস্বস্তি লাগছে আমার শুনে। আমি যা বলেছি তা কোনো জ্ঞানগর্ভ কথা নয়। মনের কথা। প্রাণের কথা। ভালোবাসার কথা। বাংলা যে আমাদের মাতৃভাষা তার কথা বলেছি। উনি বললেন--"আপনি যা বলেছেন তা অত্যন্ত ইন্সপায়ারিং! কথাগুলো আপনি মন থেকে বলেছেন। আমরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।"আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম বাংলাদেশের কথা মায়ের মুখে, বাবার মুখে যেমন শুনেছি তবে তো মনেহয় এখনো তেমনই আছে।ভদ্রলোক বললেন--"দিদি, আমাদের বাসায় একবার আসবেন প্লিজ! আমার বাদার কাছেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি। যাবেন?"
এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। যাব না মানে? পৃথিবীতে এসে কিছুই তো করতে পারলাম না! খালি প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ধ্বংস করলাম।অন্তত একবার ছুঁয়ে আসি সেই পুণ্যভূমি।উনি একটা সিএনজিনিলেন। আমি বাংলাদেশের নাটকের ফ্যান। অপূর্ব,নিশো বা মেহজাবিনপ্রমুখদের নাটকে অনেক সিএনজি দেখেছি। তাই সিএনজিতে চেপেও এক অনাস্বাদিত অনুভূতিতে স্নাত হয়েছি।ভদ্রলোকের মায়ের আর স্ত্রীর আপ্যায়নে কী যে ছিল, আমার একবারও মনে হয়নি এঁরা আমার দেশের মানুষ নন। বছর দুয়েকের বাচ্চা আছে ওনার। বাবার আওয়াজ পেয়েই সে ননস্টপ ডেকেই চলেছে --"বাবা, ও বাবা!"
ভদ্রলোক একার প্রচেষ্টায় একটা লাইব্রেরি স্থাপন করেছেন। শুধু তাইই নয়, যেতে যেতে হাসান আজিজুল হকের গল্প নিয়ে যে আলোচনা করেছেন তাতে আমি মুগ্ধ! আমি তো পড়েছি কেননা, ওনাকে নিয়ে আমি কাজ করেছি তাই। কিন্তু এই অল্পবয়সি ভদ্রলোক তো তাহলে এক নিষ্ঠাবান পাঠক। আমার ধারণা যে ভুল নয়, তা প্রমাণ করতেই যেন ওনার মা বলেন--"কোথাও কোনো টুকরো কাগজ কুড়িয়ে পেলে আমি ফেলি না আমার ছেলেকে না দেখিয়ে।"আমার বলতে ইচ্ছে করছিল --"ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি!"ঠিক সেই সময় ভদ্রমহিলা কাকে যেন কিছু একটা বার করে দিতে বললেন। সাদা রঙের।আমি এবার তাঁর লাইব্রেরিতে গেলাম।তারপর ফিরতে হবে। বেশ রাত হয়ে গেছে।ভদ্রলোক একটা সাদা রঙের কাজ করা শাল দিলেন।বলেন--"এটা গ্রাম তো। খুব শীত লাগবে যেতে।"ফেরার সময় সেই চাদর দিয়ে মুড়িসুড়ি দিয়ে উষ্ণ রইলাম। দুইদিকে মাঠ। জংগল। একদম হঠাৎ একটা বিশাল জন্তু এসে পড়ল অন্ধকারের বুক চিরে আলোর রেখা পড়ে ফটফটে হয়ে থাকা রাস্তায়! সিএনজির চালক থমকে গেলেন। ভদ্রলোক বললেন --"বাপরে। কী বিশাল হায়েনা!আমি বুঝলাম চলে যাবার আগে মা আমাকে উপহার দিচ্ছেন!ভদ্রলোকের নাম গোলাপ আমিন। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি যে উনি একদিন অনেক বিখ্যাত হবেন। বিখ্যাত হবেন এবং শুধুমাত্র বাংলাভাষী হিসেবে আমরাও তাঁর জন্য গর্বিত হব। তাঁর এই আত্মনিবেদনবিফলে যাবে না!বাংলাভাষা বেঁচে থাকবে যাঁদের জন্য,এই গোলাপ আমীন তাঁদের মধ্যে একজন!ভাগ্যিস এলাম কিশোরগঞ্জে!আহা!"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!"
জ্ঞান হতে না হতেই শুনেছি আমাদের পূর্বপুরুষেরা আসলে পূর্ববঙ্গের মানুষ। পূর্ববঙ্গ? সে কোথায় মা? সে কোথায় বাবা? মা কথা বলে। মায়ের দুই চোখে স্বপ্ন ভাসে। মা বলে নদীর কথা। বলে নৌকার কথা। বলে তার বিখ্যাত এল্যাপ্যাথি ডাক্তার বাবার কথা। বলে সেইসময়কার কালা জ্বরে গ্রামের পর গ্রাম শ্মশান হয়ে যাবার সময় দাদুর সেবা করার কথা। মায়ের বাবা ডাক্তার যদুনাথ সরকার। বাড়িতেও অনেক মানুষ আসতেন দাদুর কাছে চিকিৎসানেবার জন্য। দাদু তাদের জন্য কাছারি ঘরে প্রতিদিন বসতেন। রোগও নির্ণয় করতেন এবং ওষুধও দিতেন। দিদিমাএমনিতে কিচ্ছু বলতেন না। কিন্তু খাবার সময় পার হয়ে গেলে রাগ করতেন খুব। দাদু হাসতেন। গোলাপের মতো সুন্দরী যুবতীবউএর গোলাপের মতো রঙের গালে হঠাৎ চুমুখেতেন।দিদিমার নামটাই গোলাপী। দিদিমার রাগ গলে যেত। অথচ দিদিমা ভীষণ জেদি আর রাগি। কালা জ্বর আর ম্যালেরিয়ায় প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যেতেন বিনা চিকিৎসায়। দাদু নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতেন না।কখনো দিনে একবার খেতে আসতেন বাড়িতে। দিদিমা দরজায় খিল তুলে দিতেন। কাঁদতেন। "এভাবে ছোঁয়াচে রোগের মধ্যে পড়ে আছো...! যদি তোমার কিছু হয়ে যায়, ছেলেপিলে নিয়ে পথে বসব যে! বোঝো না তুমি?" বলতে বলতেদিদিমার দুই চোখ ভেসে যেত! দাদু আর যাই হোক, দিদিমারকান্না সহ্য করতে পারেন না! দিদিমাকে দাদু সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আর যাবেন না বলে কথা দিচ্ছেন যখন,সেই মুহূর্তে জানালায় অনেকগলোরোগির আত্মীয়ের ভিড়কে দাদু ঈশারায়'পরে যাচ্ছি' এমন ইংগিত করতেন।কিছু না বুঝেই হঠাৎ বলি--"আমার দাদুকে এই দেশে আনোনি কেন মা? তুমি আর বাবা ওই পুব্ববঙ্গে কেন থাকলে না?" মা কাঁদে। মায়ের চোখ থেকে যতটুক জল গড়ায়, তার অনেকগুনবেশি পোড়ে তার বুকের ভিতর।সেই ভিতর থেকে একটা আস্ত যন্ত্রণা আমার সামনে মেলে ধরে মা।বলে--"তখন তোর দাদাও হয়নি। বিয়ের পরপরই আমি আর তোর বাবা এদেশে আসলাম বেড়াতি। বাবা আমারে নৌকোয় তুলে দিতি আইল। নৌকোতো মাঝিদের বৈঠার দুলুনিতে চলতে লাগল। আমার বাবা সাদা ধুতি আর খদ্দরের পাঞ্জাবী পরে খাড়ায়ে আছে। নৌকো দূরে যায়। শীতল বাতাস বয়। চেয়ে দেখি বাবা কেমন ছোটো হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ আরো ছোটো। আমার দুই চোখ থেকে জল গড়ায়। তাড়াতাড়ি মুছে ফেলি। জল বার হতে দিতে চাই না। জল আমার বাবাকে আড়াল করে ক্যান?বাবা ক্রমে ক্রমে আরো ছোটো হয়ে যায়।চেয়েই থাকি। বাবা বলেছিলেন--"কখনো কানবা না। বুজিছো,অ মা?"কিন্তু অশ্রু এত্ত অবাধ্য যে আমার বাবার কথাও শোনে না!হঠাৎ দেখি,বাবার চেহারা একদম ছোট্ট। সেই ছোট্ট চেহারা ধূতির খুঁট দিয়ে চোখ মুচছে।বাবা আমারে কানতি নিষেধ করিছে কিন্তু নিজিকানতিসে। বাবা তখন ভাবিছিল,নৌকো তো অনেক দূরে চলে গেছে। আমার খুকি আমার কান্না আর দেখতি পাবে না নে। কিন্তু বাবাদের কান্না মেয়েরা দেশ ছাড়ে গিলিও ঠিক দেখতি পায়।আমার বুক ঠেলে বাতাস বেরুলো। নৌকোরছইয়ের ভিতরে বিছানা পাতা।আমি সেই বিছানার উপর ভুট হয়ে পড়ে কানতি লাগলাম।"কী যে বুঝলাম আর কি যে বুঝলাম না তা বুঝিনি। শুধু ভেউভেউ করে কেঁদে ফেললাম।আমার বিধবা দিদিমা হাত বাড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল--"অ দিনুকান্দোক্যান!" --"অ দিনু তুমি কান্তিসোক্যান?"বলে আর চোখ মুছে দেয়। বলে আর চুমু দেয় গালে। চুমুদিলেই কি তীব্র জর্দার গন্ধ!তীব্র কিন্তু দিদিমা-দিদিমা গন্ধের সাথে মিষ্টি ভালোবাসা-মাখানো।দিদিমা আমার গালে আবার চুমু দিয়ে বলে --"দিদিমা আবার কেমন ডাক রে!আমারে আজিমা কবি!একবার ক’। “মনে মনে উচ্চারণ করি। "আজিমা...আজিমা.।!"
কিন্তু মুখে বলতে পারিনা। কী যে এক অকারণ লজ্জায় ঠোঁট যেন ফাঁকই হল না।তারপরও অনেক অনেক বছর বেঁচেছিলদিদিমা। তারপরও অনেকবার বলেছে--"অ দুনু, একবার আজিমা কতি পারিস নে আমারে?"মনে মনে বহুবার বলেছি। মুখে একবারও নয়। পরের দিকে দিদিমা আর বলে নি। মা এদেশে মানে ভারতে চল্লিশ বছর সংসার করেছে। দিদিমা আর মায়ের মৃত্যুর মাঝের ব্যবধান মাত্র ছয় মাস। দিদিমাকে আমার মামারা বহুবার বাংলাদেশে নিয়ে গেছে বেড়াতে। কিন্তু আমার মা ভারতে আসার পর একবারও আর ওদেশে যায়নি। যে দেশে আমি জন্মাইনি, সেই বাংলাদেশের প্রতি আমার এত্তোখানি টান,তাহলে মায়ের কতোখানি ছিল! কেন মা একবারও ওদেশে যায়নি? এই আমাদের চার ভাই-বোন, বাবা, মামা, কাকু,দাদু(বাবার বাবা) সকলের সেবা করার জন্য! কিন্তু আমি কেন একবারও বলিনি --"মা,বাংলাদেশে যাবা? চলো মা তোমাকে নিয়ে একবার বাংলাদেশে যাই!"বলিনি। আমিও বলিনি। আমারও অনেক অল্প (নাবালিকা) বয়সে বিয়ে হওয়ায় সেই সুখ দিতে বা পেতে পারিনি। দিদিমাও আজ নেই। মাও।আমি বেঁচে আছি এই যন্ত্রণা বইবার জন্য!এ যে কেমন যন্ত্রণা বোঝাতে পারি না ভাষা দিয়ে!আজিমা গো, ক্ষমা করো। মা গো, ক্ষমা করো।
গেছিলাম বারো ভুঁইয়ার এক ভুঁইয়া ইশাখাঁয়ের বাড়িতে। বাড়ির সামনে দূর্বা ঘাসের গালিচা পাতা। তার শেষ সীমানায় বিশাল একটা পুকুর। ফুরফুর করে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। পুকুরের পাড়ে বড়োবড়ো আমগাছ। খুব শান্ত হয়ে বাংলাদেশ তখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। কিংবা আমাকে দেখছেন। আমাকে কি চিনতে পেরেছো মা? ভাবছিলাম...! দেখো না ভালো করে...! সেই যে বাগেরহাটের ডেওতলা গ্রাম! সেই যে কাটাখালকূল গ্রাম! সেই যে বছর আটের মেয়েটা বর্ষাকালের ভরা জোয়ারে দুই বছর বয়সের ভাইকে কোলে নিয়ে ফিরছিল জ্যেঠুর বাড়ি থেকে। তারপর পা স্লিপ করে একদম ডুব জলে। মেয়েটা সাঁতার জানত। তবু কেন ডুবে গেছিল আমি তো জানিনা! তুমি নিশ্চয়ই জানো! তোমারই কারসাজিতে মেয়েটা প্রচুর জল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিল। তারপর তো মেয়েটার বাবা দেখতে পেয়ে যায়। প্রচুর জল বার করা হয় মেয়েটার পেট থেকে। মেয়েটা জ্ঞান ফিরে পেয়েই প্রথম কথা বলে--"আমার ভাই কোয়ানে? আমার ভাই?"মেয়েটা তার তিন তিনটে ভাইকেই অত্যন্ত ভালোবাসত। সেদিন মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে এই যে আমি, মানে সপ্তদ্বীপাঅধিকারী, এই আমার জন্মই হতো না! চেনো না আমাকে? মনে মনে বলি! চেনো না আমারে? বারবার বলি। একটুও চেনো না মা?ঠিক সেই সময়!তিনি কিছু খাচ্ছিলেন সবুজ জমিতে মুখ নিচু করে। আমি চুপি চুপি খুব সতর্ক হয়ে তাঁকে ধরলাম। খুব খুশি লাগছিল তাঁকে ফাঁকি দিয়ে ধরতে পেরেছি বলে।কোলে তুলে নিয়ে সুন্দর মুখখানায় আদর করতে চাইলাম। তিনি ঠোঁট বাঁকিয়েপুচ করে মুখ থেকে একটা কুলের দানা ফেলে দিলেন। যেভাবে আমরাও কুল খেয়ে দানা ফেলি, ঠিক সেইভাবেই! আমি অত্যন্ত অবাক হয়ে গেলাম। তারপর আমাকে আরো বেশি অবাক করে দিয়ে তিনি মুখটা লম্বা করে বাড়িয়ে দিলেন। অর্থ একদম পরিষ্কার! "নাও, এবার আমায় আদর করে ধন্য হও!"
এবার বুঝলাম তাঁকে ফাঁকি দিয়ে ধরিনি। আসলে তিনি নিজেই আমায়, দয়া করে ধরা দিয়েছেন!!কিংবা কে জানে নাড়ি ছেঁড়া সন্তানকে মা-ই হয়ত একটু ভালোবাসছেন। সান্ত্বনা দিচ্ছেন! পুরস্কার দিচ্ছেন!"এতোক্ষণেবুঝি আমারে চিনিল মাতা!স্নেহের সে দানে,বহু সম্মানে বারেকঠেকানু মাথা!"
আজই শেষ অনুষ্ঠান। আমি রেকর্ড করছি কিছু মুহূর্ত! এই গানেই যেমন বাংলাদেশের পরান আছে,এই গানেই তেমন পশ্চিমবঙ্গের প্রাণ নিহিত।বাংলাভাষা আমাদের মাতৃভাষা। সেই অর্থে আমরা একই ভাষা মায়ের সন্তান। দুষ্টুবুদ্ধিকোনোদিন এই দুই বঙ্গকে এবং এই দুই বঙ্গে বসবাসকারী একই ভাষা মায়ের গর্ভজাত ভাই-বোনকে আলাদা করতে পারবে না। মাঝখানে যতোই ধর্মের বা কাঁটাতারের বেড়া থাকুক না কেন!বাঁশি মানুষের পরানকেভীষণভাবে আকৃষ্ট করে।বড়ুচণ্ডীদাসেরশ্রীকৃষ্ণকীর্তনকাব্যের সবচেয়ে মোহময় চরিত্র বাঁশি। কী কাব্য-সাহিত্যে কী বাস্তবে বাঁশির আবেদন চিরকালীন। আমার কাকিমা বরিশালের মেয়ে। অসম্ভব সুন্দরী! লাল পেড়ে শাড়ি পরিয়েচুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে শতভাগ মানুষ লক্ষ্মী ঠাকুর ভাববেন। একদম অবিকল। টানা টানা দুটো চোখ। ফোলা ফোলা গাল এবং ঠোঁট। কুচকুচে কালো, কোঁকড়া কোঁকড়া, কোমর ছাপানো চুল। তিনি আমার কাকুর সাথে সেইকালে প্রেম করে ঘর ছেড়েছিলেন, যখন প্রেম করা অসামাজিক এবং গর্হিত কাজ ছিল। অনেক শাস্তি টাস্তির পর তাঁদের মেনে নেওয়া হয়েছিল। আমি যখন প্রথম তাঁকে দেখি, তখন তাঁর প্রথম পুত্র সন্তানের বয়স ছয়-সাত বছর। শুনেছিলাম,বাড়িতে ডাকাত পড়লে কাকিমাকে ধানের ড্রামের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে হত।ভয় ছিল ডাকাতেরা কাকিমাকে দেখলে অন্য কোনো পার্থিব সম্পদের দিকে ফিরেওচাইবে না।সেই কাকিমাকেওইরকম বিধ্বস্ত অবস্থাতেও ( দুই দিন জার্নি করে) অপরূপা লাগছিল।আমি বলেছিলাম--" কাকিমা, আপনি এত্তো সুন্দর! আপনি প্রেম কেন করলেন? ইসসসস! কী কষ্টই না পেয়েছেন দীর্ঘ কয়েক বছর!"কাকিমা বলেন--" তোমারে আর কীবা কব খুকি! আমি নিজিই কি কোনোদিনভাবিছি যে আমি প্রেম করব? কিন্তু এক বিয়ে বাড়ি আমারে দেখার পর থিকা তোমার কাকু নিজি পাগল হইয়া আমারেও ঘর ছাড়া করিছে!"আমি বললাম--" কেমন করে কাকিমা?"কাকিমা বলেন--" আবার কেমন কইর্যাি? আমাগে বাড়ির সামনে ছেল এক জঙ্গল। রাত নেই, দিন নেই তোমার কাকু সেই জঙ্গলে বইয়াবাঁশি বাজাইতে। বাঁশিশুইন্যা আমিও পাগল হইসিলাম রে খুকি...!"বলেন--" বাঁশি বাজাইয়া বাজাইয়া তোমার কাকু আমারে ঘরের থনটাইন্যা বাহির কইর্যা. আনছে রে খুকি!” হ্যাঁ,আমার কাকু অসামান্য বাঁশি বাজাতেন। জানিনা এখনো বাজান কী না।এই বাস্তব আর ৯ মার্চের গানে ব্যবহৃত বাঁশির শব্দে আমি তো কিছুই পার্থক্য দেখি না!শুনলেই মনে পড়ে যায়:
"কে না বাঁশিবাএবড়ায়ি কালিনী নই কূলে!
কে না বাঁশিবাএবড়ায়ি এ গোঠ গোকূলে!
কে না বাঁশিবাএ সে না কোন্ জনা!
দাসিহঁয়্যা তার পায়ে নিঁশিবোআপনা!"
ঘরে ফেরার দিন এগিয়ে আসছে।সাহিত্য করার কারণে বাংলাদেশের সাথে নতুন করে যোগাযোগ।বহু বছর ধরেই বহু বিশিষ্টজন বহুবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশে যাবার জন্য! কবি, সাংবাদিক,কুসুমের ফেরা পত্রিকার সম্পাদক, খোকা ইলিশ বাঁচাও প্রকল্পের মধ্যমণি এবং সাহিত্যের সংগঠক সাকিলআহমেদ দাদা তো না হলেও দশ বছর আগে থেকে যাবার কথা বলেছেন। একবার ভিসাও হয়ে গেল। কিন্তু অবশেষে যাওয়া হল না। নোয়াখালি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক চন্দন আনোয়ার বছর পনেরো আগে থেকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ এবং প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক সাহেবের সবচেয়ে বড়ো বিশেষজ্ঞ শ্রদ্ধেয় সুশীল সাহা মহাশয়ের স্নেহধন্য আমি। তিনি হাসান ভাই বেঁচে থাকা-কালীন বহুবার বলেছেন। বাংলাদেশ থেকে আমার গল্পগ্রন্থবেরিয়েছে তিনটি। প্রথম বেরিয়েছেদেয়াঙপাব্লিশার্স থেকে। মাহমুদনোমান করেছে কাজটি। নোমান সত্যিই সাহিত্যে নিবেদিত প্রাণ। সে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বারবার বলেছে। মাছরাঙাপাব্লিকেশন থেকে এবার বেরিয়েছে "কেঁচোর গন্ধ" এবং আহরণ পাব্লিকেশন থেকে বেরিয়েছে "অশ্রুর রঙ"। এঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আহরণ পাব্লিকেশনেরসাকিলমাসুদ আমার শরীর খারাপ এবং হোটেলের রান্না খেতে পারার অক্ষমতা জানালে উনি বলেছিলেন যে,উনি আমার জন্য ওনার একজন আপাকে বলে রেখেছেন। আমি রান্না করেই খাব। সেই সুবিধা করে দেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় তাশরিকহাবিব মহাশয় বহুবার বলেছেন। তাশরিকহাবিব আর আমার যৌথ সম্পাদনায় করোনাকালীন গল্প সংখ্যা করেছিলাম। তাঁর সুসম্পাদনায় "পরান কথা" নামক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে চলেছে বহু বছর ধরে।আরো অনেকেই আছেন। লিখতে গেলে শেষ হবে না। শারমিনসুলতানারিনাও। বারবার বলেছে। কিন্তু যাওয়া কিছুতেই হচ্ছিল না।
এবারে বাংলাদেশে যাওয়াটা পুরোই সম্ভব হয়েছে সাহিত্যিক,প্রাবন্ধিক এবং দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকার অস্থায়ী সম্পাদক শ্রী নিশীথ সিংহ রায় এঁর সৌজন্যে!তাঁকে আমি নিজের দাদা বলেই মনেকরি! আমার উপর তাঁর এমনই একটা জোর আছে যে শতকাজ থাকলেও উনি বললে আমি যাবই।এবারেও হাজার কাজের মধ্যেও বাংলাদেশ যাওয়া সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আমার দাদা শ্রী নিশীথ সিংহ রায় মহাশয়ের কারণে। অনেক ধন্যবাদ দাদা!
বাংলাদেশ ছেড়ে ফিরতে হবে। কতো আশা করেছিলাম। স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম মনে মনে। মায়ের জন্মভূমিতে যাব। বাবার জন্মমুহূর্তের সেই ঘরখানা এখনো তেমনই আছে। সেই টিনের চালায় এখনো বৃষ্টি পড়ে শব্দ করে। আর বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা শক্ত টিনের আঘাতে শত শত মুক্ত দানা তৈরি করে ঝরেঝরে পড়ে। গরমে বীভৎস ঘাম হলে পাশের কালকাসুন্দ এবং অন্যান্য অনেক গাছেরাসমবেতভাবে দুলে ওঠে। আর সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস ওমনিহুহু করে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে। তারপর খিলখিল করে হাসতে হাসতে আবার ছুটে পালায়। শীতে টিনের চালায় কুয়াশা জমে। গা-হাত-পায়ে শীতলতা নেমে আসে।কম্বল মুড়ি দিয়েই কেটে যায় রাত, কেটে যায় দিন। উঠতে ইচ্ছে করে না। ঘরখানা কানে কানে বলে এই ঘরেই তোমার ঠাম্মা, সুন্দরী ষোড়শী উজ্জ্বলা দেবী শুয়ে থাকতেন। পেটে তোমার বাবা এলে উঠতে ইচ্ছে করত না তাঁর। রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মেয়েরা এই রোগে ভুগে থাকেন। আহা! কী যে সুন্দরী ছিলেন তোমার ঠাম্মা! কী নিষ্পাপ দুটো চোখ! গভীর ছিল সেই চোখের দৃষ্টি!ঘরখানা, তার দেওয়ালগুলো, তার মাটির মেঝে অথবা তার ভিতরের আসবাব এরাসব্বাই জানে। এদের সাথে এভাবেই গল্প হবে দিনে-রাতে। এই ঘরে ছিলেন আমার বাবা। তাঁর মায়ের পেটে। খুব অল্প বয়সে, মাত্র সাত বছরের বালক ছিলেন যখন বাবা সেই সময় ঠাম্মা চলে যান বিনা নোটিশে!সেই ঘর তাই অনেক কিছুর সাক্ষী!
সেখানে যাব। তারপর কী করব তা জানিনা!ভাইপো তরুণকে ফোন করি। সংবাদ দেই যে আমি বাংলাদেশে এসেছি। কিশোরগঞ্জে। বলি--"তরুণ, আমার রিটার্ণ টিকিট দশ তারিখে। নয় তারিখে তোমাদের ওখানে যাব! আবার ওইদিনই ফিরব।"তরুণ বলে--"ওইদিনই ক্যাম্বালেফেরবা অ পিসি? আসতিই তো একদিন লাগবেনে!"বলি--"তাহলে আট তারিখে যাব। নয় তারিখ কিন্তু ফিরতেই হবে।"তরুণ বলে--" কিশোরগঞ্জেত্থে ঢাকায় আসো। ওহেনথেপ্রাইভেট নিয়ে মোঙলায় আসো।" আমি বলি--"তারপর?"তরুণ বলে--"ওই যাগায় নামেই দেকবানে আমি খাড়ায়ে আছি।" বলি--"মোঙলা থেকে ডেওতলা কতদূর?"তরুণ বলে--"সে যত দূরই হোক। তোমার আর চিন্তা করা লাগবে নানে। আমি লইয়া আসবোনে। আমার বাইক নিয়ে যাবানি। মেলা সময় লাগবে নানে।"আমি বলি--"কিন্তু আমাকে তো দশ তারিখের ফ্লাইট ধরতেই হবে। টিকিট কাটা। তাছাড়া কাজে যোগ দিতে হবে তরুণ। এরপর চাকরিটা আর থাকবে না!"তরুণ হাসে। বলে--" একবার আইস্যে তো দেহো পিসি। কবে ফেরবা না ফেরবা সে দেহাযাবেনে!"বুঝতে পারি একবার গেলে কবে যে ছাড়া পাব তার নিশ্চয়তা নেই!
পাশেই খুলনায় থাকে মামাতো ভাই দিলিপ। তার পরিবার-পরিজন নিয়ে! খুব ছোট্টবেলায় ওকে দেখেছিলাম। আমার দিদিমাকে ও চিঠি লিখত। দিদিমা সত্যিই অসামান্য রুপবতী ছিলেন!আমরা তাঁর নোখেরও যোগ্য নই। দিলিপদিদিমাকে চিঠি লিখত অনেকটা প্রেমিকাকে লেখার মতো করে! দিদিমা সেই চিঠি সব্বাইকে দেখাতেন। সব্বাই হাসত! আমি তখন খুবই ছোটো। কিন্তু নীল রঙের খামটা চুপি চুপি খুব দেখতে ইচ্ছে করত। কিছুতেই কেউ আমাকে তা দেখতে দিত না। অতো হাসির চিঠি কেন যে দেখাতো না!আমিও তখন প্রেমের মানে বুঝি। প্রেমের চিঠিও বুঝি।একদিন সুযোগ পেলাম। নীল রঙের খামের গায়ে দারুণ সুগন্ধ! আর চিঠির উপরে লেখা--" যাও পাখি উড়ে গিয়ে এ কথা শুধাও তারে!"পাশে নীল কালিতে একটা ছোট্ট ডানা মেলা পাখি, তার ঠোঁটে একটা খাম। ছোট্ট পাখিটা কিন্তু কী নিঁখুত ছবিটা আঁকা হয়েছে, যা না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না!এইটুকুই মনে আছে। সেই দিলিপের কাছে যাব! কতো গল্প হবে!
মায়ের জন্ম যেখানে সেই কাটাখালকুলিতে যাব। ভেবেছিলাম। তরুণের কথা "কবে ফেরবা না ফেরবা সে দেহাযাবেনে", শুনেই সিদ্ধান্ত বদল। বুঝতে পারলাম যেভাবে স্বপ্ন দেখে মানুষ তা কল্পনাই কেবল,বাস্তবের সাথে তার আসমান-জমিন ফারাক। যেতে পারব না। এবারেডেওতলা আর কাটাখালকুলে যাওয়া হবে না। নিজের দেশে কর্মক্ষেত্রে নিজের কর্তব্য করি আর মনে মনেদুইবেলা চলে যাই বাংলাদেশে! যেমন করে এটা সম্ভব হয়,ঠিক সেইভাবেইইচ্ছের অপূরণের যন্ত্রণা বুকের মধ্যে কবর দেই। তারপর ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই। কবরের কাচা মাটি বুক খামচায়! নির্বিকার মুখে শেষ দিনের অনুষ্ঠান দেখি। বুক খামচালে চোখ করকর করে ওঠে। তবু ফিরি। ফিরতেই হয় সকলকে।এক পা এগোই। একজন সামনে এসে হাত দুটো ধরেন।"দিদি, চলে যাচ্ছেন? আমার বাসায় একদিন তো আইলেন না দিদি!"প্রবল বাঁধা ঠেলে এগোই।আর একটু পা বাড়াই।আর একজন হাত ধরেন!আবার এগোই! আবার বাঁধা!আবার! এবং আবার!আর পারি না! প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাই! দুই হাতে আটকাবার চেষ্টা করতে থাকি আর এক টুকরো বাংলাদেশকে বুকের মধ্যে পুরে নিয়ে চলে আসি নিজের দেশে!হাতে থাকে অনেক পুরস্কার আর বুক ভর্তি ভালোবাসা!বিদায় বাংলাদেশ!
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন